একজন লেখক লিখবেন । তার মত প্রকাশিত হবে সৃজনের পক্ষে। এটাই আসল কথা । বিশ্বের অনেক দেশের সৃজনশীল লেখকরাই লিখেন।
ধরি , নিউইয়র্ক টাইমস এর কথা ।
এই কাগজ ইহুদীবাদকে সমর্থন করে।
সেটা অনেকেই জানেন । তারপরও এই কাগজে লিখেছেন সাক্ষাতকার দিয়েছেন, এডওয়ার্ড সাঈদ, নোয়াম চমস্কি , আমিরী বারাকা সহ অনেক
নামী লেখক।
মত না জানালে তা প্রকাশিত হবে কী করে ? এই বিষয় টা প্রধান তো বটেই।
একবার বরেণ্য আব্দুল গাফফার চৌধুরী কে প্রশ্ন করেছিলাম , আপনি কী
ইনকিলাবে লিখবেন ?
তিনি সহাস্যে বলেছিলেন , আমার লেখার স্বাধীনতা দিলে আমি কেন লিখবো না ? আমার লেখা হুবহু ছাপতে হবে।
দুই
যারা চিন্তক , তারা সমাজকে নিয়ে ভাবেন কল্যাণের পথে। মৌলিক লেখকরা সবসময় সে কাজ টাই করে যান। একই কথা বলা যায় সমাজ সংস্কারকদের বেলায় ও । তারা সমাজের কল্যান চিন্তা করে এগিয়ে যান
আগামীর দিকে।
বাংলাদেশের সমাজ নির্মাণে , একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবীতে
এই প্রজন্মকে শাণিত করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।
আমার একটা সুযোগ হয়েছিল তার সাথে কাজ করার। আমি ছিলাম
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির যুক্তরাষ্ট্র
শাখার যুগ্ম সচিব ।
সেই সুবাদে শহীদ জননীর খুব সান্নিধ্য পাবার সুযোগ আমার হয়েছিল। সেই সময় ও দেখতাম , একটা মহল তাঁকে ঘিরে ধরে
বার বার বলতো - আম্মা এটা করেন, আম্মা ওটা করেন।
শহীদ জননী সিদ্ধান্ত নিতেন খুব সাবধানে।
কৌশলে।
তাঁর নীতি থেকে কেউ তাঁকে টলাতে পারেনি। তিনি ঐসব অতি
আগ্রহী নাবালকদের কথায় কোনোদিনই কান দেননি ।
একজন বুদ্ধিমত্তা নারীর প্রায় একক সিদ্ধান্তেই সেদিন সম্ভব হয়েছিল , ঘাতক গো আজমের প্রতিকী বিচার।
কোনো অতিউৎসাহী দ্বারা প্রভাবিত হননি তিনি।
যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে তথাকথিত রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা হয়েছিল, এরা কারা ? কোথায় এখন , কী করছেন ? তা বর্তমান প্রজন্মকে জানার বিনীত অনুরোধ করি ।
তিন
আজকাল একটা প্রবনতা খুব জভীরভাবে লক্ষ্য করি । কোন লেখক
কোন কাগজে , কোথায় কী লিখেছেন- তা নিয়ে একটি টিকটিকি
মহল বেশ লাফালাফি শুরু করেছে।
এরা কবীর চৌধুরী , রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ , সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী , ড আনিসুজ্জামান , আকবর আলী খান , প্রমুখ
দেশ বরেণ্য লেখকদেরকে নিয়ে না না কটুক্তি শুরু করেছে।
লক্ষ্যনীয় বিষয় , যারা এসব করছে -এরা কেউই কিন্তু বিশেষ কোনো পরিচিত ব্যক্তি নয়।
নিজেদের লেখালেখির একটা খেলার
মাঠ তৈরি করে সেখানে (প্রতিপক্ষ আসে নাই তাই ) ফ্রি গোল দেবার চেষ্টা করছে।
আরো লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে , যেসব লেখকদের সামনে দাঁড়িয়ে
দুকথা বলার সাহস ও এদের যোগাবে না , এমন কিছু নাবালকরাই
এসব বরেণ্য লেখকদেরকে তুচ্ছতাচ্ছল্য করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।
এর কারণ ও মূলতঃ ঐ নিজেদের কামেলত্ব জাহির করা ।
তাদের কে প্রশ্ন করি - বাংলাদেশের জন্য , বাংলাভাষার জন্য, বাংলা সংস্কৃতির জন্য একজন কবীর চৌধুরী , একজন নির্মলেন্দু গুণ,একজন রফিক আজাদ যা করেছেন , তার দুই পয়সা সমান ওরা কী কিছু করতে পেরেছে ?
না পারে নি । তা হলে এতো লাফালাফি কেনো ?
চার
মেধার প্রতি একটা হিংসা অনেকেরই থাকে।
এর অর্থ এই নয় , কোনো সৃজনশীল লেখককে অযথা আক্রমণ করতে হবে। জানা দরকার, ঐসব লেখক এসব নাবালকদের চেয়ে অনেক বেশী ধীশক্তি সম্পন্ন।
তাই তাদের কাছ থেকে শেখারই আছে। তাদেরকে শেখানোর কিছু
নেই।
শহীদ জননীর কথা দিয়ে শেষ করি ।
তিনি বলতেন , চেনা শত্রুর
চেয়ে , নিজেদের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা শত্রুরাই বেশী বিষাক্ত।
যারা প্রকারান্তরে সৃজনশীল প্রগতিরই ক্ষতি করে।
আমাদের চারপাশে এখন টিকটিকিরা আবারও সক্রিয়।
টিকটিকির লেজ বাড়ে , আবার খসেও যায় । আর এতেই মনে
করে তারা নবজন্ম পেয়েছে ।
অথচ প্রকৃত মানবজীবন তো এমন নয় ।
মেধাহীন , তস্করশ্রেণীর এসব অতিপ্রগতিবাদীরা এখন দেশের
বরেণ্য বুদ্ধিজীবিদেরকেই পরখ করার অপচেষ্টা করছে।
তাই এদের বিষয়ে শুধু সতর্কই নয় , এদেরকে চিহ্নিত করণও
খুব জরুরী ।
ছবি- কে ক্লগি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।