আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা দিবসের একটা আর্জি: আমি একটা কাজ করতে চাই, আপনারা কি কেউ আমাকে সাহায্য করবেন?

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

আজকে প্রথম আলোতে একটা খুবর পড়লাম , একটা গরীব মেয়ের ঘটনা। মেয়েটা যে পরিবারে জন্মেছে সে পরিবার খুবই দরিদ্র। তার মা বয়লারে কাজ করে দিনে ১০ টাকা অথাব ২০ টাকা পায় আর বাবা ভ্যান চালিয়ে কোনো দিন ১০০ টাকা পায় আবার কোনো দিন কিছুই পায় না। ওরা থাকে অন্যের একটা জমিতে কোনো রকম খেজুরের ডালে বেড়া দিয়ে একটা কুড়ে ঘরের মতো জায়গায়।

একটা খুপড়িতে রোজিনা আর তার ভাই বোন আর বারান্দায় রাত কাটায় তার বাবা মা। চরম দারিদ্র্য বলা যায়। এই দারিদ্র্যতার কারনে রোজিনার অল্প বয়সে বিয়েও হয়ে যায়। লেখাপড়ায় ভালো থাকার কারনে স্কুল থেকে বাধা দিলেও কোনো কাজ হয়নি। কিন্তু যৌতুকের দাবিতে স্বামীর অমানুষিক নির্যতনে মেয়েটার আর ঘর করা হয় না।

ও যে স্কুলে পড়তো সে স্কুলে তাকে আবার ভর্তি করে নেয়া হয়। এবার এসএসসিতে সে জিপিএ ৫ পেয়েছে। আমিও এতো ভালে রেজাল্ট করি নাই আমার সময়ে। এরজন্য একটা স্যালুট দেয়া যায় কি বলেন? একটু পিছে থেকে শুরু করি। আমার মাকে আমি কেমন দেখি সেটা যদি বলতে হয় তাহলে বলবো আমাকে খুব কঠোর শাসনে কাটাতে হয়েছে।

খুব বেশী দুস্ট ছিলাম এটা ঠিক না, তবে যাই ছিলাম, অন্তত একটা সিঙ্গেল কাহিনীতে দেখা যেতো বড় অঘটনা ঘটে যেতো। তবে মা খুব করে চেয়েছিলেন আমি যেনো নস্ট না হয়ে যাই, অন্তত শিক্ষিত হতে পারি। বিএসসি পাশ তো দিয়েছি এখন একটু গবেষনা, তাহলে তো শিক্ষিত মনে হয় হয়ে গেছি, ঠিক কি না? আমার একটা বোনও আছে। ছোটবেলা আমি শাসন করলেও বড় হয়ে এখন আমাকে শাসন করে। মাঝে মাঝে আমার স্ক্রু টাইট দেবার প্রয়োজন পড়লে বাসায় মা কে বলে আমার খাবার বন্ধ করে দেয়।

আমার মা দেখি তাকে ভালোই সায় দেয়। যখন না খেয়ে থাকি তখন ও এক প্লেট ভাত এনে সামনে রাখে আর কাজের মেয়েটাকে ডেকে বলে,'জীবনি, কোনো ভিক্ষুক আসলে বলিস তো, আজকে যে সবার আগে ভিক্ষা চাইবে সেই খাবার পাবে। ' আমি তখন ভিক্ষা চাইলেও আমার কপালে সেদিন ভাত জোটে না। আমার প্রিয় ইউনি চুয়েটের সামনে একটা হোটেল ছিলো বাচাবাবা। ওখানে দেখতাম মাঝে মাঝেই পেট চুক্তিতে ছোট ছোট ছেলেদের নিয়োগ দিতো।

