আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতালে বিধ্বংসী জামায়াত তিন মাসে নজিরবিহীন সম্পদ ও প্রাণহানি

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। [img|http://www.dw.de/image/0,,16646345_302,00.jpg চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিন থেকে শুরু করে গতকাল শনিবার পর্যন্ত মোট ৯ দিন দেশজুড়ে হরতাল পালন করেছে মানবতাবিরোধী অপরাধে দলগতভাবে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। এই ৯ দিনের হরতালে বাংলাদেশের মানুষ যে সহিংসতা দেখেছে, তা এ দেশের চার দশকের রাজনৈতিক ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায়নি। জামায়াতের ডাকা মাত্র ৯ দিনের হরতালে ৮৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়। জামায়াতের হামলায় নিহত হন পুলিশের সাত সদস্য।

সাধারণ মানুষ, পুলিশ সদস্য ও জামায়াতের কর্মী মিলিয়ে আহত হয় হাজারখানেক মানুষ। নিহত ও আহতদের এ সংখ্যা শুধু হরতালের দিনের। হরতালের দিনের বাইরেও গত জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে যে নৈরাজ্যের পরিবেশ জামায়াত-শিবির তৈরি করেছে, তাতে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ২৬ জন। এর মধ্যেও একজন পুলিশ সদস্য আছেন। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সাক্ষী ও তাঁদের পরিবারের সাতজন সদস্য খুন হয়েছেন, যার জন্য অভিযোগের তীর জামায়াতের দিকেই।

সারা দেশে হরতালের বাইরেও বিভিন্ন জেলায় ও আঞ্চলিকভাবে বেশ কিছু হরতাল পালন করেছে জামায়াত-শিবির। এসব হরতালেও নজিরবিহীন সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিএনপির একক, ১৮ দলীয় জোটের ডাকা প্রায় সব হরতাল এবং ৯টি ইসলামী দলের ডাকা এক দিনের হরতালে সমর্থন ছিল জামায়াতের, এসব হরতালেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করে দেশজুড়ে সহিংসতা চালিয়েছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এসব হরতালের ধ্বংসযজ্ঞে প্রাণহানির পাশাপাশি দেশের সম্পদহানিও ঘটেছে নজিরবিহীন। হিসাবে দেখা গেছে, জিডিপির ক্ষতি হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা আর রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদের ক্ষতির কোনো সীমা নেই; কারণ এর সার্বিক হিসাব করা কঠিন।

এ ছাড়া জামায়াতের সহিংসতায় দেখা যাচ্ছে চোরাগোপ্তা হামলা ও রেলে নাশকতার মতো নতুন সব উপসর্গও। জামায়াতের ঘূর্ণি সন্ত্রাস ও ভাঙচুরের ঘটনা প্রতি সপ্তাহে দেখতে অভ্যস্ত নগরবাসী বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা দেখে ৩১ জানুয়ারির হরতালে। ওই দিন দেশজুড়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠন করা ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত হরতাল পালন করে। এতে সহিংসতায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে তিনজন জামায়াতের কর্মী।

যশোরের মনিরামপুরে পুলিশ সদস্য জহুরুল ইসলাম সহিংসতা চলাকালে অসুস্থ হয়ে মারা যান। ফেনীতে পিকেটারদের ধাওয়ায় খাদে পড়ে মৃত্যু হয় অটোরিকশাচালক ইমন উদ্দিনের। চলতি বছর হরতালে মৃত্যুর ঘটনা সেখান থেকেই শুরু। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিন সাঈদীর রায়ের পর দেশজুড়ে জামায়াতের সহিংসতা আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। তাদের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় হওয়ায় তারা আজ হরতাল ডেকেছে।

এখন পর্যন্ত জামায়াতের বর্তমান তিন নেতা ও সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। এখনো দলটির শীর্ষ নেতাদের রায় হয়নি। ফলে আগামী দিনে জামায়াতের আরো সহিংসতার আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ দেশের মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন দেখেছে। উত্তাল সেই গণ-আন্দোলনে পুলিশের গুলিও দেখেছে।

