মন্ত্রী, এমপি ও ধনীর দুলালরা স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠছেন। পাঁচ তারকা হোটেলের হেল্থ ক্লাবে এখন তাদের ভিড় জমে থাকে। কেউ যান একা, কেউ স্ত্রী সঙ্গে নিয়ে, আবার অনেকে যান সন্তানদের নিয়ে। স্ট্রিম বাথ, সাউনা, ইনডোর জ্যাকুজি, আউটডোর জ্যাকুজি, এরোবিকস, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম পিক আওয়ারে কোথাও খালি থাকে না। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে গিয়ে দেখা যায়, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বড় বড় ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মনের সুখে সাঁতার কাটছেন সুইমিংপুলে।
ফাঁকে ফাঁকে সুইমিংপুল থেকে উঠে এসে প্যারাসল সিটে বসে নাশতা করে নেন। অনেকে ওখানে বসেই বডি ম্যাসাজ করান। এমনই একজন জাহাজ কোম্পানির স্বত্বাধিকারী। ঢাকায় থাকলে তিনি নিয়মিত রাতে চলে আসেন সোনারগাঁও হোটেলের সুইমিংপুলে। তার সেবায় থাকেন আরও ৬/৭ জন ব্যক্তিগত সেবক।
তিনি হোটেলে ঢুকে সোজা চলে যান সুইমিংপুলে। পেছনে পেছনে ছোটে সেবক দল। বস যখন সুইমিংপুলে নামেন তখন অন্যরা উপরে দাঁড়িয়ে থাকেন। কারো হাতে থাকে তোয়ালে, কারো হাতে জুস, কারো হাতে পানির বোতল, কারো হাতে খাবার, কারো হাতে তেল...। সুইমিংয়ের ফাঁকে তিনি উপরে উঠে এসে এক চুমুক পানি খেয়ে নেন।
এ সময় সেবকদের কেউ বডি ম্যাসাজ করে দেন, কেউ তেল মালিশ করেন পেটে। কিছুক্ষণ পর আবার নামেন সুইমিংপুলে । দেড়-দুই ঘণ্টা সেখানে কাটান তিনি। নতুন করে যারা সুইমিংপুলে আসেন তারা বেশ উপভোগ করেন এ দৃশ্য।
সোনারগাঁও হোটেল হেল্থ ক্লাব সূত্রে জানা যায়, এই শিল্পপতি এখানকার পুরনো সদস্য।
তিনি নিয়মিত সুইমিং করতে আসেন। অত্যন্ত বিনয়ী বলে কর্মচারীদের কাছে তিনি খুবই প্রিয়ভাজন। কর্মচারীরা জানান, তিনি হোটেলের পানি পান করেন না, তাই পানি নিয়ে আসেন বাসা থেকে।
সোনারগাঁও হোটেল হেল্থ ক্লাব সবচেয়ে বেশি এনজয় করতেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। দেশের বাইরে থাকায় অনেক দিন তিনি যান না।
স্ট্রিম বাথ, সাউনা, আউটডোর জ্যাকুজি, এরোবিকস, সুইমিং, জিমনেসিয়ামে নানান ব্যায়াম সেরে তবেই ফিরতেন তিনি।
মন্ত্রীদের মধ্যে নিয়মিত যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অসুস্থ থাকার কারণে গত ক’দিন অবশ্য যাননি। তিনি সুইমিং করে চলে যান। বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক নিয়মিত হেল্থ ক্লাবে যান। সুইমিং ছাড়াও অন্যান্য ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করেন তিনি।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর রহমান, এইচটি ইমাম, ডা. মোদাচ্ছের আলীসহ মন্ত্রিপরিষদের আরও বেশ ক’জন সদস্য স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পাঁচ তারকা এ হোটেলে যান গোসল ও ফিজিক্যাল এক্সারসাইজের জন্য। অবশ্য এদের প্রায় সবাই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর হেল্থ ক্লাবের মেম্বার হয়েছেন। ডজনখানেক সংসদ সদস্যও যান সেখানে। আসেন বড় বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাবেক আমলা ও ধনীর দুলাল-দুলালীরা।