ওরা কোথা থেকে এসেছে, কেনইবা এ বয়সে এতো কস্টকর কাজ করছে সেটা নিয়ে আমার খুব একটা আগ্রহ থাকতে্া না। ওখানে যেতাম খেতাম আর কোনো গ্যান্জ্ঞাম করলে সোজা ম্যানেজারকে ধরে ঝাড়ি দিয়ে বিলটা বাকি রেখে আসতাম। একবার ডাইল পুরির অর্ডার দিলাম, দিতে বোধ হয় আধা ঘন্টা দেরি হয়েছিলো, এবং পুরির ভিতর ময়লাও পেলাম। সোজা গিয়ে ম্যানেজারকে দিয়ে বললাম,' কি দিছস এগুলা...................' বাকি শব্দগুলো ফোটা দিয়ে লিখলাম এজন্য যে ওসব ওর মা বাবাকে তুলে গালাগালি। আমাদের সামনেই দেখলাম ঐ পুরিয়া যে দিলো সেই পিচ্চিটার মা বাপ তুলে গালাগাল, সাথে ঘেটি ধাক্কা তো আছেই।

প্রশ্ন হলো ওরা তো অশিক্ষিত খেটে খাওয়া মানুষ, আমরা কেনো শিক্ষিত হয়ে এমন গালাগাল করতে পারি? উত্তর: খুব ছোট বেলায় এসব গালাগালি দিবো সেটা চিন্তাও করতাম না। মাদ্রাসার কিছু ধর্ম শিক্ষা পেটেতো ছিলোই। নতুন স্কুলে গিয়ে মিশতে শুরু করি নানা জায়গার মানুষের সাথে। দেখতাম সিনিয়র যারা তারা বেশ ভাব নিয়ে ঘুরতো, অনেকটা হিন্দি সিনেমার হিরো। নিজেরো হিরো হবার সাধ হলো।

ওদেরকে ফলো করা শুরু করি। কোনো গ্যান্জ্ঞাম দেখলে এগিয়ে যেতাম, দেখতাম গালাগালি দিয়ে কিভাবে সব উদ্ধার করলো সবাই। তখন বুঝলাম গালাগালির কি মাহাত্ম্য। নিজের হিরো গিরী ফুটানোর জন্য গালাগালি আর মারামারির উপর কিছু হয় না। শিখে গেলাম।

আরেকটু যখন বড় হলাম তখন ঢাকায় এসে আরো বাহারী কথা শিখলাম, খিস্তি খেউড় তো আছেই। নিজেকে অনেক চেস্টা করেছিলাম নেশার জগৎ থেকে মুক্ত হতে সেটা পেরেছি কিন্তু মুখটা নস্ট করে ফেলেছি। এইতো, এভাবেই আমরা গালাগালি শুরু করি। তাহলে প্রশ্ন হলো এমন গালাগালি কতদিন? এটার উত্তরে আরেকটা গল্প বলি। ২০০৬ এর দিকে একবার মামাতো দের বাসা থেকে রাত ৮ টার দিকে বের হলাম বাসায় যাবো ফার্মগেট থেকে।

কিন্তু বাস স্ট্যান্ডে এসে দেখি প্রচুর জ্যাম। তেজগাও কলেজ আমাদেরি কলেজ কিন্তু তখন আর আমাদের মনে হয় না। তাই ৮ নম্বর বাসে কোনো মতে পা রেখে উঠে পড়লাম। ভিতরে দাড়াই, কন্টাক্টর এমন সময় ভাড়া নিচ্ছে। সবাই অফিস ফেরত আর গরমে নারী পুরুষ ঘেমে একাকার।

ভাড়া আমি জানতাম ৬ টাকা কিন্তু সে ৭ টাকা নেওয়া শুরু করলো। সীটে বসা একজন প্রৌড় লোকের কাছে ৭ টাকা চাইতেই শুরু করলো মা বাপ তুলে খিস্তি খেউর। কন্টাক্টর ছেলেটা খুব বেশী হলে বয়স ১৬-১৭ হবে, লেখা পড়া খুব একটা করে নি, তবে চোখে মুখে বেশ দিগদারী ঘটানোর ছাপ। যাই হোউক, আমরা সবাই ওর উপর গালাগালির বৃস্টি বর্ষন করে ভাড়া ৬ টাকাই দেয়া শুরু করলাম। যখন বাসটা মাজার রোডে আসলো তখন গেটের সামনে দিয়ে নামবার সময় দেখি মহিলা সীটে একজন মহিলা কোলে তার ৬ বছরের মেয়ের কানচেপে বসে আছেন।

