আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোর, বাটপার ও চামারের গল্প (পুনঃপ্রকাশ)

writerrazu.com

ব্যাংক থেকে চোখ মুখ কুচকে, রাগে গজগজ করতে করতে বের হল হামিদ স্যার, ঢাকা কলেজের ইংরেজীর টিচার তিনি। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ৩ তলার বাড়িটিকে ৬ তলা করবেন। ৪০ লাখ টাকা লোন নিতে ৫ লাখ টাকা ঘুষ খেলেন ব্যাংক ম্যানেজার ইব্রাহিম তালুকদার। আর তার জন্যেই হামিদ স্যার এত ক্ষেপে গেলেন। রাগে গজগজ করতে করতে হামিদ স্যার বললেন, শালা চোর একটা! মাথার উপর বাড়ি দিয়ে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিল।

তবে বাসায় ফিরে ড্রয়িং রুমে উকি দিতেই তার রাগ পানি হয়ে গেল। ঘরভড়া ছাত্র-ছাত্রী। ১ ব্যাচে ৫০ জন করে পড়ান, সপ্তাহে ২ দিন, মাসে ২০০০ টাকা। সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ব্যাচে পড়ান। মাঝে ১ ঘন্টা কলেজে গিয়ে কোন দিন ক্লাস নেন, কোন দিন হাজিরা দিয়ে চলে আসেন।

ব্যাংক একাউন্টে প্রতি মাসে কত টাকা জমা হয় এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। সকালের নাস্তা থেকে রাতের ডিনার, সব কিছুই করেন প্রাইভেট পড়ানোর ফাকে ফাকে। এক বার তার নিজের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল, তিুনি কি কোন দুর্নীতি করছেন? আবার নিজের মন থেকেই উত্তর এল, তা হবে কেন? আমি তো চুরি করছি না। পরিশ্রম করে বাড়তি উপার্জন করছি। কলেজে গিয়ে পড়াইনা, সে তো ছাত্রদের আগ্রহ নাই বলে।

এ যুগের ছাত্রদের লেখা পড়ার বিষয়ে কোন আগ্রহ নেই। সারাদিন শুধু প্রেম-প্রীতি। আর আমাদের যুগে--- ব্যাংক ম্যানেজার ইব্রাহীম তালুকদার, এক কলেজ টিচারের কাছ থেকে আজ ১০ লাখ টাকা ঘুষ খেয়েছেন। মনটা তাই বেজায় ভালো। আজ বরং একটু বেশী সময় অফিসে থাকলেন।

৫টা বাজল তার পর বের হলেন। বের হবার পথে গার্ডের সঙ্গে একটু কথা বললেন। তার ফ্যামিলির খোজ-খবর নিলেন। কিন্তু সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা টা একটু মচকে গেল। কি আর করা বাসায় না গিয়ে একজন বোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলেন।

দেশ বরেণ্য ডাক্তার, ভিজিট ৮০০ টাকা। ডাক্তারের সামনে বসতেই ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন কি সমস্যা? বাক্য শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই ডাক্তার একটা কাগজ দরিয়ে দিয়ে বললেন ৩টা এক্স-রে আর চারটা টেস্ট দিলাম। রির্পোট নিয়ে ৫ দিন পর আবার আসেন। হতবম্ব ব্যাংক ম্যানেজার ইব্রাহীম তালুকদার বুললেন না, পা মচকে যাবার সাথে ল্টুল টেস্ট এর কি সম্পর্ক।

ক্লিনিক থেকে বের হবার সময় অনু” ম্বরে বললেন, সালা বাটপার, মানুষের রক্তচুষে খায়। দেশের বিশিষ্ট বোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হারুন অর রশীদ । ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক। হাসপাতলে গেলে রোগীরা ভয়ে তার সঙ্গে কথা বলেনা। এমন একটা ধমক দেয় যে রোগীদের আত্মা কেপে উঠে।

সপ্তাহে ২টা ক্লাস নেন আর একবার হাসপাতালের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে হেঁটে এক পাশা থেকে হেটে অন্য পাশে যান। তারপর সোজা চলে যান নিজের ক্লিনিকে। তিনটি বেসরকারী হাসপাতালেও কনসালটেন্সি করেন তিনি। এর বাইরেও ভি.আই.পি রোগীদের জন্যে একটা সময় রেখেছেন। যদি কেউ ৮০০ টাকা ভিজিট দিয়ে প্রাইভেট ডাক্তার দেখাতে চান।

সেখানেও লম্বা লাইন। ডায়গনেস্টিক সেন্টার গুলি থেকে ৪০% কমিশন পান। ওষুধ কোম্পানী গুলো থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা জমা হয় তার ব্যাংক একাউন্টে। ডাক্তার হারুনের একমাত্র ছেলে আয়ান। ঢাকা কলেজে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।

রাত ১২ টার সময় বাসায় আসতেই আয়ান তার বাবাকে বলে ঃ আব্বু আমার ফিফটি থাউজেন্ডের চেকটা তো দিলানা। ঃ এত টাকা দিয়ে কি করবি? ঃ এত টাকা দেখলা কোথায়। ১০টা সাবজেক্টের ব্যাচে ২ করে ২০ হাজার আর বাসার ৩ জন স্যারের ১০ করে ৩০ হাজার এই মোট ৫০ হাজার। ঃ ৫০ হাজার টাকা মাসে প্রাইভেট টিউশনির বিল? এরা কি শিক্ষক না চামার। রীতিমত চামড়া তুলে নিচ্ছে।

ডাঃ হারুন রাগে গজরাচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।