(এই লেখাটা অন্য সব বর্ষার লেখা থেকে হয়তোবা অন্যরকম)। অনেকটা স্মৃতিচারণ টাইপ। পড়ে দেখা যেতে পারে।
পহেলা আষাঢ় ১৪১৪ (১৫ জুন ২০০৭) :
সেবার বর্ষার প্রথম বৃষ্টিটাতে ভিজেছিলাম অনেক আয়োজন করে। আমরা সবাই (cousinরা, বাসার সবাই)।
আয়োজন বলতে গান বাজিয়ে ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা। মূল পাগলামিটা ছিল অবশ্য আমার। বর্ষা উদযাপন করব। এই ছিল পরিকল্পনা। আমি কয়েকটা গান টার্গেট করেছিলাম।
এসো নীপবনে, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, বর্ষার প্রথম দিনে। "বর্ষার প্রথম দিনে" গানটা একটা নিখুঁত বর্ষার গান। কিন্তু তখন আমা কাছে একটা গানও ছিল না। ইন্টারনেটও ওরকম ব্যবহার করতাম না যে নেট থেকে গান ডাউনলোড করব। তাই ৩১ জৈষ্ঠ্য পুরো মার্কেট ঘুরেছি গানগুলো জোগাড় করার জন্য।
একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর সিডি পেলাম। ওখানে বাকি গানগুলো পেলাম। কিন্তু বর্ষার প্রথম দিনে গানটা পেলাম না কোথাও। ওটা খুঁজে পেয়েছি ১ আষাঢ়।
পুরো মার্কেট খুজেও যখন আমি গানটা খুঁজে পেলাম না তখন পাড়ার একটা চিপা দোকানে "দুই দুয়ারী" সিনেমার কাসেট পেলাম (সিডি না)।
আমি জানি আমার কাছে কোন ক্যাসেট প্লেয়ার নাই। চিন্তা করলাম একটা ব্যবস্থা হবেই। এক আষাঢ়, বর্ষার প্রথম দিনে সকালে যখন বৃষ্টি শুরু হলো তারপর আমি বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছি কোথাও ক্যাসেটটা বাজানো যায় কিনা। কিন্তু কারো কাছেই ক্যাসেট প্লেয়ার নাই। সবার সিডি প্লেয়ার।
সেদিন শুক্রবার ছিল। জুম্মার নামাযের পর, ২ ঘণ্টা সারা পাড়া ঘুরে খুঁজে দুপুরে অন্য এলাকার এক দোকানে গিয়ে একটা ক্যাসেট প্লেয়ার পেলাম। ওখানে ওই গানটা বাজিয়ে, গানটা mp3 প্লেয়ার এ রেকর্ড করলাম। তারপর সন্ধ্যায় যখন বৃষ্টি হলো তখন কাজিনরা সহ ছাদে বৃষ্টিতে ভিজেছি। চাচা এসে আমাদের বকা দিয়ে ছাদ থেকে নামাতে গিয়ে নিজেই আমাদের সাথে বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করলেন।
কিছুক্ষণ পর মা-চাচিরাও আসলেন। এমনকি আমার অতি গম্ভীর বাবাও ভিজেছিলেন। আমরা মোটামুটি পুরো পরিবার সেবার বৃষ্টিতে ভিজে গান শুনে বর্ষা বরণ করেছিলাম। রাতে বাসায় খিচুরী রান্না হয়েছিল। পরেরদিন আমি বাসায় অনেকগুলো কদম ফুল কিনে এনেছিলাম।
শুধুই সাজিয়ে রাখার জন্য। কত আনন্দই না ছিল সেসময়।
পহেলা আষাঢ় ১৪১৫ (১৫ জুন ২০০৮) :
এইসময় আমার HSC পরীক্ষা চলছিল। তাই এত আয়োজন করে ভেজা হয়নি। তবু মনে আছে ভিজেছিলাম।
অন্তত বর্ষার নবধারা জলে স্নান করে নিজেকে শুদ্ধ করার চেষ্টা ছিল। সেদিন অন্তত গানগুলো ঠিকই শুনেছিলাম। সেদিনও বাসায় রাতে খিচুরী রান্না হয়েছিলো। যদিও সবাই একসাথে বৃষ্টিতে ভিজিনি তবুও পারিবারিক ভাবে বৃষ্টির দিনটাকে অনুভব করার চেষ্টা ছিল, বর্ষা বরণ করার চেষ্টা ছিল। যৌথ পরিবারের সত্যিকারের কিছু আনন্দ ছিল।
পহেলা আষাঢ় ১৪১৬ (১৫ জুন ২০০৯) :
"বা...ল"!!! আমি একটা "বা..ল" এর দেশ আমেরিকাতে বসে আছি। এখানে সারাদিনে কোন বৃষ্টি নাই। সারাদিন আমি ক্লাসে, কাজে কাটিয়েছি। সারাদিনে গানও শুনতে পাইনি। বাসায় ফোন করেছিলাম।
বাসায় কোন ভালো রান্না হয়নি। আমি নাই তাই বর্ষার খিচুরী রান্নায় বিরতি। এটা অবশ্য আমি মানতে পারছি না। বর্ষা যাপনে আবার বিরতি কিসের?
পহেলা আষাঢ় ১৪১৭ (১৫ জুন ২০১০) :
এতক্ষণের উপরের লেখাগুলো গতবছর এই দিনে ফেসবুকে একটা নোটে লিখেছিলাম। এবার নিজের প্রতি কেমন যেন এক ঘৃণা হচ্ছে।
আমি কেমন জানি আমেরিকান হয়ে যাচ্ছি। বর্ষা আসল, আর আমার মধ্যে সেরকম কোন অনুভূতি হচ্ছে না। আমার ছোট ভাইয়া মনে করিয়ে আমাকে "শুভ বর্ষা" জানালো। আমি কেন ভুলে যাচ্ছি?? আমার সবচেয়ে প্রিয় প্রাকৃতিক সময়টা হচ্ছে বৃষ্টির সময়। কিন্তু আমি এখন আর বৃষ্টির দেখা পাইনা।
হয়তবা কখনো বৃষ্টি হয়। কিন্তু আমি আর আগের স্বাদ পাই না। বৃষ্টিহীন আমাকে কেমন জানি অপবিত্র মনে হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে শুদ্ধ করা দরকার। আবার কবে ঝমঝম বৃষ্টিতে ভিজব জানিনা।
কিন্তু ভিজতে খুব ইচ্ছা হয়। নিজেকে পবিত্র করতে খুব ইচ্ছা হয়।
যাই হোক আমার এখানে বৃষ্টি হোক আর নাই হোক, আমি ভিজি আর নাই ভিজি। বর্ষা তো এসেছেই। আশা করি এই বর্ষা সব জঞ্জালগুলো ধুয়ে ফেলবে, মনের জঞ্জাল।
আর অবশ্যই বন্যা হবে না।
"এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে
এসো কর স্নান নবধারা জলে
দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ
পরো দেহঘেরী মেঘনীল বেশ
কাজল নয়নে যুথিমালা গলে
এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে"
সবাইকে বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলের শুভেচ্ছা।
______
গল্পঃ বর্ষার প্রণয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।