পরাঞ্জয়ী...
আজ আমার শততম পোষ্ট (একাডেমিকালি, একচ্যুয়ালী সামুটাকালি ) লিখব, লিখব কি লিখব বুঝতে পারছিনা। নিজেকে একজন সেঞ্চুরিয়ান ওপেনিং ব্যাটসম্যান, স্যরি ব্যাটসলেডি মনে হচ্ছে । সেঞচুরীর কথায় মনে পড়লো ছোটবেলায় আমি ক্রিকেট খেলতাম, আব্বু, ভাইয়া, আমার চাচাতো বোন মায়া,চাচাতো ভাই নয়ন, সমবয়সী চাচা কিরণ আরও অনেকে। উল্টেপেল্টে ব্যাটিং করতাম ঠিকই কিন্তু বোলার হিসেবে পুরাই উরাধুরা। গায়ে শক্তি বেশি হলে যা হয় আর কি, হয় নো বল নয়ত ওয়াইড! ভাইয়া বলতো "যা সর, গাছে চড়ে যে আম পাড়ে তাকে দিয়ে ঢিল ছোড়া হয়না" তবে মারামারিতে ছিলাম মাশআল্লাহ আপনাদের দোয়ায়।
খামচি দিতে আমার জুড়ি মেলা ভার। কোন এ্যাঙ্গেলে শত্রুপক্ষকে খামচি দিলে সে পরাস্ত হবে হু নোজ বেটার দ্যান মি? এখন অবশ্য বড় হওয়ার পর আমার মিত্রপক্ষ আমার খামচির ভয়ে থাকে
আরেকটা কাজ ভাল করতাম সেটা হল গাছে চড়া। কৈশরের একটা বড় অংশ আমার দাদুবাড়িতে কেটেছিল। পাড়ার কোন ক্ষেতে মটরশুটি হল, কোনটাতে খেসারী, আবার কোনটাতে শসা সে আমার আর মায়ার নখদর্পনে। অত্যন্ত যত্নের সাথে এবং অবশ্যই ধৈর্য সহকারে আমরা সেগুলোর সদ্ব্যব্যহার করতাম।
কেউ যদি অতি উৎসাহে বাড়িতে আব্বু বা চাচ্চুর কাছে নালিশ দিত তাহলে তো কথা নাই। তার ক্ষেতের একটা গাছেরও গোড়া মাটির নীচে থাকা অসম্ভব! উঠোনের পেয়ারা গাছে পেয়ারা থাকুক বা না থাকুক বিকেল বেলা ওটায় চড়ে বসে না থাকলে আমার দুপূরের খাওয়াটা ঠিকমত হজম হতনা! দিদা বলতো "গেছু মেয়ি (মেয়ে) কেউ বে (বিয়ে) করেনা" (শরমের ইমো। ) আমার সাফ জবাব "যাদের বাড়ি গাছ নাই আমিও সে বাড়ি বিয়ে করবো না"। দিদা আর কবীর চাচ্চু ছড়া কাটতো " ** গাছে পাতা নাই **র বরের মাথা নাই" আমি ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে যেতাম মুন্ডু কাটা একটা লোক আমাকে বিয়ে করতে আসবে??? হায় হায় লোকটা আমাকে দেখতে পাবেনা, খালি একটা মাথাহীন বডি সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াবে । কী চিন্তার বিষয় ভাবতে পারেন?
