আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একা হেঁটে চলে যায় একজন...

শিক্ষিত মূর্খ। আকিবুকি। গননা করবার শখ আর জাগেনা আগের মত। মাথাটাকে না খাটাতে খাটাতে তেলের ড্রাম হয়ে যাচ্ছে।
সে অনেক কাল আগের কথা।

ছেলেদের স্টাইল ছিল মাথা ভর্তি চুল, বিশাল মোটা জুলপি, টাইট জামা আর বেলবটম প্যান্ট। মেয়েরাও ঠিক এখনকার মত ছিলনা। চুলে বেনী করে ঘুরে বেড়াত। শাড়িই পরত বেশী। নামিদামী সব ছাত্র নেতারা বাম করত।

আগুন ঝরা দিন বা তার আশে পাশের দিনগুলোর কথা বলছি। উত্তাল সময়। তাই বলে কি আর মানব মানবীর মন আর চুপ করে বসে থাকে? আদিম রীতি অনুযায়ী একজন ঠিকই আরেকজনের হৃদয়ে হানা দেয়। মানব মনের ক্ষেত্রটা বরাবরই যেন একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র। কত ধরনের ব্যাটেল যে চলে আর নাম না জানা কত পাবলিক যে ক্রস ফায়ারে মারা পরে কে তার খবর রাখে।

মারা পরে সেটা ঠিক বলা যাবেনা। গুরুতর আহত হয় বলা যায়। ক্রস ফায়ারে আহত ব্যাক্তিটির অবশ্য সুস্থ হতে সময় লাগেনা বেশী। চরম মুমূর্ষু থেকে সুস্থ হয়ে আবার নুতন করে ভালবাসার উপযুক্ত হবার জন্য শক্তি মনকে ঈশ্বর দিয়েই দিয়েছেন। মইন্যার ক্রস ফায়ারে পড়ার অভিজ্ঞতা ২ বার।

২ বারই নিরবে। আসল নাম মইনুল আহসান। বন্ধুদের মুখে ওটা মইনুল>মইনু>মইন>মইন্যা হয়ে গিয়েছে। ৩য় বার অবশ্য তেলেস্মাত। রুবিরার সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে মন দেয়া নেয়া হয়ে গেল।

ছোকরা টাইপের মইন্যাকে রুবিরা কি দেখে পছন্দ করল কেউ বুঝে পেলনা। দুর্জনে বলতে লাগল মইন্যা স্টুডেন্ট ভাল দেইখা রুবিরা হেরে পছন্দ করসে। পড়ালেখা শেষ হইলেই ফুটবো। রুবিরা ফুটল না। কি এক মায়ার বন্ধন দুজনকে আকড়ে ধরে রাখল।

কোন একদিন ছোকরা মইন্যা মুখে রুমাল চাপা দিয়ে, মাথায় সাদা পাগড়ি চেপে রুবিরা কে বিয়ে করে ফেলল। ********বর্তমান সময় মইনুল আহসান একটি প্রখ্যাত প্রাইভেট ভার্সিটির জাদরেল প্রফেসর। ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্টের হেড। পুরো ডিপার্টমেন্টকে একাই সিধা করে রেখেছেন। প্রাইভেট ভার্সিটি গুলোর মধ্যে ওনাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি।

কয়েক মাস পরপর অফার আসে অমুক ভার্সিটিতে জয়েন করেন বেতন ডাবল দেয়া হবে, ওমুক ভার্সিটির ভিসি বানিয়ে দেয়া হবে চলে আসেন। কে কোথায় যায়। পাগলা প্রফেসরকে কিছু বোঝানো গেলেই সেনা কথা ছিল। প্রফেসর খুবই কড়া। পড়ানও সেইরকম।

কোন ফাকিবাজ ছাত্রও পারতপক্ষে তার ক্লাস মিস দেয়না। পিনপতন নিরবতায় মন্ত্রমুগ্ধের মত ছাত্র ছাত্রীরা প্রফেসরের লেকচার শুনে যায়। দাঁত ভাঙ্গা ইলেকট্রিকাল সার্কিট, ইলেক্ট্রনিক্স মেশীনের পড়া গুলোকে পানিভাত বানিয়ে ছেড়ে দেন। ছাত্র ছাত্রীরা মনের আনন্দে তা গ্রহন করে। জাদরেল প্রফেসরের একটা জিনিস নিয়ে ছেলে পিলেদের ব্যাপক আগ্রহ।

