তুমি যদি কাউকে তোমার আপন করতে চাও, তাহলে প্রথমে তুমি নিজে তার আপন হয়ে যায়। দেখবে একসময় সে নিজেও তোমার আপন হয়ে গেছে
(আগের পর্বের পর থেকে)
এই ক’দিনে আমি আরোহীকে নিয়ে কম স্বপ্ন দেখি নি।
অনেক স্বপ্নের জাল বুনেছি তাকে নিয়ে।
কিন্তু স্বপ্ন যে স্বপ্নই হয়, তা বুঝতে আমার অনেক দেরী হয়েছে।
আজ সকাল ১০টায় আরোহী আমাকে ফোন করে বললো, “ আরমান, আমি কাল ক্লিনিকে যাবো টেষ্ট করাতে?”
আমি বললাম,“ঠিক আছে যাও।
”
“হাতে টাকা নেই। টাকা লাগবে?”
“কত?” জানতে চাইলাম আমি।
“বেশী না দশ হাজার হলেই চলবে। ” বললো আরোহী।
“ঠিক আছে, তুমি কোন চিন্তা করো না।
আমি এক্ষুনি কুরিয়ার সার্ভিসে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুমি কাল সকালে পেয়ে যাবে। ”
পরদিন রাতের ঘটনা
রাত ৮টার দিকে আমি আরোহীকে ফোন করলাম।
জানতে চাইলাম,“ কি খবর তোমার?”
আরোহী বললো,“ ভালোই। ”
“ আমি তোমার খবর জিজ্ঞেস করি নি। তোমার টেষ্টের খবর কি?”
“ আমি প্র্যাগনেন্ট নই।
”
“তাহলে তো ভালো খবর। ”
মেয়েরা যাকে একবার মন দেয়, তার জন্য নাকি জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করে না-একথাটা আরোহী আরেকবার প্রমাণ করলো।
আরোহী বললো,“আরমান, এ ক’দিন আমি তোমাকে যা বলেছি, তার একটাও আমার মনের কথা ছিল না। তার সবগুলোই আমার মুখের কথা ছিল। ”
আরোহীর এ কথাটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
আমি বললাম,“মানে!”
“ আমি ওকে(জয়কে) মনে প্রাণে ভালবাসি। ওর জায়গায় আমি কখনো অন্যকে কাউকে বসাতে পারবো না। আর আমি তোমাকে বড় ভাইয়ের মতো মনে করি। তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমাকে স্বামীর স্থানে বসাবো?”
যদিও সে সত্যি কথাগুলোই বলেছে, তারপরও তার কথাগুলো শোনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। তবে আমি সেটা প্রকাশ করি নি তার সামনে।
আমি খুব সাধারণভাবে বললাম,“ আরোহী, জীবনটা তোমার। তোমার জীবনকে নিয়ে তুমি কি করবে, সেটা আমার চেয়ে তুমি ভালো জানো। তবে একটা কথা মনে রেখো, আমি শুধু একজন বিপদে পড়া মানুষকে সাহায্য করতে চেয়েছি। ”
(আরোহীর জন্য আমারও(মোনা) খুব মায়া হয়েছে। মেয়েটা বিপদে পড়েছিল বলে আমার ভাইয়া(আরমান) তাকে সাহায্য করেছে।
কাউকে সাহায্য করলে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করা উচিৎ- এ কথা ভাইয়া আমাকে শিখিয়েছে। )
আরোহী এবং জয়ের সম্পর্কটা আবারও আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এ কারণে আরোহী আমাকে এড়িয়ে চলছে।
আমিও আর চাই না আরোহী আর জয়ের জীবনের সাথে জড়াতে। কিন্তু আরোহীই আমার পিছু ছাড়ছে না।
আজ দুপুর দুটো বাজে আরোহী ফোন করলো আমাকে।
আমি ফোন রিসিভ করতেই সে বললো,“ আমাকে এক্ষুণি একটা গ্রামীণের তিনশত টাকার কার্ড পাঠাও। ”
আমি বললাম,“ পারবো না। ”
“কেন?”
“ সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ”
“ জানতে পারি সেটা?”
“না।
”
“কেন?”
“আমি এত কথা বলতে পারবো না। ”
“ এতদিন দিয়েছো, তা হঠাৎ আজ কেন দেবে না?”
“আমার ইচ্ছে। ”
“বুঝতে পারছি, আর বলতে হবে না। তারমানে, তুমি এতদিন আমার জন্য যা করেছো, তা শুধু আমাকে কাছে পাবার জন্য করেছো, তাই না?”
কথাটা শোনে আমি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। রাগে ফোস ফোস করছি।
এখন যদি আরোহী আমার সামনে থাকতো, তাহলে আমি কি যে করতাম, তা আমি নিজেও জানি না। শুধু বলতে পারি, আজকের পর থেকে সে দুনিয়ার আলো দেখতো না। অর্থাৎ আমি তাকে খুন করে ফেলতাম।
আমি খুব শান্তভাবে আরোহীকে বললাম,“ কথাটা তুমি ঠিক বলো নি। আমি কখনোই তোমাকে পাবার চেষ্টা করি নি।
”
আরোহী,“ তাহলে আমাকে কার্ড দিবে না কেন?”
“ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ”
“ আমি অতো শতো বুঝি না, এখন যদি তুমি আমাকে কার্ড না দাও, তাহলে আমি মনে করবো, আমার ধারণা-ই সত্যি। ”
কি আর করা? অগত্যা বাধ্য হয়ে আমি গ্রামীণের তিনশত টাকার কার্ড কিনে আরোহীর নাম্বারে এসএমএস করে দিলাম।
(আরোহীর এ কথাগুলো জেনে আমার(মোনা) খুব ঘৃণা হচ্ছে তার প্রতি। আমি ভাবতেও পারছি না যে, মানুষ এত নিচু মনের অধিকারী হতে পারে।
এ কথাগুলো বলার আগে সে একবারও চিন্তা করলো না যে, এ মানুষটাই তাকে তার বিপদে সাহায্য করেছে। আসলে মানুষ এত স্বার্থপর (তবে সবাই নয়)! আমরা (অনেকেই) উপকারীর উপকারের কথা খুব সহজেই ভুলে যাই। এ ঘটনার পর আমার(মোনা) ভাইয়ার উচিৎ ছিল আরোহীর সাথে যোগাযোগ না করা। কিন্তু আমার (মোনা) ভাইয়াটাও আরেক বেহায়া। এতকিছুর পরও সে আরোহীর সাথে যোগাযোগ করেছে।
)
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।