নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
গত পরশু Moody ও গেল সপ্তাহে Standard & Poor নামে দুটি সংস্থা রাস্ট্র বাংলাদেশকে দুটি রেটিং দিয়েছে। কেউ কেউ আনন্দবাচক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, আর আমজনতা আছে মিশ্র অনুভুতি নিয়ে। অধম এ বাংগাল একটি আর্থিক সংস্থায় কাজ করে ভাত খাই বিধায় কিছু অনুভুতি ব্যক্ত করার লোভ সামলাতে পারছিনা।
রেটিং দেয়া হয়েছে 'ঋন ফেরৎ দেয়ার সক্ষমতা'র উপর। দেশে CRISL, CRAB নামে দুটি সংস্থার নাম আমরা শুনি যারা বিভিন্ন বড় আকারের প্রটিস্ঠানের ক্রেডিট রেটিং দেয়।
আর ব্যাংক, লিজিং, বীমা বা অপরাপর প্রতিস্ঠান গুলো ভাল (AA etc.) রেটিং পেলে বেশ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তা প্রচার করে। যাতে খুচরা ডিপোজিটরেরা তাদের কাছে আমানত রাখে বা ব্যাংক গুলো আগ্রহ সহকারে তাদেরকে ঋন দেয়। কিছু ফি এর বিনিময়ে উপরোক্ত রেটিং এজেন্সি গুলো গ্রাহক ফার্ম এর কয়েক বছরের আর্থিক ও সামাজিক তথ্য বিশ্লেষন করে এ ধরনের রেটিং দাড় করায়।
আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাংলাদেশ বন্ড বা ভিন্ন কোন ফর্মে ঋন নিলে তা ফেরৎ দিতে 'কত ভাল' সক্ষম তাই হল এসব রেটিংয়ের মাজেজা। আমরা ঋন নিয়ে ফেরৎ দিয়েছি, সামনেও দিতে পারব- এটুকু উপসংহার অবশ্যই জাতি হিসেবে আনন্দের।
কিন্তু এর চেয়ে বেশী কিছু না এসব রেটিং। এবং তা মোটেও ধেই ধেই করে নাচার মত কিছু না, যেমনটা কোন কোন সংবাদ মাধ্যম করে।
কারন পরিস্কার। 'ঋন নিয়ে যথা সময়ে ফেরৎ' দানের সক্ষমতা একটি দেশের শত সূচকের একটি। বাকি গুলোর কি দশা তাও দেখতে হবে।
যেমনটি একটি সাবান কোম্পানির ক্রেডিং রেটিং 'AAA' হলেই বুঝা যায়না যে ঐ কোম্পানির দারোয়ানটি পেট ভরে ভাত খেতে পারছে বা তার ঘুমানোর একটু বন্দোবস্ত আছে বা তার বা তাদের মত শ্রমিকরা ঐ কোম্পানিতে নূন্যতম মানবিক কায়দায় মলমুত্র ত্যাগ করতে পারে!
গরীব রাস্ট্র বলে বহুল প্রচারিত হলেও আমি একথা মানতে নারাজ যে বাংলাদেশ সে রকম কোন রাস্ট্র! খোলাসা করে বললে, অর্থ বাংলাদেশের ১টি সমস্যা তবে ১ নং সমস্যা না, ২ নং ও না! ব্যবস্থাপনা ও সততার অভাবই মূল সমস্যা। প্রমান হিসেবে দেখতে পারেন ADP বাস্তবায়নের হার। অর্ধেক বছর শেষে দেখা যায় ২০% এডিপি, আর বছর শেষে হুড়ো হুড়ি করে খোড়াখুঁড়ি! এদেশে প্রকল্পের টাকা ফেরৎ যাওয়ার নজীরও কম না! বলা হয়, সরকারী যন্ত্র শ্লথ। চুরিটাও এফিসিয়েন্টলি করতে পারেনা!! যাহোক যেটুকু এডিপি বাস্তবায়িত হয় তার সিংহভাগই যে মন্ত্রি, আমলা, স্থানীয় রাজনৈতিক, টাউট বাটপার, ঠিকাদারের পেটে যায় তা বলাই বাহুল্য। পরিস্থিতি ভিন্নতর হলে আমরা এরকম থাকতামনা।
আসি টাকার ইনফ্লোতে। কর, মূসক, শুল্ক, ফি আর মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিস্ঠানের লভ্যাংশ (যদি হয়!!) এ ৫টি হল সরকারের আয়ের উৎস। বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস) কে চোরের খনি বলা কি বেশী হবে? ট্যাক্স না দেয়ার জন্যই এদেশে 'আয়কর আইনজীবি' নামে রীতিমত একটা 'ভুয়া আইনজীবি' গোত্র গড়ে উঠেছে। প্রতিটি কর অফিসে তাদের সমিতিকে কক্ষও বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে! মাল্টিন্যাশনাল কিছু কম্পানি আর ব্যাংকারদের বেতন থেকে উৎসে কর কর্তন করা হয় বলেই কিছু আয়কর পাওয়া যায়! এর বাইরে ব্যবসায়ী, ডাক্তার, উকিল, প্রকৌশলি, মাওলানা, শিল্পী ইত্যাদি গোত্রের মানুষরা কি এক কায়দায় কোটি কোটি টাকা আয়কে যাদুকরী উপায়ে গোপন করে, নেহায়েৎ মিসকীন সেজে ২০০০ টাকা ট্যাক্স সরকারকে ধরিয়ে দেয়!
শেয়ার বাজারে অখ্যাত অজ্ঞাত কোনো কম্পানি আইপিও ছাড়লে দেখা যায় টাকার স্রোত এদেশে কত প্রবল। ১ লট শেয়ারের বিপরীতে ২০/২২ জন কমন চিত্র।
আর প্রতিদিনকার লেনদেন দেখেও খানিকটা আচঁ করা যায় এ দেশ টাকার খনি।
সমস্যা হল টাকা গুলো বড্ড বেইনসাফী ভাবে বন্টিত। শতকরা ৯০ ভাগ টাকা মাত্র ১০ ভাগ মানুষের কাছে আর ১০ ভাগ টাকা ৯০ ভাগ মানুষের কাছে! তাই কোটি বনী আদম খেতে পায়না, ঘুমাতে পায়না, ঔষধ কিনতে পারেনা, মলমুত্র ত্যাগ করতে পারেনা, শীতে কম্বল পায়না। মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি ও মূর্খ ব্যবস্থাপনা জন্ম দিয়েছে চরম বৈষম্যভরা বাংলাদেশের। তাই পানি ভরা এদেশে পানির আকাল, কয়লা ও গ্যাস ভরা এদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের আকাল।
অর্থ এ দেশে সমস্যা না। তাই ভাল রেটিং 'পেয়ে' গদগদ ভক্তিতে আইএমএফ বা এডিবি থেকে মোটা অংকের ঋন পাওয়ার বিরাট 'যোগ্যতা' আমাদের নেহায়েত অ-দরকারী। আমার আশংকা হয় এসব ভাল ভাল রেটিং 'ফুসলিয়ে' ঋন বিতরনের কোন আন্তর্জাতিক ধান্ধা নয়তো। সাধু সাবধান!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।