আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হৃদয়ের কাছাকাছি সেই



গত বছর আমি পদ্মা নদী দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। কী বিশাল পদ্মা আর কী হয়েছে!এর জন্য কী প্রকৃতি দায়ী?নদীর পাড়ের মানুষদের অনেক কষ্ট। অনেকদিন আগে 'হিমি'কে নিয়ে পদ্মার চড়ে এক সুন্দর বিকেলে বসে ছিলাম। রাশি রাশি কালো চুলের উপর ফুলের মতো মুখটা,নিষ্পাপ পবিএ। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় 'হিমি'র বুকে মাথা রেখে খুব কাঁদি।

আমার মনে হয় যত আনন্দেই আমরা প্রত্যকে জীবন যাপন করি না কেন,কখনো কখনো নিঃসঙ্গ হয়ে যাই;কী যেন একটা বাকি রয়ে গেল এখনো!দিনের শেষে ভাবি,তুমি কেমন আছো?আমি কি তোমাকে চিনি?কোনোদিন কি তোমাকে কোথাও দেখেছি?তুমি কাছে থাকলে কি আমার জীবনটা অন্য রকম হয়ে যেতো?জানি না, তবে প্রতিদিন আমি তার অপেক্ষায় থাকি। যতক্ষন আমি বাইরে থাকি তাকে খুঁজে বেড়াই। কিন্তু কখনও পাই না! আমি জানি না ,সত্যি সত্যি 'হিমি' আছে কিনা। কিন্তু আমি অপেক্ষা করে আছি তার জন্য। একদিন তো দেখা হবেই।

তীব্র বাসনা নিয়ে অপেক্ষায় আছি। সেই চির চেনা আঙ্গুলে ভালোবাসা বুনে চলি,মুখে নয়। এখনতো সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে-প্রেম-ভালোবাসা,বন্ধুত্ব,আর আমাদের পুরাতন মন। রঙ্গীন মুখোশ পরে দিন তারিখ ধরে বেঁধে এখন আমরা বন্ধু দিবসে বলে উঠি-বন্ধু কেমন আছিস?কিংবা ভালোবাসা দিবসে বলি- খুব ভালোবাসি তোমাকে। পরের বছর বলি অন্য কাঊকে।

আমরা বদলে গেছি। দিনের পর দিন আমরা অন্ধকার পৃথিবীর দিকে যাচ্ছি। আমি অচল ও সেকেলে মানুষই থেকে গেছি। এখনো একেকটা দিন মানে কষ্টের খাতায় আরেকটা নতুন পাতা। তারপরও আমি স্বপ্ন দেখি।

সুন্দর স্বপ্ন দেখাটাও একটা অনেক বড় ব্যাপার। একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি! হিমি' কলা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে খুব হাসছে আর গল্প করছে বন্ধুদের সাথে। 'হিমি'!বৃষ্টি হলেই আমার মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। যা খুশি দেখতে পারি,বলতে পারি,করতে পারি,ভাবতে পারি,এইতো বকুল তলায় ভেজা ঘাসে খালি পায়ে হাঁটছে 'হিমি'।

কী সুন্দর একটা নীল শাড়ি পরা!নীলের মধ্যে বড় বড় সাদা ফুল আঁকা। সূতী শাড়ি। আমি 'হিমি'র পিছনে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম ফুলার রোডে!তারপর 'হিমি' মহসিন হলের সামনে পুকুরের দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে। হয়তো আমারই কথা!বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। এই বৃষ্টির কারনে আমার মাথাটা এলোমেলো হয়ে আছে।

আবার 'হিমি'!ঐ তো 'হিমি' আমার ঘরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। এই যে কখন থেকে বৃষ্টি পড়ছে-এই বৃষ্টি আর 'হিমি' আমার। এই বৃষ্টি রং নীল,গাঢ় নীল। এই বৃষ্টিতে শুধু 'হিমি' আর আমি ভিজছি। বৃষ্টি!'হিমি'!নীল শাড়ি!তাজমহলের বারান্দায় দাঁড়ালে মনে হবে -এই বৃষ্টিতে না ভেজাটা একটা বড় অপরাধ।

