আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

=== বাংলা কমপিউটিংয়ে গবেষণা ====

আমি এক অনন্য মানুষ, আমরা এক মহান জাতি ।

বাংলা কমপিউটিংয়ে গবেষণা যে ভাষার জন্য আমরা লড়াই করেছি, রক্ত ঝরিয়েছি, সে আমাদের প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষা। শুধু বাংলাদেশেরই নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিশাল জনগোষ্ঠী কথা বলেন বাংলায়, তাদের খবরের কাগজ ও অন্যান্য প্রকাশনা মুদ্রণের মাধ্যমও হচ্ছে বাংলা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা কিছু উপজাতি, যেমন- অহমিয়া, চাকমা, মনিপুরী, নাগা প্রভৃতি তাদের নিজস্ব ভাষায় ব্যবহার করে থাকে অনেক বাংলা অক্ষর। তাই বিপুল এই জনগোষ্ঠীর কথা সবার কাছে তুলে ধরতে হলে আমাদের প্রয়োজন হবে এমন একটি ব্যবস্থার, যার মাধ্যমে বাংলা ভাষার বিসত্মার আরো ব্যাপকভাবে বাড়ানো যায়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের প্রযুক্তির সাথে আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন হবে কমপিউটার ও ইন্টারনেটের যথাযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করা। আর কমপিউটারের মাধ্যমে বাংলার বিসত্মার ঘটানোর জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে ইউনিকোড। ইউনিকোডে বাংলা যুক্ত হওয়াতে বাঙালির স্বপ্নের পালে লেগেছে হাওয়া, তাই আমাদের স্বপ্নতরী তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও বাঙালির কঠোর পরিশ্রমের কারণে। ইউনিকোড ইউনিকোড হচ্ছে অক্ষর সঙ্কেতায়নের একটি ব্যবস্থা, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

আমরা সবাই জানি, কমপিউটারের ইংরেজি বা বাংলা কোনো ভাষাই বোঝার সাধ্য নেই। কমপিউটার শুধু দুটি জিনিস বুঝতে পারে, তা হচ্ছে- বিদ্যুতের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি। কমপিউটার বিদ্যুতের উপস্থিতিকে ১ হিসেবে এবং অনুপস্থিতিকে ০ হিসেবে ধরে। ১ ও ০-এর নানারকম বিন্যাস ঘটিয়ে প্রতিটি বর্ণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কোড তৈরি করার ফলে কমপিউটার বর্ণ চিনতে পারে। এই কোডকে বলা হয় বাইনারি কোড।

উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি বর্ণ অ-এর জন্য বাইনারি কোড হচ্ছে ০১০০০০০১ এবং ই লেখার জন্য ০১০০০০০১০, ছোট হাতের অক্ষরের জন্য আবার ভিন্ন বিন্যাসের বাইনারি কোডের প্রয়োজন পড়ে। আমেরিকানরা এই ব্যবস্থায় তাদের বর্ণমালার একটি ছক বানিয়ে তার নাম দিলো American Standard Code of Information Interchang (ASCII) বা সংক্ষেপে আসকি। আসকি কোডে ২৫৬টি বিন্যাস করার ব্যবস্থা ছিল, তাই অনেক দেশ এই কোড ব্যবহার করে তাদের বর্ণমালার ছক তৈরি করে নিল। আমাদের প্রতিবেশী দেশ তাদের জন্য বানিয়ে নিল ইসকি নামের কোড। আমাদের দেশের কমপিউটার কাউন্সিলের উচিত ছিল বাংলা ভাষার জন্য আসকি কোড ব্যবহার করে বাংলাদেশের আসকি বা বাসকি নামের কোডের উদ্ভাবন করা।

কিন্তু তা কোনো কারণে করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি, তাই বাংলা ভাষার জন্য আলাদা কোনো কোড তৈরি হলো না এবং আমরা প্রযুক্তির দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়লাম। পরবর্তী সময়ে কয়েকজন বাঙালির নিরলস প্রচেষ্টার ফলে কমপিউটারে বাংলা লেখার পদ্ধতি আবিষ্কার হলো বটে, কিন্তু তাতে রয়ে গেলো কিছু ত্রুটি। এক কমপিউটারে লেখা কোনো কিছু অন্য কমপিউটারে পড়া সম্ভব হতো না। এর কারণ ছিল প্রত্যেকটি বর্ণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কোড ছিল না। এই ব্যবস্থায় ডাটা প্রসেসিংয়ের সময় তা বিকৃত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত।

যখন আসকি কোডে একটি কমপিউটারে দুইয়ের অধিক ভাষা ব্যবহার কষ্টকর হয়ে দাঁড়ালো, তখন সবাই চাইল এমন একটি ব্যবস্থা যাতে সব ভাষার বর্ণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কোড থাকে। পৃথিবীর সব ভাষাভাষীর জন্য তাদের ভাষায় কমপিউটিং করা সহজ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের পন্ডিতরা মিলে তৈরি করলেন ইউনিকোড। সংক্ষেপে ইউনিকোডের সংজ্ঞা দিতে হলে বলা যায়, ইউনিকোড এমন একটি ব্যবস্থা যা বিশ্বের প্রত্যেকটি ভাষার প্রত্যেকটি বর্ণের জন্য একটি পরিচয় দিয়ে থাকে এবং তা কোনো প্ল্যাটফর্ম, প্রোগ্রাম বা ভাষার ওপর নির্ভরশীল নয়। ইউনিকোডে ৬৫,৫৩৬টি বিন্যাস রয়েছে, যার ফলে বিশ্বের শত শত ভাষার হাজার হাজার বর্ণের জন্য মিলল নির্দিষ্ট পরিচয়। ইউনিকোডে লেখা কোনো অক্ষর বিশ্ববাসী একইভাবে দেখতে পাবে, তার কোনো পরিবর্তন হবে না।

