"অনেক অনেক দিন আগে, এক দেশে ছিল এক রাজা, নাম তার আশু,তার ছিল এক রানী, নাম তার লিয়া। আশু,লিয়া, আর তাদের বন্ধুদের নিয়ে প্রজাদের হেসে খেলেই জীবন চলে যাচ্ছিল। কিন্তু হায়, দৈনন্দিন জীবনে যতই ব্যস্ত হতে থাকে মানুষ, ভুলতে থাকে মূখের হাসি, ততই বিলীন হতে থাকে সেই 'সুখরাজ্য' । একদিন হারিয়েই যায় রাজ্যটি। আজ অনেকদিন পর ঢাকার অদূরেই রাজা আশু ফিরিয়ে আনে সেই সুখরাজ্য "ফ্যান্টাসি কিংডম", ফিরিয়ে আনে হারিয়ে যাওয়া মুখের হাসি, খুশি, নাচ-গান ... "।
এই হচ্ছে আশুলিয়ায় অবস্থিত "ফ্যান্টাসি কিংডম" এর তৈরি করা কাহিনী। একবার ভাবুনতো খুব সাধারণ একটা পাপেট "আশু" র সাথে ছবি তোলার চেয়ে কোনো 'কল্পনার সুখরাজ্যের' রাজা "আশু" র সাথে ছবি তোলার অনুভুতিটাই কতো ভিন্ন হবে? আর এই জন্যেই দরকার হয়ে পরে এই ধরণের কাহিনীর, রুপকথার, মিথের। কাহিনীটার প্রচার যত বেশী হবে, ততই এটা মিথ হতে থাকবে। ফ্যান্টাসি কিংডম হয়ে উঠতে থাকবে একটা সফল ব্রান্ড। আশু-লিয়ার এই কাহিনী যে আসলেই একটা সফল মিথের দিকে এগুচ্ছে বুঝতে পারলাম এখান থেকে ।
এখানে জনৈক লেখক বোধোয় আশু-লিয়ার সেই মিথদ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই বইটা লিখেছেন।
কোনো 'ইস্যু' তে একটা কাহিনী বা মিথ তৈরি করতে পারলে সেটার প্রতি আগ্রহ মানুষের দিনকে দিন বৃদ্ধি পায়। মানুষ সেটা বলতে মজা পায়, জানতে চায়। ভ্যালেন্টাইনস ডে এর কথাই ধরুন। গিফ্ট কোম্পানি গুলা কত সূচারু ভাবে 'সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন' এর কাহিনীকে একটা সফল মিথ তৈরি করে ফেলল।
ফলাফল তাদের পকেটে কাড়িকাড়ি টাকা, দিনকে দিন মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি। অথচ পাশের বাড়ির রহিম,করিম হাত কেটে রক্ত দিয়ে কত চিঠি লিখলো, কতজন ফাসি নিলো, কতজন সুইসাইড খাইলো তাদেরকে আমরা স্মরন করি নাহ মোটেও, কারণ তাদেরটা মিথ হয়ে উঠতে পারে নাই, কেউ চেষ্টাও করে নাই। ভাবুনতো ভালোবাসা দিবস একটা লাগবে, শুধু এই চিন্তা করে নিরস জাতিসংঘ কোনো 'মিথ' ছাড়াই ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা দিবস ঘোষনা করে দিলো, মানুষের কতটা আগ্রহ থাকতো তখন?
মিথ নিয়ে ব্রান্ডিং এ সামহোয়েরইনব্লগও মনে হচ্ছে পিছিয়ে নাই। বিশেষ করে লোকালটক ওরফে ফিউশান ফাইভ কে নিয়ে যা হচ্ছে সেইটাকে একটা মিথ তৈরির চেষ্টা বলা যেতেই পারে। তার পরিচয় কি? সে কি খুব ক্ষমতাবান কেউ? সামহোয়েরইনব্লগ অথরেটির কেউ? মডারেটরদের কেউ? এর পিছনে কি একাধিক কেউ? এইরকম অনেক প্রশ্ন নিয়ে শ'য়ের মত পোস্ট, হাজারের মত কমেন্ট আসছে এই ব্লগে।
শুধু তাই না 'লোকালটক কে?' এই প্রশ্ন এখন জাতীয় একটা টিভি চ্যানেল(এনটিভি) এর হোস্টের মুখেও। এই ভিডিওটিতে জনপ্রিয় ব্লগার কৌশিক কে এই প্রশ্ন করলে কৌশিকদাও একটু রহস্য রেখেই উত্তরটা দিলেন। লোকালটক হয়ে উঠলেন বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারে সফল একটা মিথ। ফলাফল সামহোয়েরইনব্লগ হিট, বহুগুন বেড়ে গেলো ব্লগিং এর মজা।
বাংলাদেশে ব্রান্ডিংএ মিথের সবচেয়ে সফল প্রয়োগ হচ্ছে পীর-মাজার সংস্কৃতিতে।
অমুক পীর 'সুরমা নদী পারি দিলেন জাইনাও মাঝে চর'। তমুক পীর একটু বেশি গরম। কোনো এক দেওয়ানবাগীর মুখ দেখা গেছে চাদে। এইরকম হাজারো-লাখো মিথ এইসব পীর-মাজার নিয়া। যে পীর-মাজারকে নিয়ে যত বেশি সফল মিথ সেই পীর-খাদেমের পকেট ততো ভরা।
এভাবে মিথ দিয়ে 'পারসোনাল ব্রান্ডিং' যে শুধু পীর-মাজারের ক্ষেত্রেই হচ্ছে তা না- ধর্মপ্রচারক, রাজনীতিবিদ,ব্যবসায়ী,লেখক অনেকের মধ্যেই এইটা অনেক বেশী লক্ষ্যনীয়। তবে আজকে আর না, এইপর্যন্তই।
পোস্ট টা ব্লগার খারেজীর রূপকথা নিয়ে কিছু কথা হতে পারে! এর প্রতিক্রিয়া পোস্ট বলতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।