বিদায় - পথের নয়, পথিকের...
অতশী জোছনায়, আমি গোধুলীবেলায়....
এক. লুকোচুরি
সূর্য্য মাথায় করা দুপুর, কাশফুলের এক বনে এসে লুকিয়ে রয়েছি।
স্বপ্ন! এই জিনিসটা কি? আগডুম বাঘডুম ঘোড়াডুম কোন কাব্য, নাকি পদ্য, নাকি ছড়া? অনেকক্ষন ধরে কাশফুলের-ঘাস চিবালে এমন ভাবনা মনে আসতেই পারে, তাই হয়তো স্বপ্ন নিয়ে গবেষনা শুরু করেছি। স্বপ্ন, নিঃসঙ্গতা, ভালোবাসা, কাব্য, পদ্য সবই মিশে আছে এই অস্তিত্বে তাই কি এই শব্দগুলোকে এখন এতো অসহ্য লাগছে?! সুন্দর সব কিছুই অসহ্য লাগছে। কাশফুল চিবানোয় মনোযোগ দিলাম...
- এই বাদল!
~হুমম
-বাদল!
~ হুমম তো!
-'হুমম তো' টা কি? তোমাকে এত বার ডাকছি তোমার কানে যাচ্ছে না?
~ যাচ্ছে তো!
-এই ঝোপের মধ্যে বসে আছো কেন? চোখ মুখ কুচকিয়ে ঘাস চিবাচ্ছো কেন? আমি যে আসলাম তোমার কোন মাথা ব্যাথা নাই, ঘটনা কি?
~ঘটনা ইতং বিতং চিতং, স্বপ্ন নিয়া গবেষনা করতেছি, কোথায় ছিলা এতক্ষন?
-ওরে বাবা! বিশাল গবেষক! ঐ পুকুরের পদ্ম পাতার উপর একটা প্রজাপতির সাথে ভাব জমাচ্ছিলাম, প্রজাপতিটার অনেক দুঃখ, ওর সঙ্গীটাকে ও হারিয়ে ফেলেছে, এত সুন্দর একটা প্রজাপতি তোমাকে কি বলবো বাদল! আমার সাথে অনেক গল্প করলো! শেষে কোথায় যে উড়ে গেল, আর খুঁজে পেলাম না, ওকে খুঁজতে খুঁজতে তোমার কাছে চলে এলাম। তুমি আমার দিকে একটু তাকাচ্ছো ও না!
~ তোমার টিপ কই? টিপ পড় নাই কেন?
- ওহ! পানিতে নামছিলাম তো তাই টিপটা পুকুরে পড়ে গেছে, জানো! তোমার কথা ভেবে একটা সবুজ টিপ পড়েছিলাম, আমার এই কলাপাতা রঙের শাড়িটার সাথে মিলিয়ে, ইস! হারাই ফেলছি, দাড়াও খুঁজে নিয়ে আসি, তুমি থাকবা তো ততক্ষন?
~হুমম...
-আবার হুমম কি? বলো হ্যা!
~হু!
অতশীটা উঠতেই ওর দিকে আড়চোখে তাকালাম, এতক্ষনে নিশ্চয়ই আমার আনমনা ভাব দেখে, মনে মনে রেগে ঢোল হয়েছে, বেচারী এখন আমার জন্য টিপ খুঁজতে যাবে, হঠাৎ করে আবার হাজির হবে কিছুক্ষন পর, একটা টিপ ঠিকই কপালে পড়ে আসবে, আনন্দে আটখানা হয়ে মুখে অনেক হাসি নিয়ে।
এই আনন্দ দেখার জন্যই তো এত আয়োজন। আমি যেখানেই থাকি না কেন আমাকে ঠিক খুঁজে নেবে, কারন সেতো আমার সাথেই আছে সব সময়।
অনন্তকে একটা চিঠি লিখতে শুরু করে দিলাম, চিঠিটা কেমন হবে?