বাস থেকে নামার পর অনেক ক্ষন চিন্তা করলাম বাসায় যেতে যেতে, গালাগালি পেরে আসলে কি হলো? আমরা আমাদের নিজের হাতে আমাদের ছোট শিশুদের মনে এভাবেই বিষ ঢুকাচ্ছি। নিজেরা নস্ট হয়েছি অনেক আগেই তাই এখন ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে নস্ট হয় সে ব্যাবস্হাও করছি। এসব বাদ দিয়ে তাহলে একটা কাজ করি না কেন এসব ছোট শিশুদেরকে ডেকে এনে আমরা গালাগালি শিখাই, এরাও গালাগালি শিখে নিজের মান সম্মান উদ্ধার করুক! প্রশ্ন টা হলো কি করা যায় আর কেইবা শুরু করবে? উত্তরটাও জানা। ধরা যাক বেশি কিছু চিন্তা না করে আমি গালাগালি খিস্তি খেউর নিয়ে কোনো চিন্তাই করলাম না। নিজের মতো চলতে থাকলাম।

একসময় আমি বিয়ে করবো। আমার একটা সন্তান হবে। ধরা যাক ছেলে হলো আমার। সে বড় হলো, নিজের পায়ে দাড়ালো। একদিন হয়তো বারান্দায় দাড়িয়ে দেখলাম ছেলে আমার রিক্সা থেকে নামছে, রিক্সা ভাড়া দেবার সময় রিক্সা আলার মা তুলে একটা গালি দিয়ে ভাড়া নিজের মতো দিয়ে দিলো।

ব্যাপারটা কেমন লাগবে, আমার নিজের ছেলে অন্য একজন অসহায় মানুষের মায়ের সাথে যৌন সম্পর্ক গড়তে চায় তাও আবার তাচ্ছিল্যের সুরে? এমনও তো হতে পারে ছেলে আমার পল্লীতে যেতেও দ্বীধা বোধ করবে না,যদি এটাই হয় তাহলে তাকে আমি তাকে কিভাবে মানুষ করলাম। অথবা ধরা যাক আমার একটা মেয়ে হলো, সে একদিন বাসা থেকে ফিরবার সময় হঠাৎ কারো মুখে এধরনের কথা শুনতে পেলো তখন তার মনের অবস্হাটা কি হবে? যদি আপনার উত্তরের সাথে আমার উত্তর একই হয় অর্থাৎ' না এসব শুনবো না' টাইপের হয় তাহলে আসেন কিছু একটা করি। কিছু একটা করতেই হবে। হ্যা, আমাকেই। আমার সাথে কেউ না থাকুক, আমার পোস্ট কেউ না পড়ুক, তবু আমাকেই করতে হবে।

কিছু করতে হবে বলেই আজকে পৃথিবী এতদূর এগিয়েছে, মানব সভ্যতা তার আবিস্কারের উপর সুন্দর একটা সময় পার করছে, তাহলে আমরা অথবা আমি পারবো না কেন? ব্লগের পরিবেশটা আমার খুব পরিচিত এখন, ধরা যাক বাংলাদেশের সাথে আমার যোগাযোগ ইন্টারনেট ফোন আর ব্লগ। ব্লগে ধরে নেয়া যায় সবাই একটা লেভেল থেকে সুশিক্ষিত। তাহলে আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্হান থেকে এ কাজটা কি শুরু করতে পারি না? কি দিয়ে শুরু করবো, উদ্দেশ্যই বা কি? আমি মনে করি এখন সময় এসেছে আমি আমার চারপাশে একটা বার্তা ছড়িয়ে দেয়া, সেটা হলো খিস্তি খেউড় করবো না। পারতপক্ষে কারো মা বাপ বোন তুলে তো নয়ই। যেহেতু নিজে করবো না সেহেতু আমার চারপাশে যারা থাকবে পরিচিত জন তারাও যেনো এটা না করে।

