আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চট্টগ্রাম বন্দরের সিংগাপুর হয়ে উঠা আর বন্দরমাশুল দিয়ে বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণের মীথ প্রসংগে

ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস

স্বপ্ন, মোহ আর দাসানুবৎ আনুগত্য; আশাবাদীরা স্বপ্ন দেখে, নির্বোধেরা মোহগ্রস্থ হয়, আর চাটুকার'রা দাসানুবৎ আনুগত্যে সুর মেলায়। চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রানজিট প্রদানে বিশাল কিছু অর্জনের সম্ভবনা উপরোক্ত তিনশ্রেনীর মানুষই দেখছেন। ব্লগে ব্লগে চলছে বন্দর -রেভিন্যু নিয়ে বিশাল রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা নিয়ে বিষৎ আলোচনা এবং সেই সাথে ভিন্নমতপোষনকারীদের চরিত্রহনন, দালাল-রাজাকার সম্ভোধন। সামু'র একসময়ের প্রোলিফিক ব্লগারএস্কিমো আমারব্লগে আনু মুহম্মদকে একহাত নিয়েছেন। উনি আপাতভাবে ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দরে একসেস দেওয়ার বিরোধী বলে।

সেই পোস্টে রাসেল(........) -এর বিষয়ের সাথে সংগতিহীন কুৎসিত মন্তব্য " আনু মুহাম্মদ কি দাঁত ব্রাশ করেন নি? তার মুখের দুর্গন্ধে দেখি খালেদা জিয়া মুখে কাপড় বেধেছেন । তাকে নিয়মিত ব্রাশ করার উপদেশ দেওয়া হলো। তবে এটা দিয়ে মুখশুদ্ধির বিজ্ঞাপনও হতে পারে ভালো। ব্রাশ ব্রাশ ব্রাশ ইয়োর টিথ.................. নিজস্বতার বোধহীন এস্কিমো , কিংবা হতাশ রাসেলের প্রত্যত্তুর দেওয়ার কোন প্রয়োজনই অনুভব করিনি। কিন্তু রাগীব ভাইয়ের মতো স্কলার যখনহড়েগড়ে কথা বলে সেই মীথকে ভেংগে দেওয়াটা জরুরী হয়ে দাঁড়ায় ।

বন্দর প্রসংগে আনু স্যারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া( যদি সেটা পুরোপরি প্রকাশিত হয়ে থাকে!) ""বন্দর ভাড়া দিলে টাকা আসবে - কিন্তু বিষয়টা সেইভাবে ভাবা ঠিক না। কারন এইটা হলো জাতীর মান-সন্মানের সাথে জড়িত" -এইটা খুব যুক্তিশীল কথা হয়নি, সেইটা মানছি। তাতেই কি বন্দর ব্যবহার করতে দেওয়ার বিষয়টি বৈধতা পায়! রাজনীতি এবং অর্থনীতি ইনসেপারেবল তবুও শুধু অর্থনৈতিক বিবেচনাতেই বিষয়টা দেখি, তাহলে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তা কতটুকু লাভজনক! এস্কিমো লিখেছেন, "জাতীয় মানসন্মান" কি জিনিস? যে দেশ পুরোপুরি রেমিটন্স আর বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল - যেখানে নিজেদের স্থাপনা ব্যবহার করতে দিয়ে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার আয় হবে - তাকে জাতীয সন্মানহানীর নামে বিরোধীতা করা কার স্বার্থে - কিসের স্বার্থে? নেত্রী বলেছেন এক বিলিয়ন ডলার আয় হবে, তাই তোতাপাখির মতো উনিও বলছেন এক বিলিয়ন ডলার। এক বিলিয়ন ডলার কি মায়ের হাতের মোয়া যে চাইলেই পাওয়া যায় নাকি এইটাও কোন মহাপুরুষের দেখা কোন স্বপ্ন!এক বিলিয়ন ডলার কোথা থেকে আসবে, কিভাবে আসবে, সেইটার কোন তথ্য আপনাদের কাছে আছে জনাব! জার্মানী নেদারল্যান্ডের পোর্ট ব্যবহার করে সেইখানে কিভাবে রেভিনিউ শেয়ারিং হয়, তার কোন ডাটা আপনাদের কাছে আছে কি! আচ্ছা আমার দিকটা বলি(অন্যব্লগে লিখেছিলাম) এবার। নীতিগতভাবে আমি ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দরে একসেস দেওয়ার পক্ষে।

তবে কিছু জিনিসের নিস্পত্তির আগে নয়। ১.ত্রিপুরা থেকে ভারতীয় পণ্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত কিভাবে যেতে পারে? হয় রেলপথে নয় সড়কপথে। আমাদের রেলপথের যে অবস্থা তা এই পণ্য পরিবহনের উপযোগী নয়। সুতরাং একে আপগ্রেড করতে হবে। এই আপগ্রেডের অর্থায়ন করবে কে? ভারত সরকার, না বাংলাদেশ সরকার!দেখা যাচ্ছে, ভারতে সরকার বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার লোন (অনুদান নয় কিন্তু খেয়াল কৈরা)দিয়েছে রেলওয়ে ইনফ্রাস্টাকচার আপগ্রেডশনের জন্য।

