আমি যেন এক মেঘ হরকরা
সে কোন তরুণ যৌবনে 'সড়ক নম্বর দুঃখ বাড়ি নম্বর কষ্ট' (১৯৮৯, দিনরাত্রি) লিখে কবিতার অমিত সম্ভাবনার জগতে পা রেখেছিলেন কবি মোশতাক আহমদ। আজ দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে পুনরায় নাজেল করলেন মেঘপুরাণ। এ সময়ে এই নিভৃতচারী 'আষাঢ় মাসের পর্যটক' কবির নিরলস ক্রম-ঋদ্ধ কবিতা প্রকাশিত হয়েছে নানা পত্রিকায়। আর আমরা কি জানি না, যখন 'কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে' কবির মনোলোক তার আভাস খুঁজেছে মেঘমালার অন্তরালে কোনো অশ্রুসজল চোখে সে কোন্ অবন্তীর ঘাটের কিনারে?
মোশতাক আহমদ বলেন, 'আমি যেন এক মেঘহরকরা'। কবির অন্তর্লোক খোঁজে প্রিয় মানুষের বেদনাবিলাস।
প্রহরজোড়া অপেমাণ ব্যাকুল কোমলতায় তারপরও সারাদিন কে থাকে কার নির্ভরতার নাম? কবি বলেন, 'আকৈশোর স্বরচিত মেঘমালা উদগীরণ করতে করতে যথাসময়ে খুঁজে পাই রাবীন্দ্রিক মেঘের তাঁবু- বিশাল, আপাত গম্ভীর যেন-বা পিতৃতুল্য আশ্রয়। আর এক নমস্য কবি প্রতি বর্ষায় একবার করে মেঘদূত পড়তেন জেনে পূর্ব ও উত্তরমেঘের পূর্বাপর সমৃদ্ধ করতে থাকল আমার আর্কাইভ। হঠাৎ এক সঘন গহন রাতে আমার মেঘলা আকাশে পায়চারি করেন শবরীবালিকার কবি। সেই মেঘ আর নাগরিক মেঘরাজির একটা সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা চলেছে বহুবছর ধরে। '
এইসব উথালপাথাল বিরহবিলাসের বিভিন্ন দুপুরে কবি খুঁজে ফেরেন গোপন শিশিরে ভেজা ঘাসফুলে আবেগের প্রণয়ী দলিল, কোনো চিহ্ন, প্রেম...।
বেহুলা আর গার্মেন্টসদুহিতার হৃদয়ে একই ধরনের মেঘের ঘনঘটা। নারীর বুক থেকে ওড়ে যেন মেঘের কবুতর। এই অপোর প্রসন্ন সড়কে অবকাশহীনতার নীল নকশায় থাকে না যাত্রাবিরতি- যদিও অভ্যর্থনা ছিল না কারও করতলে, তবু ধসে যেতে যেতে জীবন-চুমুকে তৃষ্ণার জলের
প্রতীক্ষায় আঁজলা পেতে থাকেন কবি। ইদিপাস ও রতেœশ্বরের
কথা বলতে গিয়েও মেঘ আসে, রাত জেগে কবিতা লিখতে বসলেও শাদা শাদা মেঘ ঢেকে ফেলে লেখার খাতা আর ঘুমুতে গেলেও শিথানজোড়া মেঘ। কিন্তু তবুও কবি পরিত্রাণ চান না, কেননা তার ভাষায়, 'অধুনা প্রযুক্তিঘন ই-মেঘের নাগাল পেয়ে নিজেকে আদিম দেবতাদের চেয়েও ঢের সৌভাগ্যবান মনে করি।
'
যদিও প্রেমের দক্ষিণা থেকে সরে যায় বুকের পশ্চিম, তবু যেন এই প্রেমেই কবির নিয়ত সমর্পণ। তাইতো আমাদের সামনে আজ উত্থাপিত 'রঙিন প্রস্তাব'। ঝিনুক কুড়াতে কুড়াতে কবি ভাষায় ফোটাতে চান হৃদয়জ কথা। বহুযুগের ওপার থেকে তাই হাওয়াবদলের প্রেরণা এসে কবিকে ভাসিয়ে নেয় মায়ামোহনার একনদী অহংকারের নিরুদ্দেশ যাত্রায়- যার চূড়ান্ত সঙ্গী কেবল বহুমাত্রিক মেঘ।
মোশতাক আহমদ জন্মেছিলেন ১৯৬৮-র জানুয়ারি মাসে।
চিকিৎসাশাস্ত্র আর জনস্বাস্থ্য বিষয়ে øাতকোত্তর পড়াশোনা করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত। স্ত্রী সোনিয়া রহমান, আর শাশ্বতী ও সপ্তর্ষি- এই দুই কন্যাকে নিয়ে কবির অণুপরিবার। গল্পও লেখেন হঠাৎ কখনও, টুকটাক অনুবাদও করেছেন, আঁকার ঝোঁকও ছিল। বন্ধু-সতীর্থ-সহযোগীরা বলেন কবি কিছুটা অন্তর্মুখী।
‘মেঘপুরাণ’-এর যাত্রা শুভ হোক।
দীর্ঘ হোক মোশতাক আহমদের কাব্যতালিকা। প্রবল কামনা করি ‘শিথানজোড়া মেঘ’-এর ভেলার অজানা ভাসানে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত কবিতাকেই সঙ্গ দিয়ে যাবেন মেঘপর্যটক কবি মোশতাক আহমদ।
জিললুর রহমান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।