যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
স্প্যানিশ শিখবো বলে পন করেছি কিন্তু কোনো শব্দই আমার মনে থাকে না। ফাবিয়ালো নামটা মনে রাখতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ছে। দ্বিতীয় বর্ষে। সিটিজেন মিডিয়া নিয়ে তার প্রচন্ড আগ্রহ।
৬-৭ই মে হচ্ছে সিটিজেন মিডিয়ার পাবলিক সামিট যেখানে যে কেউ অংশ নিতে পারে। বাইএনুয়াল এই সামিট এবার চিলিতে হচ্ছে বলে চিলিয়ানদের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে - নেটস্ফিয়ার, তারুণ্যের প্রতিনিধিদের। ফাবিয়ালোর সাথে পরিচয় হবার পরে আমার তাকে টুইটারের মত ফলো করতে হবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম গতকালই। কারণ ল্যাটিন আমেরিকার পলিটিক্স সম্বন্ধে একজন চিলিয়ান ভালো বলতে পারবে, সেই সাথে একজন গাইডও পাওয়া গেলো। তাছাড়া ফাবিয়ালো সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনা করছে এবং একটা স্থানীয় পর্যায়ে টুকটাক লেখালেখিও করছে।
এজন্য আমার জন্য ফাবিয়ালা নামটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল ফাবিয়ালা একটা স্থানীয় বারে নিয়ে গেলো। রাত দশটা হবে। স সভা-সমিতি শেষ হয়েছে আটটায়। তারপরে ছিলো ওয়াইন পানের পর্ব।
বিনো বাংকো বা হোয়াইন ওয়াইন হচ্ছে এখানের মোটামুটি সম্ভ্রান্ত ঘরানার পানীয় যাকে আমরা সামাজিক মদ্য বলতে পারি। গুগলের সৌজন্যে। গতকাল গুগল আনুষ্ঠানিকভাবে পুরষ্কার প্রদান করলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে এডভোকেসি, প্রযুক্তি ও পলিসিতে যারা গুরুত্বপুর্ণ অবদান রেখেছে তাদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ স্থান প্রাপ্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানকে। গুগলের এডভোকেসি বিভাগের হেড এবং গ্লোবালভয়েসের ইভান তুলে দিলো পুরুষ্কারপ্রাপ্তদের হাতে ১০ হাজার ডলারের চেক।
ওয়াইন খেতে খেতে পরিচয় হলো ফাবিয়ালার সাথে।
লাইব্রেরী ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে প্রধান অডিটরিয়াম হলের বাইরে বিশাল জটলা। এত বিচিত্র প্রকারের মানুষ, আকৃতি, বর্ণ ও ভাষায় - এবং সবারই আগ্রহ সবার সাথে পরিচিত হবার। কারণ পুরো বিশ্বকে এমন হাতের মুঠোয় পাওয়া সবসময় সম্ভব না। তবে চিলিয়ানদেরই দেখলাম ভীষণ আগ্রহ অপরিচিতদের সাথে পরিচিত হবার। কারণ সম্ভবত চাইনিজ ছাড়া আমেরিকা মহাদেশের বাইরে থেকে এখন খুব কম মানুষই আসে।
এবং সবচেয়ে অপরিচিত ও দুরত্বের দেশের মানুষের দিকেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ সবার। ফলে ওয়াইনের আড্ডা হয়ে উঠলো সংস্কৃতি বিনিময়ের, আর লাইব্রেরীর মত জায়গাই তো তার জন্য আদর্শ হবে। সান্তিয়াগোর এই লাইব্রেরীরটা আকারে ও প্রকারে সর্ববৃহৎ চিলির মধ্যে - তবে বিষ্ময়কর হলো গ্রন্থাগার-সংস্কৃতি। পুরো চিলি জুড়ে রয়েছে অসংখ্য গ্রন্থগার। প্রায় ৯০% চিলিয়ানের জন্য গ্রন্থাগার রয়েছে তাদের বসতবাটির সন্নিকটেই।
এসমস্ত গ্রন্থাগার থেকে প্রায় ১০ লাখ চিলিয়ানকে ইন্টারনেট পরিষেবা এবং শিক্ষা দেয়া হয়েছে। ঢাকার জাতিয় গ্রন্থাগারের চারগুন বড় হবে সান্তিয়াগোর এই গ্রন্থাগারটি "ইউনিভার্সিডাড দে চিলি"। এমন লাইব্রেরী সান্তিয়াগো মহানগরে রয়েছে আরো কয়েকটা। প্রতিটি গ্রন্থাগারই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত যেখানে মানুষজন ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। প্রচুর ডিজিটাল বইয়ের সমাহার, ইন্টারনেট নির্ভর প্রকল্প যার উদ্দেশ্য লোকজনকে ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষিত করা।
উপরন্তু এসব গ্রন্থাগারে রয়েছে ছোটবড়ো অসংখ্য অডিটরিয়াম, অনুবাদক, উন্নত যন্ত্রপাতি যার ফলে স্থানীয় পর্যায়ের নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির সাথে সাথে আন্তর্জাতিক মানের সভা-সেমিনারও আয়োজন করা সম্ভব হয়।
ওয়াইন পার্টির পরে ফাবিয়ালো নিয়ে চললো স্থানীয় একটা বারে। জুটলো নিউইয়র্কের এমিলি জ্যাকোবি - সে ডিজিটাল ডেমোক্রেসি নামে একটা সংস্থা গড়ে তুলেছে বন্ধুদের নিয়ে। যারা কিছুদিন আগে রোহিংগা এবং আরকানী উদ্বাস্তুদের নিয়ে কিছু কাজ করে এসেছে। এমন আরো ১০/১২ জন সহ স্কুডো পার্টি জমে উঠলো।
স্কুডো হচ্ছে চিলির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিয়ার - দাম ১৪০০ পেসো মানে আড়াই ডলারের মত। খেয়ে ভুত হয়ে গেলাম - ফাবিয়ালা যখন্ হোটেলে পৌছে দিলো তখন আমার বিখ্যাত রুমটাতে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। দুটো কক্ষ নিয়ে একটা সুটে আমি একা সৌভাগ্যবশত জায়গা পেয়েছিলাম, আর রুম না থাকায়। কিন্তু হোটেলে ফিরে দেখি ডাবল বেডেড ছোট রুম পাওযা গেছে এবং আমাকে সেখানে সিফট করা হয়েছে। সংগী ব্রাজিলিয়ান ডিয়াগো...এবং আমি যখন রুমে ঢুকলাম তখন সে বাথরুমে।
দিয়াগো যখন বাথরুম থেকে বের হলো ততক্ষণে আমি গভীর ঘুমে। কতটা হতবাক হয়েছিলো দিয়াগো বাথরুম থেকে বের হয়ে - সেটা জানার সুযোগ আমার হলো না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।