অর্থাৎ ভারতীর পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ সরকার তার রেলপথকে উপযোগী করবে ভারতীয় লোনের টাকায়। একেই বলেই "মাছে তেলে মাছ ভাজা"। ২. যদি ভারত সড়কপথে পণ্য পরিবহন করে, সেক্ষেত্রে নতুন সড়ক নির্মান করতে হবে কিংবা বর্তমান সড়কপথে লেন বাড়াতে হবে। এই কাজের জন্য অর্থায়ন করবে কে?নিশ্চয় ভারত সরকারকে এতোদিনে আমরা এতটুকু চিনেছি যে বিনিয়োগ তারা করবে না। যেহেতু রাজস্ব পাবে বাংলাদেশ,সো আমাদের গাঁটের পয়সায় কিংবা ভারতীয় লোনে ভারতীয় পন্য পরিবহনের জন্য সড়কপথ রেডী করে দিতে হবে।

৩.ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি কারন বাংলাদেশ সরকার অধিকতর ভর্তুকি দেয়। ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশের ফিলিং স্টেশন থেকে যে পেট্রোল ডিজেল সংগ্রহ করবে না, সেইটা কে নিশ্চিত করবে। ৪.অবস্থানগত কারনেই উত্তরপুর্ব ভারতে হাজার নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার সত্বেও বাংলাদেশি পণ্য বেশ কম্পেটিটিভ এবং তা বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভবনাময় বাজার। ভারতের উৎপাদন কেন্দ্র থেকে এয়ার কিংবা স্থলপথে সেভেন-সিস্টারে পণ্য নিতে পরিবহন খরচ অনেক বেশি বিধায় দামও বেশি। নৌপথে পণ্যপরিব হন খরচ কম।

সুতরাং যে অবস্থানগত কারনে বাংলাদেশি প্রোডাক্ট ভারতীয় প্রোডাক্টের চেয়েও কম্পেটিটিভ ছিলো, তা হারাতে হবে। ৫. খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের বন্দরের ৪০ থেকে ৫০ ভাগ অব্যবহৃত থাকে। সেইসংগে এইটাও বলেছেন, ভারতকে ব্যবহার করতে দিলে বন্দরের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করতে হবে। এই "ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ" এর জন্য পয়সা কে দিবে!এবং সেই পয়সার পরিমান কত! এরপরেও যদি ভারত আমাদেরকে দুহাত ভরে রাজস্ব দেয়,রাজনৈতিক বিবেচনায় না নিয়ে, শুধু অর্থনৈতিক বিবেচনায় আমি তা গ্রহন করতে আগ্রহী। আচ্ছা, এই বন্দরে ট্রানজিটের বিনিময়ে আমরা কি পাবো!অনেকেই নেপাল, ভুটান টেনে এনে সোকলড রেজিওনাল কানেক্টিভিটির কথা বলেছেন।

উনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি এখন পর্যন্ত ভারত নেপাল এবং ভুটানের পন্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরোলাইন থেকে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার আসতে পারবে। বাংলাদেশ থেকে পন্যবাহী ট্রাক নেপাল-ভুটানে যেতে পারবে কিনা, এই বিষয়টা এখনো স্পষ্ট নয়, ভারত এই ব্যাপারে কোন আশ্বাস দিয়েছেন বলে আমার জানা নাই। সংবাদের সুত্র এখানে Click This Link এরপরেও কেম্নে ভারতকে বন্দর ব্যবহার করতে দেওয়া বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়, সেইটা কেউ যদি বুঝায়া দিতে পারেনা, তাইলে আসেন। আপনি সু-স্বাগতম। অবশ্য কেউ যদি আগেই প্রথমআলো গ্রুপের ছেনালীপনায় বশ হয়ে যান, কোন কথাই শুনতে কিংবা মানতে না চান, তাইলে আমার কিছু বলার নাই।

জেগে জেগে ঘুমানো লোককে তো আর তো জাগানো যায়না। আরেকটা কথা, সিংগাপুর শুধু পোর্ট ভাড়া খাটায়া উন্নত হয়নাই। সিংগাপুর পোর্টের আগেই সিংগাপুরের শিল্পবিকাশ হয়েছিলো স্টেট ক্যাপিটালিজম দ্বারা। সিংগাপুর পোর্ট সাপ্লিমেনটারি হিসেবে কাজ করেছে। শুধু ভাড়ার টাকায় পৃথিবীর কোন অর্থিনীতির অবস্থান একধাপ থেকে আরেকধাপে চলে গেছে, এমন কথা আমার জানা নাই।

কারু জানা থাকলে আওয়াজ দিয়েন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।