আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এইরকম ঘটলে সব সময়ই অপরাধবোধে ভুগি। তারপরেও মনে হয় এমনটা চলছে ....চলবেই।

ফুলটাইম ক্রুয়েল জোকার, পার্ট টাইম সিরিয়াস

কাল রাত দশটার দিকে আসতে ছিলাম ধানমণ্ডি থেকে আমার ভার্সিটিতে (শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)। ৯/সি নং বাসে চড়ে। তো বাসে উঠলাম শুক্রাবাদ থেকে। কিছুক্ষণ পর কন্ডাকটর (পিচ্চি একটা ছেলে) এসে ভাড়া চাইলো। দিলাম।

কলেজ গেইট পর্যন্ত ৫ টাকা নিল। এরপর সে পেছন দিকে চলে গেল। সবার ভাড়া উঠানোর পর সামনের দিকে এগিয়ে গেল। হেল্পার (এইটা্ও পিচ্চি) জিেজ্ঞস করল সবার ভাড়া উঠানো হইছে কিনা। পিচ্চি বলল।

পিছনে একজন স্টুডেন্ট বসে আসে। সে ভাড়া দিবে না ( নীলক্ষেত থেকে উঠছে। মিরপুর যাবে। ) বলছে। তো দ্বিতীয় পিচ্চি হেল্পার টা বলল - আচ্ছা অর্ধেক ভাড়া দিতে ক তারে।

তো সেই ছাত্রের কাছে আবার সে ভাড়া চাইতে গেল। ছাত্রটি মারমুখি হয়ে তেড়ে আসল। বলল - কইতাছি না আমি স্টুডেন্ট। কিসের ভাড়া রে ? থাপ্পড় খাইতে চাস। বাসের মধ্যে কিছু যাত্রী মিনমিন করে বলতে লাগল - হায়রে অহনকার স্টুডেন্ট।

পড়াশুনার চেয়ে বেশি আছে ভাব। ভাড়া দেওআর সময়ে হাফ ভাড়াটা্ও দিতে চাইব না আবার কিছু হইলে বাস ভাঙার সময় ঠিক ই আছে। পিছনের দিকে তাকালাম। দেখলাম আধুনিক ভাবের সব ই আছে ্ওই পোলার (নাকি স্টুডেন্ট!!!!) মইধ্যে। চুল স্পাইক, টি-শার্ট, জিন্স, হাতে বালা , কানে হেডফোন।

দেখে মনে হয়নি , দশ টাকা দিতে না দিতে পারার মতো গরীব সে। .. যদি অর্ধেক ভাড়া্ও দিত তা্ও একটা কথা ছিল। ছাত্র হিসেবে আমার নিজের কাছেই নিজের এতো লজ্জা লাগলো । ইচ্ছা করতেছিল শয়তান টার গালের উপর ঠাস ঠাস করে গোটা কয়েক চড় বসিয়ে দিই। পারিনি।

সাহস ছিল। কিন্তু সমাজের সুশীলতার চিন্তা করে পারি নি উঠে যেতে। আমি ্ও ছাত্র। কারণে - অকারণে বন্ধুদের অনেক অন্যায় কাজ মুখ বুজে দেখে গেছি। চুপ না থাকলে তারা আমার ক্ষতি করবে তাই হয়ত চুপ করে গেছি।

যদি তার গালে চড় ্ও লাগাতাম। তাইলে বাসের মধ্যে একটা মারামারি হতো। এবং যথারীতি স্টুডেন্ট এর কান্ড নিয়ে মুখোরোচক খবর তৈরী হয়ে যেত। সাধারণ মানুষ যখন আমাদের নিয়ে এমন চিন্তা করবে, তখন মুখ টা দেখাবো কেমনে। যখন এরা মনে করবে, ভার্সিটির ছাত্র মাত্রই ভাঙচুর প্রবণ, তখন তাদের ধারণা বদলাবেন কেমনে? ভাঙচুর করলেই পত্রিকার খবর হবেন।