অনন্তবরেষু,
আশা করি ভাল আছিস, আমিও শুভং! তোর সাথে যোগাযোগটা অনিয়মিত, ব্যাস্ততা আর বাস্তবতা আমরা এড়াতে পারছি না! না তুই না আমি, আমি দিনকে দিন গুহা বাসিন্দা হতে চলেছি। অতশীটার কথা তো তোকে বলেছিই, ও যখন তখন আমার সাথে গল্প করতে চলে আসে, অনেক গল্প করে আমার সাথে! তোর গল্প শুনে তোর কথা অনেক জিজ্ঞেস করে, তোর সাথে কথা বলতে চায়, কেমন করে তোর সাথে কথা বলাই বল তো! ওকে তো শুধু আমিই দেখি! একটা পথ বাতলিয়ে ফেলতে হবে তোর সাথে অতশীর গল্প করিয়ে দেবার, আমি আর অতশী মিলে একটা বুদ্ধি ঠিক বের করে ফেলবো।
তুই কেমন আছিস দোস্ত! অনেক দিন তোর কবিতা শুনি না, সেই সব স্বপ্ন জড়ানো কবিতা! যা শুনে শুনে আমি স্বপ্নের ক্ষেত্রে পুরোটাই স্ট্যান্টবাজ হয়ে গেলাম।
তোর কবিতার কথা ভাবতে গিয়েই আজ স্বপ্ন নিয়ে অনেক গবেষনা করলাম, পরে তোকে গবেষণাপত্র দেয়া হবে, তুই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বি আমার রিসার্চ পেপার দেখে। পাগল হয়ে যাচ্ছি কিনা কে জানে! তবে পাগল হলেও আমি যে মানুষ টা ভালো এটা তো তুই জানিস। (হাসবি না)
যাই হোক অতশীর ব্যাপারে তোকে জানাতে এই চিঠির অবতারনা। অতশীটা অনেক হাসি-খুশি, আর সারাদিন বকবক করায় ব্যাস্ত। ওকে বকা দিয়ে আমি চুপ রাখতে পারি না, চেঁচামেচি করে শেষে বকা কেন দিলাম তার শাস্তি আমার কাছ থেকে আদায় করে নেবে।
সেদিন কোথা থেকে এক গাদা কাদা জড়িয়ে এসেছে কোন এক হরিণের বাচ্চার সাথে খেলা-ধূলা করে! আমাকেও কাদা জড়াতে বলছে, বকা দিতেই চুপ করে গেল, তারপর সেকি অভিমান! কেন বকা দিলাম এটা বারবার জিজ্ঞেস করে আমাকে অস্থির করে তুলল, শেষে বাধ্য হয়ে একটা ইয়া বড় ঘাস-ফড়িং ধরে ওকে দিলাম, ও আমার বুক পকেটে ভরে দিয়ে মহাখুশি, আমার শাস্তি হলো ফড়িংটা বুক পকেটে নিয়ে ঘুড়ে বেরাতে হবে। ওটা নিয়েই ক্লাস করতে গেলাম, ক্লাসের কোন ফাঁকে ফড়িংটা পকেট থেকে বের হয়ে লাফাতে শুরু করলো, ক্লাসে সে এক হুড়মুড় অবস্থা, যার গায়ে পড়ে সেই একটা চিৎকার করে ওঠে, ও দিকে ক্লাস নিতে এসে স্যারও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলেন। অতশীতো আমার পাশেই বসা ছিল, ও এই দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে শেষ, আমি তো হাসতেও পারছি না চুপ ও থাকতে পারছি একটা যা তা দশা। ফড়িঙটা কোথা থেকে এল সেটা অবশ্য এখনও অনাবিস্কৃত।
ভাল থাকিস দোস্ত, পরে তোকে আরো জানাবো...
--"বাদল"
চিঠিটা বাতাসে উড়িয়ে দিলাম।
উঠে পড়ি, অতশীর সাথে কিছু লুকোচুরি খেলা চলুক, ও টিপ পড়ে এসে আমাকে খুঁজে বের করুক..
দুই. গুহা
এখন গুহার ভিতরে আছি। এই গুহাটা একান্তই আমার। নিজের আঁকা প্রাচীন সব শিলালিপি দেখছি, যখন আমি একা হয়ে যাই টুপ্পুস করে গুহার ভিতরে ঢুকে পড়ি। তারপর শিলালিপি অংকন পর্ব অথবা সব অংকিত শিলালিপি দর্শন পর্ব। অবাক হবার মতো কিছু নেই, এটা একই সাথে আমার গুহা আর আমার কম্বল! এই কম্বলের ভিতর পুরোটা আমি ঠিকমতো ঢুকে যেতে পারি, ঢুকলেই অন্ধকার আর গুহা গুহা মনে হয়, যেন পাহাড়ের কোন এক অন্ধকার উষ্ণ-গুহায় ঢুকে পড়েছি।
অনেক ক্লান্তির পরে এই গুহাটিই উত্তম আশ্রয়।
শুভ আশ্রমং গুহা।
তিন. বসন্ত ও কোকিল
বসন্ত এসেছে বেশ কিছু দিন, কিন্তু ভাব দেখে মনে হচ্ছে বসন্তটা এবার লুকোচুরি খেলছে, আসছি আসছি বলেও নিজের রুপ প্রকাশ করছে না। অবাক করা ব্যাপার হলো এই বসন্তে একটা কোকিলের ডাকও শুনতে পেলাম না! দেশে কি কোকিল-নিধন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে? ভাবছি কোকিল খুঁজতে বেরুবো, সমস্যা হলো পাখিটা দেখতে কেমন ভূলে গেছি, কালো এটা মনে আছে, যাই হোক পাখিই তো! খুঁজে বের করা যাবে, একটা পাখি খুঁজে পেলেই ওকে রিমান্ডে নেয়া হবে কেন সে 'কুহু' ডাক দিচ্ছে না, কিসের অনশন? প্রয়োজনে সরকারের কাছে তাদের আবদার পৌছে দেয়া হবে একটি 'কুহু' ডাকের জন্য। কোকিল খুঁজতে নেমে পড়ার একটা উত্তম সুযোগ খোঁজার তালে আছি, অতশীকে সাথে নিয়ে যেতে হবে ও কোকিলটার সাথে ভাব জমিয়ে যদি একটা কুহু ডাক দেয়াতে পারে তাহলেই কেল্লা ফতে।
-এই বাদল! একটা পাখির বাসা উই যে দ্যাখো! ওটা কি কোকিলের বাসা?
