বাংলাদেশের চিরায়ত ঐতিহ্যের মধ্যে একটি হল প্রতি বছরই বোর্ডের বই প্রকাশে গড়িমসি করা। রমজানে জিনিষপত্রের দাম বাড়ার মতই আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে এই সমস্যাটি। এবছর সরকার বেশ যুগান্তকরী যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে সেটি এখনো অনলাইন জনগোষ্ঠীর অনেকের কাছেই অজানা রয়ে গেছে। যদিও সমস্যার সমাধান না করে বিকল্পের ব্যাবস্থা করা এক ধরণের ফাঁকিবাজি তাও মন্দের ভাল হিসেবে একেবারে খারাপ না। বাংলাদেশের স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা সরকারী কারিকুলামে চলে এবং তার পাঠ্যবই প্রণয়ন ও মূদ্রণের দায়িত্বও সরকারেরই।
আর এবছর এই বইগুলো সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনে ডাউনলোড করে পড়ার জন্য দিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে একজন শিক্ষার্থীর ইন্টারনেটের সংযোগ থাকলে সে কম্পিউটারেই বইগুলো ডাউনলোড করে দেখে নিতে পারবে।
যদিও এই সমাধানের বাস্তবতা নিয়ে সমস্যা আছে। কারণ বই নিয়ে মূলত সমস্যায় পড়ে গ্রামে শিক্ষার্থীরা যাদের ইন্টারনেট তো দূরের কথা কম্পিউটারেরও কোন সংযোগ নেই। ফলে তাদের পক্ষে এই সুযোগ থেকে সেবা নেয়া মোটামুটি অসম্ভব।
তবে আমার ব্যাক্তিগত মতামত হল এই সেবার ফলে শহরের কিছু শিক্ষার্থীও যদি বই ডাউনলোডের নামে কিছু জিনিষ ভাল শেখে তাও পরিকল্পনাটি একেবারে মাঠে মারা যায়না।
আরেকটি মজার জিনিষ হল, এই ব্লগেরই একজন ব্লগার বেশ কিছুদিন আগে বলেছিলেন সরকার কেন পাঠ্যপুস্তকগুলো ওপেনসোর্স ধরণের কিছু করে দেয়না যেন যে কেউ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারে? মনে হয় যেন তার চিন্তার প্রতিফলনেই সরকারের এই কার্যক্রম। ব্লগার হামীমের লেখা পোস্টটি কেউ চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এই লিঙ্ক থেকে।
এখনো এই সেবার কিছু সমস্যা রয়ে যায়। আমি নিজে যখন শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইটটিতে যাই, তখন কোন বই ডাউনলোড করতে গেলেই দেখাচ্ছিল যে “ব্যান্ডউইথ লিমিট এক্সিডেড”।
অর্থাৎ ধারণক্ষমতার বেশী দর্শক ওয়েবসাইটটি ব্যাবহার করতে চাইবার কারণে এখন কেউই ব্যাবহার করতে পারছে না। দ্বিতীয়তঃ এই সাইট থেকে বই ডাউনলোড না করে বই পড়ার কোন সুযোগ নেই। তৃতীয়তঃ বাংলাদেশের সীমিত ক্ষমতা ইন্টারনেটে ডাউনলোড জিনিষটা অনেক সময়েই দূর্বিষহ এক বস্তু। ৯৫% ডাউনলোড হবার পরে লাইন কেটে যাওয়া মোটেই দূর্লভ অভিজ্ঞতা না। তাই নির্ভরযোগ্য সার্ভার ও সংযোগ থাকার বিকল্প নেই।
এতো সমস্যা দেখে ভাবলাম এর মধ্যে আমি কোন সাহায্য করতে পারি কিনা। আমার বইমেলা ওয়েবসাইটের কারণে বইপড়ুয়া পাঠকেরা নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারেন। তাই মনে হল বইগুলোর লিঙ্ক এখানে রাখলে অনেকেই হয়তো উপকৃত হবেন। কিন্তু সেই সমস্যা রয়েই যায় যে মূল সার্ভারে যদি ফাইল নিয়ে সমস্যা হয়, বা নিয়মিত সরকারী সাইটের মত এইটাও যদি হ্যাক হয়ে বসে থাকে তবে আমার সাইটের দর্শকরাও সমস্যায় পড়বেন। তাই বইগুলো গুগল ডক্সে আপলোড করে ডকুমেন্ট ভিউয়ারের লিঙ্ক দিয়ে দিলাম।
এখন যদি বাঙ্গালী ব্যাবহার করে গুগলের সার্ভার ক্র্যাশ করাতে পারে তবে তার জন্য মেডেল দেয়া যাবে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত সবার আমন্ত্রণ রইল বইমেলা থেকে পিচ্চিকালের বইগুলো আবার নেড়েচেড়ে দেখার জন্য (বিনামূল্যে অবশ্যই!)।
আপডেটঃ
১। লেখাটি আগেই লিখেছিলাম। এখন পোস্ট করতে গিয়ে ভাবলাম শিক্ষাবোর্ডের ব্যানার ছবি হিসেবে দেই।
যথারীতি শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট হ্যাকড!!!! শিরোনাম পাল্টালাম
২। চাইলে কিন্তু আমরাও অন্যদের বইয়ের সমস্যা হলে সাহায্য করতে পারি। এই সংক্রান্ত বিষয়ে ফিউশন ফাইভের পোস্ট দ্রষ্টব্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।