সামুর কাছে চির কৃতজ্ঞ ...আমি অবাক নির্বাক হতবাক শতভাগ ...
বই পড়ার আগ্রহ থাকলেও বাড়ির ছোট হিসাবে বড়দের বই গুলো ছিল সম্বল । শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ,বংকিম বা নজরুল বোঝার মতো ক্ষমতা তখনও হয়নি । আর যা বোঝা যায় না তা পড়ার আগ্রহও থাকেনা। সুতরাং গল্পের বই থেকে একটু দুরেই থাকতাম আর ভাবতাম এসব বই শুধু বড় আর পন্ডিতদের জন্য। তখন থেকেই বইয়ের প্রতি অনীহা।
শুধু পাঠ্য বই-এ সীমাবদ্ব ছিলাম।
হঠাৎ করেই অনীহা দূর হয়ে গেল। অসুস্থ্যতার কারনে একটি বছর আমাকে গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে। স্কুল, কলেজ এমন কি বাড়ির বাহির ছিল আমার জন্য নিষিদ্ধ । আমার ঘরটা ছিল আমার পৃথীবি, আমার নিজেস্ব জগৎ।
প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে লড়াই করে চলেছি গতিহীন জীবনটা কে গতিশীল করার জন্য। থমকে থাকা জীবনে মরিচা পড়া শুরু করেছে, জীবনের আস্থাগুলো অনাস্থার পাল্লা ভারি করছে। হতাশা অথর্ব করে দিচ্ছে কল্পনাশক্তি কে । আর তখনি হাতে পেলাম সমরেশ মজুমদারের "সিংহবাহিনী" বইটা। ২দিন বইটা বিছানায় অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রইল।
তৃতীয় দিন আনমনে হাতে তুলে নিলাম। পড়তে পড়তে কখন যে পনের পাতায় গেছি বুঝিনি। এক সময় পড়ে শেষ করে ফেললাম। খারাপ লাগলো না। ছোট ভাইয়া কে আরো বই এনে দিতে বললাম।
ভাইয়া কি মনে করে সমরেশ বাবুর আরেকটা বই "আট কুঠুরি নয় দরজা" বইটা এনে দিল। বইটা পড়ে মনে হলো আমার বই পড়া উচিত, কারণ এতে আমার সময়টা কাটছে, মনটা ভাল থাকছে আর সব চেয়ে বড় যেটা তা হলো বাড়ির মানুষ গুলো একটু হলেও স্বস্তিতে থাকতে পারছে। ঘরে বসে থাকতে থাকতে মেজাজ খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল, কারনে অকারনে সবার সাথে মেজাজ দেখাতাম। বই পড়ার সুফল দেখে যে যেভাবে পারে বই সংগ্রহ করে দিত।
তৃতীয় ও চতুর্থ বই হুমায়ূন আহমেদের পড়লেও ভাগ্যক্রমে পরের বই গুলো সমরেশের পড়লাম।
যেমন কালবেলা, কালপুরুষ , গর্ভধারীনি , অগ্নিরথ ইত্যাদি ইত্যাদি । এসব বই ভাল লাগার প্রধান কারন ছিলো এর নারী চরিত্র গুলো। নারী চরিত্র প্রধান বইগুলোতে লেখক নারীদের পারিবারিক, সামাজিক , রাজনৈতিক সর্বপরি অর্থনৈতিক নানা প্রতিকূল অবস্থাকে অদম্য সাহসিকতায় প্রতিহত করে কিভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় সেটা খুব সুন্দর ভাবে তুলে এনেছেন। আসলে আমি যেটা বলতে চাচ্ছি তা হল, আমার জীবনটা যেহেতু স্থবির ছিল , নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছিলাম , নিজেকে অপদার্থ মনে হত তখন বই গুলো পড়তাম আর ভাবতাম কনো আমি মাধবিলতা, জয়িতা, মাধুরি বা রিমি ( নারী চরিত্র গুলোর নাম ) হতে পারলামনা ? কেন আমার জীবনটা থেমে আছে ? মনে মনে খুব অভিমান হত। ভাবতাম নতুন করে শুরু করা গেলে ঠিক এদের মতো হতাম।
এখন যখন এসব ভাবি তখন মনে হয় জীবন টা কি সত্যি থমকে ছিল ? নাকি সেখান থেকে কিছু অর্জন করতে পেরেছি? হয়তো জীবন থেকে হারিয়ে গেছে একটি বছর কিন্তু পেয়েছি জীবন যুদ্ধে লড়াই করার মতো সাহস , বই পড়ার মতো মহৎ গুন। এখন যা পাই, বুঝি আর না বুঝি পড়ে ফেলি অনায়াসে। থমকে থাকা একটি বছরে "সিংহবাহিনী" আমাকে দিয়েছে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরনা এবং উৎকৃস্ট মননশীলতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।