সময় হয়েছে আজ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠার; দৃপ্ত শপথ করে সম্মুখে পা ফেলে ছুটে চলার চিরন্তন সত্য ও সুন্দরের পথে......
“কিরে এখনো ঘুম থেকে উঠিস নি! রাতে তো পড়ার কোন চিহ্নই দেখি না। বইটা নামেমাত্র হাতে নিয়েই বিছানায় শুয়ে গুনগুন করে ঠোঁট নাড়িস। যদি বলি, কিরে পড়িস না? সাথে সাথে বলিস পড়ি; আর আসলে তুই পুরো ঘুমে। এভাবেই তো রাতটা শেষ করে দিস। তার ওপরে বেলা দশটা পর্যন্ত ঘুমাস।
তোর কি খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়া নেই? তুই কি তোর অধ্যায়ন শেষ করে ফেলেছিস? হয়তো পড়, আর না পড়লে কাজে লেগে যা”- কথাগুলি থাকতো ভালোভাসায় পূর্ণ।
প্রত্যেকদিন মায়ের এই কথাগুলি শুনতে হতো। বিরক্তিও লাগতো। কিন্তু আমার কোন পরিবর্তন হতো না। আমার প্রাত্যহিক রুটিন সেই আগের মতোই।
সকালের খাবার খেয়ে ঘুরতে বেরিয়ে যেতাম। এখানে-সেখানে আড্ডা মেরে দুপুর দুইটায় ঘরে ফিরতাম। ঘরে ফিরেই লুঙ্গি আর গামছাটা নিয়ে চলে যেতাম নদীতে। সেখানেও আবার দুই ঘন্টা আড্ডা! সেই আড্ডার মধ্যমণি ছিলাম আমি। অবশেষে গোসল করে বাড়ি ফিরতে চারটা তিরিশ মিনিট বেঁজে যেতো।
এই একটু পরেই আবারো মা’র বকুনি খেতে হতো। “সবাইকে খাইয়ে আমি বসে থাকি কিন্তু তোর জন্য আমাকে খাবার নিয়ে বসে থাকতে হয়। তুই যদি একটু আগে এসে খেয়ে নিস তাহলে তো আমি একটু বিশ্রাম পাই। সারাদিনের মাঝে বিকেলে একটু বিছানায় শুতেও পারি না শুধু এই জন্য। ” খাবারের পাত্রে বসেই মা’য়ের এই কথাগুলি শুনতে হতো।
খাবার শেষ হলেই বলতো- “ যা এখন বইটা নিয়ে একটু বস। বেড়োবে সন্ধ্যায়। ” কার কি, আমি একটু সুযোগ পেলেই...
মাঠে ফুটবল খেলে আরো ঘন্টাকয়েক আড্ডা। অতঃপর গান। রাত প্রায় আট টা বাঁজতো ঘরে ফিরতে।
ঘরে ফিরেই ভাত চাইতাম। মা বলতো- “ না, এখন ভাত খেতে পারবি না; খেলেই তো ঘুমিয়ে পরিস। ভাত খাবি রাত দশ টায়। আগে পড়াটা শেষ করে নে। ”
কিন্তু আমি একটু পরেই এসে খেয়ে নিতাম।
রাত নয়টা হলে আম্মা রেডিওটা আমার কাছে নিয়ে আসতো রেডিও ম্যাগাজিন উত্তরণ শোনার জন্য। বলতো- “ নে, এখন উত্তরণ’টা শুনে নে। ” আমি শুয়ে উত্তরণ শুনতাম। যখন শেষ হতো আমি তখন পূর্ণ ঘুমে আচ্ছন্ন। রাতের অন্ধকারে তখন নিঃস্তব্ধ জনপদ।
রাত্রি শেষে কমলা রঙের সূর্যটা যখন পুব আকাশে ভেসে আসতো তখন মানুষের কোলাহলে ঘুম ভেঙে যেত। কিন্তু আমি তারপরেও শুয়ে থাকতাম।
আজ আমি তোমার সেই ভালোবাসা মিশ্রিত বকুনি, স্পর্শ হতে দূরে...। ইচ্ছে হলেই কাছে যেতে পারি না। তোমাকে আলিঙ্গন করার মতো প্রশান্তি আর কিছুতেই নেই।
তোমার সাথে উন্মুক্ত আলাপন আর হয় না। সারাদিন না খেয়ে থাকলেও কারো কিছুই আসে যায় না। এখানে সবাই চলছে আপন গতিতে। কারো কোন কিছুতেই যেন খোঁজ নেবার সময় নেই। সবাই এখানে আপন রাস্তার খোঁজে পথ চলে...।
তবুও অনুভূতির কারো কোন কমতি হয় না; তা কেবলই নিজ পরিমণ্ডলে।
এই অস্বস্তিকর, দূষণময় শহরেও মা তোমাকে মনে পড়ে, তোমার স্পর্শ পেতে প্রতিক্ষীত হয়ে থাকে এই দেহমূর্তি। জীবন ঘষে প্রদীপ জ্বালাতে আমি আজ তোমার কাছ থেকে দূরে...। ইচ্ছে করলেই তোমার কোলে শুতে পারি না। জেনো, দীর্ঘ দিনের সম্পর্কহীনতা শোকের তীব্রতাকে ভোঁতা করে দিলেও তোমার প্রতি অনুভূতিগুলি কেবলই সজীব হয়ে উঠে; গাঢ় হয়... অধিকতর গাঢ়।
ইট পাথরের জঙ্গল হতে তোমাকে জানাই অনেক ভালোবাসা, যে ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যায় না। তোমাকে ভালোবাসি সেই শৈশবের মতোই। শুধু আজই নয়, আট হাজার সাতশত ছত্রিশ ঘন্টাই তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ মাই মাদার, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।