আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনু গল্প: ফেরিওয়ালা

গলায় ব্যাথা!! আওয়াজ তুলতে পার্তাসি না!!

শেষ চৈত্রের এই তপ্ত দুপুরে রাস্তায় জ্যামে আটকে পড়া বাসের মধ্যে হকারদের ছড়াছড়ি, বাদাম-চানাচুর-বই-কলম-রুমাল কি নেই সেই হকারদের কাছে। একে একে সবাই আসে, ফেরি করে বেড়ায় তাদের পন্য,কেউ কেউ কিছু কিনে নেয় তাদের কাছ থেকে আবার কেউ তাদের হতাশ করে, তারা ফিরে যায় অন্য কোন বাসের উদ্দেশ্যে, অন্য কোন ক্রেতার কাছে.................... অন্যসব হকাদের মত সুমনও বাসে বাসে তার স্বপ্ন ফেরী করে, ফেরী করে বেড়ায় তার দেহ থেকে বেড়িয়ে আসা লবনাক্ত ঘাম, হ্যা, সে ঘাম ফেরী করে, সারাদিন বাসে বাসে ফেরী করা ঘামের বিনিময়ে ২০০-২৫০টাকা আয় হয় তাতেই খুশি হবার কথা ছিল সুমনের কিন্তু ও খুশি হতে পারে না কারণ: আর দশটা হকারের মত সে নয়, সে যে ঘামের ফেরী ওয়ালা। রাতে সবাই যখন বাড়ী ফেরার জন্য বাসে উঠে ভীড় করে সুমন তখনও ফেরী করে বেড়ায় তার লবনাক্ত স্বপ্ন.................... দিনের উপার্জন কৃতটাকা মহাজনের কাছে জমা দিয়ে বসে থাকে হাজিরার টাকা পাবার আশায়, কোনদিন পঞ্চাশ কোনদিন আশি টাকা পায়, ওর হাজিরা নির্ধারণ করা হয় প্রতিদিনের উপার্জনের ভিত্তিতে। টাকাটা হাতে পেয়ে সুমনের খুব ইচ্ছে করে কোন একটা ফার্মেসি কিংবা হাসপাতালে যেতে, কিন্তু পারেনা, পিঠের ওই দগদগে ঘা ভাল হলে তো আর পেট চলবে না, মহাজন আর টাকা দেবে না, স্বপ্নগুলো আর ফেরী করতে পারবেনা, প্রচন্ড ব্যাথায় কুকড়েঁ উঠতেই মহাজনের চ্যালা এসে সুই দিয়ে যায় হাতে, না এটা ওর পিঠের ঘা কমানোর কোন ঔষধ নয়, এটা ব্যাধা ভুলে থাকার সহজ একটা সমাধান!! প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুইবেলা এই ইনজেকশন নেয় সুমন নেয়ার পর আর কোন ব্যাথা থাকেনা পিঠে, যত ব্যাথা থাকে সব ওর বুকের মাঝে, প্যাথ্রোডিন পিঠের ব্যাথা কমায় বুকের ব্যাথা নয়.................... ব্যাথা কিছুটা কমলে বাসায় ফিরে যায় সুমন, বাসা বলতে মতিঝিলের কলোনি পাড়ার কোন এক ফুটপাতে দেয়ালের সাথে পলিথিন বেধে ছাউনি দেয়া একটি ছাপড়া ঘর, এখানে ওরা তিনজন থাকে জসিম, রুবেল আর সুমন ওদের কারোরই বাবা-মা নেই, যদিও থেকে থাকে তা ওরা জানেনা, ছোট বেলায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্না হওয়া পথ শিশু ওরা, শুধু পরিবার নয় স্বাভাবিক জীবন থেকেও ওরা বিচ্ছিন্ন। তিন জনে মিলে এবার মেতে উঠবে সুখের খেলায় জুতো জোড়া দেবার আইকা পলিথিনের মধ্যে নিয়ে তাতে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে ওরা তিনজন, এরপর শুয়ে পড়ে নতুন সকালের আশায়, মাথার নীচে শক্ত ইট উপরে ছেড়া পলিথিন মাঝে ওরা তিন জন, শরীরের ক্ষত স্থান দেখিয়ে চিকিতসা করার জন্য বাসে বাসে সারাদিন সাহায্য চায় যারা আর রাতে মহাজেনর কাছ থেকে ব্যাথার চিকিতসা নিয়ে ফিরে আসে তিনজনের নেশার জগতে....................যেখানে ওরা পেয়েছে জীবনের না পাওয়া কিছু সুখ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।