বন্ধুদের নিয়ে বাঁচি
উজানধল থেকে রাত আটটার দিকে ফিরতি পথ ধরে সুনামগঞ্জ নুরানী হোটেল। চালক জানালেন ৫০ কিলোমিটারের মতো হবে। পৌঁছে জানা গেল কারেন্ট কিছুক্ষণ আগে এসেছিল। কাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে যাবার পর সকালে হোটেল ছাড়ার আগে পর্যন্ত আসেনি। চার দিক অন্ধকার হঠাৎ ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করলো।
মনে হয় প্রতি পাঁচ সেকেন্ড একবার করে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আহা!পুরো আকাশ জুড়ে আলোকরস্মির বেগুনি বিদ্যুৎ দৌড়। ভয় হচ্ছে না একদম। উৎসবের কথা মনে পড়ে। বৃষ্টি এলে পন্ড হয়ে যাবে।
বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কিছুটা বিরক্তিকর হলেও বাউলদের গান শুরু হতে ভাল লাগা বাড়তে থাকে। অবর্ণনীয়। আবহাওয়া ঠিক থাকলে অনেক রাত অব্দি বাউলরা গাইবেন। করিম বাউল আর পাগল অনুসারীদের অনুভব করার লোভ উপেক্ষা করা সহজ ছিল না। আরো চমকপ্রদ ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান লম্বা হয়ে যাওয়ায় কয়েকজন বাউল নিজের মতো করে নদীর পাড়ে গিয়ে গাইতে শুরু করলে!
এই আনন্দের বর্ণনা ভেবে চিন্তে পরে দিতে হবে।
এখন শুধু ভালো লাগছে। বাড়ছে উত্তরোত্তর!এখান পুরো আকাশ জুড়ে , এ প্রান্তে ও প্রান্তে মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আর এদিককার বাতাস!!! কোন কবি আসলে এই বাতাসের একটা বিহিত তিনি করতেন!পরে কাউকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসতে হবে একবার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা শাহ্ আব্দুল করিম লোক উৎসবের প্রথম পর্ব বক্তৃতাবাজরা মাটি করে দিল ! লিখলে বিরক্তিটা কমবে হয়তো। চারদিকে ধানক্ষেত, ডানে সামনে পিছে এই মৌসুমে শুকনো হাওরের বুকে দীগন্ত জোড়া ধানের ক্ষেত।
পাশে গেলে ধানে ধানে ধাক্কার ঝনঝন শব্দ আর উড়ে আসা হু হু বাতাস। এর কোন তুলনা নেই। এখানে মনে হয় বাতাসের সাথে বাতাস প্রেম করে। এদ্দুর ঠিক আছে। কিন্তু এই মূহুর্তে শাহ্ আবদুল করিম লোক উৎসব ২০১০ এর মঞ্চ জুড়ে বাউল নয় ডজন ডজন বক্তা বসে আছেন ।
তিনটা থেকে তারা জ্বালাময়ি বক্তব্য দিচ্ছেন। ধীরাই উপজেলা অমুক অফিসার, তমুক অফিসার। অমুক দলের সামুক আহ্বায়ক,তমুক দলের তামুক সভাপতি। মাথাটাই ধরিয়ে দিল ব্যাটারা। পেছনটা ঢেকে রেখেছে বিশাল বাংলা লিংকের ব্যানার।
যত চেয়ার তার চেয়েও বেশি বক্তা হওয়ায় তাদের কেউ কেউ স্টেজে আসন পেতে বসেছেন। সবাই বক্তব্য দিবেন, তারপর গান শুরু হবে। বাংলা লিংকের উপজেলা মার্কেটিং অফিসার ধরনের একজন আছেন। তিনিও মঞ্চে বসা। বক্তব্য দিবেন!বাউলের বাড়ির সামনে মাঠে গান শুনতে আসা মানুষের ঢল।
তারা গান শুনতে এসেছেন। বেকুবগুলোকে বক্তৃতা দিয়ে কি আনন্দ পাচ্ছে কে জানে। নুর জালাল মন খারাপ করে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে যা বলছে হ্যাঁ বলছে। মনে হয় গান শুরু হলে এই বক্তৃতাবাজগুলো ভেগে যাবে।
তার আগে আমি ভেগে যাই। এদিক ওদিক ঘুরে আসি। গানের শব্দ শুনলে ফিরবো। বিকেলে এদিকের নরোম আলোর রূপ বলে বুঝানো যাবে না। না আসলেই , এদিকে বাতাস নিজেই মাতাল মনে হয়!
****
সাড়ে ৫ টার দিকে বক্তৃতা শেষ হলে গান শুরু হলো।
কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ পর একটা গান শেষে ঘোষণা থেকে বুঝতে পারলাম এই পর্বে শুরু হলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাচ্চাদের সঙ্গীত পরিবেশন! ঢাকা থেকে নেয়া কয়েকজন শিল্পীও গাইলেন। বাউলদের গান শুরু হতে আরো দেরি হবে মনে হয়। অনেক সাংবাদিক কাজ করছেন। প্রায় সবগুলো টিভির ক্যামেরাই দেখা যাচ্ছে । ভালো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।