আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধার্মিকরা মুর্খ- তসলিমা নাসরিন

প্রচেষ্টা................

আবারও ধর্ম এবং ধার্মিকদের নিয়ে কটুক্তি করেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সেইসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, কবি সুনীল গঙ্গ্যোপাধ্যায়সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমালোচনা করা হয়েছে তসলিমার আত্মজীবনী ‘নেই, কিছু নেই’ ষষ্ঠ খন্ডে। এ বইয়ে ধার্মিকদের মূর্খ বলা হয়েছে। এছাড়া বলা হয়েছে মূর্খরা ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে পণ করেছে। ‘নেই , কিছু নেই’ তার বইটি এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এনেছে কাকলী প্রকাশনী।

২৮৭টি পৃষ্ঠার বইটিতে ধর্মীয় রীতি নিয়ে সমালোচনা ছাড়াও নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লেখা হয়েছে। এ বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে তার মাকে। তার মার প্রতি লেখা এক চিঠিতেই বইটি শেষ করা হয়েছে। কখনো মাকে দিয়ে আবার কখনো নিজেই ধর্ম এবং ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়ে কটুক্তি করেছেন তসলিমা। বইটিতে কোথাও সরাসরি আবার কোথাও রূপকের আড়ালে ধর্মকে কটুক্তি করা হয়েছে।

কোরআনের বাণীকে তুলনা করা হয়েছে গানের সুরের সঙ্গে। ধর্ম ও ধার্মিকদের কটুক্তি ছাড়াও বইটিতে অশ্লীলতায় ভরা। বইয়ের ২৭৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘ ... মূর্খরা ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে পণ করেছে। মূর্খ যতদিন থাকবে পৃথিবীতে, ততদিন ধর্ম থাকবে। ’ দেশের ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছে, এ উক্তির মাধ্যমে ধর্ম এবং ধার্মিকদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

যারা ধর্মকে ধারণ করে তারা কখনোই মূর্খ হতে পারে না। আর যেহেতে ধার্মিকরা ধর্মকে ধারণ করে ধার্মিকদের কটুক্তি আর ধর্মকে কটুক্তি একই কথা। তারা বইটি বাজেয়াপ্ত করতে ও লেখকের বিরুদ্ধে ব্যব¯'া নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ .. কিš' আমি তো ভেতরে ভেতরে জানি, কোনো বেহেসতে বা দোযখে তুমি বা আমি কেউ যাবো না। বইয়ের ২৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে , ছোটদাই বললো তুমি উমরাহ করে এসেছো।

উমরাহ। ছি ছি। এনিয়ে চললো আমার ছিছিকার। কেন উমরাহ্ করতে গেলে ! এ কোনো কাজের কাজ ! তার দেশে ফিরে নিয়ে ২৮ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘আমাকে দেশে ঢুকতে দিলে সে যে সরকারই হোক, ধর্মবাদীদের ভোট পাবে না বলে ভয়ে আমাকে ঢুকতে দেয় না। বর্তমান প্রধামন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী সম্পর্কে ১৫৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ বই লেখার অপরাধে আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলাই অনেক মৌলবাদী করেছে।

কিš' হুলিয়া জারি হয়নি খালেদা সরকারের করা মামলা ছাড়া। এই আইন খাটিয়ে যখন মামলা করা হয় , অ™ভুত জিনিস হল, সরকারি অনুমতি ছাড়া এই মামলা করার অধিকার কারও নেই। শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে মামলা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ দেশে আমাকে বাস করতে দেবে না। বুঝি না , ক্ষমতায় এলেই এঁরা দেশটাকে নিজের সম্পত্তি বলে মনে করেন।

দেখ মা, মানুষ খালেদা জিয়ার শাসনে এবং শোষণে অতিষ্ঠ হয়ে শেখ হাসিনাকে চাইছিল। কী পার্থক্য হাসিনা আর খালেদায় ! তাঁদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে, একজন আরেকজনের দ’চোখের বিষ হতে পারেন, নিরবধি চুলোচুলি করতে পারেন, একজনের পান থেকে চুন খসলে আরেকজন লাফিয়ে উঠে আরেকজনের গলা টিপে ধরতে পারেন, কিš' আমার ব্যাপারে তাঁরা একশভাগ একমত। ’ তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ৩২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘আমার আর সুয়েনসনের শোওয়ার ঘর একই। আমরা এক বিছানায় শুই। তোমাকে এত যে রক্ষণশীল বলে ধমক দিই, তুমি কিš' একবারও প্রশ্ন করোনি ওর সঙ্গে আমি শুই কেন।

যে সম্পর্ক হলে শুতে হয়, সম্ভবত সম্পর্কটা সেই সম্পর্ক, তুমি ভেবে নাও ’ তার মা’র ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে ৪১ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, তোমার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে সারাক্ষণ কটাক্ষ করতাম। মা তুমি কেন নামাজ পড়ো, কেন আল্লাহ বিশ্বাস করো ? আল্লাহ বলে কিছু নেই কোথাও। ধরো, এত যে নামাজ রোজা করলে, গিয়ে যদি দেখ হাশরের ময়দান নেই, আখেরাত নেই, কোনো পুলসেরাত নেই ? ৪২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ তোমার ধর্ম বিশ্বাসকে, তোমার বোরখা পরাকে, তোমার ওই কোরান হাসি পড়াকে, তসবিহ জপাকে সেই ছোটবেলা থেকেই ঘৃণা করতাম। ’ ধার্মিক ও মৌলবাদ নিয়ে ৪৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ আমি তো ধার্মিক আর মৌলবাদীতে পার্থক্য করিনা, তুমি করো । ’ ৬১ পৃষ্ঠায় তসলিমার ভাইকে তার মার উক্তির মধ্যে দিয়ে হিন্দু ধর্মের ভগবানের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

