মনফুলের বাগানে স্বাগতম...
১
‘‘গল্পটি কী এখানেই শেষ করা উচিত?’’
নবীন লেখক রাহবার রবিন বেশ চিন্তান্বিত হয়ে পড়ল। আর বাকী আছে মাত্র ২ দিন। আজই যদি গল্পটি চূডান্ত করতে না পারে তবে সমস্যা হয়ে যাবে। এবার গল্প লেখার জন্য ভালো পুরস্কার আছে। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা।
‘‘...আর একটু ভাবতে হবে। শেষটা কী এখানেই হবে না কী আরো একটু বাড়ানো দরকার...’’
ভাবতে ভাবতে মাথাটা যখন বিদ্রোহ করবে করবে ভাব তখনই কম্পিউটারের কীবোর্ডে তার আঙ্গুল খেলা করা শুরু করল। না গল্পটা আরেকটু বাড়াতেই হবে...
সে গল্পটি বাড়াতে থাকল...
২
‘‘হুমম এইবার ঠিক হয়েছে। ’’
রাহবার বেশ সন্তুষ্ট হয়ে বারবার কন্ট্রোল এস চেপে গল্পটি সেভ করতে থাকে। এবার সে তার ডায়াল আপ কানেকশান দিয়ে গল্পটি মেইলে পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে থাকে।
নবীন লেখক রাহবার রবিন গল্প লেখা শুরু করেছে ব্লগ লেখা শুরু করার পর। সে হিসেবে মাত্র ছ মাস ধরে সে লিখছে। এখনই সে গল্প লিখে প্রথম পুরস্কার পেয়ে যাবে এমনটা সে ভাবছে না। তার গল্প টি দেশের প্রধান পত্রিকাটিতে ছাপা হলেই সে খুশি।
৩
রাহবার মাস্টার্স পাশ করে সবে বেরিয়েছে।
বন্ধুরা যে যার মতো চাকরি খুঁজছে। আর সে ওদিকে মন না দিয়ে পুরোদমে লিখছে। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আগেও খুব একটা তার জমত না। সে একটু রিজার্ভ প্রকৃতির ছেলে। তাই ক্লোজ বন্ধু বলতে তার তেমন কেউ নেই।
আর এখন বলতে গেলে কারো সাথেই তার মাসেও একবার যোগাযোগ হয় না।
তবে সে অনেক মেয়েকে তার ক্লোজ ফ্রেন্ড করতে চেয়েছিল তারা রাজি না হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। যার ফলে যা হয়েছে প্রচুর কবিতার জন্মদিয়েছে সে। এখনো প্রতিনিয়তই কবিতার প্রসব বেদনা অনুভব করে সে। কিন্তু কবিতা লিখে আর তার মন ভরছে না।
তার ভেতরের গল্পগুলো সে লিখতে চায়। তার ভেতরে যে অনেক গল্প!
বলার লোক নাই! পত্রিকায় ছাপা হলে তাও কিছু মানুষ জানতে পারবে। যদিও ব্লগে অল্প কিছুসংখ্যক লোক তার গল্প পড়েছে...
আচ্ছা এককাজ করলে কেমন হয়? এই গল্পটিই ব্লগেই দিয়ে দিই না কেন?
যেই ভাবা সেই কাজ। সে গল্পটি পত্রিকায় মেইল করার পর সেটা ব্লগে দিয়ে দিল। তার লেখা যে ব্লগার রা পড়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে তা নয়! চটকদার কোন শিরোনাম না হলে ব্লগের লেখক পাঠকরা লেখা পড়তে চায়না।
৩
‘‘মাত্র ২২ বার পঠিত!’ রাহবারের ভুরু কুঁচকে যায়। তার অন্য লেখাগুলো ব্লগে গড়ে ৮০-৯০ বার পঠিত হয়। বোধহয় এই গল্পটি ভাল হয়নি। কে জানে পত্রিকার গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় এটি ছাপা হয় কী না!
