আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসা ইব্রাহীম, ফেসবুক, আমার দেশ : নিউজ কভারেজ সম্পর্কে এ কয়দিনে মেলা কিছু শিখলাম

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট জয় কইরা সব চাইতে বড় কাজ যেইটা করছেন সেইটা হইলো, বাংলাদেশের মানুষ এতদিন যে এভারেস্ট জয় করে নাই সেইটা প্রমাণ কইরা দিছেন। তারে অভিনন্দন জানায়া আলাপ শুরু করা ভাল। মুসার এভারেস্ট জয়ের খবরটা পাওয়ার পর থেকে নানা কথা শুনতেছিলাম। ব্লগে, ফেসবুকে নানা রকমের আজাইড়া প্যাঁচাল ভাইসা আসা শুরু হইলো।

রাতারাতি বিভিন্ন পর্বত বিশেষজ্ঞের উদয় হইলো। মুসারে অনেকে অভিনন্দন জানাইতে থাকলেন তেমনি মুসার পর্বতারোহণ নিয়া নানা সন্দেহ পোষণ করা শুরু হইলো। অবশ্য, এই সন্দেহের উদগাতা মুসারই বন্ধু-বান্ধব, সহযাত্রীরা। তারা পর্বতে উঠতে ব্যর্থ হইলো কিন্তু মুসা কেন উঠলো সেই নিয়া তারা ব্লগ, ফেসবুক গরম কইরা তুললেন। যাই হউক মুসা শেষ পর্যন্ত পর্বতারোহণের সার্টিফিকেট নিয়া দেশে ফিরছেন।

আল্লাহর কাছে শোকরিয়া! জাতি একজন সার্টিফাইড বীর পাইলো। সব বীরের ভাগ্যে সার্টিফিকেট জোটে না। মুসার জুটছে। জাতি চুপ হইছে। মুসা পর্বতে উঠছেন, আমরা খুশী হইছি।

তারে অভিনন্দন জানাইছি। কিন্তু এই নিয়া প্রথম আলো যা করছে সেইটা খুব লক্ষ করলাম। বাংলাদেশের সবচাইতে বড় মিডিয়া প্রথম আলো। এই মিডিয়া মুসার এভারেস্ট জয়ের পর উচ্ছাস প্রকাশ করছে। ঠিক আছে।

মুসারে বীরের মর্যাদা দিছে সেটাও ঠিক আছে। মুসারে প্রচারের চূড়ায় উঠাইছে। সেটাও ঠিক আছে। কেউ কেউ বলতেছেন, প্রথম আলো একটু বেশি কইরা ফেললো না কি? হয়তো। ব্যক্তিগত আলাপে আমি অনেকরেই কইছি, যদি নিউজ একটা বিক্রির জিনিশ হয়, যদি সেইটার প্যাকেজিং বইলা কিছু থাকে, যদি ব্র্যান্ডিং বইলা কিছু থাকে তাইলে মুসার কভারেজ ঠিকই আছে।

মানুষ মুসার নিউজ পড়ছে। স্বপ্ন দেখছে, আনন্দ পাইছে। মুসারে বীর হিসাবে গ্রহণ করছে। এখন ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, মোবাইল কোম্পানিগুলা মুসারে মডেল বানাবে। প্রথম আলোর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে মুসা দেশে বিদেশ ঘুইরা বেড়াইবেন।

এইগুলা সবই ভাল। আমাদের তো স্টার নাই। ক্রিকেটের ওপর মাল্টিন্যাশনালদের লগ্নি ধরা খাইছে। বীর দূরে থাক স্টারও আমরা পাই নাই। আমাদের নায়ক-নায়িকাদের মধ্যেও তেমন স্টার নাই।

ওইখানে চরম গণতন্ত্র চলতেছে মোটামুটি সবাই সমান। রাজনীতিতে তো ভিলেনের ছড়াছড়ি। বীর বলতে এখন মুসা। অতএব চলুক না। ভাবতেছিলাম, মুসার ক্ষেত্রে প্রথম আলো লিড নিলো।

তরুণদের কজ, স্বপ্ন আশা ভরসার ক্ষেত্রে এমন ভূমিকা প্রথম আলোর অবস্থান শক্ত করছে। তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াইছে। কিন্তু কয়দিন যাইতে না যাইতে একটু থমকাইতে হইলো। প্রশ্ন করার ইচ্ছা হইলো আসলেই কি তরুণ প্রজন্মের ট্রু কজে প্রথম আলো পাশে দাঁড়ায়? হ্যাঁ। ফেসবুক বন্ধ হওয়ার পর মনে প্রশ্ন জাগলো।

