(কালের কণ্ঠে ২৩ মার্চে সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত শিক্ষাবিদ শহিদুল ইসলামের এই লেখাটি ভালো লেগেছে। আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। )
এক. ন্যাটোর ওপর ছোট্ট একটি কাজ করতে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীর ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায় আমার সামনে উন্মোচিত হয়। বিষয়টি নিয়ে আরো পড়াশোনা করতে আমি উৎসাহী হয়ে উঠি। ইতিমধ্যে যে কয়েকটি বই পড়েছি এবং ইন্টারনেট ঘেঁটে যে শতাধিক প্রবন্ধের খোঁজ পেয়েছি, তাতে আমার একটা বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে এবং হাজার হাজার তথ্য আমার হস্তগত হয়েছে।
আমি সেগুলো দেশবাসীর জানার জন্য প্রকাশ করতে চাই। কিন্তু আমাদের প্রিন্ট ও আকাশ মিডিয়া তা প্রকাশে অনিচ্ছুক। আকাশ মিডিয়ায় তো তা বলাই যাবে না। দু-একটা দৈনিক সংবাদপত্রের প্রগতিশীল সম্পাদক ছাড়া বেশির ভাগ সংবাদপত্র তা ছাপতে রাজি নয়। তাঁরা বলেন তাঁদের মতো করে লিখতে।
আমি তা পারি না। একজন সন্ত্রাসী ধনিক পত্রিকা-সম্পাদক একটি লেখা না ছেপে সরাসরি জানিয়ে দিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে তা ছাপানো যাবে না। সে পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন বাংলাদেশের প্রগতিশীল ব্যক্তিরা। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করছি না। একটা কথার মাধমে আমি বর্তমান বাংলাদেশের চালচিত্রের একটি খণ্ডাংশ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
দুই. যাহোক, শুরুতেই যে ভয়াবহ ইতিহাসের কথা বলেছি তার উল্লেখ করেই লেখাটি শুরু করি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষের মনে একটা আশা জেগেছিল। ফ্যাসিস্ট জার্মানি, ইতালি ও জাপানের পরাজয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা উজ্জীবিত হয়েছিল। মানুষ ভেবেছিল, এবার পৃথিবী থেকে ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন দূর হবে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের শাসন-শোষণের হাত গুটিয়ে নেবে।
পৃথিবীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। পৃথিবী থেকে অশান্তি দূর হবে। কিন্তু তা যে হয়নি, আজ তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। কেন হয়নি, সে ইতিহাসের ছিটেফোঁটা আমাদের জানা থাকলেও ৯০ শতাংশই আমাদের অগোচরে রয়ে গেছে। কেননা সে ভয়ংকর ইতিহাস নিয়ে আমরা কোনো গবেষণা করিনি।
যাঁদের গবেষণায় আমি তা জানতে পারি, তাঁরা প্রায় সবাই পশ্চিমেরই মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং এর অঙ্গসংগঠন নিয়ে কোনো কাজ আমরা করিনি। তাই আমরা এখনো পশ্চিমকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার ভাবি। পশ্চিমা গবেষকদের গবেষণা প্রমাণ করে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সৃষ্ট জাতিরাষ্ট্রগুলোর মানুষ যদি স্বাধীনভাবে তাদের সরকার বেছে নিতে পারত, তাহলে আজকের এ ভয়ংকর গণতন্ত্রবিরোধী পৃথিবীর জন্ম হতো না। সে আশঙ্কা অঙ্কুরেই ধ্বংস করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নয়া সাম্রাজ্যবাদ।
আজকের এ গণতন্ত্রহীন সন্ত্রাসী পৃথিবীর স্রষ্টা যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ইউরোপীয় মিত্ররাষ্ট্রগুলো। এ সত্যটি আজ আর সুন্দর সুন্দর কথায় ঢাকা দেওয়া যাবে না। তাই তো ২০০৮ সালের 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ'-এর রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিজ স্বার্থে পৃথিবীর দেশে দেশে স্বৈরশাসকদের সমর্থন জোগাচ্ছে এবং তাদেরই গণতন্ত্রী বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আজ ১৩২টি দেশে ৭০২টি সেনা দপ্তর স্থাপন করে সেসব দেশ দখলে রেখেছে এবং সেখান থেকে 'বেয়াড়া' রাষ্ট্রগুলোর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
