আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্র-প্রেম

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

মূল: তামান্না খান । অনুবাদ: ইমন জুবায়ের। বেশ কিছুদিন আমাকে বাংলাদেশের সবচে জঘন্য একটি জায়গায় কাজ করতে হয়েছিল -ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

ওই দুঃসময়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতাই ছিল আমার একমাত্র সান্ত্বনার উৎস। সে সময় আমি বারবার সৃষ্টিকর্তাকে বলতাম, ‘এই আগুনের পরশমনি ছোঁওয়াও প্রাণে/ এ জীবন পূর্ণ কর। ’ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল সম্ভবত আমাদের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমেই, তবে আমার ছোটবেলার স্কুলের সেইসব অ্যাসেম্বলি সম্পর্কে আমার খুব বেশি কিছু মনে নেই। তবে আমার মনে আছে - ছ’ বছরের একটি শিশু হারমোনিয়ামে এই গানটি তুলছে: আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি নাচিব ঘিরি ঘিরি গাহিব গান ... সেই বয়েসটা ছিল গান শেখার বয়েস। সিলেবাসে সারেগামাপাধানিসা, একটা যে কোনও রাগ, একটা ছড়াগান, আর একটা রবীন্দ্রসংগীত অনিবার্য ছিল।

অনেক কঠিন বলেই সেইসব দিনে আমি সচেতনভাবেই নজরুল গীতি এড়িয়ে যেতাম। তবে আমি এও বুঝতাম যে -যেহেতু আমি কিছুটা বিদ্রোহ মনোভাবাপন্ন ছিলাম, নজরুল গীতির মতো রবীন্দ্রসংগীত তত উদ্দীপনামূলক নয়, বরং একঘেঁয়ে। তবে বরীন্দ্রসংগীত যে একেবারেই একঘেঁয়ে নয় সেটা বোঝাতে আমার বড় বোন সম্পূর্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আমাকে রবীন্দ্রসংগীত শেখাতে শুরু করে। আমিও রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানে ব্যবহৃত শব্দের আরও গভীরে যেতে থাকি। এবং অচিরেই আবিস্কার করি যে ... তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে ... প্রথমে ভেবেছিলাম সে রকম প্রেমের গান নয়; তার চেয়েও বেশি কিছু ...যত বড় হচ্ছি, রবীন্দ্রনাথও তাঁর কবিতা ও গান, ছোট গল্প ও উপনাস্যের মাধম্যে আমার কাছে ক্রমশ দীপ্যমান হয়ে উঠছেন।

কিশোরী বয়সে ‘গোরা’ পড়ে অবাক হয়ে ভেবেছিলাম সুচরিতা ও ললিতার ভিতর দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কী ভাবে আমার মনের কথা প্রকাশ করেছেন! রবীন্দ্রনাথের নায়িকারা সর্বংসহা আত্মত্যাগী ধরনের নয়, বরং তারা মানবী বলেই ভালোমন্দের মিশ্রণ। তারা ভুল করে, তবে সে ভুল সামাজিক বিধিনিষেধের জন্য নয়, বরং তারা ভুল করতে চায় প্রাত্যহিক জীবনের নিরানন্দতা কাটাতেই । এভাবে বয়স বাড়লে বিনোদিনীর ঈর্ষাকাতরতা কিংবা চারুলতার অভিসার জাস্টিফাই করতে আমার সমস্যা হয়নি। ... তিরিশের কাছাকাছি বয়স, লম্বা, সুদর্শন, রাজকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে- দু’চোখের দৃষ্টি দূরের দিগন্তের দিকে ছড়ানো ... রবীন্দ্রনাথের এই ছবিটা কেমন যেন টানে । আমার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বৃষ্টির এক বিকেলে।

হারমোনিয়ামে সামনে বসে বাজাচ্ছিলাম ... আজি ঝরো ঝরো মূখর বাদল দিনে জানিনে জানিনে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ... হঠাৎই আমার সামনে রাখা একটা বইয়ের পিছনের ছবিতে চোখ আটকে গেল। ছবিটা ছিল রবীন্দ্রনাথের ... তিরিশের কাছাকাছি বয়স, লম্বা, সুদর্শন, রাজকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে- দু’চোখের দৃষ্টি দূরের দিগন্তের দিকে ছড়ানো। আমার গালে উষ্ণ রক্তের প্রবাহ টের পেলাম। সেই শুরু, তারপর থেকে মুগ্ধতার আর শেষ নেই। তারপর থেকে রবীন্দ্রনাথ আজ অবধি আমার সুখে-দুঃখে আছেন।

যখন বিদেশি আরবি ভাষায় লেখা সুরায় আমি আমার মনের কথা আমার সৃষ্টিকর্তাকে বলতে পারি না, তখন আমি বলি ... ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভূ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রেমে পড়ার জন্য অধীর হয়ে থাকতাম। তখনই জানতাম ... রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম প্রেম মেলে না হৃদয় ভাঙার পর নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছি ... ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন মিছে ভালোবাসা ... আমার মনে হয়েছে যে মানুষের অনুভূতির প্রতি ক্ষণের জন্যই রবীন্দ্রনাথ গান লিখে গেছেন। গভীর ব্যথা কিংবা ভয় কিংবা সুখ প্রকাশে যখন যথার্থ শব্দ ধরা দেয় না - তখন ‘গীতবিতান’ অথবা ‘গীতাঞ্জলি’ হাতে তুলে নিলে কাউকে নিরাশ হতে হয় না । তামান্না খান-এর মূল ইংরেজি লেখাটি ‘ Courting Rabindranath’ শিরোনামে গতকাল অর্থাৎ ৭/৫/২০১০ ডেইলি স্টার এর স্টার ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে। লেখাটি পড়ে ভাল্ লাগল বলে অনুবাদ করে শেয়ার করলাম আজকের এই বিশেষ দিনে ... মূল লেখার লিঙ্ক



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।