এমনকি ডান দিক থেকে বাম দিকে লেখা ভাষার ( আরবি ও হিব্রু) বেলায়ও কোনো সমস্যা হয় না। তাই একে বলা হয় ইউনিভার্সাল ক্যারেক্টার সেট। আন্তর্জাতিক ও এলাকাভিত্তিক পর্যায়ে বানানো সব সফটওয়্যারে ইউনিকোডের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। XML, ECMAScript (Java Script), LDAP, COBRA 3.0, WM, Java, Microsoft .NETFramework ও আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে ইউনিকোডের ব্যবহার লক্ষণীয় হারে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের প্রযুক্তি শিল্পের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- Apple, Hewlett-Packard, JustSystem, Microsoft, Oracle, SAP, SunMicrosystem, Sybase, Unisysmnসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান ইউনিকোডে গ্রহণ করছে।

ইউনিকোড দুই ধরনের ম্যাপিং সংজ্ঞায়িত করে, যার একটি হচ্ছে Unicode Transformation Format (UTF) এনকোডিং ও অপরটি হচ্ছে Universal Character Set (UCS) এনকোডিং। ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত লিপিসমূহের মধ্যে রয়েছে- আরবি, আর্মেনীয়, বাংলা, ব্রাই বা ব্রেইল, কানাডীয় আদিবাস, চেরোকী, কপ্টীয়, সিরিলীয়, দেবনাগরী, ইথিওপীয়, জর্জীয়, গ্রিক, গুজরাটি, গুরুমুখী (পাঞ্জাবি), হান (কাঞ্জি, হাঞ্জা, হাঞ্জি), হাঙ্গুল (কোরীয়), হিব্রু, হিরাগানা ও কাতাকানা (জাপানি), আ-ধ্ব-ব, খমের (কম্বোডীয়), কন্নড়, লাও, লাতিন, মালয়ালম, মঙ্গোলীয়, বর্মী, ওডিয়া, সিরীয়, তামিল, তেলেগু, থাই, তিববতি, টিফিনাঘ, য়ি, ঝুয়িন ইত্যাদি। ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম ইউনিকোডের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই সংস্থাটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম পরিচালনায় International Organization for Standardization (ISO), Internet Engineering Task Force (IETF), European Association for Standardizing Information and Communication Systems (Ecma International), Internet Engineering Consortium (IEC) এবং World Wide Web Consortium (W3C) সহায়তা করে থাকে যাতে সবস্তরে ইউনিকোডের ব্যবহার সুষ্ঠুভাবে হয় এবং এর সর্বব্যাপী বিকাশ হয়।

কমপিউটারবিষয়ক কোম্পানি, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, ডাটাবেজ ভেন্ডর, সরকারি মন্ত্রণালয়, গবেষণা কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক এজেন্সি এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম সদস্যপদ দিয়ে থাকে। তাদের সদস্যপদ গ্রহণের জন্য ৬টি ভিন্ন ভিন্ন পদ রয়েছে এবং একেক ধরনের সদস্যপদের জন্য একেক রকম টাকা পরিশোধ করতে হয়। তাদের সদস্যপদের বিভাগ ও সদস্যপদ গ্রহণের মূল্য তালিকা হচ্ছে- পূর্ণ সদস্যপদ ১৫০০০ ডলার, প্রাতিষ্ঠানিক ১২০০০ ডলার, সমর্থিত ৭৫০০ ডলার, সহযোগী ২৫০০ ডলার, একক মালিকানা ১৫০ ডলার ও ছাত্রদের জন্য মাত্র ৫০ মার্কিন ডলার। আমাদের জন্য খুবই আফসোসের বিষয় যে আমাদের দেশ এখনো এই সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেনি। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, পাকিসত্মান তা করে ফেলেছে।

ইউনিকোডের অন্যতম সদস্যদের মধ্যে রয়েছে Adobe, Apple, DENIC eG, Google, IBM, Microsoft, NetApp, Oracle Corporation, SAP AG, Sun Microsystems, Sybase, Yahoo! ছাড়াও আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। ওপেনসোর্সের অগ্রযাত্রা ও বাংলাদেশ ওপেনসোর্স সফটওয়্যার বলতে অনেকে মনে করেন সব সফটওয়্যার বিনামূল্যে পাওয়া যায়, কিন্তু আসলে তা নয়। ফ্রিওয়্যার হচ্ছে ফ্রি সফটওয়্যার। ফ্রিওয়্যার আর ওপেনসোর্সের মধ্যে রয়েছে অনেক তফাত। কোনো প্রোগ্রাম লেখার জন্য প্রয়োজন হয় কিছু কোডের এবং এই কোডগুলোকে বলা হয় সোর্স কোড।

টাকা দিয়ে কিনতে হয় বা কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বানানো সফটওয়্যারের সোর্সকোড পরিবর্তন করার অনুমতি বা সুযোগ কোনোটাই দেয়া হয় না। আর ওপেনসোর্স নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ওপেনসোর্সের ক্ষেত্রে সোর্সকোড উন্মুক্ত থাকে। তাই এই সফটওয়্যারগুলোকে উন্মুক্ত বা ওপেনসোর্স সফটওয়্যার বলা হয়ে থাকে। এগুলোর সোর্সকোডের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে অন্যান্য প্রোগ্রামার নিজের মতো করে সফটওয়্যারের গঠন দিতে পারেন বা কোনো সফটওয়্যারের ভুলত্রুটি দূর করে তা আরো উন্নত করতে পারেন। এইসব সফটওয়্যার সাধারণত বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়, তবে সবই যে বিনামূল্যে পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়, যেমন- মাইএসকিউএল, অ্যাপাচি, লিনআক্স ইত্যাদি বিনামূল্যে পাওয়া যায় না।

