আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার… ঘুরে আসা যায় স্কাই ব্রীজ পর্যন্ত……

বিবর্ণ জীবনে কয়েক ফোটা রং......

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতীক। এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ার গর্ব এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণ। সুতরাং কুয়ালালামপুর বেড়াতে এসছি আর পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার দেখব না, এটা হতেই পারে না। গত ১৬ তারিখে কুয়ালালামপুর পৌছার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩ দিন গিয়েছি পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার দেখতে।

মাত্র কিছুদিন আগেও এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উচুঁ ভবন। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারকে উচ্চতায় প্রথম ছাড়িয়ে যায় তাইওয়ানের “তাইপে-১০১” নামের ১০১ তলার সুউচ্চ ভবনটি। এরপর উচ্চতার দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে মাথা তুলে দাঁড়ায় দুবাইয়ের “বুর্জ খলিফা”। মাত্র কয়েকদিন আগে উদ্বোধন করা হয়েছে ১৫৮ তলা বিশিষ্ট এ ভবনটি। উচ্চতার দিক দিয়ে এখনো বিশ্বের তৃতীয় স্থানটি নিজের দখলে রেখেছে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার।

৮৮ তলা উঁচু এই টুইন টাওয়ার। টাওয়ারটি তৈরী করেছে মালয়েশিয়ার তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানকারী বৃহৎ সরকারি কোম্পানী পেট্রোনাস। এই টুইন টাওয়ারই হচ্ছে পেট্রোনাসের প্রধান কার্যালয়। ৮৮ তলা উচু দুটি পৃথক টাওয়ারকে সংযুক্ত করেছে উপরের দিকে ২তলা বিশিষ্ট একটি ব্রীজ, আর নিচের দিকে ৮তলা বিশিষ্ট একটি শপিংমল। উপরের ব্রীজটির নাম স্কাই ব্রীজ।

টাওয়ারের ৪১ এবং ৪২ তম তলাকে সংযুক্ত করেছে এই ব্রীজ। আর নিচের শপিংমলটির ৫তলা মাটির নিচে এবং বাকি ৩তলা সমতলে অবস্থিত। কুয়ালালামপুর শহরের যে স্থানে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার অবস্থিত, তার নাম কে এল সি সি বা কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার (KLCC or Kuala Lumpur City Centre) । কে এল সেন্ট্রাল থেকে মনোরেলে সরাসরি যাওয়া যায় কে এল সি সি তে। স্টেশনের নামও কে এল সি সি, যেটি টুইন টাওয়ারের একদম নিচেই ভূগর্ভে অবস্থিত।

ভাড়া ১.৬ রিংগিত। স্টেশন থেকে বেরিয়ে শপিংমল পাবেন। এখানে সবকিছুর দাম কিছুটা বেশি, টুরিস্ট এরিয়া বলে। তবে এখানকার ফুড কোর্টে খাবারের দাম বেশ সস্তা। আর একটা ব্যাপার, সেটা হল, মালয়েশিয়ার প্রায় সব শপিং মলেই ফুড কোর্ট থাকে একদম আন্ডার গ্রাউন্ডে, কিন্তু এখানে ফুডকোর্ট আছে একেবারে উপরের ফ্লোরে, ৮ম তলায়।

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের চারপাশ খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো। টাওয়ারের পিছনের দিকটা শুধুই পর্যটকদের জন্য। এখানে রয়েছে নানা রকম বিনোদনের ব্যবস্থা। বিকেল বেলা হয় ওয়াটার শো। দেখতে মজাই লাগে।

কৃত্রিম একটি সেতু আছে এখানে। যেটি এমনভাবে তৈরী যে, আপনি সেখানে দাঁড়িয়ে পুরো টাওয়রের ছবি তুলতে পারবেন। এছাড়া অন্য জায়গা থেকে ছবি তুললে আপনি হয়তো এত উচু টাওয়ারের পুরো ভিউ পাবেন না। পর্যটকদের জন্য স্কাই ব্রীজ হচ্ছে সেরা আকর্ষণ। সেখানে উঠতে পারা টা জীবনের এক বিশাল সংগ্রহ।

আর তাই কেউই কুয়ালালামপুরে এসে স্কাই ব্রীজ না ঘুরে যায় না। আমিও গিয়েছিলাম সেই বিখ্যাত স্কাই ব্রীজের অভ্যন্তরে। আগেই বলেছি ২তলা বিশিষ্ট এ ব্রীজটি টাওয়ারের ৪১ এবং ৪২তলাকে সংযুক্ত করেছে। তবে পর্যটকদের জন্য শুধু ৪১তম তলায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। উপরের অংশটি পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত।

স্কাই ব্রীজে যেতে চাইলে আপনাকে খুব সকালেই পৌছে যেতে হবে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারে। কেননা, এখানে কেবল সকাল ৯টা পর্যন্তই পর্যটকদের মধ্যে স্কাই ব্রীজ পরিদর্শনের টিকেট দেওয়া হয়। টিকেট নিতে কোনো খরচ নেই। ফ্রি। তবে লাইন হয় অনেক লম্বা।

তাই তাড়াতাড়ি যাওয়াই ভাল। টিকেট নেওয়ার সময়ই আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে আপনার জন্য নির্ধারিত পরিদর্শন সময়। সময় জেনে নিয়ে আপনি আপনার অন্য কোন কাজ থাকলে সেরে আস্তে পারেন। তবে নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগেই আপনাকে হাজির হতে হবে স্কাই ব্রীজ পরিদর্শন ডেস্কে। স্কাই ব্রীজ পরিদর্শনের আগে আপনাকে একটি স্বল্প দৈর্ঘ চলচিত্র দেখানো হবে, যা থেকে আপনি পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন।

এরপর আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে সেই কাক্ষিত স্কাই ব্রীজ পরিদর্শন করাতে। অত্যন্ত দ্রুত গতির যে লিফটে করে স্কাই ব্রীজে নিয়ে যাওয়া হয়, ৪১ তলায় উঠতে সেটার সময় লাগে ৫ থেকে ৭ সেকেন্ড। একসংগে ১০ জনের করে একটি দলকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যেক দলের জন্য নির্ধারিত সময় থাকে মাত্র ১০ মিনিট। এই ১০ মিনিটেই আপনি দেখে নিতে পারবেন অত উচু থেকে কুয়ালালামপুর শহরের সৌন্দর্য।

সৃষ্টি হবে জীবনের নতুন আরেকটি সৃত্মি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।