জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ঠ মুক্তি সেখানে অসম্ভব
ক’ বছর আগেও সবার মনে এমন একটা ধারণা ছিল, মার্কিন ডলারে ১০ অঙ্কের ঘরে বেতন পেতে হলে যে কাউকে অপেক্ষা করতে হবে চুল পাকা পর্যন্ত। কিন্তু না, ইদানিং কর্পোরেট বিশ্বে তরুণ বয়সের সিইওরাই মাসে মাসে ১০ অঙ্কের বেতন পকেটে পুরছেন।
এই তরুণ তুর্কিদেরমধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা। আর এই ধারা চালু হয়েছে ২০০০ সালের প্রযুক্তি বিস্ফোরণ থেকে। ওই সময় একইসাথে প্রায় ৩০টির মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় নামে।
অবশ্য, এই উত্থানের পর পতন হতেও বেশি সময় লাগে নি। গত কয়েক বছরে এই তরুণ সিইওর সংখ্যা কমেছে অনেক। ফর্বস ম্যাগাজিনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০০ কোম্পানিতে এই তরুণদের (৪৫ বা তার কম বয়সী) সংখ্যা নেমে এসেছে ২৮ এ, যা ২০০০ সালে ছিল ৬০ জন।
এখানে এমন সর্বাধিক বেতনপ্রাপ্ত কয়েকজন তরুণ সিইও-র কথা তুলে ধরা হলো :
১.নাবিল গারিব, মেমেক ইলেক্ট্রনিক ম্যাটেরিয়ালস
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নাবিল গারিব ৪৩ বছর বয়সে সর্বাধিক বেতনপ্রাপ্ত সিইও-দের তালিকার প্রথম স্থানে আসেন। তিনি ২০০২ সাল থেকে মেমেক ইলেক্ট্রনিক ম্যাটেরিয়ালস এর চিপ তৈরির সিইও হিসেবে কাজ করে মোট ৭৯.৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন।
গারিব মেমেক-এ সিইও হিসেবে যোগ দিয়েছেন ২০০২ এর এপ্রিলে। তিনি এমন সময়ে নিয়োগ পান যখন টেক্সাস প্যাসিফিক গ্রুপ কোম্পানিটি এর মূল জার্মান মালিকের থেকে কিনে নতুন করে বিনিয়োগ করে।
মেমেক-এ যোগদানের পূর্বে গারিব ইন্টারন্যাশনাল রেক্টিফায়ার কর্পোরেশন নামে একটি স্বনামধন্য পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানিতে কাজ করতেন। সেখানে তিনি কোম্পানিটির বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম, গবেষণা এবং উন্নয়ন ও মার্কেটিং দেখাশোনা করতেন।
তিনি ইন্টারন্যাশনাল রেক্টিফায়ার এ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন ১৯৯২ সালে।
পর্যায়ক্রমে তিনি আরো বড় বড় নানা পদে দায়িত্ব পালন করেন। গারিব ২৫ বছর আগে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে চলে আসেন। তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট এ এমএসসি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রাপ্ত।
২. ইয়েন-সান হুয়াং, এনভিডিয়া
তালিকার দুই নম্বরে রয়েছেন এনভিডিয়া কর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়েন-সান হুয়াং। হুয়াং ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে গ্রাফিক চিপ তৈরির এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।
তখন থেকে তিনি প্রায় ৪৫.৯ মিলিয়ন ডলার বেতন পেয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং এনভিডিয়ার বোর্ড সদস্য পদে কর্মরত ছিলেন। তার নেতৃত্বে এনভিডিয়া প্রোগ্রামেবল গ্রাফিক্স প্রসেসিং প্রযুক্তিতে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে ওঠে।
হুয়াং র্যান্ড কর্পোরেশনের ট্রাস্টি বোর্ডেরও একজন সদস্য। এছাড়া তিনি কমিটি অব হান্ড্রেড এর একজন।
এটি চীনা-আমেরিকান কম্যুনিটি এবং যুক্তরাষ্ট-চীন সম্পর্ক নিয়ে সোচ্চার একটি সংগঠন।
এনভিডিয়া প্রতিষ্ঠার পূর্বে হুয়াং এলএসআই লজিক এ ইঞ্জিনিয়ারিং, মার্কেটিং এবং জেনারেল ম্যানেজমেন্টের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া তিনি অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেস এর মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করেছেন।
হুয়াং অরিজন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসইই এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমএসইই ডিগ্রি লাভ করেন।
৩.জোনাথন শোয়ার্টজ, সান মাইক্রোসিস্টেমস
সান মাইক্রোসিস্টেমস এর চিফ এক্সিকিউটিভ এবং প্রেসিডেন্ট জোনাথন শোয়ার্টজ তৃতীয় সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত সিইও।
তিনি বছরে ১৩.৫ মিলিয়ন ডলার বেতন পান। কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের সদস্য শোয়ার্টজ ২০০৬ সালে সিইও পদে নিয়োগ পান। তিনি সান এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান স্কট ম্যাকনিলির স্থলাভিষিক্ত।
