বেশ কয়েকদিন আগে ‘The Princess and the Frog’ মুভিটা দেখলাম। একে তো Disney’র মুভি, তার উপর দিয়ে TV তে অ্যাড দেখে কাহিনির যা হিন্ট পেলাম তাতে মনে হল খুব মজার হবে, ফলে দেখার আগ্রহ ছিল ষোলআনা। এবং দেখার পর আশাহত হতে হয় নি মোটেও।
ব্যাঙ রাজপুত্রের গল্প মোটামুটি সবারই কম-বেশি জানা। এখানেও রূপকথার সেই গল্পটাকেই নিয়ে আসা হয়েছে, কিন্তু একটু ভিন্ন রূপে।
ছবির মূল চরিত্র নিউ অর্লিন্স এর টিয়ানা (Tiana), যে কিনা দু-দুটো চাকরিতে প্রাণপণ খেটে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য- নিজের একটা রেস্ট্যুরেন্ট দাঁড় করানো।
অপরদিকে প্রিন্স নাভিন (Naveen)- প্রিন্স হলেও প্রায় কপর্দকহীন- ম্যালডনিয়া (Maldonia) থেকে বাবা-মা দ্বারা বিতাড়িত হয়ে নিউ অর্লিন্সে এসেছে ধনাঢ্য কারো কন্যাকে বিয়ে করে ভাগ্য ফেরানোর উদ্দেশ্যে। (সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট টিয়ানার বাল্যবন্ধু শার্লট (Charlotte)- চিনিকলের মালিকের কন্যা। )
নিউ অর্লিন্সে আগমনের পর ভুডু তে সিদ্ধহস্ত ডক্টর ফ্যাসিলিয়ারের (Dr. Faciliar) চক্রান্তে পড়ে রাজকুমার পরিণত হয় ব্যাঙ-এ।
এবং ঘটনাচক্রে সে যেয়ে পড়ে টিয়ানার সামনে, শার্লটেরই এক পার্টিতে। ব্যাঙ রাজপুত্রের কাহিনি টিয়ানা-নাভিন উভয়েরই জানা। শার্লটের পোশাকে টিয়ানাকে দেখে প্রিন্সেস ঠাউরে নাভিন চেষ্টা করে তাকে সাহায্য করার জন্য রাজি করাতে। টিয়ানাও অবশেষে রাজপুত্রকে মানুষে পরিণত করার সেই জাদুকরি চুম্বন দিতে রাজি হয়। কিন্তু তারপর রাজপুত্র তো মানুষ হয়-ই না, উল্টো টিয়ানাও পরিণত হয় ব্যাঙ-এ।
(কারণ টিয়ানা প্রিন্সেস না, এবং প্রিন্সেস ছাড়া রাজপুত্রকে মানুষে রূপান্তর সম্ভব না। বোঝাই যাচ্ছে, প্রিন্সেস হতে হবে... ওয়েইট্রেস এর ভাত নাই। ) এর পরের কাহিনি নাভিন এবং টিয়ানার আবার মানুষ-রূপে ফিরে আসার প্রচেষ্টা নিয়ে।
এই মুভিটা মুক্তি পাবার পরপরই বেশ আলোচিত হয়। প্রধান কারণ, টিয়ানা কৃষ্ণাঙ্গ।
শেতাঙ্গদের পাশাপাশি Disney এর আগে নেটিভ ইন্ডিয়ান পোকাহন্টাস, চাইনিজ মুলান, এবং মিড্ল-ইস্টার্ন জেসমিনকে ফিচার করেছিল, কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ কাউকে মূল চরিত্রে চিত্রণ এই প্রথম।
[এখানে একটু বলি, মুভিটা দেখেছিলাম আমার খালার সাথে, এই প্রসঙ্গ আসায় ও হঠাৎ বলে, ব্যাপারটা কি বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হবার বদৌলতে ঘটল নাকি!]
