অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় হিংসার রাজনীতিই শক্তিশালী। অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা, নিন্দা কিংবা অযৌক্তিক আক্রমণত্মক বক্তব্য ছাড়াই যেন কোনো দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। যেসব বিষয় রাজনীতির মৌলিক বিষয় হয়ে উঠার কথা ছিল সেসব বিষয় সবসময়ই আস্তকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
১/১১-এর পর অনেকের ধারণা ছিল, রাজনীতিবিদদের একটু হলেও কাণ্ডজ্ঞান খুলবে। কিন্তু ১/১১-এর হুতাদের অতিউৎসাহ তাদেরকে খলনায়কের প্ররিণত করেছে।
ফলে যেসব নষ্ট রাজনীতিবদরা তটস্থ ছিলেন নিজেদের অপরাধবোধে তারা এখন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। তারা সংসদের ভেতরে-বাইরে সমানভাবেই সক্রিয়। প্রবীণ সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ এক টিভি চ্যানেলের টকশোতে সুরঞ্জত সেনকে বলেছিলেন, ও ঐটা, আওয়ামী লীগের লাইটটাল? সবাই মুখটিপে হাসলেও সাহসী এই প্রাজ্ঞ সাংবাদিক বয়সের ভারে খানিকটা অচল থেকেও রাজনীতিবিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করতে ভুল করেননি। একইভাবে সাকা চৌধুরী গং-এর মুখবাজী পলিটিক্স সর্বজস্বীকৃত।
আমরা এসব চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি।
এখানেই আমাদের জাতীয় দৈন্যতা। কাউকে এককভাবে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। সময়ের চাকা ঘুরবে কিন্তু চরিত্র পাল্টাবে না।
এমতাবস্থায় আমাদের কীইবা করণীয় হতে পারে। কোনো দেবদূত এসে কি আমাদের বদলে দেবে? আমরা নিজের দিকে তাকাতে না পারলে কোনো কিছুই বদলাবে না।
হ্যা, আমরা সুন্দর সুন্দর শ্লোগান রপ্ত করেছি, 'ডিজিটাল বাংলাদেশ', 'বদলে দাও বদলে দাও' ইত্যাদি। এসব শ্লোগানের ভেতরে কি? ভেতরে এর কোনো উল্লেখযোগ্য চরিত্র আছে বলে কি আমরা মনে করি? যদি উল্লেখযোগ্য কোনো মরতবা লুকিয়ে থাকে তা কি আমরা সনাক্ত করতে পারছি? অবশ্যই না। আমরা বাইরের চকচকে প্রিন্ট কিংবা মাইক্রফোনে ধ্বনিত শ্লোগানটাকেই মৌলিক ধরে নিয়েছি।
যে রাষ্ট্রটিকে কর্পোরেট মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করে, কর্পোরেট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে পুজিবাদী বিশ্ব তথা দেশীয় এজেন্ট, ব্যুরোরা তাদের খলচরিত্র সম্বন্ধে আমরা ওয়াকিবহাল নই। এই যে পুজিবাদ, কর্পোরেট ইত্যাদি শব্দ এগুলোকে কেবল গালভরা শব্দ হিসেবেই ধরে নিয়েছি।
এর জন্য এর মূলচরিত্রও অনেকটা আমাদের নিজেদের মতো হয়ে উঠেছে। আসলে হয়ে উঠে নাই - আমরা এই চরিত্রের ভেতর আবর্ত হচ্ছি যার দরুণ আয়নার সামনে নিজেকে চিনতে ভুল হয়।
একটি মোবাইল ফোন ব্যবহারের পূর্বে আমরা কখনই ভেবে দেখেছি কি এটি আমাদের ব্যক্তিজীবনে কতটা প্রয়োজন? যখন এই ফোনগুলো ছিল না তখন কি আমাদের জীবন একেবারেই অচল হয়ে গিয়েছিল?
আমাদের শ্রেণী চরিত্রে অপ্রয়োজনকে প্রয়োজন করে তুলেছে এই দানব-বণিকরা। এই দানবীয় বানিজ্যনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে না পারলে রাষ্ট্র তথা অন্যের ভালোমন্দ বুঝতে সক্ষম হবো না কোনোদিন। কথাটা দীর্ঘায়িত না করে সংক্ষিপ্তভাবে বলতে চাই, রাষ্ট্রের কর্ণধাররা যে স্রোতের ভেতর রাজনীতি চর্চা করছেন তারা কখনই রাষ্ট্রনীতি ভৌগলিকভাবে ভাবছেন না, তারা সব কিছু বণিকচর্চার ভেতর দিয়ে রাজনীতি চর্চা করছেন।
এখানেই আমাদের দুর্ভাগ্য।
এই ব্লগের রিডারদের মানসিকতা থেকেও অনেক কিছু অনুমান করা যায়। এখানে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করা দেখা যাচ্ছে, বক্তার বক্তব্যের যৌক্তিক বিষয়কে উপেক্ষা করে মাসুলবৃত্তি নিয়ে তারা মন্তব্য নিয়ে আসেন। ব্লক করো, মাইনাস দেও ইত্যাদিই সর্বোচ্চ ভাষা। একটি ন্যাশনকে বুঝতে হলে তার এই নর্মগুলোকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।