কিন্তু এত সহিংসতা দেখেনি। গণতান্ত্রিক আমলেও আওয়ামী লীগ দিনের পর পর দিন হরতাল করেছে। বিএনপিও আগে বিরোধী দলে থাকতে হরতাল করেছে, এখনো করছে। কিন্তু তাদের কোনো হরতালে পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ ছিল না। বিএনপির ডাকা সাম্প্রতিক হরতালগুলোয় ককটেল ফাটানো হচ্ছে, মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

আওয়ামী লীগের হরতালের আগের দিন বিআরটিসি বাসে আগুনে ১১ জনের পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও আছে। কিন্তু প্রায় প্রতি হরতালেই নাশকতা, পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ করে ভয়াবহ নজির তৈরি করেছে একমাত্র জামায়াত। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতের হরতাল অনেক বেশি সহিংসতাপূর্ণ। এ কারণে অন্যান্য হরতালে ব্যবসা-বাণিজ্যের যত ক্ষতি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয় জামায়াতের ডাকা হরতালে। জামায়াতের হরতালের দিন পুলিশ একটু বেশি সতর্ক থাকে বলে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশার আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, 'আমরা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন এলাকায় কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনা করে পরিকল্পনা করি। সে অনুযায়ী নিরাপত্তার ছক সাজানো হয়। ' জিডিপির ক্ষতি ১৪ হাজার কোটি, রাষ্ট্র ও ব্যক্তি সম্পদের ক্ষতি বিপুল : ঢাকা বণিক সমিতির (ডিসিসিআই) হিসাবে দেশে এক দিনের হরতালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ হিসাবে জামায়াতের ৯ দিনের হরতালে ২০১৩ সালের এ পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। কিন্তু জিডিপির ক্ষতি দিয়ে জামায়াতের হরতালের ক্ষতি মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।

কারণ সহিংসতা করে জামায়াত যে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি সম্পদ ধ্বংস করেছে, তার মূল্য হাজার কোটি টাকার কম নয়। ফেব্রুয়ারির শেষ দিন সাঈদীর ফাঁসির রায় থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত দেশজুড়ে জামায়াত 'সহিংসতা ও নাশকতা' করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে। ওই কয়েক দিনেই প্রায় ২২৫ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়। জামায়াতের সহিংসতায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপড়ে ফেলা হয় রেললাইন, আগুন দেওয়া হয় সরকারি কার্যালয়, থানায় ও রেলের কোচে। রক্ষা পায়নি আগুন নেভানোর গাড়িও।

তবে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে কানসাটের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আগুন ও লুটপাটে। সেখানেই সরকারের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য সময় জামায়াতের হরতালে রেলে আগুন দেওয়া হয়েছে, সরকারি বাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে। তবে এসবের কোনো সম্মিলিত ক্ষতির হিসাব পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ব্যক্তির সম্পদ নষ্ট করা এবং সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাদের জীবন ও বহু টাকার সম্পদের ক্ষতি করেছে জামায়াত-শিবির।

রেলে নাশকতা বেড়েছে : সড়কপথের পাশাপাশি জামায়াতের নাশকতার বড় লক্ষ্য রেলপথ। হরতালে যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন, রেলপথের ফিশপ্লেট ও স্লিপার তুলে ফেলার পাশাপাশি স্টেশনে থেমে থাকা রেলে আগুন দেওয়াও বাদ দেয়নি দলটির কর্মীরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, ফেনী ও লালমনিরহাটে রেলপথে আগুন দেওয়া হয়। সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থানে খুলে নেওয়া হয় ফিশপ্লেট। কোথাও কোথাও রেললাইন থেকে খুলে ফেলা হয় স্লিপার।

