আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“প্রেম, দশমীর রাত কিংবা কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল”

ভাল লাগে ভালকে, খারাপ লাগে খারাপকে

“ভাই ফোন আসে কই ?”- যখন ঢাকা ভার্সিটিতে আসতাম, রুমের ছোট ভাইয়েরা বলত। “আপনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, ফোন আসেনা কেন?”--- আমি হাসতাম। কেন আমার ফোন আসেনা। বুদ্ধিমান হলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কি বুঝাতে চেয়েছি। তোমার ‘শ্রাবস্তির কারুকার্য” মুখ পানে চেয়ে আমি মনোমুগ্ধ হয়ে বসে থাকতে পারিনা।

সারারাত তোমার সাথে গল্প করার মত আমার কিছুই নেই। কি গল্প করব। তারা দুজন, কি তাদের ভালবাসা! আমার হিংসা করতে ইচ্ছা করত কিনা সেটাও ভাবা যেতে পারে। কিভাবে ভালবাসে? প্রেমটা কি? আমি তোমায় ভালবাসি যদি তুমি সুন্দরী হও, শুধু সুন্দর মুখকে ভালবাসতে ইচ্ছা করে, হয় তার সুন্দর মুখ, নয়তো তার আভিজাত্য, নয়তো তার বংশ, নয়তো তার মেধা। ভালবাসা কি হৃদয় দ্বারা পরিচালিত? আমি বিশ্বাস করিনা।

যখন চোখ দ্বারা, তখন আমি সুন্দর মুখটাই খুজি। বুদ্ধি দ্বারা যখন আমি হয়তো মেধা, বা প্রাচুর্য, অথবা অন্য কিছু খুজি। আমি ভালবাসতে পারিনা আমার পাশের সবচেয়ে কুৎসিত মুখটিকে। ইংরেজি শব্দ ‘infatuation’ ভালবাসার পরিবর্তে ব্যাবহার করা যেতে পারে। এটা কখনই ভালবাসা হতে পারেনা।

অনেকদিন আগে একটি ইরানি মুভি দেখছিলাম, মুভির নায়ক ছিল অসচ্ছল, কিন্তু নায়িকা ছিল সচ্ছল। নায়কের সাথে যখন নায়িকার পরিণয়ের সম্ভাবনা কমে আসে, নায়ক আমায় মুগ্ধ করে বলে পৃথিবীটা এমন হবে কেন, অসচ্ছল ছেলে বা মেয়ের সাথে সচ্ছল মেয়ে বা ছেলের বিয়ের মাধ্যমে দুজনেই সচ্ছল হতে পারে, পৃথিবীতে ভারসাম্য আসতে পারে। ভালবাসা/প্রেম লেনিনের যুগের শ্রেণী বৈষম্য ফিরিয়ে এনেছে। ভালবাসা শ্রেণীহীন সমাজ দিতে পারেনা। আমি তোমার জন্য কখনই জীবন দিতে পারবনা, তোমার জন্য আমি চাঁদ এনে দিতে পারবনা।

কি করে আমার প্রেম হবে? আমি দারুন রোমান্টিক। কেউ বিশ্বাস করেনা। ইংরেজি সাহিত্যে নারীকে ছাড়াও কবিতা লিখে রোমান্টিক কবির আখ্যা পেয়েছে অনেকেই। তুমি চল আমার সাথে, নদীর ধারে বসে নদীর স্রোত দেখি, দশমীর রাতে মধ্য মাঠে আকাশের দিকে চেয়ে থাকি। খালি পায়ে জমির আইল ধরে হেঁটে আসি আমাদের সবচেয়ে দুরের ধানক্ষেত পর্যন্ত।

তবে আমি কি রোমান্টিক নয়। তুমি আমাকে ভালবাসবেনা, আমি তোমাকে ভালবাসতে বলবনা, কারন আমি কুৎসিত অথবা প্রাচুর্যহীন। কামকে ভালবাসা বলতে অসুবিধা কোথায়? তোমাকে আমি ভালবাসি কিন্তু আমার চূড়ান্ত অভিলাষ কি? তুমি নিশ্চয় বলবে বিয়ে কিন্তু আমি বলব কাম, তুমি একটু ভেবে দেখো? আমার অতি আপন বন্ধু কখনোও ভাবেনি সে মন খারাপ করে আছে। আজ সে কাঁদছে। প্রেম ভালবাসা দারিদ্র্যের উরব্ধে, ছোটবেলায় বাংলা ছিনেমায় শুনতাম।