~ ওই বোকা! কোকিলের কি বাসা থাকে? কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়ে জানো না?
- ওহ ভূলে গেছিলাম, যাই হোক ওটা তো বেশি উপরে নয় চলো দেখি পাখির বাসায় কি আছে?
~ ওই বাসার মালিক হলো উই বুলবুলি পাখিটা, তোমার মাথায় ঠোকর বসাই দিবে।
-চুপ! চলো দেখি ওদের সংসারটা, বাচ্চা আছে কিনা!
বাধ্য হয়ে গাছের উপর উঠলাম, বুলবুলিটা এবার অস্থির হয়ে উঠলো, আর চেঁচামেচি শুরু করলো, আমি পাত্তা না দিয়ে ওর বাসাটার দিকে আগালাম।
~ অতশী!!
-হুমমম!
~ কয়েকটা ডিম আছে অনেক সুন্দর! হিজিবিজি আঁকা উপরে, তুমি দেখবা??
-দেখবো!! আমিও গাছে উঠতে পারি, ওই তুমি আমার হাত ধরে উঠাও!
~ তুমি কি গাছে উঠবা নাকি!! আরে আমি এখান থেকে দেখাচ্ছি!
-না, না, না! আমি গাছে উঠে দেখবো! উঠবোই!
~(দীর্ঘশ্বাস) উঠো তাইলে! এই যে পা ধরো!
-ঐ পা ধরবো কেন? হাত দিতে পারতেছো না?
~ হাত অতদূর যাবে না তো! আচ্ছা দাড়াও আমি আসতেছি, তোমারে তুলতে।
(বুলবুলিটা তার কর্তা মশাই কে নিয়ে সমান তালে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন)
কোকিল আজ আমাদের খুঁজে বের করতে হবেই, পাইছে কি! বসন্ত আসছে অথচ ডাকাডাকির নাম নাই! কিন্তু কুহু ডাক না দিলে তো বুঝতেও পারবো না কোনটা কোকিল, এখন কাকের বাসায় ডিম পাড়ে কোকিল, নাকি কোকিলের বাসায় ডিম পাড়ে কাক সেটাই গুলাই ফেলছি! ছোট-খাটো কাক দেখলেই এখন কোকিল কোকিল লাগে!
চার. পাখির নীড় ও সংসার
সেদিন এক চড়ুইয়ের ঠোঁটে একটা খড় দেখে অনন্ত বলে বসলো, "ঐ যে সংসার ঠোঁটে নিয়ে উড়ে বেরায় দেখ বাদল কত্ত মজা, তুই এরকম সংসার ঠোঁটে নিয়ে ঘুড়ে বেরাতে পারবি?" আমি বললাম "এইটা কোন ব্যাপার হইলো? ঐ চড়ুই নিছে একটা খড় আমি তো মিনিমাম এক মুঠো খড় মুখে নিয়ে হেটে বেরাতে পারবো!" অনন্ত আমার দিকে চোখ গোল করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন, তারপর বললো, " তুই কি গাছের মগডালে বাসা বানাবি নাকি? তুই মুখে ইট নিয়ে ঘুড়ে বেরাবি! গাধা কোথাকার" এই কথা শুনে আমরা দু'জনে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেয়েছিলাম।
আজ আমি সংসার নিয়েই ঘুড়ে বেরাচ্ছি, অনন্তটা সামনে থাকলে ঠিকই দেখিয়ে দিতাম, চড়ুইরা সংসার নেয় ঠোঁটে আমাকে সংসার বয়ে নিয়ে বেরাতে হচ্ছে চোখে...
একটা ছড়া লিখেছিলাম, সেখানে একটি বক তার চোখ দুটি হারিয়ে শুধু স্মৃতিতেই সব কিছু খুঁজে দেখেছে, সেই বকটার জন্য অতশীর সেকি মায়া! কান্নাকাটি অবস্থা! ওকে থামানোর জন্য আমাকে কয়েকটি সংসারের লাইন পরবর্তীতে যোগ করতে হয়েছে।
হাজারো রঙে আঁকা একটি আকাশ
রঙে রঙিন ঝিরি ঝিরি বাতাস
হাজারো মন, নিজুত শখ
তারই মাঝে কোথাও,
একটি শুভ্র-অন্ধ-বক,
স্মৃতির জাবর কাটে।
ভর দুপুরে,
বাবুই-চড়ুই আলতো ঠোঁটের ফাঁকে,
একটি তৃণ রাখে।
কখনোবা একটি শিশু
চড়ুইটিকে হাতছানিতে ডাকে।
যে গাঁয়েতে,
লাল শিমুলে, নীল জারুলে
অগ্নি শিখা আঁকে
তারই কোন বাঁকে
একটি সকাল,
নীল-নয়নে মরে পড়ে থাকে।
.......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।