‘The Princess and the Frog’ নিয়ে নানাবিধ বিতর্ক উঠেছে, বলাই বাহূল্য তা প্রধানত racism নিয়ে। ছোট-খাটো অনেক কিছু নিয়েই বিতর্ক উঠেছে, কিন্তু কিছু কিছু পয়েন্ট ভাববার মতই।
প্রথমত, প্রিন্সেস যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ, প্রিন্স নাভিনকে সেখানে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ কোনো দলেই ফেলা যায় না। প্রায়-ভারতীয় কমপ্লেক্সন এর নাভিন (যার এ্যাক্সেন্ট আবার ব্রাজিলিয়ান) কে ম্যালডনিয়া নামক কাল্পনিক রাজ্যের বাসিন্দা হিসেবেই রাখা হয়।
অধিকাংশের আপত্তি এখানেই যে, একজন নন-ব্ল্যাক প্রিন্স যখন কৃষ্ণাঙ্গ প্রিন্সেসকে কৃষ্ণাঙ্গ ভিলেন (উল্লেখ্য, ডক্টর ফ্যাসিলিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ) এর হাত থেকে রক্ষা করছে, তখন ব্যাপারটা কী এমন দাঁড়ায় না যে, ‘white men saving brown women from brown men’? Inter-racial relation টা কে অধিকাংশই অবশ্য স্বাগত জানাচ্ছে (তন্মধ্যে আমিও একজন), কিন্তু অনেকে এমনও বলছেন, কোনো white princess এর বিপরীতে তো কখনো কোনো black prince কে আনা হয় নি।
দ্বিতীয়, এবং সবচেয়ে কনসার্নিং পয়েন্ট হতে পারে ভুডু’র ব্যবহার। Disney মুভিগুলোর মধ্যে ম্যাজিক এর ব্যবহার নতুন কিছু না। Sleeping Beauty, Cinderella, Little Mermaid... এভাবে আরো অনেক নাম বলা যাবে। ম্যাজিক সেখানে কেবল ম্যাজিকই ছিল, কিন্তু এখানে ভুডু’র উল্লেখ নির্দিষ্ট।
Vodoun নামক ওয়েস্ট আফ্রিকান ধর্মটি পরবর্তীতে হাইতি, লুইসিয়ানা, অর্থাৎ ওয়েস্টার্ন হেমিস্ফিয়ারে আসে এবং Voodoo নামে পরিবর্তিত হয়। ধর্মটির ভিত্তি জাদু-টোনা না (যদিও সেটিই বেশি পরিচিত ও আলোচিত), বরং একেশ্বরবাদে বিশ্বাস, আত্মায় বিশ্বাস এবং কিছু নৈতিক মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব প্রদান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একে magic বা superstition এর সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এবং ‘The Princess and the Frog’- এ ও তার ব্যতিক্রম হয় নি। ভুডুকে (এবং স্পেসিফিক্যালি ভুডুকেই) কেবলই ম্যাজিকের একটা ফর্ম হিসেবে ব্যবহার করাটাকে অনেকের কাছেই অফেনসিভ মনে হয়েছে।
তৃতীয় খটকা, টিয়ানার ব্যাঙ-এ রূপান্তর। কাহিনিটা যেভাবে সাজানো হয়েছে, তাতে ব্যাপারটাকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার বিশেষ কারণ নেই। কিন্তু মূল চরিত্রের ব্যাঙ-এ রূপান্তর, এবং এই ফর্মেই মুভির অর্ধেকটা সময় জুড়ে থাকাটা একটু কেমন-কেমনই বটে।
একটা কার্টুনকে হালকাভাবেই নেওয়া উচিত, সেকথা বলা যায়। কিন্তু বিভিন্ন অ্যানিমেটেড চরিত্রকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছে (Disneyও করেছে) এবং যেকোনো মাধ্যম, সে শিশুতোষই হোক না কেন, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।
ফলে কার্টুন (কাহিনি বা চরিত্র, বা উভয়ই) কে কেবলই ‘কার্টুন’ হিসেবে নেওয়াটাও সমীচীন না।
সবকিছু মিলিয়ে মুভিটা চমৎকার। বিশেষ করে প্রিন্স নাভিন এর চরিত্রটা অসম্ভব প্রফুল্ল। আর শার্লট চরিত্রটা তো খুবই মজার। সাইডকিক হিসেবে রে (Ray) এবং লুইস (Louis) কে অন্তত আমার খুব ভাল লেগেছে।
অবশ্য ভিলেনটা আরেকটু প্রভাবশালী হলে ভাল্লাগতো। আর মিউজিক, Disney’র আর সব মুভির মিউজিকের মতই চমৎকার।
সিরিয়াস মুভি থেকে একটু ছুটি নিতে চাইলে ‘The Princess and the Frog’ এর পেছনে কিছু সময় ব্যয় করা যেতে পারে। It’ll be totally worth it.
[তথ্যসূত্র: Google এ The Princess and the Frog লিখে সার্চ দিলে যে সাইটসমূহ আসে তার মধ্য থেকে গুটিকয়েক। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।