ফেসবুক তরুণদের মিডিয়া। তাদের একত্রিত হওয়ার জায়গা। তাদের কথা বলার মাধ্যম। শুধু বাংলাদেশ না সবখানেই এই অবস্থা। ফেসবুক যখন বন্ধ হইলো, তখন প্রথম আলো সেইটারে সিঙ্গেল কলামে গুরুত্বহীনভাবে ছাপলো।

আপন মনে আমি দুইটা কজরে মিলাইলাম। মুসার কভারেজ আর ফেসবুকের কভারেজের তুলনা করলাম। বুঝলাম, প্রথম আলো আসলে মুসার কজের পক্ষে তরুণদের স্বপ্ন আশা ভরসার পক্ষে দাঁড়ায় নাই। দাঁড়াইছে নিজেদের বিজনেস ও ব্রান্ডিংয়ের পক্ষে। প্রথম আলোর কথা বলতেছি, কারণ প্রথম আলো বড় মিডিয়া।

প্রথম আলো বুঝলে অন্যদের চেনা যায়। অন্য মিডিয়াগুলা যে খুব বেশি এসপার ওসপার করছে তা না। যাই হউক, বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ হইলো। বিদেশে আমাদের সম্মানহানী হইলো। দেশে আমাদের যোগাযোগের, মতপ্রকাশের পথ বন্ধ হইলো কিন্তু এই ঘটনার গুরুত্ব আমাদের মিডিয়া সেই অর্থে যে বুঝতে পারলো না সেইটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার।

অবশ্য শুধু ফেসবুক কেন, আমার দেশ বন্ধ হইলে আমাদের মিডিয়াগুলা যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে নাই। আমি আমার দেশ পত্রিকাটা নিয়মিত রাখতাম। পত্রিকাটা যথেষ্ট বিরক্তিকর। এই পত্রিকাটা শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামাত না, মাহমুদুর রহমানের ব্যক্তিগত প্রচারপত্রে পরিণত হইছিল। নিজের পত্রিকায় প্রতিদিন এমন নির্লজ্জ আত্মপ্রচার করার প্রবণতা যার তার সাংবাদিকতা নিয়া সন্দেহ করার অবকাশ আছে।

কিন্তু তারপরও পত্রিকাটা অনেক বিষয়ে সাহসী ভূমিকা নিছে। বিভিন্ন ইস্যুতে ফাইট দিছে। বহু ভুলভাল নিউজ দিছে এটাও ঠিক। পত্রিকাকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মুখপত্র হিসাবে চালাইছে সেইটাও ঠিক। কিন্তু সরকার যেমনে মাঝরাতে পুলিশ দিয়া পত্রিকা বন্ধ করলো আর মাহমুদুর রহমানকে ধইরা নিয়া গেল সেইটা কোনো বিবেচনায় সমর্থন করা যায় না।

আওয়ামী লীগের মিডিয়া দলনের যে দীর্ঘকালীন ঐতিহ্য আছে সেইটাতে এই ঘটনা নতুন কালিমা যুক্ত করলো। লক্ষ করলে দেখবেন, বাংলাদেশে এ যাবত যত সামরিক ও অসামরিক সরকার আসছে তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মতো মিডিয়া-অবান্ধব সরকার আর আসে নাই। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ যত মিডিয়া বন্ধ করছে অন্য সব সরকার মিলে তার ৯০ ভাগের একভাগ বন্ধ করছে কি না সন্দেহ। আওয়ামী লীগারদের এই হিসাবটা খেয়াল করা দরকার। যাই হউক, আমার দেশ বন্ধ হওয়ার পর মুক্তবুদ্ধি, মতপ্রকাশের মুখপত্রগুলো বিশেষ কইরা প্রথম আলো তেমন জোরালো ভূমিকা নিতে পারে নাই।

কভারেজের ক্ষেত্রেও কার্পণ্য করছে। হয়তো মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে আগের শত্রুতার কথা তারা মনে রাখছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এইখানে ইস্যু মাহমুদুর রহমান না। আজকে মাহমুদুর রহমানকে যেমনে চুপ করায়ে দেওয়া হইলো কালকে একই পদ্দতিতে অন্যদের চুপ করায়ে দেওয়া হইতে পারে। বিষয় তাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার।

এই বিষয়েও আমাদের সবচেয়ে বড় মিডিয়াটা কোনো বিশেষ ভূমিকা নিতে পারলো না। মুসা ইব্রাহীম, ফেসবুক ও আমার দেশ প্রসঙ্গে প্রথম আলোর কভারেজ দেখেন বুঝবেন কোনটা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা গুরুত্বহীন। কোনটা রাজনীতি আর কোনটা রাজনীতি সচেতনতা। কোনটা অবস্থান আর কোনটা অবস্থা। কোনটা করা দরকার আর কোনটা করা হচ্ছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.