পুরস্কার তো অনেক পরের ব্যাপার।
আচ্ছা শেষ অংশটুকু কী না লিখলেই ভাল হতো? ব্লগের কেউই তো লেখাটিতে প্লাস দিল না।
হা ... এখন আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফসোস করে কী হবে। পত্রিকায় গল্পটি তো সে মেইল করে দিয়েছে।
দেশের প্রধান এই পত্রিকাটি নিয়মিত তার বাসায় কেনা হয়না। আগামী ১৩ তারিখ তাকে এই পত্রিকাটি কিনতে হবে। নাহ্! ছাপা হওয়ার কোন সম্ভাবনা সে দেখছে না।
৪
১৩ তারিখ। রাহবারের ঘুম ভাঙলো কিছু দেরিতে। উঠেই সে আর নাস্তা খাওয়ার দেরিটুকুও আর সইল না। সোজা রাস্তার মাথার পত্রিকার দোকানে গিয়ে ভালোবাসার অণুগল্প সংখ্যাসহ সে পত্রিকা কিনে আনল।
রাহবারের বুক ধকধক করছে।
জীবনে প্রথম সে গল্প পাঠিয়েছে পত্রিকায়। ছাপা হলে একটা অন্যরকম ভালোলাগায় তার মন ছুঁয়ে যাবে।
রাহবার দেখছে দেখছে ... রবিন? না সে রবিন নয়... পৃষ্ঠা বেশি ছিল না। তাই তার পাতাগুলো শেষ করতে বেশি সময় লাগল না। বলাই বাহুল্য রাহবারের গল্পটি ভালবাসার বিশেষ সংখ্যা ম্যাগাজিনে ছাপা হয়নি।
রাহবার ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল।
হয়ত তার লেখাটি অত ভালো হয়নি। আচ্ছা শেষ প্যারাটি কী না লিখলেই ভালো হতো? গল্পের শেষ টা তো অন্যভাবেও করা যেতো। কিন্তু শেষটা তার খুব পছন্দ হয়েছে। ব্লগে কেউই শেষটার ব্যাপারে কিছু তো বলল না।
নাহ্! হতাশ হলে চলবে না। লেখালেখি চলবে। লিখতে তার খুব ভালো লাগে। নোবেল জয়ী ফরাসী সাহিত্যিক লে ক্লেজিও বলেছিলেন লেখালেখি তাকে এক ভিন্ন জীবন দান করে... খুব সম্ভবত এক উৎকৃষ্ট জীবন। তার অবস্থাও তেমনি।
তার বন্ধু-বান্ধবীহীন জীবনে লেখালেখি আর সাহিত্য পড়াই তার একমাত্র সঙ্গী। মানুষের সঙ্গে মিশতেও তার তেমন ভালো লাগেনা। তাই লেখা ছাপা না হলেও লেখালেখি সে ছাড়তে পারবে না। কেউ না পড়–ক। সে তার আনন্দের জন্য লিখে যাবে।
ব্লগে ১০-১৫ জন যা পড়ে আর যে কয়জন মজা পায় ওতেই তার শান্তি।
রাহবার জানে তার গল্পটি ছাপার জন্য মনোনীত হয় নি। আসলে তার গল্পটি ছাপার জন্য মনোনীত হয়েছে। এবং এটি পুরস্কার পাবে কী পাবে না সে বিষয়ে বিচারকদের মধ্যে মতভেদ তৈরী হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এটি পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়নি কিন্তু ছাপার তালিকায় অবশ্যই ছিল।
পাতার মেকাপের সময় ১৩ তারিখের সংখ্যাটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এটিকে পরের সপ্তাহের পত্রিকার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
রাহবার এ সবের কিছুই জানত না। তাই পরের সপ্তাহের পত্রিকা আর তার কেনা হয়নি। এবং দেখা হয়নি নিজের লেখা গল্পটি পত্রিকার ম্যাগাজিনটির একটি পৃষ্ঠা জুড়ে জ্বলজ্বল করছে।
৫
এর দুসপ্তাহ পরে রাহবার একটি মেইল পেল।
মেইলটি এসেছে দেশের এক বিখ্যাত লেখকের নামে... এই লোকটিই কী সত্যিই আহমেদ ফজল? তিনি তাকে মেইল করবেন কেন? সে মেইলটি খুলল...
‘অভিনন্দন! তোমার গল্পটি পড়ে খুব মজা পেলাম। আমি লেখক আহমেদ ফজল। দু’চারজন লোকে আমাকে চেনে। তবে তুমি যেভাবে লিখলে এভাবে যদি লিখতে থাকো তবে তোমাকে আরো বেশি লোকে চিনবে। আমি অবাক হলাম তোমার গল্পটি পুরস্কার না পাওয়ায়! সেজন্য আমিই তোমাকে তোমার গল্পটির জন্য একটি উপহার পাঠাতে চাই।
তোমার ঠিকানাটা আমি পত্রিকা অফিসে চেয়েছিলাম ওরা বলল তোমার শুধুু মেইল এ্যাড্রেসটিই ওদের কাছে আছে। এবং সেভাবেই এই মেইল তোমার কাছে পেীঁছল। তোমার ঠিকানা আমাকে মেইলে জানিয়ো।
তোমার গল্পের পুরস্কার স্বরূপ আমার একটি বই তোমাকে উপহার দিতে চাই। বলতে পারো অনেকটা নিজের প্রথম জীবনের লেখালেখির কথা মনে পড়ে যাওয়ায় তোমাকে পুরস্কারটি পাঠাতে চাই।
আমি আগে যখন পত্রিকায় লেখা পাঠাতাম সেগুলো ওরা বেশিরভাগই ছাপত না। আর কোন লেখালেখির প্রতিযোগিতায় আমার কোন গল্প পুরস্কারও পায়নি। আমি তখন হতাশ হইনি। লেখালেখি চালিয়ে গেছি। পরে আমার সেই গল্পগুলোই বোদ্ধামহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
আশা করি তুমিও হতাশ হবে না। লেখালেখি চালিয়ে যাও।
শুভেচ্ছা সহ
আহমেদ ফজল
ধানমন্ডি ঢাকা।
বি.দ্র. তোমার গল্পের শেষটা ছিল অসাধারণ। আমার এক বিখ্যাত প্রিয় লেখক গল্প এভাবেই শেষ করেন।
সেজন্যই আরো ভালো লেগেছে। তোমার এই স্টাইলটি ধরে রাখবে।
মেইল পড়ে রাহবার হতভম্ব! তার গল্প ছাপাই বা হল কখন? আহমেদ ফজল পড়লও বা কখন? অংকে চিরকালই দুর্বল রাহবারের মাথায় সহজ ব্যাপারটি আহমেদ ফজলের পরবর্তী মেইল পাওয়া পর্যন্ত ঢোকে নি।
বলাই বাহুল্য সে আহমেদ ফজলকে মেইলে জিজ্ঞেস করেছিল তার গল্পটি কবে ছাপা হয়েছে!
----------০---------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।