আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক বিকালের শোকমিছিল


মোহাম্মদ আবুল হোসেন: আজ ২৫শে এপ্রিল, রোববার। এটিএম আনিসুজ্জামানের মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রতিবাদে জাতীয় জাদুঘরের সামনে কয়েক শত নাট্য ব্যক্তিত্ব, কর্মী, সাধারণ মানুষ ও আমরা আত্মীয়-স্বজনরা হাতে হাত ধরে মানববন্ধন করলাম। এতে অংশ নিয়েছিলেন বিশিষ্ট গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, বিশিষ্ট নাট্য অভিনেতা ঝুনা চৌধুরী, গোলাম কুদ্দুস, নাদের চৌধুরী প্রমুখ। তাদের প্রতি আনিসের মামা হিসেবে কৃতজ্ঞতা। তারা আমার ভাগিনা আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমে এসেছেন- এ আমাদের পর বেশি পাওয়া।

এ প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা আনিস ও জসিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এমন অকাল মৃত্যু যেন আর কারো না হয়। তারা দাবি করেন, যে লাব্বায়েক বাস আনিসকে ধাক্কা দিয়ে তার ফুটন্ত যৌবনকে শেষ করে দেয়া দিয়েছে তার চালক, হেলপার ও মালিককে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক। কড়কড়ে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে যখন ঘামছি তখন আনিস অন্যভুবনের বাসিন্দা। ও কি দেখতে পাচ্ছে এরই মধ্যে এত মানুষের ভালবাসা কুড়িয়ে ফেলেছে।

ও কি অন্ধকার চার দেয়ালে বন্দি জীবনে বুঝতে পারছে ওর মৃত্যু কত মানুষকে কাঁদিয়েছে! শুধু ভাবি আর চোখ ভিজে ওঠে। আর কত কাঁদব! মানববন্ধন থেকেই বাড়িতে ফোন দিই চাচাতো ভাইয়ের নম্বরে। ওরা জানে না ঢাকায় এত বড় মানববন্ধন হচ্ছে। ওরা জানে একজন মানুষ মারা গেলে তাকে দাফন করার পর আর কিছু করার থাকে না। তাকে মনে রাখার মতো আয়োজন হয় না গ্রামে।

কিন্তু আনিসের মৃত্যুর পর এই যে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ এ দৃশ্য তো গ্রামের মানুষরা দেখতে পাচ্ছে না। তাই ফোন করা চাচাতো ভাইয়ের মোবাইলে। তার ফোন বন্ধ। আবার ফোন করি আরেক চাচাতো ভাই আক্তারেরর নম্বরে। রিং হয়, কিন্তু ফোন রিসিভ করে না।

আমি ছটফট করতে থাকি কি করে জানাই এত বড় খবর। আমার বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সামাদ, ভাতিজা ইলিয়াস যোগ দিয়েছে আমার সঙ্গে। কিন্তু ওদের সঙ্গে আমার মনের আবেগ শেয়ার করতে পারছি না। গুমড়ে কাঁদতে থাকে মন। অফিসে গিয়ে কলিগদের বলি।

ফোকাস বাংলা থেকে পাঠানো ছবিগুলো দেখাই। তারা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। ২১শে এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টায় বাংলামোটরে সড়ক দুর্ঘটনায় আনিস নিহত হওয়ার পর থেকে আমি কিছু গুছিয়ে লিখতে পারছি না। কোন চিন্তা এক স্থানে স্থির করতে পারছি না। কারণ, ওর মৃত্যু অস্বাভাবিক।

লাব্বায়েক পরিবহন একটি সম্ভাবনাময় প্রতিভাকে শেষ করে দিয়ে গেছে। রোগে ভুগলে, বা বয়সের কারণে কারো মৃত্যু হলে তা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু আনিস তো সুষ্ঠু ছিল। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও তার দেহে ছিল সুস্থ, সতেজ একটি মানুষ। একটি আত্মা।

তাকে কেন এভাবে শেষ করে দেয়া হলো। কষ্ট লাগে- যে লাব্বায়েক পরিবহনের ধাক্কায় আনিস মারা গেছে, সেই পরিবহনের কোন শ্রমিক, কোন মালিক বা কোন কর্মকর্তা এক বারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেননি। তারা এক বারের জন্যও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন নি। এক বারের জন্য বলেননি যা হয়েছে তা ভুল। তারা জানেন কিনা জানি না- আনিসের মা-বাবা অত্যন্ত অভাবী।

আনিস তাদের তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট। সেই মা-বাবার কি অবস্থা, সে খবর কারো কাছে তারা জিজ্ঞেসও করেননি। ছোটবেলায় পড়েছিলাম ‘প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়। কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না। ’ কথাটা একদম সত্য।

একজন মানুষের মনে যদি আরেকজন মানুষের দুঃখে, ব্যথায় কোন সমবেদনা না আসে তাহলে তাদেরকে কি অর্থে আমরা মূল্যায়ন করব?
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।