আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হে কবি নজরুল,রণতূর্য হাতে করে বিষের বাঁশির সুর নিয়ে অগ্নিসারথীতে চড়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসো...

বুকে জমা ---- দীর্ঘশ্বাস কারাগারের গরাদে মাথা কুটে মরা আমার বাক স্বাধীনতা । শোষকের ভয়ে বিনীত- কাপুরুষের মতো -- জীবন যুদ্ধে পরাজিত আমরা। হে প্রেম আর দ্রোহের কবি... কেমন আছেন?আশা করি ভাল আছেন। আমরা আজ কিভাবে কিভাবে যেন বেচে আছি। কিন্তু তুমি নেই।

তুমি থাকলে শাহবাগ থেকে আমরা ফিরে আসতাম নাতুমি থাকলে ৪২ বছর লাগতো না ওই পশুদের বিচার করতে। তোমার কলমই তাদের ফাঁসিকাষ্ঠ রচনা করতো। তুমি আমাদের শিখিয়েছ কিভাবে বিদ্রোহ করতে হয় -কিভাবে প্রেম করতে হয়। তুমি আমাদের প্রেম আর দ্রোহের আগুনে পুড়ে বিশুদ্ধ হবার পথ দেখিয়েছো। তুমি তোমার "হেনা"তে বলেছো হায় মেহেদীর বুকে কত খুন লুকিয়ে আছে,তা কে জানে।

আমরাও আমাদের ভদ্র শার্টের নিচে কি ক্ষোভ,কি দুঃখ- আগ্নেয়গিরির লাভার মতো জমা করে রেখেছি-তা তুমি দেখিয়েছ। তুমি তোমার ব্যথার দান থেকে আমাদের শিখিয়েছ বিরহের গান। প্রেম ক্ষুদ্র কামনায় নয়,প্রেমের পরিসর অনেক অনেক বড়। মেঘ যেমন সূর্যকে ঢেকে দিয়ে যায়,কামনাও তেমন প্রেমকে ঢেকে দেয়-এসব কথা আমরা তোমার কাছ থেকেই শিখেছি। প্রতি আশ্বিন মাসে এখনো আমাদের মন চায় শিউলিমালা ভাসিয়ে দেই-অজানা কোন প্রেমিকার উদ্দেশ্যে।

"শিউলিমালা"র আজহারের মতো হয়ে যেতে চাই আমরা। শিউলির অমর প্রেম আমাদের চোখে পানি এনে দেয়। না জানি কত প্রেমিক এখনো তাদের শিউলিকে খুঁজে বেড়ায়। হে কবি নজরুল তুমি তো আমাদেরকে এগুলোই শিখিয়েছ। তবে কেন আজ প্রেম নিয় এত ভ্রান্তি।

কেন আজ প্রেম আর কামনা সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে। হয়ত তুমি নেই বলে। "হেনা"র প্রেম আমাদের হৃদয় কেড়ে নেয় কেন?"হেনা" গল্পের ফরাসি তরুণীটির ফাঁক ফাঁক চোখ কেন আমরা আজও দেখি। "রাজবন্দীর চিঠি" পড়ে কেন আমরা রাজবন্দীর মাঝে আমদের নিজেদের ছায়া খুঁজি। যে কিনা প্রেমের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েও একফোঁটা প্রেম পায়নি।

ব্যথার দানের দারার অন্ধত্ব,বৌদেরার আত্মপলব্ধি , সয়ফুলের অনুশোচনা আমাদের কেন কাঁদায়। প্রেম আমাদের বিদ্রোহ করতে শেখায়। দারার মাঝে আমরা দেখেছি প্রেম আর বিদ্রোহের আগুন। "পদ্মগোখরা"মাঝে আমারা জোহরার মাঝে মানুষ আর পশুতে মিলন দেখেছি। "সালেক"এর গভীর ভাব আর মৃত্যুক্ষুধার বেঁচে থাকার নির্মম অনমনীয় প্রয়োজন-আমাদের মনে গভীর ভাবের উদয় করে।

"কুহেলিকা" থেকে আমারা জানতে পারি-শোষক কখনো প্রগতিশীলদের ভদ্র কথায় মাথা নত করেনা। সন্ত্রাসী বিপ্লবই নিয়া আসে মুক্তির গান। বেলুন উড়িয়ে আর আকাশের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে বিপ্লব হয়না। নজরুল তুমি আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছ। কিন্তু আমরা সেসব ভুলতে বসেছি।

তাই আজকে এই ব্যর্থতা। "রাক্ষুসি" থেকে আমরা দেখি অপরাধীর মনের গহীনে লুকানো কষ্ট। যা আমরা কখনো দেখার চেষ্টা করি না। কিন্তু ,তুমি দেখেছো। তোমার মতো দৃষ্টি থাকলে আজকের সমাজে অপরাধীরা আর অপরাধী থাকতো না।

কিন্তু,হে বিদ্রোহী,তোমার সে দর্শন আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তাই আমরা পথ হারা। পথভোলা-দিকভ্রান্ত পথিক। প্রেম আর দ্রোহের আগুন নিয়ে তুমি নেমে আসো আমাদের মাঝে। তোমার ওই রণতূর্য হাতে নিয়ে স্বর্গের দ্বার বেয়ে নেমে আসো।

আমরা যে আর পারছিনা। তুমি তোমার অমোঘ বানী দিয়ে এই নপুংসক জাতিকে উদ্ধার করো। আমরা আজ বিদ্রোহ করতে ভুলে গেছি। তাই আমাদের আজ এ পরিণতি। স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য বিলীন হবার আগেই আমাদের জাগাও।

আজ আমরা শহীদের বেদীতে মালীর ঘামে ভেজা ফুল দিয়েই নিজের কর্তব্য ভুলে যাই। বিদ্রোহের আগুন আজ অবদমিত। তুমি আজ কোথায়। তোমার সাম্যবাদের কথা মনে থাকলে আজ রামু বিধ্বস্ত হত না। তোমার আশায় আমরা আজও বসে আছি।

তোমার বিষের বাঁশি আর অগ্নিবীণা হাতে নিয়ে অগ্নিসারথীতে চড়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসো। আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাও-কারণ তোমারই রয়েছে চির উন্নত শির। আজ আমদের অবনত শির উন্নত করার সময় এসেছে। তোমার কাব্য আজ আমাদের পথ প্রদর্শক। এগুলো হাতে নিয়ে আমরা বহুদূর এগিয়ে যেতে চাই।

আশীর্বাদ করো আমাদের। ইতি, অবনত শিরের মানুষেরা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।