উইলিয়াম ব্লাস আজ একটি বিশ্বখ্যাত নাম।
যেহেতু আমাদের গবেষণা ও লেখাপড়ার অভ্যাস নেই বললেই চলে, তাই তাঁর নামটি আমাদের কাছে ততটা পরিচিত নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ মন্ত্রকে চাকরি করতেন। একজন আমলা। ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন নীতির বিরুদ্ধাচরণ করে তিনি পদত্যাগ করেন। তাঁর দুটি বই বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে।
প্রথম বইটির নাম 'দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র' (Rogue State)। দ্বিতীয় বইটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন ও সিআইএর বিভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশ-সংক্রান্ত গবেষণামূলক বই 'কিলিং হোপ (Killing Hope)। তিনি তাঁর দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতেন তাহলে এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করতেন। কিভাবে? তাঁর মুখেই শুনুন।
'আমি যদি প্রেসিডেন্ট হতাম, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করতে পারতাম।
চিরদিনের জন্য। যে লাখ লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের শিকার হয়েছে, যারা বিধবা ও এতিম হয়েছে, সেই অত্যাচারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর কাছে আমি সবার সামনে ও আন্তরিকতার সঙ্গে নতজানু হয়ে মার্জনা ভিক্ষা করতাম। তারপর আমি ঘোষণা করতাম যে আমেরিকার বিশ্বব্যাপী অনুপ্রবেশ শেষ হয়েছে এবং ইসরায়েলকে জানাতাম যে সে আর যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম স্টেট নয়_একটি বিদেশি রাষ্ট্র মাত্র। তারপর আমি প্রতিরক্ষা বাজেট শতকরা ৯০ ভাগ কমিয়ে আনতাম এবং সেই অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের পেছনে ব্যয় করতাম আর আমাদের বোমাবর্ষণের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনর্গঠন করতাম। সে অনেক অর্থ।
তোমরা কি জানো, আমেরিকার এক বছরের প্রতিরক্ষা বাজেট কত? মাত্র এক বছরের? যিশুখ্রিস্টের জন্মের পর প্রতি ঘণ্টায় যদি ২০ হাজার ডলার খরচ করা হতো, এটা তার চেয়েও বেশি। '
তিন. 'পাপ স্বীকার করার মাধ্যমে প্রায়শ্চিত্যের শুরু'_কথাটি আমার নয়। এমন একজন ব্যক্তির, যিনি একজন 'বিশেষজ্ঞ' হিসেবে ১৯৭১ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে মার্কিন সাম্রাজ্য বিস্তারে দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তখন এমন ব্যক্তির সংখ্যা কম থাকলেও আজ তা বহুগুণে বেড়ে গেছে। এমন 'বিশেষজ্ঞ' অহরহ আমাদের দেশে আসছেন।
সরকার, সামরিক-বেসামরিক আমলা, অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, এনজিও লর্ডদের সঙ্গে পাঁচতারা হোটেলে মিটিং করেন। দেশের উন্নয়নের পথ বাতলান, আমাদের স্বপ্ন দেখান। ভুয়া অর্থনৈতিক রিপোর্টের সাহায্যে শাসকশ্রেণীর মন জয় করেন। এমনই একজন বিশেষজ্ঞের কথা, নাম তাঁর জন পার্কিন্স। ১৯৭১ সালে আমেরিকার 'মেইল' নামক একটি ফার্মে যোগ দেন।