কোন ছাত্র যদি স্বেচ্ছায় রক্ত দেয় তার কয়টা খবর পত্রিকায় আসে। অনেক ভালো খবর আসে না। অনেক খারাপ খবর আসে। এবঙ বেশির ভাগ লোক ই তখন খারাপ টাই ধরে নেবে। রাতের বেলায় ্ও যদি, কেউ স্টুডেন্ট ভাড়ায় চলতে চায়, তাইলে তো অনেক অসাধু লোক ই (যুবক গোছের) এই অন্যায় সুযোগ টা নিতে চাইবে।

আমি বলতেছি না, বাসের ড্রাইভার রা্ও খুব ভালো। তবে ভালো খারাপ তো সবখানেই আছে। শিক্ষিত মানুষ যদি অশিক্ষিত বর্বর এর মতো আচরণ করে, তাইলে ঐ শিক্ষার দাম কি ??? আর আমরা কতজন ই বা ভালো ব্যবহার টা দেখাই সবার সাথে। সবার ই তো আবার ইসটেটাস বজায় রাখা লাগে। যার তার সাথে ভাল ব্যবহার করা যায় না্।

কিন্তু, সবাই তো তখন বলবেই - জানোয়ার কে ট্রেনিং দিলে সে হয়ত খানিক টা মানুষের মতো আচরণ করবে। কিন্তু জানোয়ার এর নখর টা তার সাথেই থেকে যাবে। দরকার হলে সে সেটা ঠিক ই বের করবে। ..... ঢাকায় থাকি। বিভিন্ন সময়ে অনেক জায়গায় যেতে হয় ।

সবচেয়ে খারাপ লাগে এক টাকা - দু টাকা ভাড়া নিয়ে কেই কাউকাউ শুরু করলে। কেউ যদি আপনার বুকে ছুড়ি ঠেকিয়ে দেয়, আপনি তাকে মানিব্যাগ, মোবাইল, ঘড়ি, কাপড়-চোপড় পর্যন্ত খুলে দিতে বাধ্য। আর যে রিকশা্ওয়ালা আমাকে আপনাকে টানে, যে বাসে চড়ে প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যাই, তাকে এক টাকা বা দু টাক বেশি দিতে আমাদের কলিজা ছিড়ে যায়। এক টাকা যদি বেশি দেন, তাইলে দু-চার জনের কাছ থেকে বেশি নিয়ে সে হয়ত এক কেজি চাল ই বেশি কিনে খেতে পারবে। ব্যাংক ব্যালান্স তো আর করবে না।

এটাই হয়তো গরীবদের দোষ। এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণী হয়ত এজন্যই পৃথক। এজন্য এরা আমাদের কাছে চাকর, আর দূর্নিতীবাজরা বস। এক ই বাসে কাহিনী , এটা একটা সিটিং বাস। এবং ঢাকায় সিটিং আর লোকালের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নাই।

তো এই বাসে বেশ কয়েকজন লোক ঠেলে উঠল। কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। তো অনেকেই বাস পায়নি। সবাই ঠেলে উঠতে লাগল। দূর্বল হেল্পার আর কয়জনরে আটকাবে??? সবাই কেই তো বাড়ি যেতে হবে।

বাসের ভিতরে যারা সিটে বসে ছিল তাদের কেউ কেউ তো হেল্পার কে এই মারে কি সেই মারে। বলে সিটিং বাসে লোক তুললি কেন? হেল্পার দূর্বলভাবে বলল - আমি কয়জন রে ঠেকামু সবাই যদি উঠে??? যাত্রীরা বলল, এইডা তোদের চাল। হেল্পার বলল - ভাই সিটে বইছেন দেখে আপনে এমন টা কইলেন । আপনে দাড়ায়া থাকলে আর কিছু কইতেন না। বাড়িতে তো সবা্র ই ্যা্ওয়া লাগবো।

আপনেরে না তুলতে চাইলে্ও আমরা খারাপ, আর আপনেরে তুললে্ও আমরা খারাপ। নিজে ঠিক ই উঠবেন এইরকম বৃষ্টি হইলে, কিন্তুক যেই আপনে উডবেন আর কাউরে উডাইতে দিবেন না। .... ঘটনা আর বেশিদূর আগায় নি। আমি জাস্ট ব্যপার টা শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। এমনটা প্রতিদিন ই হয়।

আর আমরা্ও এক ই রকম। শক্তের ভক্ত নরমের জম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।