কিন্তু আজ দারিদ্র্যের কারনে সে বলতে পারছেনা। এখনো চাকরি পায়নি তাই সামনে যেতে পারছেনা, মেয়েটির বাবা মা আমার বন্ধুকে ছেড়ে যেতে বলেছে, আমি প্রেম করেনি, কি উপদেশ দিব। আমার বাবা মা আমাকে খুবই ভালবাসে, আমার আর দুই ভাই বোন এর চেয়ে অনেকখানি বেশি ভালবাসে। কিভাবে ভালবাসা সম অথবা সুষম হল? তারা কি দোষ করল। তুমি জাননা বাবা মা যে ছেলেটা অকর্মা, উচ্ছরংখল সেই ছেলেটাকে অনেক বেশি ভালবাসে।

আমার ক্ষেত্রে আবার এটা ভিন্ন। আমার ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাকে দেখতাম সবচেয়ে উচ্ছ্রংখল ছেলেটার সাথে প্রেম করে। আমি নিজেকে অনেক নম্র ভদ্র মনে করতাম, অনেকের দ্বারা স্বীকরত। সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটা সবচেয়ে ভদ্র ছেলেটাকে বেঁছে নিতে পারেনা। উচ্ছ্রঙ্খল ছেলেটার উচ্ছ্রঙ্খলতায় সে মুগ্ধ হতে পছন্দ।

পরম ভালবাসা বলে কিছুই নেই। এমন কি মা বাবার ভালবাসায়ও। হুমায়ুনের একটা উপন্যাস পড়েছিলাম। সেখানে তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন মা বাবাও অন্যকে দেখানোর জন্য ভালবাসে। আমার পাশের বাড়িতে একটা ছোট বাচ্চা আছে।

সে কথা বলতে পারেনা, সবসময় দেখি মুখ দিয়ে লালা পড়ে, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, দুটা পা ই তার ল্যাংড়া। এতো কষ্ট লাগে। এখানে মা বাবার ভালবাসা কেমন পরম। ছেলেটা কিছুই চাইতে পারেনা, ভাল পোশাক পাইনা, ঠিক ওই ছেলেটা পাই যে সুস্থ, সুন্দর। ভালবাসা আর পরম থাকলনা।

আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু যখন ভার্সিটিতে পড়তাম বলত প্রেম করলে অনেক কিছু শেখা যায়, সামাজিক হওয়া যায়। আমার স্যার যিনি মারা গেছেন, অনেকের কাছে আইডল ছিল, আমি মনে করতাম না। বলতেন মানুষ জ্ঞান অর্জন করে চার পন্থায়, আহাদের জ্ঞান, সিনার জ্ঞান, প্রকৃতির জ্ঞান, বইয়ের জ্ঞান। যাইহোক তোমার কাছ থেকে জ্ঞান অর্জনের কিছুই নেই। সারারাত তোমার সাথে শেখার জন্য কিছুই কথা হবেনা।

কি কথা হবে আমার আরেক বন্ধুর কথা শুনে আমি ভালই ধারণা পেয়েছি। মাঝে মাঝে শুন্যতা অনুভব করি। আমার অতি প্রেমিক বন্ধুটি বলে, তোর যদি একটা সম্পর্ক থাকতো, তাহলে এই শূন্যতা থাকতনা, আমি বলি, তা বটে কিন্তু যন্ত্রণা থাকত। তবে একটা দিক ভাল থাকত, বিয়ের জন্য নিরাপদ থাকা যেতো। আমি যখন তাকাই একটা মেয়েকেও সম্পর্কহীন দেখিনা।

কিন্তু পাত্রী আসছে। আল্লাহ এতো পাত্রী আসছে কোথা থেকে। নিশ্চয় অন্যের প্রেমিকা হবে আমার অর্ধাঙ্গিনী। চলবে.......................................

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.