সোনারগাঁও হোটেল হেল্থ ক্লাবে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী জিএম কাদের স্ট্রিম বাথ (বাষম সান) ও সাউনা নেন বেশি।
সাউনা ঘাম গোসল বা সোয়েট বাথ। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সোয়েট বাথ দেহের বিপাক ক্রিয়া ও হার্টবিট বাড়ায়। এতে রক্তবাহী নালী বেশ নমনীয় হয়। ফিজিক্যাল ফিটনেসের জন্য এটা বেশ উপকারী প্রমাণিত হয়েছে।
আর স্ট্রিম বাথ বা বাষম সান মাংসপেশির সচলতা বাড়ায়।
সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ ইনডোর ও আউটডোর জ্যাকুজি নেন। এটা এক ধরনের হট বাথ হলেও পরিচালন পদ্ধতি ভিন্নধাঁচের। পানিতে যান্ত্রিক কৌশলে সজোরে বায়ু প্রবাহ চালনা করা হয়। এটা এক ধরনের পানি থেরাপি।
সোনারগাঁও হোটেল হেল্থ ক্লাবে এরোবিকস বেশ জনপ্রিয়। সঙ্গীতের তালে তালে যন্ত্রের সহায়তায় মাংসপেশি ও হৃিপণ্ডের পেশির ব্যায়াম এটি। এরোবিকস হাঁটা, জগিং, সাঁতার ইত্যাদির মাধ্যমেও করা যায়। সোনারগাঁওয়ে অনেক ভিআইপি যান বডি ম্যাসাজ করাতে। সরকারের প্রভাবশালী তিন মন্ত্রী নিয়মিত বডি ম্যাসাজ করান।
দেশের বিশিষ্ট এক শিল্পপতি তো ম্যাসাজ পার্লারে ঢুকলে আর বেরই হতে চান না। অবশ্য এ শিল্পপতি রাত করেই যান পার্লারে।
মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা ও শিল্পপতিদের স্ত্রীরাও যান সেখানে। তারা যান সুইমিং ও ফিজিক্যাল এক্সারসাইজের জন্য। কেউ কেউ চুল কাটাতে।
সাজতেও যান অনেকে।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হেল্থ ক্লাব সূত্রে জানা যায়, এ ক্লাবের সদস্য আছেন ১৭০ জন। এর বাইরেও অনেকে এটি ব্যবহার করতে আসেন। অবশ্য এ জন্য ফি দিতে হয় তাদের। এ ধরনের ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই আসেন সদস্যদের রেফারেন্সে।
হোটেলের বর্ডারসহ ২ শতাধিক ব্যক্তি নিয়মিত হেল্থ ক্লাব ব্যবহার করেন বলে সূত্র জানায়। শুধু সোনারগাঁওই নয়, শেরাটন, ওয়েস্টিন, রেডিসনের মতো বড় বড় সব হোটেলের হেল্থ ক্লাব এখন জমজমাট।
সোনারগাঁও হোটেলের চার্ট মতে, হেলথ ক্লাবের সদস্য হতে বছরে একক চাঁদা এক লাখ ২০ হাজার টাকা, দম্পতি দেড় লাখ টাকা আর প্রতি শিশু (৬ থেকে ১৬ বছর) ৮৪ হাজার টাকা। আবার ছয় মাসের সদস্য হলে একক ৮৪ হাজার, দম্পতি এক লাখ ২০ হাজার এবং শিশুপ্রতি ৫৮ হাজার টাকা। আর মাসিক ভিত্তিতে সদস্য হলে একক ২০ হাজার টাকা, দম্পতি ৩০ হাজার টাকা ও শিশুপ্রতি ১৫ হাজার টাকা।
আর যারা সদস্য নন, সুইমিংপুলে প্রতিবারে (বয়স্কদের জন্য) ১৩শ’ টাকা, প্রতি শিশু (১২ বছর পর্যন্ত ) ৭শ’ টাকা লাগে। অন্যদিকে সাউনা, জ্যাকুজি আর স্ট্রিম বাথ নিতে জনপ্রতি লাগে ১২শ’ টাকা। জিমনেসিয়ামে লাগে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা। জিমনেসিয়াম ও সুইমিংপুল প্যাকেজে লাগে জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।