অর্থনৈতিক অস্ত্র দিয়ে আঘাতকারী (Economic hitman) বিশেষজ্ঞ হিসেবে বোস্টনে তাঁকে বিশেষজ্ঞ করে গড়ে তোলা হয় এবং তা করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল সুহার্তোর সরকারকে 'উন্নয়নের' পথ দেখানোর জন্য ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়। বিবেকের সঙ্গে লড়াই করে তিনি ইন্দোনেশিয়ার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের এক ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে তাঁর কাজ শুরু করেন। তারপর এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সাফল্যের সঙ্গে সরকারগুলোকে বিপথগামী করতে সমর্থ হন। শেষে ১৯৮১ সালে যখন ইকুয়েডর ও পানামার নির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের সিআইএ হত্যা করে, তখন তিনি মুষড়ে পড়েন। তাঁদের প্রধান অপরাধ হলো তাঁরা 'জাতীয়তাবাদী'।
জাতীয় সম্পদ রক্ষার্থে তাঁরা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিলেন। ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট আমেরিকাসহ পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে তেল রপ্তানির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করছিলেন আর পানামার প্রেসিডেন্ট 'পানামা খালের' ওপর পানামার দখল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। ফলে দুজনকেই সিআইএর হাতে প্রাণ দিতে হয়।
'ইকোনমিক হিটম্যান' হলো উচ্চ বেতনভুক পেশাজীবী। 'বিশেষজ্ঞ' হিসেবে তাঁরা পৃথিবীর দেশে দেশে গিয়ে সে দেশের সরকার-আমলা-বুদ্ধিজীবী-ব্যাংক কর্মকর্তাদের 'মিথ্যা' রিপোর্ট দিয়ে আমেরিকার স্বার্থ উদ্ধারে নিয়োজিত হন।
বিশ্বব্যাংক, USAID, NGO--এর মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে দেশের স্বাধীনতা বা গণতন্ত্র কিনে আমেরিকা-সাম্রাজ্য স্থাপনে পথ তৈরি করেন। তাঁদের প্রধান হাতিয়ার হলো প্রতারণাপূর্ণ অর্থনৈতিক রিপোর্ট, কারচুপিপূর্ণ নির্বাচন, ঘুষ, নারী ও খুন। তিনি বলেন, ৯/১১ দ্বিতীয়বার ইরাক আক্রমণের সুযোগ করে দেয়। ওই দিন তিন হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। কিন্তু প্রতিদিন ২৪ হাজার মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে, সে কথাও কেউ জানে না।
পৃথিবীতে আজ এমন একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, যে সব কিছু পাল্টে নিতে পারে। তার সে শক্তি আছে, অর্থ আছে। সেই দেশের মানুষ জন পার্কিন্স। যুক্তরাষ্ট্র যে কত বড় দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র, তার ১০ বছরের প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। তাঁর সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তিনি পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছেন ছোট্ট একটি বইয়ের মাধ্যমে_'Confessions of an Economic Hitman'.
চার. যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষাগার_ল্যাবরেটরি। পরীক্ষার বিষয়বস্তু একটু আলাদা। বিষয়বস্তু হলো, কী করে মানুষের মনকে দখল করা যায় এবং তাকে দিয়ে যা ইচ্ছা তা বলানো যায় কিংবা করানো যায়। ১৯৫০-এর দশকে ওই পরীক্ষাগারে যেসব ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল, আজ তা-ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুয়ানতানামো বে, আবু গারাইবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্থাপিত নির্যাতনকেন্দ্রগুলোয় ব্যবহার করছে বলে মনে করেন নাওমি ক্লিন। তিনি ওই পরীক্ষাগারের নাম দিয়েছেন 'নির্যাতন-পরীক্ষাগার'।
ওই পরীক্ষার পেছনে হাজার হাজার মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল সিআইএ। আসলে ওই পরীক্ষাটি ছিল সিআইএর। ওই পরীক্ষার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মনস্তাত্তি্বক সমিতি, কানাডার মনস্তাত্তি্বক সমিতি এবং বিশ্ব মনস্তাত্তি্বক সমিতির প্রেসিডেন্ট ড. ওয়েন ক্যামেরন (Wen Cameron)। নুরেমবার্গ বিচারের একজন মনস্তাত্তি্বক বিশেষজ্ঞ। কানাডা সরকারও ওই ভয়াবহ পরীক্ষার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল।
