আমাদের এই দ্বন্দময় পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার পুর্বশর্ত ধর্মের নামে রেষারেষি বা জাতিভেদ প্রথা মুছে ফেলা। পৃথিবীর সকল জাতির সকল মানুষের কাছে এই বার্তাটাই পৌছে দিয়ে গেছেন কুষ্টিয়ার বাউল সম্রাট লালন শাহ। পৃথিবীর সকল ধর্মের প্রবক্তাগনই বলে গেছেন যে, পৃথিবীতে তাঁর প্রবর্তিত ধর্মই স্রেষ্ঠ ধর্ম এবং একমাত্র তাঁর ধর্মের অনুসারীগনই সঠিক পথে আছে এবং বাদবাকী সব মস্তবড় ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত। নিজেদের আদর্শকে সঠিক এবং অন্যদের আদর্শটাকে বেঠিক বলার এই আদর্শ অনুসরণ করতে গিয়ে সমাজে সৃষ্টি হয়েছে নানা ধরনের গ্র“পিং এবং মতভেদ। এই মতভেদ দিন দিন ঘনীভূত হচেছ এবং ভিন্ন ভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসি গ্র“পের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হয়ত একদিন দেখা যাবে পৃথিবীর সব দেশের, সব জাতির মানুষের জন্য প্রতিটি পাড়ায় একটি করে মাজার এবং ঐ মাজার কেন্দ্রীক মানুষগুলোর জন্য ভিন্ন এক আদর্শ যা সমাজের অন্য কারো সাথে মিলেনা। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় একসময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্ম প্রবর্তক ও প্রচারকদের নামে বড় বড় সব মাজার ছিল এবং ঐ মাজারকে কেন্দ্র করেই ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্ হত। যা আস্তে আস্তে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই প্রসার লাভ করে। আমাদের দেশেও এসময় চিটাগাং, সিলেট, বাগরহাট ইত্যাদি শহরে বড় বড় সব মাজার ছিল এবং সেখানে হাজার হাজার মানুষ তাদের মনোবাসনা পূরণ করার জন্য জমায়েত হত। ঐ সব জমায়েত ভক্ত মুরিদানদের মধ্যে চালাক চতুর কতিপয় লোক নিজেকে তাঁর গুরুর বিশেষ আশির্বাদপুষ্ট দাবী করে নিজ নিজ এলাকায় নিজের মত করে অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে থাকে এবং সফল হয়।
পৃথিবীর প্রতিটি জাতির মানুষের মধ্যে এভাবেই বৃদ্ধি পেতে থাকে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এবং জাতির মধ্যেও তৈরী হয় জাতিভেদ। এই জাতিভেদ প্রথার প্রসারের ফল্যে সমাজের শান্তিপ্রিয় মানুষের সৃষ্টি হয় জাতিগত দ্বন্দ্ব। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান প্রতিটি জাতির মধ্যেই আছে নিজস্ব আদর্শ অনুসারি পৃথক জাতি এবং তাদের মধ্যেও আছে ভিন্নসব আদর্শ। এই জাতিগত দ্বন্দ্বই বর্তমান সমাজের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। আমাদের এই সমাজের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নিজেরে স্বাথে তাদের ভুল আদর্শকে সমাজের জন্য কল্যাণকর বলে প্রচার করার জন্য এবং যে কোন প্রকারে তা প্রসারিত করার বাজে মানসিকতার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স¤প্রদায়ের মানুষের মধ্যে চলছে প্রানান্ত চেষ্টা যা সমাজের মানুষকে খন্ড খন্ড গ্র“পে বিভক্ত করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বময় আদর্শকেই বড় করে তুলে ধরে, যার একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার, বাউল সম্রাট লালন শাহ।
লালন শাহ নিজেকে বিশেষ কোন জাতির মানুষ না বলে সব সময় সকল জাতির মানুষকে কাছে টানার মত আদর্শ প্রচার করেছেন। যার জন্য আজ সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে লালনের ভক্ত, অনুসারী, দর্শনাথী সবকিছুই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। লালন শাহ এমন এক আদর্শ বা দর্শন তুলে ধরেছেন যা অনুসরণ করলে সমাজ থেকে সব ধরনের জাতিগত দ্বন্দ্ব দুর হয়ে যেতে পারে এবং প্রতিটি দেশের, প্রতিটি ধর্মের, প্রতিটি সমাজের মানুষের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এক শান্তিময় পরিবেশ। লালনকে জানার জন্য, বুঝার জন্য, লালনের আদর্শকে অনুধাবন ও অনুসরণ করে অহিংস এক আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য লালন একাডেমি ২৮ ফেব্র“য়ারী থেকে শুরু করে ১, ২, ৩ এবং ৪ মার্চ ২০১০ পর্যন্ত ৫ দিন ব্যাপী লালন স্মরণোৎসব, লালন মেলা ও লালন সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে যা লালনের আদর্শ প্রচারের পক্ষে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে এবং আমাদের এই দ্বন্দ্বময় সমাজ অনেক উপকৃত হবে এই আশাবাদ সমাজের প্রতিটি মানুষের।
[লেখক] জামিরুল ইসলাম, প্রভাষক, কম্পিউটার, মনোয়ারা আজমত আলী কলেজ, কোর্টপাড়া, কুষ্টিয়া\
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।