www.nationalnews.com.bd
গত কয়েক দশক ধরে ইটালির টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে অর্ধ নগ্ন নারীদের৷ কোন কুইজ শো বা টক শোতে এরা সারাক্ষণই নেচে বেড়াচ্ছে৷ এর প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছে আরেকটি টেলিভিশন শো৷
প্রতিবাদমূলক এই শোটি একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে৷ তারা বেশ উচ্চস্বরেই সমালোচনা করছে মেয়েদের বড্ড বেশি খোলামেলাভাবে টেলিভিশনে উপস্থাপনার জন্য৷ দিনে বা রাতে যখনই টেলিভিশন খোলা হোক না কেন - এসব অর্ধ নগ্ন মেয়ে দেখা যাবে৷
টিভি খুললেই দেখা যাবে মিনি স্কার্ট, স্কিন টাইট টপস পরে অল্প বয়সি কিছু মেয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপকের আশে পাশে সমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ কিন্তু গত বছরের শেষে মহিলা ব্যবসায়ী লরেলা জানারদো সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘এসব নোংরামি আর নয়- অনেক হয়েছে৷'
Bildunterschrift: Großansicht des Bildes mit der Bildunterschrift: নিজেদের রূপ দেখাতে সবাই ব্যস্ত
জানারদো বললেন, আমি যখনই টেলিভিশন অন করি তখনই আতঙ্কিত হয়ে এসব চিত্র দেখি৷ আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়৷ আমার রাগ হয়৷ তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই এসব বন্ধ করার৷
জানারদোর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তাঁর অন্য দুই সহকর্মী৷ তিন জন মিলে সিদ্ধান্ত নেন ৩০ মিনিটের ডকুমেন্টারি তৈরি করবেন তাঁরা৷ নাম দেয়া হয়েছে ইল কর্পো দেল্লে দনে - অর্থাৎ নারীর শরীর৷
ডকুমেন্টারিতে এসব টক শো এবং কুইজ শো থেকে মেয়েদের প্রায় নগ্ন মনে হতে পারে এমন চিত্রগুলোই তুলে ধরা হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে একটি গেম শো৷ একটি মেয়েকে বিশাল একটি হুকে ঝোলানো হয়েছে এবং তাঁর পুরুষ সঙ্গী তাঁর পেছন দিকে সমানে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে৷ আরেকটি জনপ্রিয় শো-তে দেখানো হয়েছে আরেকটি মেয়ে একটি কাঁচের টেবিলের নীচে বসে আছে - খাঁচায় আটকানো পশু যেভাবে বসে থাকে, ঠিক সেভাবে৷ মেয়েটির গায়ে কাপড় বলতে কিছুই নেই৷ মেয়েটি নির্বোধের মত হাসছে৷ এই ডকুমেন্টারির মধ্যে দিয়ে জানারদো প্রশ্ন করেছেন, কেন ইটালির এসব মেয়ে এই অপমান সহ্য করছে, কেন তাদের নিয়ে খেলার সুযোগ তারা দিচ্ছে ?
Bildunterschrift: Großansicht des Bildes mit der Bildunterschrift: আরো স্বচ্ছ পোশাকে কোন আপত্তি নেই !
জানারদো জানালেন, আমার মনে হয়, মেয়েরা ভয় পায় যে এত খোলামেলা না হলে কোন পুরুষ তাকে গ্রহণ করবে না৷ পুরুষের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা ইটালির সমাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষ করে অল্পবয়স্ক মেয়েদের জন্য৷ তারা কোন অবস্থাতেই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চায় না৷ যদি তারা একা হয়ে যায় ? যদি কোন বন্ধু না জোটে ?
