www.cameraman-blog.com/
শুরু করি একটা পারিবারিক কাহিনী দিয়ে। এটা প্রায় ২৫ বছর আগের কাহিনী। আমার এক বোন (কাজিন) এর এফেয়ার ছিল। একদিন সেই ছেলের সাথে রিক্সায় করে যাওয়ার সময় ধরা পড়লেন বড় ভাই এর কাছে। রাত্রেই জরুরী সভা বসলো, সিদ্ধান্ত হলো সেই ছেলে যদি পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় তো ভাল, না হলে তারা মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন।
সমস্যা অবশ্য একটা ছিল। এই মেয়ের বড় আরেকটা বোন ছিল, যার তখনো বিয়ে হয়নি। ছেলের পরিবার এদিকে ঠিকই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির। মেয়ের পরিবার পড়লো উভয় সংকটে। শেষ পর্যন্ত ছোট মেয়ের বিয়েই আগে হলো।
এরপরের ২/৩ বছর পরিবারটি যে যন্ত্রনা পেলো সেটা বর্ণনাতীত। বড় মেয়ের জন্য অজস্র প্রস্তাব আসলো, কিন্তু কোন প্রস্তাবই টিকলো না। ছোট মেয়ের বিয়ে আগে কেন হয়েছে এই প্রশ্ন তুলে সবাই সরে গেল। আমার সেই বোনটির অবস্থা হলো ভয়াবহ। সে অনেকটা মানসিক রুগীর মতো হয়ে গেল।
ছোট বোন জামাই নিয়ে বাপের বাড়ী বেড়াতে এলে তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়তো ছোট বোনের উপর। ছোট বোনকে দেখলেই প্রচন্ড ক্ষেপে যেত। একবার তো বটি নিয়ে তাড়া করেছিল, সময় মতো অন্যরা দেখে ফেলায় রক্ষা। বছর তিনেক পর যখন বোনটির বিয়ে হলো শেষ হলো এই যন্ত্রণার। তারা ২ বোনই এখন স্বামী-সংসার নিয়ে সূখেই আছেন।
নিম্নবিত্ত বা উচ্চবিত্তের বিয়ে নিয়ে কোন কুসংস্কার আছে কিনা জানি না, মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ এখনএ এইসব কুসংস্কার আর কুযুক্তি থেকে তেমন একটা বের হতে পারে নাই। আর তাই প্রধানমন্ত্রী যখন রুণা আর রত্নার বিয়ে দিয়ে দেন তড়িঘড়ি করে, আমি তাতে সাধূবাদ জানাতেই চাই।
অনেকেই দেখলাম "আমাদের মানবতা বোধ কোথায় নেমেছে" বলে আক্ষেপ করছেন। এই শোকের মধ্যে এতো আড়ম্বর করে বিয়ের ঘোর বিরোধী তারা। একজন মানব দরদী তো বলেই ফৈললেন মেয়ে দুটো মায়ের জন্য শোক করারও সূযোগ পাচ্ছে না।
আপনাদের সব অভিযোগই মেনে নিলাম। শুধূ একবার বলেন - সুমন বা জামিল যদি নিজেদের ইচ্ছায় বা অন্য আত্মীয়-স্বজন বা পাড়াপড়শীর প্ররোচনায় অপয়া মেয়ে বলে বিয়ে দুটো বা একটা ভেঙ্গে দিতো আপনারা কি করতেন ? নিশ্চয়ই সুমন অথবা জামিলের গুষ্টি উদ্ধার করে কিবোর্ডে ঝড় তুলতেন। তাতে আর যাই হোক মেয়ে দুটোর যন্ত্রনা কিন্তু এতোটুকু কমতো না।
আরো সময় দিলে শোক অনেকটাই থিতু হয়ে আসতো তাতে সন্দেহ নেই। তবে এর সাথে কুমন্ত্রণা দেবার বা কুসংস্কার মাথা চাড়া দেয়ার সম্ভাবনাটুকুও গুনিতক হারেই বাড়তো।
চরম শোকের মাঝে আড়ম্বর একটু বেশীই হয়েছে সেটা অস্বীকার করছি না, তারচেয়ে বেশী ছিল চ্যালা-চামুন্ডাদের প্রচারণা। আড়ম্বর কম হলে এই আপনিই হয়তো সমালোচনা করে বলতেন এব্যাপারে দূর্নীতি হয়েছে।
আমরা ৫/৬ টা ব্লগ আর হাজার খানেক একটিভ ব্লগার মিলে একটা কমন বাংলা ব্লগ দিবস করতে পারলাম না, মুসা আসলেই এভারেষ্ট বিজয় করেছে কিনা সেটা নিয়ে চরম সন্দিহান - রুণা আর রত্নার বিয়ে যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়েই দেন, তখন আমরা চুপ থাকি কেমন করে।
তারপরও বলি - শোক স্তিমিত হোক, নতুন জীবনে সূখের জোয়ারে ভাসুক রুণা আর রত্না ...
(পোষ্ট লেখার পর জানলাম রুণা-রত্নার সাথে আসমারও বিয়ে হয়েছে। শুভকামনা তার জন্যেও)
ছবি - প্রথম আলো থেকে ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।