এমনও হতে পারে আমি সৌভাগ্যবানদের দলে মানে আমার আশেপাশে কেউ মা বাপ তুলে গালাগাল করে না। সেটা হলে তাহলে তারা সবাই নিজ নিজ অবস্হান থেকে দায়িত্ব নিক তারা তাদের চারপাশ থেকে এই বদঅভ্যাসটা দূর করতে পারে কি না! দরকার হলে তার কাজে আমরাও শরিক হবো। ফেসবুক, টুইটার, ইয়াহু, নেটলগ এরকম আরও যতো কমিউনিটি ব্লগিং, চ্যাট সাইট, সোশ্যাল ইন্টারেকশন সাইট আছে সেখানে সবাই আমরা নিজ কাধে একটা কাজ তুলে নেই, কাউকে মা বাপ বোন তুলে গালাগাল করবো না। আমার ফেসবুক একাউন্ট নাই। কিন্তু আমার অনেক বন্ধুই আছে যারা ফেসবুকে অনেক জনপ্রিয় এবং অনেক বড় নেটওয়ার্ক গড়ে টুলেছে, তাদেরকে রিকোয়েস্ট করবো, এটাকে ক্যাম্পেইন হিসাবে নিতে।

জানি অনেকেই শুনবে না এ কথা, কিন্তু কাউকে না কাউকে শুরু করতেই হবে। একদিন এদেশে আমার ছেলে মেয়েরা বড় হবে, মানুষের মত মানুষ হবে, তারা কেন এসব কুরুচিপূর্ন ভাষা শুনবে, অথবা মানসিক দিক থেকে এরকম খারাপ ধারনা কেন পোষন করবে? আমার একটা পোস্টে ব্লগার মানবীর কিছু কথা: "শুরুটা হলে অন্যরা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে কথা হলো, আমি কি কাউকে তাঁর মা'কে নিয়ে গালাগাল করার মতো অবস্থানে আছি!!! তাই কোন নারী ব্লগার নয়, বরং পুরুষ ব্লগার এই উদ্যোগটি সবচেয়ে ভালো কার্যকর করতে পারবেন বলে মনে হয়। শুভকামনা ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি রইলো। " "তবে পরামর্শ হলো আন্দোলনটি ব্লগ থেকে শুরু করলে সবচেয়ে ভালো হয়।

Charity begins at home. যতো আপত্তিকর কথা বা বক্তব্যহোক, কাউকে তাঁর মা তুলে গালাগাল যেন করা না হয়, কেউ করলে সেখানে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারেন। আপনি, আপনার মতো আরো যাঁরা এই পোস্টটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বা সমর্থন করেন। কাউকে ভারতীয় বা পাকস্তিানীদের জারজ সন্তান বলে গালাগাল করলে, তাও কিন্তু সেই ব্যক্তিকে নয়, বরং তাঁর মাকেই স্পর্শ করে। নিজের মায়ের প্রতি নুন্যতম সন্মান ও ভালোবাসা যার আছে, তিনি কখনও আরকেজনের মাকে অসন্মান করে কথা বলেননা। ।

" ব্লগে জামাত শিবিরের মতো কুকুরদেরও যখন আমরা রুখতে যাই দেখা যায় তাদেরকেও মা কেও ছাড়ি না, বাবাকেও না। দেখা গেলো তাদেরকে খুব খারাপ ভাষায় গালগালি করাও হয়েছে। আমার মনে হয় বাবা যদি রাজাকার হয় অথাব তার মা যদি রাজাকার হয় তাহলে তাকে গালাগালি দেবার জন্য তার সাথে যৌনতাই? এটা দ্বারা কি প্রমানিত হলো, তারা ৩০ লক্ষ লোককে খুন করায় সামিল ছিলো এবং স হস্র মেয়েদের সম্ভ্রমহানীতে সামিল ছিলো আমরাও তাদের সম্ভ্রম হানি করি, এটাই কি কথা? না এটা কথা না, বলাৎকারের চাইতে মৃত্যু শ্রেয় এটা একটা মেয়ে খুব ভালো করেই জানে, তাহলে কেনইবা তার তরে এমন কালিমা? জামাত শিবির জিরো টলারেন্স কিন্তু এদের উপর আমরা এটুকু করতে পারি যে এদের মা বোন তুলে গালাগাল করবো না। অন্তত সেই ওয়ার্ড গুলো তো নয়ই। আসুন একটু ভাবি! ধরা যাক ৫ মিনিট!



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।