২০০৪ সালে শোয়ার্টজ প্রেসিডেন্ট এবং চিফ অপারেটিং অফিসার পদে উন্নীত হন। এসময় তিনি পণ্য উৎপাদন থেকে সারাবিশ্বব্যাপী এর বাজারজাতকরণের পুরো প্রক্রিয়া দেখাশোনা করতেন।
সান এর অনেক উন্মুক্ত ও মান নির্ধারণী পদক্ষেপের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন শোয়ার্টজ। কেবল কোম্পানির কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রির নেটওয়ার্ক হিসেবে নয়, বরং তিনি এর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
সিইও ছাড়াও তিনি সান এর চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার এবং সফটওয়ার বিভাগের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি ১৯৯৬ সালে সিইও ও সহ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সান এ যোগদান করেন যখন এটি লাইটহাউজ ডিজাইন করত। এছাড়াও শোয়ার্টজ ম্যাককিন্সলি অ্যান্ড কোং এর সাথে যুক্ত ছিলেন।
জোনাথন শোয়ার্টজ ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি এবং গণিতের উপর ডিগ্রি অর্জন করেন।
৪.শান্তনু নারায়ন, এডব সিস্টেমস
হায়দ্রাবাদের ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার শান্তনু নারায়ন গত বছর এডোবের সিইও হন, তার বয়স ৪৪ বছর। শান্তনুর বাৎসরিক আয় ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি ১৯৯৮ সালে এডবের ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জেনারেল ম্যানেজার পদে এডোবে যোগদান করেন। ২০০১ সালে তাকে ওয়ার্ল্ডওয়াইড প্রোডাক্ট মার্কেটিং এন্ড ডেভলপমেন্ট এর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
জানুয়ারি ২০০৫ এ নারায়ণকে পদোন্নতি দিয়ে এডোবের চিফ অপারেটিং অফিসার করা হয়। এখানে যোগদানের আগে ১৯৯৬ সালে তিনি পিকট্রার কো-ফাউন্ডার ছিলেন।
এক্স সিইও ব্রুস চিজেন এর সাথে শান্তনু ৩.৪ বিলিয়ন ডলারের মাইক্রোমিডিয়া আইএনসি কিনে নেন ২০০৫ সালে। এভাবে তারা এডোব সফটওয়ারের ক্ষেত্রকে বৃদ্ধি করেন।
শান্তনু কর্পোরেট এবং প্রশাসনিক কাজে ভালো বক্তা।
তিনি ইউনিভার্সিটি আব ক্যলিফোর্নিয়ার উপদেষ্ঠা হিসেবে কাজ করেন।
তিনি ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ব্যচেলর ডিগ্রি লাভ করেন ভারতের ওসমানি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কম্পিউটার সায়েন্স এবং বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে বোলিং গ্রিন স্টেট ইনিভার্সিটি এবং দি হাস স্কুল অব বিজনেস থেকে।
৫.দারা খোসরুসাহী, এক্সপিডিয়া
বার্ষিক ৪.৯ মিলিয়ন ডলার আয় নিয়ে এক্সপিডিয়ার সিইও দারা খোসরুসাহী আছেন পাঁচ নম্বরে
দারা খোসরুসাহী ২০০৫ সালে এক্সপিডিয়ার সিইও হন যখন ইন্টারএকটিভ তাদের ক্ষেত্র প্রসারিত করে। তিনি আইএসি তে ১৯৯৮ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট অব স্ট্রাটিজিক প্লানিং-এ যোগ দেন। এর আগে তিনি এলেন এন্ড কোম্পানি এলএলসিতে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কাজ করেন।
খোসরুসাহী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
৬.ফ্রান্সিস্কো ডি’সুজা, কগনিজেন্ট
ছয় নম্বরে আছেন কগনিজেন্টের প্রেসিডেন্ট এবং চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ৩৯ বছর বয়সী ফ্রান্সিসকো ডি’সুজা। ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি এই পদে কর্মরত। বর্তমানে তিনি বছরে ৩.৭ মিলিয়ন ডলার বেতন পান।
এর পূর্বে তিনি কগনিজেন্টের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ, বাজারজাত ও বিক্রয়, ব্যবসায়িক উন্নয়ন এবং ভোক্তা সেবা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
এছাড়াও তিনি কোম্পানির উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপিয় কার্যক্রমের প্রধান ছিলেন।
কগনিজেন্টে যোগদানের পূর্বে ডি’সুজা দ্য ডান এবং ব্রাডস্ট্রিট কর্পোরেশনের মার্কেটিং, স্ট্র্যাটেজিক প্লানিং এবং জার্মানি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে নতুন ব্যবসার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেছেন।
কেনিয়ায় জন্ম নেয়া ফ্রান্সিস্কো ডি’সুজা ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট এশিয়া থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি কার্নেগি-মেলোন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেছেন।
সুত্র বিডিনিউজ২৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।