এই বৃষ্টি পড়ছে-আমার 'হিমি'র কপালে,ঠোঁটে,নীল শাড়িতে ,ঘন কালোচুলে,মুখে আর নরম সবুজ ঘাসে। আহা কী আনন্দ! কিন্তু বাস্তব এই রকম না। বাস্তব খুব কঠিন। বাস্তবে বৃষ্টি মানেই ট্র্যাফিক জ্যাম,কাঁদা,রিকশা ভাড়া বেশী,পানি জমে থাকা,দুগর্ন্ধ,বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা। বৃষ্টি মানেই ঝামেলা-বিরক্তি।

এই বৃষ্টি আনন্দময় বৃষ্টি না। এই বৃষ্টিতে মেজাজ গরম হয়ে যায়। দিনের শেষে ঘরে ফেরার পথে অসহ্য ট্র্যাফিক জ্যাম দেখে মনে হয় দূর এই পোড়া দেশেই থাকবো না। তাই বলে 'হিমি' অবাস্তব না। এই পুরোনো প্রাচীন পৃথিবীতেই আছে।

ইংরেজীতে একটা শব্দ আছে, 'Neophyte'(নীওফাইট্। নিওফইট নয়। )নীওফাইট্ শব্দটা গতকাল রাতে বারবার মনে পড়লো। কিন্তু এর অর্থ কিছুতেই মনে করতে পারলাম না। ডিকশনারীটাও খুঁজে পেলাম না।

দরকারের সময় কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। খুব রাগ লাগছিল। একসময় আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। তারপর অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম-আমি আর 'হিমি' সুন্দর ঝলমল দিনে ইরানের যাদু ঘর দেখতে গিয়েছি।

আল বাশার মসজিদে যাওয়ার পথেই ইরান যাদু ঘর। দর্শনার্থীদের কোন প্রবেশ ফ্রি নেই। শুধু প্রবেশ মুখে জানতে চাওয়া হয়,কোথা থেকে এসেছেন,কোন দেশের নাগরিক-এই সব আর কি!ভেতরে ঢুকতেই আমাকে আর 'হিমি'কে সাদরে আমন্তন জানানো হলো। কারন সকাল থেকে দুপুর ১২ টার মধ্যে আমরাই প্রথম দর্শনার্থী। পৃ্থিবীর যে কোনো যাদু ঘরে ঢুকলেই ইতিহাস ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।

তেমনি পেলাম ইরান যাদু ঘরেও। আর কি আশ্চর্য প্রবেশ মুখেই পেয়ে গেলাম লেখিকা তসলিমা নাসরিন আর অভিনেএী সুবর্না মোস্তফাকে। তারাও আমাকে আর 'হিমি'কে দেখে খুব খুশি হলেন। কেন এই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম?তার ব্যাখ্যা কিছুক্ষন পর দিব। আমিতো কখনোই ইরান যাইনি।

মানুষ ইচ্ছ করলেই অনেক কিছু পারে। কিন্তু সবকিছু পারার আগে তার সুন্দর স্বপ্ন দেখতে হবে। অনেকেই সুন্দর স্বপ্ন দেখতে পারে না। এটা তাদের ব্যথর্তা। সুন্দর স্বপ্ন দেখতে তো আর টাকা পয়সা লাগে না।

শুধু ইচ্ছার ব্যাপার। এই সংস্কৃত শ্লোক টা যে বুঝবে ,সেই যাদু ঘরের স্বপ্ন দেখার ব্যাপার টা বুঝতে পারবে। "লুচি কচুরি মতিচুর শোভিতং জিলেপি সন্দেশ গজা বিরাজিতম। যস্যাঃ প্রসাদেন ফলারমাগ্নুমঃ। সরস্বতী মা জয় তান্নিরন্তম।

ফ্রয়েডির ব্যাখ্যায় আর গেলাম না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।