আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেলজিয়ামের আলোচিত এমপি মাহিনুর ওজদামিরের কথা

...... সৃষ্টিশীলতার সন্ধানে

"আমি আমার মাথা থেকে হিজাব খুলবো না, সেটি নির্বাচনে জয়ের জন্যই হোক কিংবা সংসদে যাওয়ার জন্যই হোক। আমি যখন শ্যারবেক মিউনিসিপ্যালিটি কাউন্সিলের জন্য কাজ করেছি তখনও আমি হিজাব পরেছি, সুতরাং আমি সংসদেও এভাবেই যাবো। " অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় দৃঢ়তার সঙ্গে কথাগুলো বলেছিলেন বেলজিয়ামের অন্যতম সংসদ সদস্য মাহিনুর ওজদামির। যেমন কথা তেমনই কাজ, হাজার বিতর্ক ও নিন্দাকে পেছনে ফেলে বেলজিয়ামের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন মাত্র ২৬ বছর বয়স্ক এই রাজনীতিবিদ। বেলজিয়ামের সংসদে সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়েছেন মুসলিম নারী মাহিনুর ওজদামির।

তবে সর্বকনিষ্ঠ হওয়ার কারণে কিংবা মুসলিম নারী হওয়ার কারণে তার নাম যতটা প্রচার পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি তিনি পরিচিত হয়েছেন হিজাব পরার কারণে। এবং অবশ্যই এই হিজাবের পেছনে তার দৃঢ় অবস্থানের কারণেও। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জন্ম মাহিনুর ওজদামিররে। তার দাদা এসেছিলেন তুরস্ক থেকে, তাই তুর্কী অভিবাসী পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম তিনি। তবে একজন বেলজিয়ান হিসেবেই গড়ে তুলেছেন নিজেকে এবং সে পরিচয়েই তিনি গর্ববোধ করেন।

ক্যাথলিক স্কুলে পড়েছেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং প্রশাসনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন। যদিও একসময় আইনজীবী হতে চেয়েছিলেন মাহিনুর তবে পরে রাজনীতিতেই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। অত্যন্ত মেধাবী মাহিনুর ১৪ বছর বয়স থেকে হিজাব পরা শুরু করেন। এবং এজন্য তার মনে কখনোই কোন ধরণের দ্বিধা স্থান পায়নি। কারণ মাহিনুর বিশ্বাস করেন, মাথায় কি পরা হলো সেটি বিষয় নয় বরং মাথার ভেতরের মস্তিষ্কই আসল বিষয়।

তার এই বিশ্বাস তিনি প্রতিফলিত করেছেন তার সব কাজে যার কারণে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই স্থানীয় পর্যায়ে সকলের নজর কাড়েন। ২০০৫ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে শ্যারবেক মিউনিসিপ্যালিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে অংশ নেন এবং বিজয়ী হন এই বেলজিয়ান তরুণী। প্রতিভাবান এবং করিতকর্মা এই তরুণীর ওপর নজর পড়ে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় বড় দলগুলোর। চলতি বছরে তিনি অন্যতম রাজনৈতিক দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিএইচ এ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। মুসলিম হয়েও কিভাবে খ্রিষ্টীয় একটি দলে তিনি যোগ দিলেন সেটি অনেকেরই প্রশ্ন।

এই ব্যাপারে মাহিনুর জানান, আমি নিজেকে অভিবাসী হিসেবে দেখি না। ফলে বিরোধী উদারপন্থী সামাজিক দলে যেতেই হবে এই মানসিকতা আমি গ্রহণ করিনি। এই দলের মানবতাবাদ আদর্শ আমাকে টেনেছে। এছাড়া যুব সমাজের বেকারত্ব দূর করতে এই দলের হয়ে কাজ করাটা সুবিধাজনক হবে বলেও মনে করেন মাহিনুর ওজদামির। সংসদ নির্বাচনের আগে তীব্র বিতর্কের ঝড় উঠেছিল তার হিজার পরা নিয়ে।

সমালোচনা, নিন্দা, এমনকি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা কোনটাই বাদ দেওয়া হয়নি। তবে সবকিছু সত্বেও নিজ অবস্থানে অটল থেকেছেন মাহিনুর। যদিও মাঝে মধ্যে অনেক আচরণে তিনি ব্যথিত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বেশ ভালোভাবেই জয়ী হয়ে সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। সংসদে কোন ধর্মীয় প্রতিক বৈধ কিনা সেটি নিয়েও বেশ জোরেসোরে বিতর্ক তুলেছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

তবে মাহিনুর জানান, সমালোচনা হলেও তার পক্ষে হিজাব ছাড়া সম্ভব নয়। অবশেষে হিজাব পরেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন তিনি। মাহিনুর জানিয়েছেন, তার লক্ষ্য নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা। অনেক জায়গায় হিজাবকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে বিষয়ে জনমত গঠন ছাড়াও মুসলমানদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাওয়া। মাহিনুর ওজদামির প্রমাণ করেছেন যোগ্যতা এবং মেধা দিয়েই যে কোন ক্ষেত্রে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব এক্ষেত্রে ধর্ম কিংবা বর্ণ কোন বাধা হতে পারে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।