আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো কি অসাংবিধানীক ও বৈষম্যমূলক নয়?

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

মাদ্রাসা শিক্ষার বিপক্ষে বা বন্ধ করার জন্য কথা বলেন এমন বুদ্ধিজীবী বা ব্যক্তির সংখ্যা দেশে অসংখ্য। প্রতিথযশা বুদ্ধিজীবীদের এ নিয়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, পত্রিকা বা টেলিভিশনের টকশোগুলো প্রায়ই মতামত দিতে দেখা যায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও এ মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধী। আমার মতে এ শিক্ষা ব্যক্তিকে সাম্প্রদায়িক, অবৈজ্ঞানীক, যুক্তিহীন ও পশ্চাতমুখী করে। আপনি যদি এ পোস্টের শেষে উল্লেখিত রিলেটেড পোস্টগুলো পড়ার মতো ধৈর্য্য রাখেন তাহলে এ বিষয়ে আমার অবস্থান নিয়ে আপনার কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।

তবে এ মাদ্রাসা শিক্ষার বাইরেও আমাদের দেশে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থা (বিশেষ করে প্রাইমারী পর্যায়ে) চালু আছে যা মাদ্রাসা শিক্ষার মতোই সম্পূর্ণ অসাংবিধানীক এবং বৈষম্যমূলক। কিন্তু আমাদের মহান বুদ্ধিজীবী বা সংবাদ মাধ্যমগুলোকে এ নিয়ে তেমন কথা বলতে শুনা যায় না। তাঁদের প্রতি সর্বোচ্চ দেখানোর পরেও আমাকে বলতে হয় তাঁদের এ নীরবতার কারণ সম্ভবতো তাঁরা নিজেরাও এ শিক্ষাব্যবস্থার সুবিধাভোগী। বাংলাদেশের যেকোন ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য স্বীকৃত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম ভাগের ৭নং অনুচ্ছেদের ১ ও ২ ধারায় সংবিধানের প্রাধান্য সম্পর্কে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

৭নং অনুচ্ছেদের ২নং ধারায় বলা আছে, "জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্যকোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে। " অর্থাৎ এটা সুস্পষ্ট যে, সংবিধানে উল্লেখিত ব্যবস্থার বাইরে যেকোন কার্যক্রম বা আইন বাতিলযোগ্য। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার এখতিয়ার সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের। সুপ্রিম কোর্ট পার্লামেন্টের কোন আইনও বাতিল করার অধিকার রাখেন যদি তা সংবিধানে উল্লেখিত জনগণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হয়। সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগের (রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি) ১৭ (ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, " রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজননীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।

" এখানে আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর বলতে আমরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রাইমারী শিক্ষাব্যবস্থাকে বুঝব। সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদ মোতাবেক এটা স্পষ্ট যে, এই প্রাইমারী শিক্ষা ব্যবস্থা হবে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এবং অবৈতনিক। তদুপরি এ শিক্ষাব্যবস্থা হবে দেশের সকল বালক-বালিকার জন্য একই পদ্ধতির এবং বাধ্যতামূলক। সংবিধানে সকল বালক-বালিকার জন্য বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষার কথা বলা হলেও দেশে সরকার পরিচালিত অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ছাড়াও মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইংরেজি মিডিয়ামের শিক্ষা প্রচলিত। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা পশ্চাদপদ মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও এ সমস্ত ইংরেজি মিডিয়ামের স্কুলের ব্যাপারে একেবারেই নীরব।

যদিও দুটো ব্যবস্থাই একই দোষে দুষ্ট। এর কারণ একটাই তাঁরা নিজেরাও এ শিক্ষাব্যবস্থার সুবিধাভোগী। আপনি যদি খুঁজ নেন তাহলে দেখবেন এসব বুদ্ধিজীবীদের সন্তানেরা বেশিরভাগই ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্র। দেশের ধনীব্যক্তির সন্তানদের কেউই অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার ধারে-কাছেও ঘেষেনা। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষার দৈন্যদশার জন্য এর প্রতি দেশের বুদ্ধিজীবী আর প্রতাপশালী ব্যক্তিদের অনীহা আর উদাসীনতাই দায়ী।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষা আবশ্যিকভাবে সকলের জন্য সার্বজনীন হওয়া আবশ্যক। ব্যক্তির সামর্থ্য এখানে কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। বিবেচ্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সাম্য, প্রগতি ও ঐক্য। শিশুর শিক্ষাগ্রহণের প্রক্রিয়া এমন হওয়া উচিত যাতে দেশের সমস্ত শিশু নিজেদের একই পরিবারের অংশ মনে করে। শিশু যাতে এটা বুঝতে না পারে যে, অভিভাবদের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে সে বঞ্চিত বা সুবিধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

সর্বোপরি শিশুর শিক্ষা হবে মাতৃভাষা, দেশীয় সংস্কৃতি, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আশ্রয় করে, যা তাঁকে দেশপ্রেমে উদ্বুত্ত করবে। আমার বলতে কোন দ্বিধা বা সন্দেহ নেই যে, মাদ্রাসা শিক্ষার মতো ইংরেজি মিডিয়ামের স্কুলগুলোতে এ বিষয়গুলোর কমতি রয়েছে। দেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেশের বিচারবিভাগের উপর ন্যাস্ত। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন যে, সুপ্রিমকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে বা কারো রিটের প্রেক্ষিতে মৌলিক অধিকার বা সংবিধানের লংঘন সম্পর্কে সময়ে সময়ে বিভিন্ন রুল জারি করেন। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় দেশের অতি প্রয়োজনীয় এ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সংবিধানের সুষ্পষ্ট লংঘন হওয়া সত্ত্বেও সুপ্রিমকোর্ট-কে এ বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু বলতে দেখা যায় না।

সংবিধানের এ লংগন সম্পর্কে যে সুপ্রিমকোর্ট বা মাননীয় বিচারপতিগণ অবহিত নন তা কিন্তু নয়। তারপরেও এ বিষয়ে তাঁরা নীরব। সম্ভবতো তাঁরা নিজেরাও এ ব্যবস্থার সুবিধাভোগী। সম্ভবতো তাঁদের সন্তানেরাও এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শিক্ষা লাভ করছেন। হায়! মোর দুর্ভাগা দেশ।

---------------------------------------------------------------------------------- Related Post: ১.(Click This Link), ২. (Click This Link), ৩. (Click This Link)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.