পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
এই জীবনে যারা একবার বুয়া সামলিয়েছেন তারা জানেন , বিশ্বাসী - অনুগত- নিষ্ঠাবান ও সদাশয় ভৃত্য এখন ৭০ - ৮০ দশকের নাটক সিনেমায় ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না । বিভিন্ন আকার ও প্রকারের বুয়াদের ভুয়া কান্ড কীর্তি সইবার পরে প্রায় বছর বিশেক আগে মামণি সিদ্ধান্ত নেন আর কাজের লোক রাখা হবে না । চুরি, বেয়াদপি, কাজ না করা, নোংরা থাকা, ফাকিবাজি , দারোয়ান ও ড্রাইভারের সাথে গভীর প্রেমজনিত জটিলতা থেকে শুরু করে খবরের কাগজে " বুয়া কর্তৃক ডাকাতি, খুন জাতীয়" খবর এই হেন মহান সিদ্ধান্তে উৎসাহ যোগায়। গরীব মানুষের জন্য এই পেশা ও জীবন নেহায়েত অসম্মানজনক, অর্থনৈতিক ভাবে আনপ্রোডাক্টিভ ইত্যাদি চিন্তাও ছিলো ( আব্বু ও আমাদের) আর অবশ্যই স্বাবলম্বী হইবার অদম্য (!!!!) স্পৃহা ।
গত ১৮ বছরের অভিজ্ঞতায় বুয়াবিহীন সংসারের কিছু খুটিনাটি তাই তুলে ধরলাম যদি কারো কাজে লাগে।
আর সেই সাথে আপনাদের পরামর্শও চাই । বিশেষ করে , বাচ্চা কাচ্চা হইবার পরে বুয়াবিহীন সংসার পরিচালনার টোটকা দিতে ভুলবেন না !
---------------------------
১। কাপড় কখনোই বেশি ময়লা করে ধুবেন না । এতে খরচ ও ঝামেলা দুইই বেড়ে যাবে ।
২।
যে কোন মেশিন ( মানুষের হাত বাদে) বিদ্যুৎ , পানি, সাবান - সবই বেশি খায়, সুতরাং ভেবে চিন্তে দেখুন।
৩। প্রতিদিন বাড়ি ফিরে গোসলের সময় পরণের কাপড় শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে দিন। সাবান দিতে হলে শার্টের কলার, বগল, প্যান্টের গোড়ালি আর কুচকি - এই চারটা জায়গায় একটু খানি সাবান ঘষে দুইটা ডলা দিয়ে ধুয়ে মেলে দিন। কাজটা করতে খুব বেশি হলে ৫ মিনিট লাগবে ।
অন্য জায়গায় সাবান দেওয়ার দরকার নেই।
আর মেয়েরা যেহেতু একটু পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করেন, তাই কাপড় গুড়া সাবানে ভিজিয়ে ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। বেশি ঘষাঘষি করে ঘষেটি বেগম হওয়ার দরকার নেই, আলগা ময়লা গরম পানি সাবানে এমনিতেই উঠে যাবে।
৪। বৃহস্পতিবার রাতে সপ্তাহের সব কাপড় বালতিতে গুড়া সাবানে ভিজিয়ে দিন।
( ৩ টা বালতি । সাদা । রঙিন। কালো। এই ৩ রঙা কাপড়ের জন্য।
)
৫। শুক্রবার সকালে "পাক গোসল" দেওয়ার সময় কাপড় গুলা দুইটা ডলা, দুইটা কাচা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মেলে দিয়ে নামায পড়তে চলে যান।
৬। জিন্সের প্যান্ট কেউ কেউ বছরে ২ বার এর বেশি ধুইতে চান না ।
এই কাজটা করিয়েন না । কাপড় যত বেশি ময়লা করে ধুইতে যাবেন, সেই ময়লা উঠাইতে তত বেশি কষ্ট হবে ।
