আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসা ইবরাহিমকে নিয়ে বাড়াবাড়ি এবং জাতীয় দৈন্য

ক্লিন'স অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ড

বাংলাদেশের যা কিছু ভালো তার সম্পূর্ণ ইজারা প্রথম আলো অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছে। এবারও তার বাত্যয় দেখা গেলো না। মুসা ইব্রাহিম যিনি একজন বাংলাদেশী হিসেবে প্রথম এভারেস্ট জয় করেছেন, তার সোল ক্রেডিট প্রথম আলো এবং তার টিভি চ্যানেল চ্যানেল আই নিয়ে নিলো। মুসা ইব্রাহিম যেদিন দেশের মাটিতে পদার্পন করেন সেদিন চ্যানেল আই সরাসরি বিমানবন্দর থেকে সেই অভাবনীয় (??) দৃশ্য সম্প্রচার করেছে। দু’জন সাংবাদিক ছিলো লাইভ রিপোর্ট করার জন্য।

একজন বোধহয় পান্থ। আরেকজন অপু। দুটো লোকই এতো নির্বোধের মতো সেদিন কমেন্টারি দিচ্ছিল যে বাংলাভাষার প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছিলো। আ..আ..আ..করতে করতে কেবল বাংলাদেশের সোনার ছেলে, বাংলাদেশের গর্ব ইত্যাদি শব্দের বাহুল্য প্রয়োগে পুরো সময়টা তারা দর্শকের মনে বিপুল বিরক্তির উদ্রেক করেছিলেন। তার আগে প্রথম আলো মুসা ইব্রাহিমের খবর ছাপিয়েছিলো লাল কালির ব্যানার হেডে।

আমি প্রথমে বুঝতে পারিনাই কী হলো। পরে শুনলাম তিনি এভারেস্ট জয় করেছেন। তাহলে কী তিনিই প্রথম মানব যিনি এভারেস্টে পদক্ষেপ রাখলেন? পরক্ষনেই মনে হলো তা তো হবার নয়। এভারেস্ট তো এখন ১৩ বছরের বালকও জয় করে!! তাহলে মুসা ইবরাহীমকে নিয় এতো মাতামাতি কেন? ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কাহিনী লিখলেন আনিসুল হক। মুসার অর্জন নাকি সারা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।

জানি আমাকে সবাই অত্যন্ত ছোট মনের অধিকারী ভাববেন। কিন্তু মুসার বিজয়ে আমি বাংলাদেশের গর্ব করার মতো কিছু খুজে পাইনি। মুসার এটা ব্যক্তিগত অর্জন হতে পারে। জোর করে প্রথম আলো আর সরকারী মহল মুসার অর্জনকে দেশের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। তার কারণ আছে।

বাঙালি জাতির হুজুগ প্রবাদের বিষয়। যে জাতির মানসিক চাপল্য প্রবাদে পরিণত হয় তার যেকোন কাজ প্রশ্নসাপেক্ষ। সুতরাং মুসা কে নিয়ে সরকারের আগ্রহ এবং প্রথম আলোর উচ্ছাস নিয়ে প্রশ্ন ওঠানো যেতে পারে। আমাদের যেকোন অর্জনে সরকারের একটা শেয়ার থাকে। যেমন, ক্রিকেট টিম হয়তো কালেভদ্রে কাউকে হারিয়ে দিলো।

সরকার এমনভাব করবে যেনো সে ক্ষমতায় আছে বলেই এই অসাধারণ জয় সম্ভব হয়েছে। সব সরকারের একই চরিত্র। আমাদের প্রায় সব পত্রিকাই ব্যক্তিগত খেয়ালখুশিতে চলে। পত্রিকার মালিক যদি ব্যবসায়ী স্বার্থসিদ্ধির জন্য পত্রিকা প্রকাশ করেন, তাহলে এটা হবেই। ফেরানোর সাধ্য কারো নেই।

এমনসব পত্রিকার মুনাফাটাই আসল। তাই সুখবর বঞ্চিত জাতিকে একটা সামান্য খবর রং চড়িয়ে বিরাট সাফল্য গাথা হিসেবে পরিবেশন করে জাতির বিরাট খেদমতগার হিসেবে আবির্ভূত হতে চাইবে এসব পত্রিকা তাতেও বিস্ময়ের কিছু নেই। তাই আমি বিস্মিত হইনি। কিন্তু বিরক্ত হয়েছি ঢের। প্রথম আলোর এমন আদিখ্যেতায় বুঝি মুসা ইব্রাহিমও লজ্জা পেয়ে থাকবেন।

যেকোন ব্যক্ত্বিবান মানুষই লজ্জা পাবেন। আমার যতদূর মনে হচ্ছে ড. ইউনুসের নোবেল বিজয়ও এতোদিন ধরে এভাবে প্রচার করেনি কোন গণমাধ্যম। এই ব্যবসায়িক আর মানসিক বৈকল্যের বাইরেও এধরনের খবর নিয়ে মাতামাতির আরেকটি কারণ হচ্ছে আমাদের জাতীয় দৈন্য। বছরের পর বছর এই বাংলাদেশের একমাত্র অর্জন হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আর দুর্নীতির ক্রমৃবদ্ধি। আমাদের পত্রিকাগুলো এসব প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হাতিয়ার।

দুর্নীতিবাজদের রক্ষাকবচ। এমন একটি দেশে তাই পাথরকুচি পাতা থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের খবর আর হিমালয়ের চূড়ায় ওঠার মতো অর্থহীন কাজগুলো সাফল্যের তকমা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পরিবেশন করা হয়। আরো অনেক কিছু লেখার ছিলো। কিন্তু এসব ইস্যুতে আর লিখতে ইচ্ছে করে না। শুধু বলতে চাই, মুসা ইব্রাহীম হিমালয়ে উঠেছেন এটা তার নিতান্ত ব্যাক্তিগত অর্জন।

তিনি হিমালয়ে ওঠার সময় অনেক থ্রিল অনুভব করেছেন। এড্রেনাল হরমোনে তার সারা শরীর কেপে উঠেছে। সেটাও তার ব্যক্তিগত অর্জন। এখানে জাতির কোন প্রাপ্তি নেই। কারণ, হিমালয় ওঠা এখন পৃথিবীর কাছে কোন খবর নয়।

এটা এখন রুটিন ওয়ার্ক। নেপালের ট্যুরিজম বিজনেসের অংশ। হিমালয়ে উঠার জন্য যদি জাতির কোন অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে, তবে তাকে আমি অপচয় হিসেবেই দেখবো। অবশ্য মুসা সম্পূর্ণভাবে নিজে খরচ বহন করলে ভিন্ন বিষয়। ব্যক্তিগত আনন্দের বিষয়কে যারা জাতীয় গৌরবের বিষয়ে পরিণত করেন, তাদের হয় কোন মতলব আছে, অথবা সত্যিই তারা বিষয় দুটোর পার্থক্য বুঝেন না।

ক্লিন দুপুর ৩.২৭ ৮ জুন, ২০১০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.