আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংস্কৃতিপ্রেমের ধুয়া তুলে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানী নিষিদ্ধের দাবীর যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা

অব্যক্ত বক্তব্যের ধারাবাহিক চলন,,

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। এ দুটি শব্দের গলা ফাটানো চিৎকারে আমরা সহসাই নিজ সংস্কৃতিকে ধরে রাখার দাবীতে তীব্র ভালবাসার জোয়ার বইয়ে দিয়ে থাকি। সাংস্কৃতির সহজ অর্থ হল ‘মানুষের আচরনের সমষ্টি’। সে অর্থে আমরা যারা ‘বাংলাদেশী’ তাদের সংস্কৃতি কি হতে পারে? বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের নানা উৎসবের মিলনমেলায় ‘দুই বাংলা(বাংলাদেশ ও ভারতের বাঙালী)’ নামে যে জিকির তোলা হয় তা নিয়ে ব্যাপকভাবে সন্দেহ থাকায় এখানে ‘বাংলাদেশি’ সংস্কৃতি ব্যবহার করলাম। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় ঢাকাকে রাজধানী করা একটা দেশ যখন আমরা পেয়েছিলাম সে মুহূর্তে আজকের ভারতীয় বাঙালীরা তীব্র বিরোধীতা করে।

‘বঙ্গমাতার অঙ্গছেদ’ নামে চলমান তাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ ভারতে কলকাতার সমৃদ্ধি। ফলশ্রুতিতে ঢাকার উন্নয়ন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর কয়েকটি স্থাপনা নির্মানের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। অনেক শ্রমের পরেও আজকের বাংলাদেশ হয়েছিল অবহেলিত। ঐ আন্দোলনে নেতৃত্বে অগ্রগামী নায়ক রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকাকে রাজধানী করা বাংলার সীমান্ত ভাঙতে রচনা করে বসলেন ‘ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’। যদিও দূর্ভাগ্য যে বাংলা ভাঙতে এ গান তাই বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের গান।

সুতরাং আমাদের সংস্কৃতি আজকের সুদিনে কি সেই বেঈমানদের সাথে আত্মীকরনযোগ্য? নিজেদের বাঙালী সংস্কৃতির ধারক বলাটা কি উচ্চমার্গীয় আস্ফোলন নয়? এছাড়া পশ্চিম বাংলার মানুষেরা নিজেদের ভারতীয় হিসেবেই পরিচয় দিবে। আমাদের এখানে ‘ ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা’ হবার কি বিশেষ প্রয়োজন পড়েছে। এতক্ষন যারা আমার লেখা ধৈর্য্য ধরে পড়েছেন তাদের ধন্যবাদ। শিরোনামের বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রদানই এতক্ষনের প্যাচাল! গত কয়েকদিনে চলচিত্র সংশ্লিষ্ট প্রযোজক ও শিল্পীদের দেখা গেছে আমাদের সংস্কৃতি বাঁচানোর দাবীতে মাঠে নামতে। অভিযোগ বর্তমান সরকার ভারতের চলচিত্র বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোতে নিত্যদিন প্রকাশের সুযোগ পাবে।

বর্তমান সরকারের ‘ভারত প্রেম’ নিয়ে নানা বক্তব্য মাঠে চালু থাকায় এ বিষয়ে সমালোচনা বা আলোচনার অবতরনা করার কোন আগ্রহ আমি দেখাচ্ছি না। অবশ্য সিনেমা হলগুলোর মালিকরা সরকারের সিদ্ধান্তে প্রচন্ড খুশি। আবার তাদের হলগুলোতে ভীড় হবে দর্শকদের। চড়ামূল্যে টিকিট বিক্রির টাকায় পূজীবাদের রাজত্বে নায়ক বনে যেতে পারবে। এখন প্রশ্ন হল চলচিত্রাঙ্গনের আন্দোলনকারীদের সংস্কৃতিপ্রেম নিয়ে।

তারা যখন বাংলা চলচিত্র উপস্থাপন করে তাতে কতটুকু বাংলা সংস্কৃতি প্রদর্শিত হয়? নায়িকাদের হাফপ্যান্ট পড়া দৃশ্য কি বাঙারী সংস্কৃতির চিত্র? মাঝে মাঝে যে কার্টপিচ প্রদর্শিত হয় তা বাঙলা সংস্কৃতি কোন সংগায় দেয়া হয়েছে? বরং ঐ সব অশ্লীল ও আপত্তিকর সিনেমার প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতিকে বিকৃত ও ধর্ষন করছে আজকের চলচিত্র আমদানী বন্ধে আন্দোলনরত তথাকথিত দেশীয় সংস্কৃতিপ্রেমীরা। একমাত্র ভাষা ছাড়া কয়টা চলচিত্র বর্তমান সময়ে আমাদের সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করে। তাদের প্রদর্শিত চলচিত্রের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কলেজের সিড়িতে ধাক্কা আর ভিলেনের হাত থেকে নায়িকা বাঁচানোর মাধ্যমে প্রেম শুরুর যে ইতিহাস চলচিত্রের তা যেন সুপার গ্লু’র মত পর্দায় এটে থাকে প্রতিটি চলচিত্রে। শেষ দৃশ্যে পুলিশের বক্তব্য ‘আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না’ কথাটা হাজার হাজার সিনেমার ইতি টানবে এটাই কি নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে? যেখানে ভারতীয় সিনেমাকে দেশে আনার বিরোধীতা, সেই বাঙালী সংস্কৃতিপ্রেমীরা যখন তাদের প্রায় প্রতিটি ছবিতে হিন্দি গানের সুর-কথা নকল, দৃশ্য নকল করে দেখায় তখন লজ্জা করে না? বাংলাদেশে ভারতীয় চলচিত্র প্রদর্শনী হোক তা একজন দেশপ্রমিক হিসেবে মেনে নেয়া কষ্টকর।

কিন্তু আমাদের চলচিত্রের মান যদি না বাড়ে তবে ভারতীয় চলচিত্র আমদানী নিষিদ্ধ করে কি লাভ? বিশ্বায়নের এ যুগে টেলিভিশন, ইন্টারনেট কি বন্ধ করে দেয়া সম্ভব? প্রতিযোগিতা ও সহজলভ্যতার এ পরিসরে বর্তমান প্রজন্ম যে বিজাতীয় সংস্কৃতি গ্রহন করছে তার পিছনে আমাদের নিন্মমানের সৃজনশীলতাও দায়ী। তাই সিনেমা হলে হিন্দি ছবি প্রদর্শন বন্ধ করলেই আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা হয়ে যাবেনা। প্রয়োজন আমাদের অগ্রনী ভূমিকা ও মেধাবী সৃজনশীলতা। যদি বলা হয় বাংলাদেশের চলচিত্র ভারতের সিনেমাহল গুলোতে প্রদর্শনীর সুযোগ দেয়া হবে। তবে আমাদের চলচিত্রঙ্গানের সংশ্লিষ্টরা বুকে হাত দিয়ে কি বলতে পারবেন তাদের ছবি ভারতীয়রা গ্রহন করবে? আমরা এ অবস্থা চাইনা।

চাই আমাদের চলচিত্র অস্কার পাবে। আমাদের প্রিয় স্বদেশে হলিউড, বলিউড উম্মুক্ত করে দিলেও ঢালিউড টিকে থাকবে মাথা উচু করে। আর সেটা সম্ভব আমাদের ‘আচরনের সমষ্টি’, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ চলচিত্র, যা আমাদের মেধা মননকে বিকশিত করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে অনুপ্রেরনা যোগাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।