এই দিন রাতে ফিশপ্লেট খুলে নেওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে লাইনচ্যুত হয় আন্তনগর ট্রেন মহানগর গোধূলির কয়েকটি বগি। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১০৮টি নাশকতার শিকার হয়েছে রেলপথ। সর্বশেষ নাশকতার ঘটনা ঘটে গত ৭ মে। ওই দিন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আন্তনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসের পাঁচটি বগি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় শিবিরের নেতা-কর্মীরা। ২৮ মার্চ রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, জামায়াতের সহিংসতায় আগের এক মাসে রেলের ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এর মধ্যে রেলের সম্পদ ধ্বংস হয়েছে আট কোটি ৭০ লাখ টাকার। আর পাঁচ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। গত ২ এপ্রিল ফিশপ্লেট তুলে ফেলায় কুমিল্লা থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে শ্রীমন্তপুরে রেলপথ থেকে ছিটকে পড়ে চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশীথা ট্রেন। এ ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল, তবে ট্রেনের চালকসহ শতাধিক যাত্রী আহত হন। ওই দিন বগুড়ায় স্টেশন ও একটি রেলসেতুতে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির।

সর্বশেষ চট্টগ্রামে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় তারা। জামায়াতের হরতালে ভয়ার্ত মানুষ : পুলিশের কঠোরতা আর সাধারণ মানুষের প্রত্যাখ্যানে এখন আর কঠোরভাবে পালন হয় না কোনো হরতালই। কিন্তু জামায়াতের হরতালে মানুষ থাকে ভয়ার্ত। কখন কোন জায়গা থেকে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাস চালাবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না বলেই মানুষ বাইরে বের হতে ভয় পায়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, মগবাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে সহিংসতা চালাত জামায়াত।

কিন্তু ওই সব জায়গায় পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেওয়ায় সম্প্রতি তারা কৌশল পাল্টিয়েছে। এখন কোন জায়গায় জামায়াত সহিংসতা চালাতে পারে, তা আগে থেকে কোনো ধারণা করতে পারে না সাধারণ মানুষ। এ কারণে জামায়াত-শিবিরের হরতালের দিন রাস্তায় গাড়ি বের হচ্ছে কম। রাজধানীর সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সাইদুর রহমান জানান, বিএনপি বা অন্য দলের ডাকা হরতালগুলোতে তিনি নিয়মিতই রাস্তায় অটোরিকশা চালান। তবে জামায়াতের হরতালে কখনো রাস্তায় নামেন না।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিএনপির হরতালে একটু বেলা হওয়ার পর সাধারণত সহিংসতার ঘটনা ঘটে না। আবার রাজধানীর কিছু এলাকা এড়িয়ে চললে হরতালকারীদের এড়িয়ে চলা যায়। কিন্তু শিবির কখন কোথা থেকে এসে কোন জায়গায় হামলা চালাবে, তা অনুমানও করা যায় না। ' খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর কয়েকটি বিদ্যালয় হরতালের দিনে খোলা থাকে। বিএনপির হরতালে শিক্ষার্থীরা এলেও জামায়াতের হরতালে উপস্থিতি থাকে একেবারেই কম।

একইভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও অন্য দলের হরতালের চেয়েও জামায়াতের হরতালে উপস্থিতি থাকে কম। হরতালকেন্দ্রিক সহিংসতা : হরতালের সহিংসতার আসামি ধরতে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলার নজির জামায়াতই দেখিয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর জামায়াতের সহিংসতায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ বহু মানুষের মৃত্যুর পর বিভিন্ন এলাকায় আসামি ধরতে গিয়ে জামায়াতের সংগঠিত হামলার মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। মার্চ মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জে আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয় পুলিশ। দুই জেলায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত ও বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়।

গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় আরো প্রায় ১০০ জন। এর মধ্যে ২৮ মার্চ রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষে নিহত হয়েছে তিনজন। ২৯ মার্চ সকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় সংঘর্ষে নিহত হয়েছে দুজন। ২২ মার্চ মনিরামপুরে আসামি ধরতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। ওই সময় সংঘর্ষে নিহত হয় একজন।

এর আগে ১০ মার্চ খুলনার কয়রা উপজেলায় আসামি ধরতে গিয়ে এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে জামায়াতের কর্মীরা। সুত্র  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।