লিনআক্সের কিছু ডিস্ট্রিবিউশন বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়, যেমন- উবুন্টু, কুবুন্টু, এডুবুন্টু ইত্যাদি কিন্তু অন্য লিনআক্সগুলো পেতে টাকা খরচ করতে হবে। ওপেনসোর্স কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এটি হচ্ছে প্রোগ্রামার, ডিজাইনার ও ব্যবহারকারীদের একটি দল বা কমিউনিটি। পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ও যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের মাঝে এই নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। ওপেনসোর্স সফটওয়্যারগুলোকে সংক্ষেপে FOSS (Free Open Sourc Software) বলা হয়।

আমাদের দেশে আইটি খাতে আরো উন্নয়নের জন্য মেধাবী তরুণদের ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিচ্ছে এই ওপেনসোর্স সফটওয়্যার। আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক, যারা লিনআক্স ব্যবহারের সুযোগসুবিধার কথা জানান দিয়ে কমপিউটার ব্যবহারকারীদের লিনআক্সের প্রতি আগ্রহী করে তুলছেন। পাইরেটেড উইন্ডোজ কপি ব্যবহার না করে বিনামূল্যে সরবরাহ করা এই অপারেটিং সিস্টেম আপনি ঘরে বসে পেতে পারেন। তাই তাদের কণ্ঠে বেজে ওঠে চুরির চাইতে ফ্রি ভালো। নববইয়ের দশকের শুরুর দিকে সফটওয়্যার স্বাধীনতার যোদ্ধা রিচার্ড ম্যাথিউ স্টলম্যান অনেক স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন ওপেনসোর্সভিত্তিক গনুহ (GNU) নামের অপারেটিং সিস্টেম, কিন্তু তা মুক্ত করার অন্তরায় ছিল অপারেটিং সিস্টেমের কার্নেল।

কারণ, কার্নেল বানানোটাই ছিল কঠিন একটি কাজ। কিন্তু এই কাজটি শখের বশে করে বসেন ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কে ইউনিভার্সিটির ছাত্র লিনাস টরভেলটে। ১৯৯১ সালে তিনি তৈরি করেন অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল মিনিক্স। এই কার্নেলের সহযোগিতায় তৈরি হয় শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম লিনআক্স। লিনাস ও তার বানানো মিনিক্সের নামের সাথে মিল রেখেই লিনআক্সের নাম রাখা হয়েছে।

ওপেনসোর্সের মিছিলে অগ্রগামী পতাকাবাহী হিসেবে রয়েছে লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেম। আগে লিনআক্স অপারেট করাটা কিছু ঝামেলার ছিল। কারণ, এটি উইন্ডোজের মতো ইউজার ফ্রেন্ডলি ছিল না। কিন্তু বর্তমানে লিনআক্সের নতুন ভার্সনগুলো অনেকাংশে ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং ব্যবহার করা তেমন একটা কঠিন কিছু নয়। লিনআক্সের দুটি ফ্রি ডিস্ট্রিবিউশন রয়েছে, একটি উবুন্টু ও অপরটি কুবুন্টু।

প্রথমটি জিনোম ও দিবতীয়টি কেডিই ডেস্কটপের ওপরে নির্ভর করে বানানো হয়েছে। দুটিতে কাজ করার প্রক্রিয়া অনেকটা এরকম। কিন্তু নতুন ইউজারদের জন্য উবুন্টুই বেশি ভালো হবে। কারণ, এটি নিয়ে যেকোনো সমস্যায় পড়লে উবুন্টু ফোরাম থেকে যথেষ্ট সাহায্য পাবেন। উবুন্টুর ব্যবহারে আগ্রহী হলে http://www.ubuntu.shipit.com-এ গিয়ে Launchpad-এ একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের ঠিকানা দিয়ে উবুন্টু সিডি পাঠানোর জন্য আবেদন করুন।

৬-৭ সপ্তাহের মধ্যে আপনার ঠিকানায় সিডি পৌঁছে যাবে। এতে আপনার একটি টাকাও খরচ হবে না। কারণ, সিডি পাঠানোর খরচও তারাই বহন করবে। অথবা স্বল্পমূল্যের বিনিময়ে আপনি তা শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার বিডিওএসএনের অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। উবুন্টু ব্যবহার করার মধ্যে দিয়ে আপনি প্রাথমিকভাবে লিনাক্স চর্চা করতে পারেন এবং নিজেকে ওপেনসোর্স নেটওয়ার্কের আওতায় আবিষ্কার করতে পারেন।

ওপেনসোর্সের আওতায় নিজেকে একজন দক্ষ প্রোগ্রামার হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। কারণ এখানে আপনি বিশ্বের নামকরা প্রোগ্রামারদের সহযোগিতা পাবেন। বাংলা কমপিউটিংয়ের সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশে রয়েছে অনেক ওপেনসোর্স প্রতিষ্ঠান তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- অঙ্কুর, বিডিওএসএস, একুশে, উবুন্টু বাংলাদেশ ইত্যাদি। এই প্রতিবেদনে ওপেনসোর্সভিত্তিক ও বাণিজ্যিক উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের বাংলায় অবদানের পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে দেশের বাইরের কিছু প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপও।