মনে রাখবেন , জিন্স কিন্তু সুতি কাপড় । সুতি কাপড় এ ময়লা আটকে থাকে সবচেয়ে বেশি ।
একই কথা বিছানার চাদর এর বেলাতেও।
প্রতি সপ্তাহে ধুয়ে দিলে রঙ বদলে কালচে হয়ে যাবে না ।
৭। কাপড় ভিজানোর সময় ৬০ ডিগ্রী সেঃ গরম পানিতে গুড়া সাবান দিবেন । ময়লা ভালো পরিষ্কার হবে।
৮।
বেশি শক্তিশালী ক্ষার (সাবান) এবং ঘন ঘন সাবান ব্যবহার করলে কাপড় বিবর্ণ হয়ে যায় তাড়াতাড়ি । সুতরাং , কাপড় বেশি ময়লা করে সার্ফ এক্সেলে পিটিয়ে ছাল চামড়া তুলে না ফেলে , প্রতিদিন পানিতে আর সপ্তাহান্তে সাবানে ধোয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
৯। প্যান্টের গোড়ালি থেকে ময়লা যেতেই চায় না যাদের তারা গোড়ালি দুইটাকে সাবান পানিতে সিদ্ধ করতে পারেন মিনিট দশেক, খেয়াল রাখবেন প্যান্টের পায়ের ভিতরে আপনার পা যেন না থাকে ।
১০।
যে সব কাপড়ে রঙ উঠে সেই গুলারে হাতে আলাদা ধুইতেই হয় । সুতরাং, আপনের ওয়াশিং মেশিন কিছুই উপকার করতে পারবে না ।
১১। প্রতিদিনের মুজা , রুমাল , গেঞ্জি , অন্তর্বাস কাপড় ছাড়ার সময়ই একটি ছোট মগ বা পিচকি বালতিতে সাবানে ভিজিয়ে বেসিনের উপর রেখে দিন। রাতের খাবার খেয়ে এসে হাত ধোয়ার সময় ধুয়ে মেলে দিন ।
১২। যাদের তারে জায়গা হয় না , হ্যাঙ্গার এ কাপড় দিয়ে হ্যাঙ্গার গুলো তারে ঝোলান। এক সাথে অনেক কাপড় শুকাতে পারবেন।
-----------------
প্রতিদিনের খাওয়া, গোসল, দাঁত মাজার মতই কাপড় ধোয়াটা একটা অভ্যাসে পরিণত করুন।
পরিষ্কার থাকাটা কোন জ্ঞান কিংবা দক্ষতা নয় , পরিষ্কার থাকাটা হইলো অভ্যাস।
পোশাকের কথা যখন হলোই আশাকের কথাও একটু বলি।
সদর দরজার পাশে সস্তা হলেও একটা র্যাক রাখুন। নিচের তাক গুলাতে জুতা স্যান্ডেল সাজিয়ে রাখুন। উপরের তাকে ২টা বাক্স । একটা বাক্সে মুজা জোড়া গুলোকে গোল্লা বানিয়ে রেখে দিন।
আর অন্য বাক্সে কালি, বুরুশ ইত্যাদি টুকিটাকি । একটা কাপড়। র্যাকের পাশে একটা টুল । বাড়ি ফিরে টুলে বসুন। কাপড় দিয়ে জুতা মুছে র্যাকে রাখুন।
মুজা জোড়া হাতে নিয়ে পায়ে স্যান্ডেল গলিয়ে বাথ্রুমে চলে যান। মুজা ভিজিয়ে বেসিনে রাখুন। প্যান্ট , শার্ট পানি ধোয়া করে , অন্তর্বাস মুজার সাথে ভিজিয়ে একটা দ্রুত গোসল দিয়ে বেরিয়ে আসুন। কাপড় গুলো মেলে দিয়ে এবার অন্য কাজ করুন।
যে কাপড় ধুবেন না , সেইগুলাকে খুলে কুকড়া মুকড়া না করে সরাসরি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে বাতাসে দিন।
ইস্ত্রি নষ্ট হবে না।
যে সব জুতা প্রতিদিন লাগে না , সেগুলোকে মুছে পলিথিনে ভরে র্যাকে সাজিয়ে রাখুন। ধুলা থেকে বেচে যাবেন।
----------------------------
পরের পর্বে , বুয়াবিহীন রান্না বান্না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।