আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলাতের সাত সতের-৪

আমি একজন অতি সাধারন মানুষ। সুন্দরের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই জলে স্থলে অন্তরীক্ষে। এই ব্লগে প্রচারিত ধারাবাহিক উপন্যাস এবং কবিতা আমার নিজ ব্লগ নীল নক্ষত্রে প্রচার করছি।

সকালে বের হয়ে ডিস্ট্রিক্ট লাইনে মনুমেন্ট নেমে ট্রেন বদলে নর্দার্ন লাইন ধরে বোরো স্টেশনে নেমে আর কলেজ খুঁজে পাই না। প্রায় ঘন্টা খানিক খুঁজে তারপর পেলাম।

ওহ সে কি হেস্তনেস্ত, কলেজের চার পাশ দিয়ে ঘুরেছি কিন্তু পাইনি। শেষ পর্যন্ত পেলাম। ভর্তি করে কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, কবে এসে কোর্স মেটেরিয়াল নিতে হবে সব কিছু জেনে কিছু দরকারি কাগজ পত্র নিয়ে বেরিয়ে এলাম। আসার পথে জিজ্ঞেস করলাম কেন পাইনি বুঝেছ? হ্যা বুঝেছি, এইতো এই রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে গেলেই হবে ওই তো ডান দিকে স্টেশন। ঠিক আছে, এই ভাবেই এসো, চল এখন তোমাকে বাঙ্গালি লন্ডনে নিয়ে যাই ওখানে গিয়ে খেতে হবে ভীষন ক্ষুধা লেগেছে।

হ্যা আব্বু আমারও ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু বাঙ্গালি লন্ডন মানে? মানে গেলেই বুঝবে, আমি আগে থেকে বলে তোমার অবাক হবার পথ বন্ধ করতে চাই না। অল্ডগেট ইস্টে নেমে স্টেশন থেকে উপরে এসেই বাংলায় ‘ব্রিক লেন’ রাস্তার নাম লেখা এবং অধিকাংশ উপ মহাদেশীয় লোকজন দেখে খুকু বলল আব্বু আমি এই বারো ঘন্টা ফ্লাই করে এ কোথায় এলাম এ তো দেখছি একে বারে আমাদের ঢাকা। বললাম চল আরো সামনে চল আরো দেখ। যতই এগোচ্ছি অধিকাংশ দোকানের নাম, রাস্তার নাম সব বাংলায় লেখা দেখে খুকু অবাক। যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে।

কিছু দূরে বাংলাদেশের সোনালি ব্যাঙ্ক পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে হোয়াইট চ্যাপেল এলাম। এখানে রাস্তার পাশে ফুটপাথে তাঁবু টানানো শাক সব্জী থেকে মোবাইল ফোন সহ নানা ধরনের জিনিসের দোকান দেখে ও আরো অবাক। লন্ডনেও এমন ফুটপাথে বাজার! নিজের চোখেই দেখছ আর জিজ্ঞেস কর কি। চল আব্বু আজ আমরা ইংলিশ লাঞ্চ করি। ইংলিশ লাঞ্চে কি থাকে? এদের ট্র্যাডিশনাল ইংলিশ লাঞ্চ হচ্ছে ফিশ এন্ড চিপস।

বলে কাছে ছোট একটা দোকানে ঢুকলাম। ওর বয়েসী এক ওয়েট্রেস এসে জিজ্ঞেস করল কি খাব। খুকু বলল আব্বু দুই রকম অর্ডার দেই তাই দুইটাই টেস্ট করে দেখতে পারব। হ্যা দাও। একটা দিল মাছ এবং চিপস, সাথে মটর শুঁটি আর স্যালাদ, আর একটা চিকেন এবং বেকড বিন্স সাথে টোস্ট আর স্যালাদ।

অর্ডার নিয়ে ওয়েট্রেস মেয়েটা চলে গেলে খুকু বলল আব্বু মেয়েটা যেমন সুন্দর তেমন ওর আচরণ তাই না? আমি বললাম হ্যা, আবার এলে জিজ্ঞেস করে দেখ হয় তো ও তোমার মত ছাত্রী। সত্যিই মেয়েটা যখন দুই ট্রেতে করে দুই হাতে খাবার এনে টেবিলে নামিয়ে রাখছিল তখন খুকু জিজ্ঞেস করল তুমি কি এখানে ফুল টাইম কাজ কর? না আমি পার্ট টাইম। তা হলা অন্য সময়ে কি কর? আমি পড়াশুনা করি। কোথায়? ওর কলেজের নাম শুনে খুকু বলল, আমি এই মাত্র ওই কলেজে ভর্তি হয়ে এলাম। তাই নাকি?তাহলে তো তুমি আমার কলেজ মেট! হ্যা তাই দেখছি।

তোমার কথা শুনে মনে হয় না তুমি ইংলিশ, আমি কি ভুল বলছি? না তুমি ঠিক ধরেছ, আমি পোলিশ। বাহ! দোকানে আমরাই দুই জন কাস্টমার ছিলাম, খেতে খেতে ওরা আরো কিছু আলাপ করল। আমি শুনছি আর খাচ্ছি আর দেখছি খুকু এখানে ভাষা নিয়ে কোন অসুবিধায় পরবে কি না। দেখলাম মোটা মুটি চলছে, কালই বাংলাদেশ থেকে এসে কি আর রাতারাতি ইংরেজ হয়ে যেতে পারে?তবে যা বলছে তা মন্দ না। একটু নিশ্চিন্ত হলাম।