বাংলা কমপিউটিংয়ে প্রতিষ্ঠানসমূহ আনন্দ কমপিউটার্স বাংলাদেশে বাংলা কমপিউটিংয়ের অগ্রগামী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আনন্দ কমপিউর্টাস সবার পরিচিত। কমপিউটারে বাংলা টাইপিং করার মানেই বিজয় ইনস্টল করা থাকতে হবে বলে অনেকের ধারণা। আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকই জানেন না, বিজয় ছাড়া অন্য কোন বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার রয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের ব্যাপারটি। এই প্রতিষ্ঠানের মূলে রয়েছেন বর্তমান বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তফা জববার।

১৯৮৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। বিজয় নামের বাংলা কীর্বোড লে-আউট এই প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় আবিষ্কার। বিজয় লে-আউট দিয়ে আমাদের দেশের বেশির ভাগ বাংলা টাইপিং কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। বিজয়ের অন্যতম ফন্ট হচ্ছে সুতন্নী। বাংলা প্রকাশনার কাজে এই ফন্ট বেশি ব্যবহার হয় বলে আমাদের দেশের বেশির ভাগ বই-পুস্তক ও নথিপত্রে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের সংস্পর্শ।

ডিজাইনারদের মতে এই ফন্টের বেশির ভাগ অফিস আদালতেও বিজয়ের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়। আমাদের দেশের বাংলা টাইপিস্টদের বেশির ভাগই বিজয় কীবোর্ড লে-আউটে পারদর্শী। বিজয়ের নতুন বের করা অনেকগুলো সংস্করণ রয়েছে তার মধ্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- [u]০১. বিজয় একুশে সুবর্ণ সংস্করণ ২০০৭ : [/u]বিজয় একুশেকে বলা হচ্ছে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা সফটওয়্যার। এতে রয়েছে প্রচলিত প্রায় সব ধরনের এনকোডিং ব্যবহার করে বাংলা লেখার ব্যবস্থা। এর ইন্টারফেস আগের তুলনায় অনেক সহজ করে বানানো হয়েছে যাতে সবগুলো অপশন সহজে খুজে পাওয়া যায়।

এতে রয়েছে পাচ ধরনের এনকোডিং সিস্টেমে বাংলা লেখার সুবিধা। এগুলো হচ্ছে- বিজয় ক্লাসিক, বিজয় সাবরিনা, বিজয় ক্লাসিক গোল্ড ও ইউনিকোড। প্রতিটি এনকোডিং সিস্টেমের আলাদা নাম রয়েছে। কারণ, তাদের মধ্যে রয়েছে কিছুটা পার্থক্য, যেমন- যুক্তাক্ষর লেখার সময় অক্ষরগুলো নতুন এনকোডিং ধারায় স্পষ্ট বোঝা যায়, কিন্তু আগে কিছুটা সমস্যা করতো। মাইক্রোসফটের অফিস ২০০৭-এর সাথে ইউনিকোড সাপোর্টে এটি ভালো কাজ করে।

এতে রয়েছে প্রায় ৭৯টি ফন্ট। আসামের ভাষাভাষীদের জন্যে রয়েছে অসমিয়া ভাষা ব্যবহারের ব্যবস্থা। এতে রয়েছে অনেকগুলো ডাটা কনভার্টার যা দিয়ে বিজয়ের পুরানো সংস্করণ দিয়ে লেখা নথিপত্রগুলো নতুন সংস্করণের লেখায় রূপান্তর করতে পারবেন খুব সহজেই। এতে ভারতের জনপ্রিয় কীবোর্ড মুনীর, প্রমিত, সত্যজিত ও গীতাঞ্জলী যুক্ত করা হয়েছে। [u]০২. বিজয় একুশে সুর্বণ সংস্করণ ২০০৭ (ম্যাক) :[/u] এটি বানানো হয়েছে ম্যাক ওএস ১০-এর উপযোগী করে।

এটি ম্যাক ওএস ১০, ১০১, ১০২, ১০৩ ও ১০৪ সমর্থন করে। এতে যুক্ত করা হয়েছে ক্লাসিক গোল্ডের সুবিধা তাই লেখা হবে অনেকাংশে ত্রুটিমুক্ত। এই সফটওয়্যারের সাথে অফিস, কোয়ার্ক এক্সপ্রেস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ইনডিজাইন ইত্যাদি ভালো কাজ করে। এতে বাংলা ও ইংরেজি লেখা একইসাথে লেখা যায়। এতে বিজয় একুশে উইন্ডোজ সংস্করণের মতো রয়েছে ডাটা কনভার্টার, বিপুল সংখ্যক ফন্ট ও অন্যান্য সুবিধা।

এতে ওয়েব ব্রাউজার বাংলা লেখাসহ বাংলায় মেইল করার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। বিজয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে দেখুন বিজয়ের ওয়েবসাইট http://www.bijoyekushe.net। [u]০৩. বিজয় ক্লাসিক প্রো ২০০৭ :[/u] ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত প্রচলিত বিজয় আসকি কোডকে বলা হয় বিজয় ক্লাসিক কোড। এই কোডে বিজয় একুশের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ বিজয় ক্লাসিক প্রোতে লেখা যায়। এই কোডটিই বাংলা টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে।

এই এনকোডিং পদ্ধতিতে লেখা যুক্তাক্ষর পোস্টক্রিপ্ট প্রিন্টার বা ইমেজসেটারে ভেঙ্গে যায় না এবং বদলও হয় না। এতে প্রমিত কী-বোর্ড ব্যবহার করে ইউনিকোড পদ্ধতিতে লেখা যায়। এতেও রয়েছে কিছু ডাটা কনভার্টার এবং অসমিয়াতে লেখার সুবিধা। এতে আরো রয়েছে বানান শুদ্ধিকরণ ব্যবস্থা, ব্রাউজার ও ই-মেইলে বাংলা লেখার সুবিধা, ভিসতা সমর্থন। ০৪. বিজয় ভিসতা : উইন্ডোজ ভিসতার জন্য বিশেষভাবে বানানো হয়েছে এই সংস্করণটি যাতে ভিসতায় চলতে কোন সমস্যা না হয়।

