কিছু কথা আছে যা বলা যায়না, আবার না বললেও হয়না । ।
কে শিবির? কোন কোন হলের নেতারা শিবিরের সঙ্গে জড়িত? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন ঘুরেফিরে এ প্রশ্ন আসছে। আতঙ্কিত নেতা-কর্মীরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছেন সন্দেহের চোখে। ছাত্রলীগের মধ্যে যে শিবির আছে, এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেননি কোনো নেতাই।
তবে এই শিবির কারা—এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন কেউই। ছাত্রলীগের নেতাদের দাবি, ছাত্রলীগের কোন কোন নেতা শিবিরের সঙ্গে জড়িত, সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে সংগঠনের স্বার্থেই তা দ্রুত প্রকাশ করা উচিত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢুকে পড়েছে। ধানমন্ডির কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হলে ছাত্রলীগের যে কমিটি করা হয়েছে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছাত্রশিবিরের চিহ্নিত কর্মীদের বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু সুবিধাবাদী লোক আছে, যারা সুযোগের সন্ধানে সব সময় সরকারি দলে ঢুকে পড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য।
এদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা কয়েক দিন আগেই বিষয়টি জেনেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই মন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঝড় তুলেছে। এ নিয়ে গতকাল কথা হয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। প্রায় সবাই একটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন, এ এফ রহমান হলের বহিষ্কৃত সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক আগে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিষয়টি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের একাধিকবার জানানো হয়েছিল।
কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আবু বকরের মৃত্যুর পর তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এখন তিনি কারাবন্দী।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের বারবার বলেছি, ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা তাঁকে অনেকবার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তিনি কারও কথা শুনতেন না।
সর্বশেষ এফ রহমান হলের সংঘর্ষের সূত্রপাত হওয়ার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা তাঁকে কোনো গণ্ডগোল সৃষ্টি না করার অনুরোধ করেন। কিন্তু সে দিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, এফ রহমান হল ছাড়াও আরও তিনটি হলের গুরুত্বপূর্ণ পদে তিন নেতা আছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে শিবিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও শাহবাগ থানার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত নীলক্ষেত ও শাহবাগের কয়েকটি কোচিং সেন্টার ও কয়েকটি ভবনকে (মেস) কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে শিবির।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে ছাত্রলীগে শিবির আছে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে একটি অলিখিত সমঝোতা অনুযায়ী এখানে শিবিরের রাজনীতি করার সুযোগ নেই। তাই তারা অতীতে ছাত্রদলের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করেছে। আর এখন তারা ঢুকে পড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ভেতরে।
সৈয়দ আশরাফের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়া হলের ছাত্রলীগের সভাপতি রিফাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রমাণ ছাড়া নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এমন কথা বলেননি। এখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে বৈঠক করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
তিনি বলেন, ‘মনেপ্রাণে ছাত্রলীগ করি। বিএনপি-অধ্যুষিত এলাকায় আমাদের বাড়ি। সেখানে আমাদের পরিবার আওয়ামী লীগ করত। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে দীর্ঘদিন রাজনীতি করছি। কেন্দ্রীয় নেতারা যোগ্য মনে করেই আমাকে এমন একটি পদে বসিয়েছেন।
একইভাবে সব হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদেরও যোগ্য মনে করেই পদ দেওয়া হয়েছে। এখন কাউকে হুট করে শিবির বলা কঠিন। ’
সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন নোংরা রাজনীতি চলছে। যে যার বিরুদ্ধে পারছে শিবিরের অভিযোগ তুলছে। এই নোংরা রাজনীতি ছাত্রলীগকে আরও দুর্বল করে ফেলবে।
বিষয়টির দ্রুত সুরাহা হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বসে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
একুশে হলের একজন বড় নেতার বিরুদ্ধেও শিবির-সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, ‘কোনো মন্তব্য করতে চাই না। যারা বলছে তারা প্রমাণ করুক আমি শিবির করি।
’ মুহসীন হলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, এই একটি বক্তব্য ছাত্রলীগের রাজনীতির ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। এখনই নামগুলো প্রকাশ করা উচিত।
বঙ্গবন্ধু হলের সাধারণ সম্পাদক নবীরুজ্জামান বলেন, এখনই নামগুলো প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নইলে সংগঠনের ক্ষতি হবে। একই রকম মন্তব্য করেছেন সূযর্সেন, এস এম হল ও জহুরুল হক হলের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই যে কোন চার নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ। তবে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির দুই শীর্ষ নেতাকে বলেছি, বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বলেন, ‘যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতা, তাঁরা সবাই যোগ্য এবং দলে অনেক দিন ধরে অবদান রাখছেন। তবে অতীতে কারা কোন রাজনীতি করতেন, তা আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
’
যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরীরও একই মন্তব্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।