অনুভুতিহীন জীবনের অপেক্ষায়... http://www.raatmojur.com/
গৃহস্বামী বন্দুক কিনিয়াছিলো একখানা বটে, তবে কার্তুজ কিনে নাই, আম জনতা বন্দুকের নল দেখিয়াই কোঁচা খুলিয়া দৌড়োয়, সেখানে কার্তুজ কিনিয়া তঙ্কা বিনাশ নিস্প্রয়োজন। তাছাড়া নিজের তাকের ওপরে গৃহস্বামীর পূর্ন ভরসা আছে, বন্দুকে কার্তুজ ভরিয়া ছুঁড়িলে আরকিছু না হোক, লক্ষ্য বস্তুতে গুলি না লাগিলেও নিশানার হাজার গজের মধ্যে লাগিবেই লাগিবে। তাই অযথা অর্থ নষ্টের চাইতে ফাঁকা বন্দুকের গালগল্পে চোরডাকাত দুরে থাকুক - এইটেই শান্তি।
তবু আজ মনে কিঞ্চিত বিক্ষিপ্ত, খবর আসিয়াছে ধেড়ে ডাকাত হামলা দিতে পারে। বাটিতে কন্যার বিবাহের নিমিত্তে গচ্ছিত গয়নাগাটি আর নগদার্থের লোভেই বোধহয়।
থানায় খবর দিয়াছিলো বটে, দারোগাবাবু হাসিয়াই উড়াইয়া দিয়াছেন, বলেছেন, তাহার ডরে বাঘে-ছাগুতে একঘাটে জলখাবার বাঁটোয়ারা করে, সেখানে ধেড়ে ডাকাত কোন ছার!
তবু সংশয় যায় না।
রাত দ্বিপ্রহরে দরজায় মূর্মুহু কড়া পড়িলো, কর্তার বুঝতে বাকি রহিলনা নিশিরাতের মেহমানদের পরিচয় সম্পর্কে। তবু কিছু করিয়া উঠবার আগেই দরজা ভাঙিয়া খানখান, ধেড়ে ডাকাত সর্বাগ্রে।
ধেড়ে ঢুকিয়াই গুলি ছুঁড়িলো, সোজা কর্তার বুকে নিশানা। কর্তা পটল তুলিলেন।
শুরু হইলো লুটপাট, ধেড়ের সামনে পেশ করা হৈল ষোড়শী বাগদত্তাকে। ফুলের মতন প্রস্ফুটিত ষোড়শী ধেড়ের মনে বিপুল ভালোবাসার উদ্রেক ঘটাইলো, ধেড়ে সব ভুলিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িয়া উহার ইজ্জ্বত সংরক্ষনে (!!!) ব্যাস্ত হৈয়া পড়িলো।
ইতোমধ্যে হৈচৈ পড়াতে পাড়ার মানুষ জাগিয়া উঠিয়া "হারে রে রে রে রে" শব্দে ধেড়ের দলকে "চেজ" করিলো। ধেড়ে কোনমতে পাৎলুন আঁটিয়া "নারীর ইজ্জ্বতই সর্বস্ব, ইজ্জ্বৎ গেলে বাঁচিয়া আর হৈবে কি?" ভাবিয়া দীর্ঘশ্বাস সহকারে কাৎরাতে থাকা ধর্ষিতার মস্তকে গুলি মারিয়া উহাকে জগৎ সংসারের দায় হতে মুক্তি দিয়া ফিরতি পথ ধরিলো।
কপাল মন্দ! জনগন কিভাবে জানি ধেড়ে ডাকাতের নাগাল পাইলো।
ধেড়েকে বাঁধিয়া সবেমাত্র উত্তম-মধ্যম দেওয়া শুরু হৈয়াছে, এমন সময় দারোগাবাবু দিগ্বিজয় সাধু "ফোর্স" সুদ্ধো আসিয়া হাজির, কহিলেন, "আইন নিজের হস্তে তুলিবেন না, আমাদের হাতে তুলিয়া দিন, আমি উহাকে বারোবছরের ফাঁসি দিবো। "
সংগীন আর বন্দুকের মুখে এমন আব্দার, তার ওপরে খাঁকি উর্দী - জনগন ধেড়েকে ঠোলা, থুক্কু, পুলিশে সোপর্দ করিলো। দারোগাবাবু ধেড়েকে বাঁধিয়া লৈয়া চলিলেন।
পরদিন প্রাতে গ্রামে পড়িলো হাতির পাড়া! তাও যেই সেই হাতি নয়! একেবারে শ্বেতহস্তী! তাও আবার বিলিতী। কি তার ঠাঁট! কি তার চলন! কি তার বৃংহতি!
শ্বেতহস্তি আসিয়া রোষে কহিলো, "মানবাধিকার লংঘন হৈয়াছে! ডাকাত হইলেই বা কি! ধেড়ে তো দিব্যি মানুষ! ঐতো দুখানা হাত-পা, চৌখ, একখানা মুন্ডু!"
ধেড়ে কাঁদিয়া পড়িলো, শ্বেত হস্তির পায়, কহিলো, "মহাত্মা! আমি সেল্ফডিফেন্সে গুলি ছুঁড়িয়াছিলাম! ইশ্বরের দিব্যি! বিশ্বেস না হয়, গিয়া দেখিয়া আসুন, বেটা দুরাচার গৃহস্বামী সিন্দুকে বন্দুক রাখিয়াছে, মাত্র আধঘন্টা টাক সময় পেলেই আমাকে গুলি মেরে দিতো!
আর মেয়েটা দুশ্চরিত্রা! আমাকে লোভ দেখাইয়া ছিলো! আপনিই বলুন! ওমন টসটসে শরীর নিয়ে ঘুমুলে আমি কিভাবে নিজেকে সামলাই? একটা কাঁথা মুড়ি দিলেও তো হতো! সম্ভোগের পর যা হইবার হইয়াছে ভাবিয়া নষ্টা মেয়েটাকে গুলি মেরে আমি আসলে সমাজেরই উবগার করিয়াছি!"
শ্বেতহস্তি কহিলেন, "বাহ! বেশ করিয়াছো! আমি তোমার সাথে আছি।
"
বৎসরটাক পরে সেদিন দেখিলাম ধেড়ে স্যুটেডবুটেড হৈয়া লিমো হাঁকাইতেছে। মানবাধিকারের হোলসেল দিতেছে, বিভিন্ন সুশিল সমাবাশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তিমে ডেলিভারি করিতেছে, মানবতার সেবক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে।
সেই গৃহস্বামী আর তার পরিবারের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নাই, সেল্ফডিফেন্সের গুঁতোয় সেসবই লালফিতার আড়ালে চাপা পড়িয়াছে।
এ্যামিনেষ্টি অন্তর্জাতিক নামক সেই শ্বেত হস্তিটি আপাতত: অন্যকোথাও মানবতার চাষ করিতেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।