এতে বিজয় একুশের সবগুলো সুবিধা থাকার পাশাপাশি রয়েছে ইউনিকোড ৫.১ সমর্থন। [u]০৫. বিজয় ব্রেইল : [/u] দৃষ্টি প্রতিবদ্ধীদের জীবনও থেমে থাকে না। তারাও এগিয়ে চলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে। আর তাদের এগিয়ে চলার পথ সুগম করার লক্ষ্যে আনন্দ কমপিউটার্সের পক্ষ থেকে বের করা হয়েছে বিজয় ব্রেইল। বিজয় ব্রেইল সফটওয়্যারের সাথে রয়েছে ব্রেইল কীবোর্ড।

আগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা ব্রেইল টাইপরাইটার ব্যবহার করতো। পরে প্রযুক্তির বিকাশের ফলে এরা যান্ত্রিক টাইপরাইটারও ব্যবহার করার সুযোগ পায়। কিন্তু কমপিউটারে টাইপ করার সুযোগ তাদের ছিল না, কিন্তু বিজয় ব্রেইল তাদের জন্য এনেছে বিজয় লে-আউটে বাংলা টাইপিংয়ের সুযোগ। এই সফটওয়্যারটি বিনামূল্যে বাজারে ছাড়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। [u]০৬. বিজয় বায়ান্ন ২০০৯ :[/u]সবচেয়ে কম দামী অথচ সব কাজ করার উপযুক্ত বাংলা লেখার সফটওয়্যার হলো বিজয় বায়ান্ন ২০০৯।

এতে আসকি ও ইউনিকোড উভয় পদ্ধতিতে কাজ করা যায়। সব স্বাভাবিক ফন্টগুলো এতে রয়েছে। এতে শুধু বিজয় কীবোর্ডে কাজ করা যায়। এটি উইন্ডোজ এক্সপিতে কাজ করে, উইন্ডোজ ভিসতায় কাজ করে না। [u]০৭. বিজয় বায়ান্ন প্রো : [/u] এই সফটওয়্যারটি বিজয় বায়ান্নর সব সুবিধাসম্বলিত।

তবে এতে কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। যেমন এর মাঝে বিজয় ছাড়াও মুনীর ও ন্যাশনাল কীবোর্ড রয়েছে। এতে আরও আছে অভিধান। [u]০৮. বিজয় একুশে ২০০৮ :[/u] বিজয়-এর এই সংস্করণটি উইন্ডোজ এক্সপি এবং উইন্ডোজ ভিসতা (৩২ বিট) উভয় সংস্করণেই কাজ করে। এতে রয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণ ফন্ট।

আরও আছে অন্যান্য বাংলা সফটওয়্যার থেকে কনভার্ট করার সুবিধা। এতে রয়েছে বিজয় ছাড়াও মুনীর ও ন্যাশনাল কীবোর্ড। অভিধানও আছে এতে। এবার বিজয় একুশে ২০০৮-এর বদলে বাজারে আসছে বিজয় একুশে ২০১০। নতুন সংস্করণটি উইন্ডোজ ভিসতা ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করবে।

[b]অঙ্কুর[/b] অঙ্কুর হচ্ছে ওপেনসোর্সভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলা কমপিউটিংয়ের উন্নয়নের জন্য এই সংগঠনটি অনেকদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ্য বাংলা ভাষার জন্য বানানো সফটওয়্যার ও অন্যান্য ওপেনসোর্সভিত্তিক সফটওয়্যারের বাংলা ইন্টারফেসের উন্নয়ন। তাদের সব কাজ সম্পাদন হয় অনলাইনে। এ সংস্থার সদস্যরা উত্তর আমেরিকা, ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সত্ত্বেও এ সংগঠন সুষ্ঠুভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

অঙ্কুরের সফল পদক্ষেপের মধ্যে একটি হচ্ছে ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেমে লিনআক্সের উন্নতি সাধন ও বাংলা ভাষায় তা ব্যবহারোপযোগী করে তোলা। এদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ওপেনসোর্স অফিস স্যুট ওপেন অফিস ২.০-এর বাংলা অনুবাদ। এছাড়াও জিনোম বা গনোম ডেস্কটপের বাংলা অনুবাদ, রেডহ্যাট ও ম্যানড্রেকের বাংলা অনুবাদ, ইউনিকোড উপযোগী বাংলা গুগল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, বাংলা অভিধান, বাংলা বানান শুদ্ধকারক, বাংলা টেক্সট এডিটর (লেখ), ইন্টারনেটে বাংলা ডকুমেন্টের আর্কাইভ ও মুক্ত বাংলা ফন্টসহ আরো অনেক কাজের সাথে এ প্রতিষ্ঠান জড়িত। [u]অঙ্কুরের কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বাংলা কমপিউটিংয়ের বিস্তারে বিশেষ অবদান রেখেছে। এগুলো হচ্ছে :[/u] ০১.ডেবিয়ান-ফেডোরা-ম্যান্ড্রিভা-সুসি অনুবাদ : লিনআক্সের রয়েছে বিভিন্ন রূপ।