মেয়েটির নাম আলেকজান্দ্রা। আলেকজান্দ্রা আবার এক নতুন কাস্টমার এলে তাকে এ্টেন্ড করতে গেলে খুকু বলল, মেয়েটা খুব ভাল, তাই না আব্বু?ওকে কিছু টিপস দিয়ে দিও। আচ্ছা, সে তুমিই দিও বলে একটা ৫ পাউন্ডের নোট বের করে ওর হাতে দিলাম, তবে এখানে ৯৫% ভাগ রেস্টুরেন্টে টিপস মালিকেরা নিয়ে নেয়, কর্মচারীদের দেয় না। কাজেই যাবার সময় তুমি কাউন্টারে যে আছে তাকে দেখিয়ে ওকে ডেকে ওর হাতে নোটটা দিয়ে ওই লোককে বলবে এটা ওকে দিলাম। খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম কি আব্বু এই খাবার কেমন লাগছে? আমি তোমার মেয়ে না? এই তো বাবা বিদেশে না এলে জীবনের অনেক কিছু অজানা থেকে যায়, কি করে পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে হয় তা কিছুই বোঝা যায় না।

এখন এসেছ, দেখবে পৃথিবীটা কেমন। সেদিন খাবার পাট সেরে রাস্তার ও পাশে ইস্ট লন্ডন জামে মসজিদ দেখালাম আর একটু এগিয়ে রয়াল হাসপাতাল দেখালাম। এখান দিয়ে রাস্তা পার হয়ে একটু বাম দিকে বার্কলেজ ব্যাঙ্ক এ নিয়ে গেলাম একটা একাউন্ট করার জন্য। রিসিপশনে যে ছিল সে আমাদের সামনের এক জন বয়স্ক বাঙ্গালির সাথে বাংলাদেশের সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিল। আমরা তার পিছনে দাঁড়ালাম।

সামনের বয়স্ক ভদ্রলোকের কাজ হয়ে গেলে আমরা এগিয়ে বাংলায় বললাম আমরা একাউন্ট করতে চাই। আমাদের কথা শুনে সে কিছু বোঝেনি এমন একটা ভাব করে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল কি বললে? আবার বাংলায় বললাম আমরা একটা স্টুডেন্ট একাউন্ট করতে চাই এবারও সে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, কি বললে? বললাম আপনি এই একটু আগে ওই ভদ্র লোকের সাথে বাংলায় কথা বলছিলেন আর এখন আমার কথা বুঝতে পারছেন না? সে আবার ইংরেজিতে বলল, কি বললে? বুঝলাম ইনি এক মাত্র আঞ্চলিক ভাষা ছাড়া শুদ্ধ বাংলা জানেন না কিংবা বাঙ্গালি বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পান তাই তখন বাধ্য হয়ে ইংরেজিতেই বললাম। শুনে বলল এখানে আমরা স্টুডেন্ট একাউন্ট করি না, আপনারা অন লাইনে স্টুডেন্ট একাউন্ট করুন। এমনিই এর উপর আমার কিছুটা রাগ মেশানো বিরক্তি ভাব এসেছিল তাই আর কিছু না বলে ধন্যবাদ জানিয়ে ওর সামনে থেকে চলে এলাম। আবার কাছাকাছি কোন ব্যাঙ্ক আছে দেখতে হবে, খুঁজে লয়েডস ব্যাঙ্ক পেলাম রাস্তার ওপাড়ে।

এখানে এসে জানালাম। এরা আবার বলছে ঠিকানার প্রমান লাগবে। আরে এ এসেছে মাত্র গত পরশু সে এটা কি ভাবে দিবে?এই তো কলেজ থেকে যে চিঠি দিয়েছে ওতে তার স্থানীয় এবং স্থায়ী দুই ঠিকানা দেয়া আছে। না এতে হবে না। কি হলে হবে? ওর নামে বাসার যে কোন বিলের একটা কপি হলেই হবে।

আচ্ছা আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবে যে এক জন মানুষ যে দেশে ছিল না সে কি করে এই বিল দেখাবে?তা হলে কি বলতে চাও ও এখানে আসার আগে ওর নামে বাসা করে রাখা উচিত? দেখ এ কথার জবাব আমি দিতে পারব না কারন আমাদের যে নিয়ম আমি তোমাকে তাই বলে দিলাম। এ কথা বলে একাউন্ট করার নিয়ম সংক্রান্ত ছাপান একটা কাগজ আমাকে দিয়ে বলল দেখ এটা পড়লেই জানতে পারবে কি কি দেখাতে হবে। কাগজটা নিয়ে পড়ে দেখলাম ও লোক যা বলেছে তাই লেখা। বেশ হবে না যখন তা হলে আর কি। বের হয়ে পাশের এইচএসবিসি ব্যাঙ্ক এ গেলাম ওখানেও ওই একই কথা।

সেদিনের মত আর একাউন্ট করা হোল না, ব্যাঙ্ক থেকে বের হয়ে এলাম। মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম এখন কি আরো কিছুক্ষণ ঘুরে দেখবে না কি বাসায় যাবে? না আব্বু আজ আর পারছি না, খুব টায়ার্ড লাগছে, বাসায় চল। তুমি তো কাল আছ কাল আবার বের হব। বেশ চল, এখানে রিকশা নেই যে এই রিকশা চল বলে লাফ দিয়ে উঠে পরবে, এখানে একটু হাটতে হবেই। আজ একটু হেঁটেছ বলে এমন টায়ার্ড লাগছে।

(চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।