লেখা হয়েছে, ‘ ব্যারিস্টার সারা হোসেন খুব জরুরি হলে বাড়ির কাউকে ডেকে পাঠালে দাদা বা ছোটদা দুজনই যেত, যেহেতু দাদাকে আবার ময়মনসিংহে চলে যেতে হত, ছোটদাই অনেক সময় যেত দেখা করতে। সারা হোসেন বলে দিত, হাইকোর্টে আমার সারেন্ডার করার সম্ভাব্য তারিখের কথা। একবার ছোটদার সঙ্গে গোপনে ফোনে কথা বলে তাকে রাতের অন্ধকারে ঝএর বাড়িতে আসতে বলেছিলাম। জগতের কেউ জানেনা আমি কোথায়, শুধু ছোটদা জানে, তারসঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। ছোটদারই ক্ষমতা আমার সঙ্গে দেখা করার।

তখন থেকেই তুমি ছোটদাকে ভগবানের উ"চতায় বসিয়ে দিলে। ’ ৭৫ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ আমার তো কোনো ঈশ্বর নেই প্রার্থনা করার মা। ’ দেশে ফেরা নিয়ে ৯৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ প্রধামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ড. কামাল হোসেন আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন , সুতরাং দেশের আশা আমার না করাই উচিত। ’ তসলিমার কোরআন পাঠ নিয়ে ৯৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে , ‘ .. তোমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে সেই ছোটবেলায় পড়া সুরাগুলো আওড়েছি, ভুলগুলো তুমি শুদ্ধ করে দিতে, হয়তো খুশি হতে দেখে যে, কাজটা আমাকে একসময় তুমি করতে বলতে, করিনি, আর আজ আমি স্বে"ছায় তা করেছি। তোমার চুল পাখার হাওয়ায় উড়তো আর তোমাকে কী যে পরিতৃপ্ত মনে হত।

পরে আমি লক্ষ করে দেখেছি, এমন কী তোমার প্রিয় কোনো সিনেমার গান গাইলেও তুমি একই রকম খুশি হও । ’ ১৩৮ পৃষ্ঠায় পরকাল নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘ এখন তুমি ওপরে যা"েছা, ওপরে তুমি আল্লাহর কাছে তাদের বেহেসতের জন্য তদবির করবে, তাদের সালাম পৌঁছে দেবে পয়গম্বরকে। স্বনজপ্রীতিটা ভালো চলে পরকালে, তাই তোমার কাছে ধর্না দেওয়া । ’ তার মা’র মৃত্যুবরণ সম্পর্কে ১৪৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ তোমার মরে যাওয়া, ওদের ছুটোছুটি, ওদের মাইকের ঘোষণা, ওদের কাফনের কাপড় কেনা, ওদের মাটি খোঁড়া, তোমাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া, তোমাকে পুঁতে দেওয়া, তোমাকে ফেলে আসা, তোমাকে একা ফেলে আসা, অন্ধকারে, গর্তে- সবকিছুকেই চরম নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। ’ তার মা’র চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে ১৫৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ ... তসলিমার ফাঁসি যারা চেয়েছে, তারা ইসলামের কিছুই জানেনা।

তারা মুসলমান নামের কলঙ্ক। একজন সংবেদনশীল সৎ লেখককে আজ বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে। আর দেশের ভেতর ইসলামের নামে যে অসহিষ্ণু মোল্লাতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তারাই ইসলামের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি করছে । ’ তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ১৭১ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ ওয়াইন খেয়ে অনেক রাতে যখন বন্ধুরা চলে যা"েছ, আমার দ্বিগুণ বয়সী একজন বিদায় আলিঙ্গন করার নামে অযথাই আমার স্তন টিপে গেল । কী সুখ পেল কে জানে ।

’ ভারতে তার আত্মজীবনী নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে ২০২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘ .. যে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী আমার বই নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, তারমধ্যে সুনীল গঙ্গ্যোপাধ্যায় একজন। ভারতের বিজিপি নিয়ে ২০৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘ মুসলমান মৌলবাদীদের অন্যায় আব্দার অন্য দলের মতো বিজিপিও মেনে নেয় । ’ সৈয়দ শামসুল হক সম্পর্কে ২৭৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ দ্বিখন্ডিত লেখার জন্য সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশে আমার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন। তাঁর রাগ, তাঁর শালির সঙ্গে তাঁর গোপন সম্পর্ক ফাঁস হয়ে গেছে। ’ তসলিমা নাসরিন ১৯৯৪ সাল থেকে দেশ থেকে নির্বাসিত।

তসলিমা নাসরিনের লজ্জা, আমার মেয়েবেলা, উতল হাওয়া, ‘ক’ এবং সেইসব অন্ধকার এরআগে বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ করেছে। ‘নেই , কিছু নেই ’ বইয়ে ধর্ম নিয়ে যে কথা লেখা হয়েছে তার প্রতিক্রিয়ায় দেশের ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছে, বইয়ে ধর্মকে এবং ধার্মিকদের চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। তারা বইটি বাজেয়াপ্ত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, বইটিতে ইসলাম ধর্মকে এবং ধার্মিকদের চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এটা কোনক্রমেই মেনে নেয়া যায় না।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই মুসলমান। বইতে মুসলমানের অবমাননা ও তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। তিনি বইটি বাজেয়াপ্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নরসিংদীর জামিয়া কাসিমিয়া কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, যারা ধর্ম পালন করে তারা কখনোই মূর্খ হতে পারে না। তাদের ধর্মীয় জ্ঞান আছে।

এবক্তব্যে ধর্ম ও ধার্মিকদের চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।