এগুলোকে বলা হয় লিনআক্স ডিস্ট্রিবিউশন। এগুলো একটির চেয়ে অপরটি কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে। ভিন্ন আঙ্গিকের এ লিনআক্সগুলোতে ব্যবহার করা সফটওয়্যারগুলোকে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করার কাজে অঙ্কুরের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। জনপ্রিয় এই লিনআক্স ভার্সনগুলোতে বাংলা সংযোজনের মাধ্যমে অঙ্কুর বাংলা কমপিউটিংয়ের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ০২.জিনোম ও কেডিই বাংলা অনুবাদ : জিনোম (GNOME) ও কেডিই (KDE) হচ্ছে লিনআক্সের দু’টি জনপ্রিয় ডেস্কটপ সিস্টেম।

এই সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত কিছু সফটওয়্যার হচ্ছে- ফাইল ম্যানেজার, ওয়েব ব্রাউজার, অডিও-ভিডিও প্লেয়ার ইত্যাদি। প্রয়োজনীয় এসব সফটওয়্যারের বাংলা অনুবাদ করে বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য লিনআক্স ব্যবহার আরো সহজ করে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। ০৩.ওপেন অফিস ২.০-এর বাংলা অনুবাদ : ওপেনসোর্স অফিস সফটওয়্যার ওপেন অফিসের ভার্সন ২.০-কে বাংলায় অনুবাদ করার কাজ করেছে অঙ্কুর প্রকল্পের কর্মঠ সদস্যরা। অঙ্কুরের অনুবাদ করা এই বাংলা অফিস স্যুটটি http://ankurbangla.org /projects /ooo -ঠিকানা থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারবেন। ০৪.মুক্ত বাংলা ফন্ট : ইউনিকোড-ভিত্তিক বাংলা ফন্টের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি।

অঙ্কুরের উদ্যোগে বাংলা ইউনিকোড ফন্টের পাল্লা ভারি করার লক্ষ্যে বানানো হয়েছে কিছু ফন্ট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- মুক্তি, আকাশ, লিখন ও আনি। বাংলা ওয়েবপেজ বানানোর জন্য এ ফন্টগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ০৫. অনুবাদক : অঙ্কুরের তরফ থেকে গোলাম মোর্তাজা হোসেন উপহার দিতে যাচ্ছেন ‘অনুবাদক’ নামের ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করার একটি সফটওয়্যার। সফলভাবে এই প্রজেক্ট সম্পন্ন হলে বাংলা অনুবাদ করার ঝামেলা অনেকটা কমে যাবে।

০৬. লাইভ সিডি : অঙ্কুরের অনুবাদ করা সফটওয়্যারগুলো ও অন্য প্রজেক্টগুলোর সাথে কমপিউটার ব্যবহারকারীদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য এরা তৈরি করেছে অঙ্কুর লাইভ সিডি ২.১০, যার নাম দেয়া হয়েছে কুয়াশা। লিনআক্সভিত্তিক বাংলা ভাষার এই অপারেটিং সিস্টেমটি হার্ডড্রাইভে ইনস্টল করার প্রয়োজন হবে না। এটি সিডিরম থেকে সরাসরি চালানো যাবে, কিন্তু এটি কিছুটা ধীরগতিসম্পন্ন। Knoppix-এর ওপর ভিত্তি করে বানানো এ লাইভ সিডি লিনআক্স এশিয়া ২০০৬-এর মেলায় সেরা প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। ০৭.শ্রাবণী : উবুন্টু ৬.০৬ (ডেপারড্রেক)-এর ওপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছিল বাংলা ভাষার প্রথম অপারেটিং সিস্টেম শ্রাবণী।

পরে অঙ্কুর ও সিসটেক ডিজিটালের যৌথ প্রয়াসে এই বাংলা অপারেটিং সিস্টেমটির আরো উন্নতি সাধন করা হয় এবং ২০০৭ সালের অমর একুশে বইমেলায় অবমুক্ত করা হয়। ০৮. হৈমন্তী : অঙ্কুর আরেকটি বাংলা অপারেটিং সিস্টেম বের করেছিল, যার নাম ছিল হৈমন্তী। হৈমন্তী মূলত উবুন্টু ৭.১০ (গাটসি গিবন)-এর বাংলা সংস্করণ। এতে সংযোজিত হয়েছিল কিছু বাংলা সফটওয়্যার এবং বাদ দেয়া হয়েছিল মূল উবুন্টুর কিছু অপশন। বাদ দেয়া অপশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল লাইভ সিডি অপশনটি।

আকারে ৬৯১.০১ মেগাবাইটের ইমেজ (ISO) ফাইলটি http://www.ankur.org.bd-থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। ০৯. মজিলায় বাংলা বানান নিরীক্ষক : জনপ্রিয় ওপেনসোর্স ওয়েব ব্রাউজার মজিলা ফায়ারফক্স ও মেইলিং সিস্টেম মজিলা থান্ডারবার্ডে ইউনিকোডে লেখা বাংলা বানানের ভুল সংশোধনের জন্য অঙ্কুর একটি বাংলা বানান নিরীক্ষক অভিধান বের করেছে। এতে করে মজিলার সফটওয়্যারগুলোতে ইউনিকোডে বাংলা লেখার কাজ আরো সহজতর হয়ে উঠেছে। অঙ্কুর প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখ্য সমন্বয়কারী হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তানিম আহমেদ। এই সংগঠনের সাফল্যের মূলে রয়েছে সংগঠনের কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম।

এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে আরো রয়েছেন- দীপায়ন সরকার, কৌশিক ঘোষ, শরিফ ইসলাম। ভারতে অবস্থানরত বাঙালিদের মধ্যে রয়েছেন ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত, রুনা ভট্টাচার্য, শান্তনু চ্যাটার্জি, সায়মিন্দু দাশগুপ্ত। বাংলাদেশে যারা এ প্রকল্পে কাজ করে যাচ্ছেন তারা হচ্ছেন- জামিল আহমেদ, খন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ খালিদ আদনান, প্রজ্ঞাসহ আরো অনেকে। অঙ্কুরের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন http://www.ankurbangla.org ev http://bengalinux.org ঠিকানায়। তাদের সাথে কাজ করার জন্য প্রোগ্রামিং জানা না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।

কারণ, তাদের সব কাজ প্রোগ্রামার নির্ভর নয়। বাংলা ভাষায় যদি আপনার ভালো দক্ষতা থাকে বা আপনি ভালো অনুবাদ করতে পারেন তবে যোগ দিতে পারেন অঙ্কুরের অনুবাদ প্রকল্পে, আর যদি আপনার হাতের লেখা সুন্দর ও স্পষ্ট হয় তবে কাজ করতে পারেন মুক্ত বাংলা ফন্ট প্রকল্পে। আর যদি উপরের কোনো একটিও না পারেন কিন্তু আপনার লেখার হাত ভালো অর্থাৎ সাহিত্যবোধ থাকে তবে অঙ্কুরের সাথে মিলে ইন্টারনেটে বাংলা আর্কাইভে বাংলা লেখার ভান্ডার তৈরিতে সাহায্য করতে পারেন। [b]ওমাইক্রনল্যাব[/b] ওমাইক্রনল্যাব নামের প্রতিষ্ঠানটিও বেশ ভালো নাম করেছে বাংলা কমপিউটিংয়ে অবদান রাখার ক্ষেত্রে। তাদের সাফল্যগাথার সাথে যে নামটি যুক্ত রয়েছে, তা হচ্ছে অভ্র।

তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্ভাবন হচ্ছে বাংলা লেখার সফটওয়্যার অভ্র কীবোর্ড। তাদের বানানো সফটওয়্যারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরা হলো : [u]০১. অভ্র কীবোর্ড :[/u] ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ ওমাইক্রনল্যাব সবার কাছে তুলে ধরে তাদের বানানো অসাধারণ বাংলা টাইপিং কীবোর্ড অভ্র। এ কীবোর্ড ব্যবহার করতে হলে বাংলা টাইপ জানার কোনো প্রয়োজন নেই। মোবাইলে মেসেজ মত করে এই কীবোর্ডের সাহায্যে বাংলা লেখা যায়। এই বাংলা লেখার সিস্টেমটিকে বলা হয় ফোনেটিক টাইপিং।

এতে বাংলা টাইপ করার পদ্ধতি শিখতে খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা সময় নেবে। ইংরেজি টাইপ করতে যে সময় লাগে সেই সময়েই আপনি টাইপ করতে পারবেন বাংলায়। এতে ফোনেটিক পদ্ধতিতে বাংলা লেখার পাশাপাশি কিছু জনপ্রিয় বাংলা লে-আউট কীবোর্ডও দেয়া আছে, যাতে সবার ব্যবহার করতে সুবিধা হয়। এতে রয়েছে অভ্র ইজি, বর্ণনা, জাতীয় ও ইউনিবিজয় কীবোর্ড লে-আউট। ইউনিবিজয় দিয়ে বিজয়ের লে-আউটে টাইপ করার সুবিধা দেয়া হয়েছে।

এতে আরো রয়েছে নিজের মতো করে লে-আউট পরিবর্তন করার সুবিধা ও অন-স্ক্রিন কীবোর্ড, যা দিয়ে মাউসের সাহায্যেও বাংলা লেখা যাবে। অভ্র দিয়ে ওয়ার্ড, রিচ টেক্সট, টেক্সট ফাইলসহ ফোল্ডার বা ফাইলের নাম বাংলায় লেখা যাবে। অভ্র ইউনিকোড সাপোর্টেড হওয়ায় এটি দিয়ে উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ারে গানের তালিকা বা প্লেলিস্ট বাংলায় লেখা যাবে ও আউটলুক ব্যবহার করে বাংলায় মেইল করাও যাবে। বাংলায় চ্যাট করার জন্য রয়েছে এর বিশেষ সুবিধা, তবে এক্ষেত্রে উভয় কমপিউটারে ইউনিকোড সাপোর্টেড বাংলা ফন্ট থাকতে হবে। এটি উইন্ডোজ ভিসতা ও ইউনিকোড ৫.০ সাপোর্ট করে।

[u]০২. পোর্টেবল অভ্র কীবোর্ড :[/u] পোর্টেবল বা বহনযোগ্য সফটওয়্যার বলতে বোঝানো হয় সেই সব সফটওয়্যারকে, যা ইনস্টল করতে হয় না। এসব সফটওয়্যার এক ক্লিকে সরাসরি চালু হয়। তাই সেই সব সফটওয়্যার ইনস্টল করে পিসির গতি কমানোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এসব সফটওয়্যার পেনড্রাইভে করে অন্য পিসিতে নিয়েও ইনস্টল না করেই কাজ করা যায়। পোর্টেবল অভ্র কীবোর্ডের সাহায্যে যে পিসিতে বাংলা লেখার কোনো ব্যবস্থা নেই, সে পিসিতে খুব সহজেই বাংলা লেখা যায়।

