I am good man. Truth , knowledge and religion is my interest. রফতানি আয়ে ৭৮ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ২০ হাজার ভারতীয় নির্বাহী। বছরের পর বছর এ দেশে কাজ করলেও তারা ভিসা-পাসপোর্টের ধার ধারেন না। তাদের বেশির ভাগেরই কোনো ওয়ার্ক পারমিট নেই। এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথাও নেই। বছরের পর বছর তারা এ দেশে থাকছেন, আসছেন-যাচ্ছেন।
পাচার করে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। তারাই অর্ডার আনছেন, এলসি খুলছেন, মালামাল কিনছেন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল করছেন, শিপমেন্ট দিচ্ছেন। মালিকের সাথে বনিবনা না হলে তারাই আবার কৌশলে ডুবিয়ে দিচ্ছেন পুরো প্রতিষ্ঠান। শ্রমিক অসন্তোষ বাধিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এরপর কৌশলে বিক্রি করে দিচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের কাছে।
হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ৩০ বছরের তিলে তিলে গড়ে ওঠা এ শিল্প এখন ভারতীয়দের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
বিভিন্নপর্যায়ের উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের প্রায় পাঁচ হাজার তৈরী পোশাক কারখানায় বর্তমানে ২৫ হাজারেরও বেশি বিদেশী কর্মকর্তা কাজ করছেন। তাদের তিন-চতুর্থাংশই ভারতীয়। জেনারেল ম্যানেজার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, কমার্শিয়াল ম্যানেজার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, মার্চেন্ডাইজার পর্যায়ের এসব কর্মকর্তাই কারখানার প্রাণ। সাড়ে চার হাজারের বেশি বাংলাদেশী উদ্যোক্তা অনেক ক্ষেত্রেই বাধ্য হচ্ছেন মিড লেবেল এসব ম্যানেজারের ইশারায় চলতে।
কাজের অর্ডার পাওয়া থেকে শুরু করে ডেলিভারি দেয়া পর্যন্ত সব কাজই এদের হাত দিয়ে সম্পন্ন হয়। মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টির কাজটিও করে থাকেন মিড লেবেল ম্যানেজমেন্টের এসব কর্মকর্তা।
উদ্যোক্তারা জানান, দেশে সংশ্লিষ্ট কাজগুলোর জন্য যোগ্য লোকবল তৈরি করার মতো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না থাকায় বাংলাদেশের লোকেরা এখনো সেভাবে তৈরি হয়ে উঠতে পারেননি। কঠোর পরিশ্রম আর ব্যক্তিগত চেষ্টা-সাধনার মাধ্যমে যেসব বাংলাদেশী নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন, উদ্যোক্তাদের অবহেলা ও ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ বিরোধিতার কারণে তারাও এখনো নীতিনির্ধারণী বড় পদগুলোয় যেতে পারছেন না। ফলে কারখানা পরিচালনায় মালিকেরা বেশির ভাগই ভারতীয়দের ওপর নির্ভরশীল।
এ সুযোগে মালিককে জিম্মি করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা বেতনে চাকরি করলেও এদের একেকজনের আর্থিক অবস্থা অবিশ্বাস্য রকম শক্তিশালী।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষের পেছনেও এসব মিড লেবেল ম্যানেজারের হাত থাকে। মালিকদের সাথে সম্পর্কের কোনো রূপ অবনতি হলে কিংবা কারখানার মালিক হওয়ার খায়েশ জন্মালে কৌশলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটান তারাই। এদের বিরুদ্ধে নানা কৌশলে শ্রমিকদের উসকানি দেয়া, সময়মতো মজুরি পরিশোধ না করে উত্তেজনা সৃষ্টি এবং মালিকের বিরুদ্ধে স্থানীয় মাস্তান ও রাজনৈতিক চাঁদাবাজদের লেলিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটান তারা।
এভাবে একের পর এক অনাকাক্সিত ঘটনার শিকার হয়ে উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়লে এ সুযোগে নিজেদের লোক দিয়ে পানির দরে ওই কারখানা কিনিয়ে নেয়ার কাজটিও করছেন এসব ভারতীয় ম্যানেজারই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দুই বছরে অর্ধশতাধিক কারখানার মালিকানা বদল হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এসকিউ, ক্রিস্টাল, মাস্টার্ড, হলিউড, শান্তা, রোজ, ফরচুনা, ট্রাস্ট, এজাক্স, শাহরিয়ার, স্টারলি, ইউনিয়নসহ দেশসেরা গার্মেন্ট কারখানা। বিক্রির কথাবার্তা চলছে আরো শতাধিক কারখানার বিষয়ে। কারখানা বিক্রেতাদের তালিকায় রয়েছেন বিজিএমইএর অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও নামকরা ব্যবসায়ীর নামও।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ, আমেরিকান, কানাডিয়ান নাগরিকেরা কিনে নিয়েছেন এসব কারখানা। বিক্রি হওয়া প্রতিটি কারখানাই এক বা একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভাঙচুরের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাত ছিল বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। অভিযুক্তদের প্রায় সবাই ভারতীয় নাগরিক বলে জানান সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।
বেসরকারি খাত হলেও দাপুটে ভারতীয় ম্যানেজারদের কারণে গার্মেন্ট সেক্টরের দুর্নীতি অনেক ক্ষেত্রে সরকারি অফিসকেও ছাড়িয়ে গেছে।