মইন স্যারের একটা ছোট্ট কাপড়ের ব্যাগ আছে। বাচ্চারা স্কুলে থাকতে কলম পেন্সিল রাখার জন্য যেরকম ব্যাবহার করে ওরকম টাইপের। প্রফেসরও ওইখানে কলম টলম রাখেন। ছোট এই ব্যাগ নিয়ে আচরন পুরোই বাচ্চাদের মত। লুকিয়ে লুকিয়ে রাখেন।

ব্যাগ থেকে মনের ভুলে কখনো বের করলেও তাড়াহুরো করে ঢুকিয়ে ফেলেন। এদিক ওদিক চোখ ফেরাতে থাকেন, কেউ দেখে ফেলল নাকি। ভাবখানা দেখে মনে হয় কিপটে বুড়োর যক্ষের ধন কোটি টাকার হীরে। কেউ দেখে ফেললে চুরি করে নিয়ে যাবে। কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে এই অস্বাভাবিক আচরন ছেলে পিলেদের আরো উৎসুক করে তুলে।

কিন্তু কারো কিছু জিগেস করবার সাহস হয়না। আজ কোন কারনে প্রফেসরের মেজাজ খুবই খারাপ। কোন কারনে অস্থির হয়ে আছেন। তাড়াহুরো করছেন। স্টুডেন্টরা এই সময় পুরো চুপ থাকে।

মইনুল আহসান ব্যাগ খুলে কাপড়ের ব্যাগ থেকে কলম বের করতে নিলেন। তাড়াহুরো নাকি অন্য কোন কারনে কে জানে, কাপড়ের ব্যাগের চেইন ভেঙ্গে হাতে এসে পড়ল। মইনুল আহসান পুরো পাথর হয়ে গেলেন। সেই দিনটার কথা মনে পড়ে গেল। সেই অনেকদিন আগের একটা শীতের বিকেল।

লাজুক রুবিরার গালটা ওইদিন আরো বেশী লাল হয়ে ছিল। কি জন্য জানি উশখুশ করছিল। যাবার আগে হঠাৎ করে হাতে লাল কাপড়ের একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিল। হাস্যকর টাইপের একটা ব্যাগ। বলল তোমার জন্য নিজের হাতে বানিয়ে নিয়ে এসেছি।

বলে গালটা লজ্জায় আরো লাল হয়ে গেল। সেদিন রুবিরার আনাড়ি হাতের তৈরি ব্যাগটা দেখে মইনুলের হাসিই পেয়েছিল। বিয়ের এক-দুবছর পর্যন্ত নব বর বধূরা নাকি অন্য দুনিয়ায় থাকে। মইনুলের সেই সৌভাগ্য পুরোপুরি হয়নি। বাচ্চা কাচ্চার জন্য রুবিরা চরম পাগল ছিল।

বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে দেড় বছরের মাথায় মইনুলকে একা ফেলে রুবিরা চলে গেল। কিছুই দিয়ে গেলনা। একদম একা ফেলে চলে গেল। কাপড়ের ব্যাগটা কোন এক কোনায় পড়েছিল এতদিন। রুবিরা চলে যাবার পর থেকে এটাকেই সঙ্গী করে বেঁচে আছেন মইনুল আহসান।

স্টডেন্টরা হা করে তাকিয়ে আছে মইনুল স্যারের দিকে। স্যারের চোখ পানিতে ভেসে যাচ্ছে। কি হচ্ছে কেউ কিছুই বুঝতে পারছেনা। ৮-১০ মিনিট পার হয়ে গেল স্যার মূর্তির মতনই দাঁড়িয়েই আছেন। চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

সেদিন আর ক্লাস হলনা। কাউকে কিছু না বলেই মইনুল আহসা্ন ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। বড্ড নিঃসঙ্গ, একা একটি মানুষ……………
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।