আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহযোগিতা দেয়া গেলে এই জিঞ্জিরা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের চীন-জাপান।



এদিকে রাজধানী-ঘেঁষে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকা। এখানেই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় দুই হাজার কারখানা। দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এখানে। ফ্লাস্ক থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত আইফোনের নকলও তৈরি হয় এখানে। অক্ষরজ্ঞানহীন বা স্বল্পশিক্ষিত যুবকরাই মূলত ওই শিল্পের কারিগর।

তাদের স্থানীয়রা ডাকেন ‘ইঞ্জিনিয়ার’ নামে। অমিত প্রতিভাবান এই ইঞ্জিনিয়ারদের আবিষ্কার ও উদ্ভাবন দেখলে যে কারোর তাক লেগে যাবে। পৃথিবীর যে কোনো পণ্য বা যন্ত্রাংশ একবার দেখলেই ওই ইঞ্জিনিয়াররা হুবহু বানিয়ে দিতে পারেন। গুণে মানেও সেগুলো বিদেশি পণ্যের চেয়ে বেশি টেকসই। এ ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দূরে থাক উল্টো ‘নকলবাজ’ নামের দুর্নামের সিলমোহর মারা হয় এই ইঞ্জিনিয়ারদের কপালে।

অথচ সহযোগিতা দেয়া গেলে এই জিঞ্জিরা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের চীন-জাপান। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে জিঞ্জিরাকেন্দ্রিক খুদে কারখানাগুলো থেকে বছরে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদিত অনেক পণ্যই দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। জিঞ্জিরাকে অনুসরণ করে দেশজুড়ে এ রকম শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে ৪০ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি (বাইশিমাস) সূত্র জানায়, দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের হাল্কা প্রকৌশল শিল্পে বছরে টার্নওভার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।

এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় আড়াইশ কোটি টাকারও বেশি। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ছয় লাখ কর্মীসহ পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ৬০ লাখ লোকের জীবিকা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি অনুমোদন না পাওয়ায় নিজেদের তৈরি মূল্যবান এসব যন্ত্র-সরঞ্জামাদির গায়ে মেইড ইন চীন, জাপান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নামে লিখে বাজারজাত করেন তারা। শিল্পকারখানার মালিকরা জানান, গত দুই দশকে ‘জিঞ্জিরা শিল্প’ অগ্রসর হয়েছে অনেক দূর। এখন আর তা শুধুই জিঞ্জিরা এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, সম্প্রসারিত হয়েছে রাজধানীর আনাচে-কানাচেসহ দেশজুড়ে।

রাজধানীর মীর হাজিরবাগ, মাতুয়াইল, ডেমরা, চকবাজার-লালবাগ এবং বাইরে নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, চট্টগ্রাম, যশোর নওয়াপাড়া অঞ্চলে গড়ে উঠেছে নানা শিল্প ইউনিট। আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের জন্য যেসব উপাদান ও উপকরণ এক দশক আগেও বহির্বিশ্ব থেকে নিয়ে আসা হতো, তা এখন জিঞ্জিরাতেই উৎপাদিত হচ্ছে। এসব মেশিন তৈরির খরচ এতই কম যে, এগুলো আমদানির তুলনায় এক-পঞ্চমাংশ দামে বিক্রি করতে পারেন তারা। শিল্প সেক্টরের অভিজ্ঞজনরা জানিয়েছেন, জাপান, চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো শিল্পোন্নত সব দেশই শুরুতে হালকা প্রকৌশল খাতে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানে ‘টাইম বাউন্ড ভিশন ডকুমেন্ট’ পর্যন্ত প্রণয়ন করা হয়েছে।

অথচ বাংলাদেশে সরকারিভাবে কোনো রকম সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আর এতে জিঞ্জিরা শিল্পের আকাশছোঁয়া সম্ভাবনাও মাটিচাপা পড়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, হালকা ও ক্ষুদ্র শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে জিঞ্জিরা প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ওই প্রকল্পের আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে জামানতবিহীন পাঁচ কোটি টাকার ঋণসহায়তা ঘোষণা করা হয়। বিসিকের আওতায় কারখানাপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার বিধান রাখা হয়।

উদ্যোগটির ইতিবাচক সুফল পাওয়া গেলেও তা অজ্ঞাত কারণে চলমান রাখা হয়নি। এ হালকা প্রকৌশল শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই ৫০ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অথচ অবহেলা-অবজ্ঞার কাছেই গ-িবদ্ধ হয়ে আছে হালকা প্রকৌশল শিল্প খাত।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।