অর্ডার পাওয়া, কাঁচামাল কেনা, ঝুট বিক্রি, নাশতা সরবরাহ থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজেই মোটা অঙ্কের ঘুষের লেনদেন চলে এখানে। উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা-অভিজ্ঞতার অভাবে এসব অসাধু কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ফলে এ সেক্টরে কর্মরত জেনারেল ম্যানেজার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, কমার্শিয়াল ম্যানেজার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, মার্চেন্ডাইজার পর্যায়ের লোকদের আয়ের সাথে জীবনযাত্রার মান এবং ব্যাংক হিসাবের সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিক কারণেই গার্মেন্ট সেক্টরে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তারা ধীরে ধীরে সক্ষমতা হারিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্বীকার করে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এ কথা স্বীকার করতেই হবে, হাজার হাজার বেকার থাকলেও আমাদের দেশে যোগ্য লোকের যথেষ্ট অভাব আছে।
আমাদের এখানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, কিন্তু তৈরী পোশাক শিল্পে দক্ষতার সাথে কাজ করার মতো লোক বেরিয়ে আসছে খুব কমই। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক ব্যবসায় হিসেবে উদ্যোক্তাদের যে মান দরকার, আমাদের বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই সেই মানের নন। তা ছাড়া প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভারতীয়রা এমনভাবে দাপটের সাথে বিরাজ করছেন, যেখানে মালিক চাইলেও গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে দেশী লোকদের বসাতে পারছেন না।
গার্মেন্ট শিল্পে ভারতীয়দের দাপুটে অবস্থান এবং তাদের কারণে সীমাহীন দুর্নীতির কথা স্বীকার করে এক্সপোর্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, সিস্টেম লস সব জায়গায়ই আছে। আমাদের এখানে একটু বেশি।
কারণ এটি আমাদের প্রথম জেনারেশন ব্যবসায়। আমাদের বেশির ভাগ উদ্যোক্তারই প্রয়োজনীয় জ্ঞান নেই। ‘চার ফুট লম্বা মানুষের পক্ষে আট ফুট উঁচুতে উঠে বলে হেড করা কঠিন’ মন্তব্য করে সাবেক এই ফুটবলার বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সাইজের চেয়ে বড় ফ্যাক্টরি করে ফেলেছি। ফলে মিড লেবেল ম্যানেজমেন্টের ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই। বিদেশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ও যোগ্য লোকবলে তীব্র সঙ্কট থাকায় উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে অনেক কিছুর সাথে আপস করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কর্মমুখী শিক্ষা চালুর মাধ্যমে যোগ্য লোক তৈরি করার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মানুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পশ্চিমা দেশগুলোতে পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে থাকে। আর ভারতীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দিতে হয় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ শুল্ক। এ কারণে বৈশ্বিকপর্যায়ে ভারতকে বাড়তি প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধা ও সস্তা শ্রমের কারণে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ২০ শতাংশ সস্তায় পোশাক উৎপাদন সম্ভব হয়। ঠিক এ কারণে খারাপ অবকাঠামো ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ভারতীয় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
ভারতীয় পোশাক শিল্প সমিতির মহাসচিব ডি কে নায়ের এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের শ্রমমূল্য ভারতের চেয়ে তিন গুণ কম। ভারতে মাসিক শ্রম খরচ গড়ে সাত হাজার রুপি আর বাংলাদেশের আড়াই হাজার রুপির মতো।
সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের তীব্র আপত্তির মুখে ভারতীয়দের বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাতে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয় সরকার। সুযোগ পেয়ে পানির দরে নামে-বেনামে শত শত বাংলাদেশী তৈরী পোশাক কারখানা কিনে নেন তারা। তারা আগে টার্গেটকৃত কারখানাকে নানা কৌশলে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়।
ভারতীয়দের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বন্ধ হওয়া বাংলাদেশীদের মালিকানাধীন কারখানাগুলো আবার চালু হচ্ছে ভারতীয়দের মালিকানায়। দীর্ঘ এ প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের চিৎকারে কর্ণপাত না করে সরকার পালন করতে থাকে নীরব দর্শকের ভূমিকা। বাংলাদেশী কারখানাকে কৌশলে বন্ধ করিয়ে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে নিজস্ব মালিকানায় আবার চালু করা সংক্রান্ত অসংখ্য সংবাদ প্রচারমাধ্যমে বেরিয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা এসবে রুষ্ট হয়েছেন তবে ইনিয়ে-বিনিয়ে অস্বীকার করেছেন নিজেদের দুর্বলতার কথা।
গার্মেন্ট শিল্পে বিদেশীদের অবাধে বিনিয়োগ সুযোগ দেয়ায় এসব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে দাবি করেছেন বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ নয়া দিগন্তকে বলেন, ট্রান্সশিপমেন্টের নামে ট্রানজিট দিয়ে সরকার যেমন আত্মঘাতী কাজ করছে বাংলাদেশী তৈরী পোশাক শিল্পে ভারতীয়দের বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে সরকার তেমন ভুলই করছে।
http://www.dailynayadiganta.com/?p=188071 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।