আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডানহাত/বামহাত------বাঁহাতিদের দুনিয়া

পানি ও বিদ্যুতের অপচয় রোধে এগিয়ে আসুন!

"খবরদার, বাম হাতে টাকা দেবেনা কিন্তু!" ক্লাস টু, নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছি, প্রথমদিন। ক্লাসে বেতন নেওয়া হবে, বাবা-মা রাও ঐদিন ক্লাসে। গম্ভীর চেহারার এক শিক্ষক বেতন নিয়ে লিখে রাখছেন। আব্বা আমাকে আগেই সাবধান করে রেখেছেন, অশ্যই যেন ডান হাতে টাকা দেই। আমার ডাক এল।

অবলীলায় বাঁহাতে টাকাটা বাড়িয়ে দিলাম। শিক্ষক সাহেব টাকাটা নিয়েই যখন ভুরু কুঁচকে ফেললেন, তখনি মনে পড়ল, এই রে! ডান হাত! পিছনে বসা বাবার দিকে তাকালাম। চোখ কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আমার মোটামুটি সারাটা জীবনই এই ডান হাত বাম হাত এর গ্যাঞ্জাম করে এসেছি। একদম পিচ্চিকালেই যখন বাঁ হাতে পেন্সিল ধরে আঁকিবুকি কাটতাম, তখনই আমাদের কিছু "শুভাকাঙ্ক্ষী" আত্মীয় স্বজন পরামর্শ দিলেন, ছেলেকে এখনই জোর করে ডান হাতি বানান, ডান হাতে লেখা শেখান। আমার বাবা-মা সেই পরামর্শ কানে নেননি।

আমি এখনো তাদের কাছে এই বাবদে কৃতজ্ঞ! তবে আমি যখন খাওয়ার টেবিলে বসে সুন্দর করে বাম হাতে ভাত দিয়ে তরকারী মেখে লোকমা বানিয়ে খাওয়া শুরু করলাম, সেইটা আমার বাবা-মা কেন জানি সহ্য করতে পারলেননা। আমাকে ডান হাতে ভাত খাওয়া শেখালেন যারা ডানহাতি, তাদের পক্ষে কখনোই বোঝা সম্ভব না, যে, দুনিয়ার বেশীরভাগ জিনিসই যে আসলে ডান হাতিদের জন্য বানানো। উদাহরণ দিই। নিরীহ হাতঘড়ি, রিস্টওয়াচ। ভাবছেন, যাহ, এটার মধ্যে আবার ডানহাতি-বাঁহাতির কি হল? বেশীরভাগ মানুষই ঘড়ি বাঁহাতে পরেন, কারণ ডান হাত দিয়ে কাজ করার সময় টাইম দেখতে সুবিধা।

এখন আপনি যদি বাঁহাতি হন, তাহলে ডানহাতে পড়বেন, তাইতো? এখন ডানহাতে পরে বাঁহাত দিয়ে ঘড়ির টাইমটা একটু চেঞ্জ করেন তো দেখি! একটু অসুবিধা হচ্ছে? হবেইতো, ঘড়ির বাটন গুলো যে সব ডানদিকে!! কীবোর্ডের নাম্বারপ্যাড কেন ডানদিকে থাকে? এইতো বুঝে ফেলেছেন! কম্পিউটারের মনিটরের বাটন গুলো কোন দিকে? ডেস্কের ড্রয়ারগুলো আপনার কোন দিকে? মাউসটা কম্পিউটারের কোন দিকে থাকে? ক্যান ওপেনারটা কোন হাতে ঘুরাতে হয়? কাঁচি যে একেবারেই ডান হাতিদের জন্য বানানো, সেটা কি জানেন? আপনার "ইয়ে" আপনাকে এই ভ্যালেন্টাইনে যে "আই লাভ ইউ" লেখা মগটা দিল, সেটার হাতলটা একবার বাম হাতে ধরে দেখেন। কি, আইলাভ ইউ লেখাটা গায়েব? বাঁহাতিদেরকে সেই প্রাগঐতিহাসিক কাল থেকেই লোকে একটু সন্দেহের চোখে দেখে। ধর্মগুলোতেও সেইসময়ের ট্রাডিশন অনুযায়ী বাঁহাতকে অপবিত্র ধরা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইংরেজী সিনিস্টার(sinister) শব্দটা অনেকেই জানেন, যার অর্থ হচ্ছে শয়তানের মত। এই শব্দটার উৎপত্তি হয়েছে এংলো-ফ্রেঞ্চ শব্দ "সেনেস্ট্রে" থেকে যার অর্থ হচ্ছে "বাম দিক"!! এরকম আরেকটা শব্দ হচ্ছে গশ(gauche), যেটার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে "বাম", আর এটা দিয়ে বোঝানো হয় একটু ঢিলাঢালা, স্লো বুদ্ধির মানুষকে।

একটা সমাজের প্রায় ১০% মত মানুষ থাকে বামহাতি। কিন্তু বাংলাদেশী সমাজে আরো অনেক কম দেখা যায়। কারণ অনেক বাহাঁতিই ছোটবেলা থেকে পারিবারিক কারণে ডান হাতে লেখা, খাওয়া শুরু করেন। বাঁহাতিরা যে "সিনিস্টার" হয়, সেই মিথ এখ আর নেই বললেই চলে তবে অন্যান্য কিছু মিথ রয়ে গেছে---অনেকে বলেন, বাঁহাতিরা বেশী মেধাবী হয়। আবার কিছু কিছু জরিপে দেখা যায়, ক্রিমিন্যালদের মধ্যে বাঁহাতিরা তুলনামূলক বেশী।

শেষ করব কিছু বিখ্যাত বাঁইয়াদের নাম দিয়ে। বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন , জর্জ বুশ সিনিয়র, রিগান জুলিয়াস সীজার, আলেক্সান্ডার দি গ্রেট, কার্ট কোবেইন, পল ম্যাকার্টনি ওসামা বিন লাদেন অমিতাভ বচ্চন, রবার্ট ডি নিরো, এঞ্জেলিনা জোলি, জুলিয়া রবার্টস ১৩ই অগাস্ট হচ্ছে বিশ্ব বাঁহাতি দিবস। পরিশেষে, দয়া করে কোন বাঁহাতিমানুষ দেখে মনে করবেননা, যে সে "অন্যরকম", বা তার কোন সমস্যা আছে, অথবা তার লিখতে কষ্ট হয়। যদি এরকম মনে হয়, তাহলে আয়নায় গিয়ে নিজেকে একবার দেখুন, দেখবেন আয়নার ভেতর আপনি কত চমৎকার করেই না বাঁহাতে লিখে যাচ্ছেন

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।