পিসিতে বাংলা ফন্ট না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই, এটি যখন চালু করা হয় তখন ‘সিয়াম রুপালি’ নামের একটি ভার্চুয়াল ফন্ট ব্যবহার করে বাংলা লিখতে সহায়তা করে। এটি হচ্ছে প্রথম বাংলা পোর্টেবল সফটওয়্যার। [u]০৩. অভ্র কনভার্টার :[/u] আসকি বা আনসি কোডের লেখা ইউনিকোডে রূপান্তর করার জন্য অভ্র বের করেছে একটি কনভার্টার। এটি দিয়ে বিজয়, আলপনা, প্রশিকা ও প্রবর্তন থেকে ইউনিকোডে রূপান্তর করা সম্ভব। টেক্সট কপি করে তা কনভার্টারের ক্লিপবোর্ড থেকে সরাসরি রূপান্তর করার ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়াও এটি প্লেইন টেক্সট (*.txt), রিচ টেক্সট (*.rtf),ওয়ার্ড ডকুমেন্ট (*.doc, *.docx), এক্সেস ডাটাবেজ (*.mdb) এ ফরমেটের ফাইলগুলো সাপোর্ট করে। http://www.omicronlab.com সাইট থেকে এ সফটওয়্যারগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে। সেই সাথে এ সাইটে দেয়া আছে অনেকগুলো মুক্ত বাংলা ফন্ট। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিয়াম রুপালি, আপনালোহিত, বাংলা, আদর্শলিপি, সোলায়মানিলিপি, রুপালি, আকাশ, মিত্রামন, লিখন, সাগর, মুক্তি, লোহিত এবং একুশের বানানো কিছু ফন্টও পাওয়া যাবে এখানে। এগুলো হচ্ছে- একুশে আজাদ, দুর্গা, মহুয়া, গোধূলি, পুনর্ভবা, পূজা, সরস্বতী, শরিফা ও সুমিত।

[u]বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়[/u] মানসম্পন্ন গঠনরীতির অভাবে বাংলা ভাষার তথ্যগুলো রূপান্তর করতে বেশ কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হয়। প্রায় বিশ বছর ধরে আমাদের দেশে চলে আসা এনকোডিং সিস্টেম ও অপরিকল্পিত বিন্যাসের কারণে এবং নানা মন্ত্রণালয়ের তথ্যজ্ঞাপনের ভিন্ন ভিন্ন নিয়মের কারণে বাংলা ভাষায় কমপিউটিংয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। ইউনিকোডে বাংলা চলে আসার পরে এই সমস্যা কিছুটা লাঘব হলেও পুরনো নথিপত্র ব্যবহার করা যাবে না- এই কথা চিন্তা করে কেউই এ ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করছে না। বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি অনেক কনভার্টার রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর নির্ভুলতা ও কাজ করার ধীরগতি সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। দেশীয় মন্ত্রণালয়গুলোর মাঝে তথ্যবিষয়ক ব্যবস্থা আরো জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় একটি কনভার্টার বানানোর উদ্যোগ নিয়ে সক্ষম হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আদ্যক্ষর নিয়ে এই কনভার্টারের নাম দেয়া হয়েছে নিকস। নিকস কনভার্টারের কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- ০১. নিকস কনভার্টার ব্যবহার করে আসকি ফন্টে লেখা ডকুমেন্ট নিকস বাংলা ফন্টে রূপান্তর করা যায়। ০২. অনেকগুলো ফাইল ফরমেটের সমর্থন যেমন- ওয়ার্ড, এক্সেল, ওপেন অফিস ক্যাল্ক, পাওয়ার পয়েন্ট ও টেক্সট ফাইল। ০৩. কনভার্সনের পরে ফাইল ফরমেটের কোনো পরিবর্তন হয় না। ০৪. ইউনিকোড ৫.১ সাপোর্ট করে।

০৫. ব্যাচ কনভার্সন বা একই সাথে অনেকগুলো ফাইল কনভার্ট করার ক্ষমতা রাখে। ০৬. এতে রয়েছে ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ সুবিধা। ০৭. কনভার্সন করার গতি বেশ ভালো। ০৮. নম্বর ও বুলেটের অবস্থানের পরিবর্তন করে না। ০৯. বিভিন্ন রকমের ফন্ট কনভার্সন করতে পারে।

১০. আউটপুট ফন্ট কোনটি হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া যায়। ১১. কনভার্ট করার সময় যেখানে যেখানে সমস্যা হয়েছে তা শনাক্ত করে দেয়া হয়, যাতে তা সহজেই নজরে পড়ে। ১২. অফিস ২০০৭-এর নতুন ডকুমেন্ট ফরমেট *.docx সমর্থন করে। ১৩. জটিল স্ক্রিপ্টগুলোর নিয়মকানুন মেনে চলে। ১৪. ভিসতা সমর্থন করে।

নিকস বাংলা ফন্ট ও কনভার্টারটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে http://www.ecs.gov. bd/nikosh সাইট থেকে। কনভার্টারটি চালাতে পিসিতে ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ২.০ ইনস্টল করা থাকতে হবে। আইইসিবি ইনফরমেশন টেকনোলজিবিষয়ক যেকোনো কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কমপিউটারে বাংলা ভাষার বিকাশে অবদান রাখছে যার নাম Information Engineers and Consultants Bangladesh Ltd. (iecb)। সংগঠনটি দক্ষ প্রকৌশলীদের দিয়ে নিয়ন্ত্রিত, যারা আইটি খাতে নানারকম সেবাদান করে যাচ্ছেন। তাদের বানানো কয়েকটি বাংলা ভাষাভিত্তিক সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে: শাব্দিক : ‘শেখার ঝামেলামুক্ত বাংলা সফটওয়্যার’-এই স্লোগান নিয়ে এরা বাজারে ছেড়েছে শাব্দিক নামের বাংলা টাইপিং ব্যবস্থা।

খুব সহজেই এ সফটওয়্যার দিয়ে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।