ক্যামেরন যেসব রোগীর ওপর তাঁর পরীক্ষা পরিচালনা করতেন, তেমন ৯ জন ব্যক্তি সিআইএ ও কানাডা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে সিআইএ ৯ জনকে ৭৫০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে আপস-মীমাংসা করেছিল। ১৯৯২ সালে কানাডা সরকার ১০০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়। গেইল কাস্টনার নামে এক মহিলার ওপর সেই পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। তাঁর মস্তিষ্কে ১৫০ থেকে ২০০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক চালানো হয়েছিল ৬৩ বার।
এতে তাঁর শিরদাঁড়া ভেঙে যায়। ঠোঁট ও জিহ্বা কেটে যায় এবং দাঁত ভেঙে যায়। নাওমি ক্লিন তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তাঁকে বলেন, 'পরীক্ষার মাধ্যমে তারা মানুষকে ফাঁকা করে ফেলে। তারপর শূন্য থেকে তাঁদের পুনর্নির্মাণ করে। ' কাস্টনার বলেন, 'হ্যাঁ, সিআইএ ও ড. ক্যামেরনও আমাকে সে কথাই বলেছিলেন।
' নাওমি ক্লিন ওই পরীক্ষাকে সঠিকভাবে বোঝানোর জন্য জর্জ অরওয়েলের '১৯৮৪' সাল বইয়ের একটি উক্তি ব্যবহার করেছেন, 'We shall squeeze you empty, and then we shall fill you with ourselves.' প্রথমে আমরা তোমাদের নিংড়ে নিংড়ে খালি করে ফেলব, তারপর আমাদের দিয়ে তোমাদের ভরিয়ে তুলব' (অনু: ইমতিয়ার শামীম)। ক্লিনের বইটিকে অরুন্ধতী রায় 'ভয়াবহ' বলে উল্লেখ করে বলেছেন, এটা 'মুক্তবাজারের' গোপন ইতিহাস ছাড়া কিছু নয়। বইটির নাম 'The Shock Doctrine'. মাইলাইয়ের গণহত্যা, গুয়ানতানামো বে ও আবু গারাইবের মতো ভয়ংকর, অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও যুক্তরাষ্ট্র আজকের সভ্য ও গণতান্ত্রিক পৃথিবীর গুরু।
পাঁচ. ৯/১১-এর ঠিক আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড পেন্টাগনের কর্মচারীদের সামনে এক ভাষণে জানান, ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের পেন্টাগন ফান্ডের কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে পরে লিখব।
শুধু একটা কথা, কংগ্রেস সদস্য সিনথিয়া ম্যাককিনি বলেন যে তাঁরা জানেন কখন, কোথায় এবং কার কাছে সে অর্থ গেছে; কিন্তু তাঁরা আমাদের তা বলতে চান না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা অহরহ আমাদের উপদেশ দেন, 'তোমরা সৎ হও, জবাবদিহিতা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করো। ' সেই যুক্তরাষ্ট্র জানে না তাদের ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার কোথায় গেল। তাদের সততা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিয়ে আমাদের মনে কোনো প্রশ্নই উদয় হয় না। (দেখুন Pentagon's Prayers: Rahnuma Ahmed, New Age, ৪ জানুয়ারি ২০১০)।
ছয়. যুক্তরাষ্ট্রের এ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতার মরচে ধরা অস্ত্র নিয়ে লড়াই করছে। সে অস্ত্র দিয়ে তারা মধ্যযুগের তিনটি বিশাল ইসলামী সাম্রাজ্য রক্ষা করতে পারেনি। সে তিনটি সাম্রাজ্য মাটিতে মিশে গেছে পশ্চিমের আগ্রাসনের সামনে। দুঃখের হলেও সত্য যে একটি উন্নত দর্শনের ধারালো অস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন আমাদের দেশে গড়ে উঠছে না। যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি পড়তির দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের পতনের পর পৃথিবী যেন আবার মৌলবাদীদের দখলে চলে না যায়, সে জন্য প্রগতিশীল শক্তির এক্ষুণি মাঠে নামা জরুরি হয়ে পড়েছে।
লেখক : শিক্ষাবিদ
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।