জানারদো হাতে নিয়েছেন এই অসম্ভবকে সম্ভব করার মিশন৷ এবং তাঁর এই ডকুমেন্টারি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইটালিতে৷ ইল কর্পো দেল্লে দনে - অনুষ্ঠানটি প্রায় এক লক্ষ দর্শক ইন্টারনেটে দেখেছে৷ জানারদো অসংখ্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন ইটালির অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেল থেকে৷ সবাই অনুষ্ঠানটি প্রচার করতে চায়৷ এখন প্রায় সময়েই তিনি ব্যস্ত থাকেন সারা ইটালিতে, প্রতিটি শহরেই তাঁকে যেতে হয়৷ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি তুলে ধরতে চান অন্য মেয়েদের আর এক ছবি৷
জেনোয়ার একটি স্কুলে টেলিভিশন শো-র ভিডিও দেখানো হচ্ছে৷ শো দেখানোর পর সবাই নিচু গলায় কথা বলছে৷ অনেকক্ষণ পর উঠে দাঁড়াল একটি মেয়ে৷ ১৮ বছরের স্কুল ছাত্রীটি জানালো, যেভাবে এসব মেয়ে নিজেদের টেলিভিশনের পর্দায় তুলে ধরছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়ার মত নয়৷ কিন্তু এই মেয়েটি আরো অনেক মেয়েকে চেনে যারা পয়সার জন্য সব কিছুই করতে রাজি৷ এভাবে সহজেই অনেক পয়সা উপার্জন করা যায়৷
এই মেয়েগুলো কোন অবস্থাতেই কারো শিকার নয়৷ তারা ইচ্ছে করেই এগুলো করছে, তারা খুব ভাল করেই জানে তারা কি করছে৷ এসব মেয়ে নিজেদেরই ছোট করছে৷ বিশেষ করে যে মেয়েটি টেবিলের নীচে নিজেকে আটকে রেখেছে, সে মেয়েটি এই কাজের জন্য তিন হাজার ইউরো পেয়েছে৷
Bildunterschrift: Großansicht des Bildes mit der Bildunterschrift: পত্রিকার প্রচ্ছেদ স্থান করে নিয়েছে স্বল্প বসনারা
২০ বছরের আরেকটি ছাত্রী জানাল, টেলিভিশন শো-র মধ্যে দিয়ে সে যেন নিজেকেই দেখেছে, জেনেছে তাকে কিভাবে সবাই দেখতে চায়৷ মেয়েটি আরো বলল, আমি স্বীকার করছি এগুলো মোটেই সম্মানজনক কাজ নয়৷ কিন্তু আমিও এসব মেয়ের মত সফল হতে চাই৷ আমাকে সবাই টেলিভিশনে দেখবে - খারাপ কি ? হাই হিল জুতো, অত্যন্ত সুগঠিত শরীর, সু-উচ্চ বক্ষ৷ সবকিছুই !
জানারদো জানালেন, তিনি বোঝেন কেন সব মেয়ে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি শরীর চায়৷ এবং এজন্য কেউই লজ্জিত নয়৷ কিন্তু তা নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি হয়নি৷ সেখানে বলা হয়েছে, অনেক ধরণের মহিলা সমাজে রয়েছে, সবাই একরকম নয় - তাদের দেখানো হোক৷ অনেকেই বলেছেন, পুরুষদের হাতে টেলিভিশন এবং শো বিজ জগৎ পণবন্দি হয়ে আছে৷ যেমন ইটালির প্রচার মাধ্যমের রক্ষাকর্তা হচ্ছেন সিলভিও বের্লুসকনি৷ সম্প্রতি যৌনকর্মী এবং অল্প বয়স্ক মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তিনি বেশ সমালোচিত হয়েছেন৷ কিন্তু জানারদো জানান, দর্শকদেরও দোষ রয়েছে৷ তারাও নীরবে মেনে নিয়েছেন এসব শো৷ জানারদো বেশ জোর দিয়েই বললেন, শুধু বের্লুসকনি দোষী নন, গোটা ইটালির সমাজই এই দোষে দোষী৷
প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।