স্কুলে আমি খুব গুড গার্ল ছিলাম।
ক্লাশ নাইনে পড়ি খুব সম্ভব। মাহবুব নামের একটা ছেলে ছিল ক্লাশে। এমন পাজি ছিল!! উফফক্লাশে বসে চুইংগাম চিবান আমার একটা বদঅভ্যাস ছিল। চুইংগামের আঠা নিয়ে মাহবুবের মাথায় লাগিয়ে দিলাম একদিন আহা ওর লম্বা ফ্যাশনেবল চুলের কি দুর্দশা! পরদিন পুরা স্টেডিয়াম স্কুলে আমার মত শান্ত স্টুডেন্ট আর ছিলনা কার স্কার্ফে কী লিখতে হবে, কার সীটে বসার জায়গায় এ্যালাটাকো ঢেলে রাখতে হবে, কার ওড়না বেঙ্চের সাথে বেঁধে রাখতে হবে সেসবে আমি ওস্তাদনী! ক্লাশ টেনে আমাদের অর্থনীতির ক্লাশ নিল বিচিত্র স্যার। তিনি কখনও খাতা ঠিক মত পড়তেন না।
সাদ্দাম কে আমি এক্সামের সময় কথার ছলে বললাম "গানের কলি লিখব খাতায় , পয়েন্ট লিখে তার পর গান" গাধাটা এখন আমাদের ইকনমিকস ডীপার্টমেন্টেই পড়ে। ও ভাবলো আমি সত্য বলছি (এ্যাজ এ্যা ফার্সট গার্ল)। সে ও করলো ঐ কাজ। "কারখানার পরিবেশ(শ্রম বিভাজন ছিল প্রশ্ন) :অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন" আহারে বেচারা কি মারটাই না খেল!/#
কলেজে উঠেও আমি আগের মতই গুড গার্ল। সময়টা তখন ২০০৪ এর জুলাই মাস বোধ হয়।
কদম ফুল ফুটেছে গাছে। কদম বকুল শিউলি এসব ফুলের উপর আবার আমার ভয়াবহ লোভ। যা হোক কলেজে গিয়ে উঠলাম গাছে। গাছটা ছিল ছেলেদের হোস্টেলের পাশেই আর প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের সোজাসুজি। স্যার দেখতে পেলেন।
বাবার বন্ধু ছিলেন স্যার। হাজির হলেন গাছের নীচে পিয়নকে ডেকে বললেন মইটা নামিয়ে নিতে " আমি *** কে(আমার বাবাকে) ফোন করবো , ও আসলে তুই নামবি"। আমার এতদিনের সব সঞ্চয়িত প্রেস্টিজ পুরাই প্লাসটিক হয়ে গেল! আমি সাহস সঞ্চয় করে বললাম "স্যার আপনি আমাকে মই না দিলে আমি লাফ দিব, হাত পা ভাঙলে তখন?" স্যার কান দিলেন না কথায়। দীর্ঘ ৩০-৩৫ মিনিট পর মই ফেরৎ দিলেন সেদিনই আমার বন্ধু শাওন, বাবু আর আমি মিলে ডিসিশন নিলাম *** টাকলুর মানসন্মানের ফালুদা বানাবই বানাব! অপারেশন প্রিন্সি হান্ট বাবু স্যারের বাসায় ল্যান্ড ফোনে ফোন দিল "হ্যালো কে বলছো?" স্যারের মেয়ে ফোন ধরেছিল বাবু বললো " মামনি তোমার আব্বু বাসায় নেই?" "না আব্বু এখনও আসেনি" বাবু বললো "আচ্ছা বাসায় ফিরলে বোল আমার কাছ থেকে যে ২০০০ টাকা নিয়েছিল ওটা যেন পৌছে দেয় একটু" "আপনি কে বলছেন আঙ্কেল?" "তুমি *** বাসায় আসলে বলো বুঝতে পারবে! পরে অবশ্য ঐ মামনির সাথেই বাবু প্রেম করেছে চুটিয়ে এখনও করছে
কেউ বাথরুমে ঢুকলে বাইরে থেকে দরজা আটকে দেয়া যে কি মজার একটা কাজ!! আমার এক আপু লাবনী আপু, সে একদিন বাথরুমে ঢুকলো (অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি মাত্র) বাবলী আপু দিল দরজা আটকে। আমি জানিওনা সে কথা।
আমি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছি আর পা নাচাচ্ছি। হঠাৎ মাথার উপর ঠাস করে এক চড়। ককটেল মারলেও এত চমকাইতাম না "ঐ দরজা আটকাইছস ক্যান" "কখন?" আবার চড় "কখন, না?" বাবলী হো হো কইরা হাসে যত দোষ নন্দী (নন্দের স্ত্রী লীঙ্গ) ঘোষ! আরেকটা মজার কাজ হল কেউ দাবা বা লুডু খেলতে বসলে তড়িৎ আক্রমণে খেলা পন্ডুল করা তবে পন্ডুল করে দ্রূত বেগে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট নৈপুন্য থাকতে হবে, নয়ত বুঝতেই পারছেন
আর লিকতে ভালো লাগছে না। আমাকে শততম পোষ্টের জন্য শুভেচ্ছা জানান সবাই। ওয়েট ওয়েট এত হুড়মুড় করে আসছেন কেন,লাইনে আসেন শৃঙ্খলতাই উন্নতীর প্রধান নিয়ামক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।