গতকাল হিমুর ফোন পেয়ে ক্লাস শেষে তার সাথে দেখা করতে গেলাম । তার মনটা তেমন ভাল নেই শরীরের প্রতি সে-তো বরাবরই উদাসীন । এখন তার খবর কেউ রাখেনা হুমায়ুন আহমেদ মারা যাওয়ার পর থেকে কেউ তার খবর নেয়নি। জানতেও চায়নি হিমু কেমন আছে । এটা নিয়ে হিমুর কোন দুঃখ না থাকলেও আমার খারাপ লাগে ! হিমু আমার চেয়ে অনেক বড় (বয়সে,গুণে,মেধায়) তার পরেও তার ইচ্ছা আমি তাকে হিমু বলেই ডাকি।
যাই হোক তার বাসায় গেলাম ক্লাস শেষে। হিমু দেখি ফ্লোরে শুয়ে আছে !
-আপনি ফ্লোরে শুয়ে কেন?
-ও,তুমি আসছ?বস,ক্লাস ছিল?
-হ্যাঁ। কিন্তু আপনি ফ্লোরে কেন?
-নাহ!!তেমন কিছু না ! আমার শরীর একটু গরম গরম লাগছিলো তাই ফ্লোরে শুয়ে ঠান্ডা করছিলাম। তো ভাল আছ ? ক্লাস কেমন চলছে?নতুন বন্ধু জোগাড় হয়েছে নিশ্চই?
-আছি মোটামোটি । নতুন বন্ধু হয়নি কেউ এখনো।
আপনার শরীর গরম লাগছিলো বললেন?জ্রব হয়েছ?
-না না ।
এরপর আমি হিমুর কপালে হাত দিয়ে দেখলাম যে তার কপালটা যেন গরম কড়াই।
-আরে হিমু আপনার তো ভীষন জ্বর । চলেন ডাক্তারের কাছে যাই।
-না না ও কিছু নাহ! এমনি ঠিক হয়ে যাবে ।
-না,চলেন (জোর করেই নিয়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে , কিছু ঔষধ এর নাম এবং টাকা দিয়ে কেনা কিছু উপদেশ নিয়ে আবার হিমুর বাসায়। হিমুকে রেখে ঔষধ গুলো কিনতে গেলাম এবং অল্পক্ষনেই ফিরলাম)
-হিমু ভাই দেখেন আপনি কিন্তু শরীরের যত্ন নিবেন ঠিক মত এভাবে মানুষ বাঁচেনা।
-হা হা হা!মানুষ জন্মনেয় মরার জন্য। আমিও মানুষ আমিও জন্মেছি মরার জন্য।
-উফ!ভাই আপনার এইটাইপের উদাসীন কথা ভাললাগেনা।
-আচ্ছা বাদ দাও। চলো আজকে চাঁদ দেখতে যাই অনেকদিন হল চাঁদ দেখিনা। জোছনা খাবো আজকে মন ভরে।
-ভাই আপনার তো জ্বর!এই শরীর নিয়ে...!! (মনে মনে যেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তাই বেশি বারন করলাম না) আচ্ছা যাবো।
রাতে বের হলাম ঠিক ১১'টার দিকে।
হিমু ভাই আজ আমাকে একটা হলূদ পাঞ্জাবি দিলেন। তার নিজের অনেক পুরনো মনে হল। কিন্তু খুব খুশি লাগছিল । নিজেকে যেন হিমু মনে হচ্ছিল। হাহাহা!!!
বের হওয়ার আমি স্যান্ডেল পড়ে বের হচ্ছিলাম কিন্তু হিমু স্যান্ডেল পড়তে দিলনা।
তাই খালি পায়ে আল্লাহ প্রদত্ত গাড়ি (পা) দিয়েই চলতে লাগলাম। বেশ ভালোই লাগছে পা দ্বারা রাস্তা অনুভব করার মজাই আলাদা।
কিছুদুর যাওয়ার পর একটা কদম ফুলের গাছ দেখে দাঁড়িয়ে গেল হিমু।
-কদম ফু্লের গাছ না এটা?
-হ্যাঁ।
-দাড়াও আমি একটা ফুল নিই।
-কি?এত রাতে না না। আর এতো উচুতে উঠা আপনার পক্ষে আকাশ কুসুম কল্পনা।
আমার বারন না মেনেই উঠে গেল গাছে । দুটো ফুল নিয়ে নেমে এলো।
-নাও এটা তোমার একটা আমার।
-ধন্যবাদ।
-হুম!!চলো তোমার প্রেমিকার বাসায় যাবো।
-কি বলেন ভাই এতো রাতে!
সোনামের সাথে রিলেশন এক বছরের আজকে অনেকবার ফোনে কল দিয়েছিল কিন্তু বরাবরের মতই আমি পিকআপ করিনি। রাগ করেছে কিন্তু ভালবাসা তার বেড়েছে অনেক। খুব ভাল মেয়ে দেখতে অনেক সুন্দর আমার দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হাসি তার ঠোঁটে।
আমার মতো একটা আবালের সাথে যে কেমনে ফেঁসে গেল আল্লাহ মালুম। যাহোক কদম ফুলটা নিয়ে এখন গেলে সব রাগ চলে যাবে ওর। তাই যেতে রাজি হলাম।
কিন্তু কিছুদুর যাওয়ার পর হিমু বললো তুমি যাও আমি আর যাবো না কাজ আছে । বুঝতে পারলাম না হিমু কোথায় যাচ্ছে ।
আমি গেলাম সোনামের বাসার সামনে ফোন দিলাম তাকে ঠিক একবার রিং বাজতেই ফোন ধরলো সে।
ওপার থেকে ভাসে এলো তার মিষ্টি সুর
-হ্যালো,কে ?কেন ফোন করেছ?কি চাই?আমি ফোন দিলে তো ধরনা!ভাব দেখাও বেশী।
-নিচে আস।
-কি?
-নিচে নামো। আমি দাঁড়ায় আছি তুমি আসো।
-সত্যি!? আচ্ছা এক মিনিট।
২০মিনিট পর ও এলো শাড়ী পরা । হলুদ শাড়ী । মনে হল যেন পরি দেখছি। কপালে ছিলো কালো মোটা টিপ ।
খালি পায়ে নুপুর পরেছিল। দারুন লাগছিল।
-এই নাও কদম ফুল এটা তোমার জন্য ।
-থ্যাংক ইয়ু ।
এর পর তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে যেন মনে হচ্ছিল চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে ও।
ও বললো -আমি জানতাম তুমি আসবা হিমু ভাই বলেছিল আমাকে ।
আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা কেনো হিমু আমাকে আজ ডেকেছিলো। ।
এবং কোথায় গেলো।
[কপি রাইটঃইকরাম হোছাইন জারিফ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।